আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিউমারের দিকে ছুটে যাবে ন্যানো বি

লেখক/কবি

কোথায় কিভাবে যেতে হবে পথের সবটাই তার জানা। কোথায় গিয়ে বসতে হবে তাও জানে সে। না কোনো কীটপতঙ্গ নয়। এর নাম ন্যানো বি। ন্যানো প্রযুক্তি এবার আমাদের কাছে নিয়ে আসছে তাকে।

ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার পরিকল্পনা নিয়ে এ ধরনের ন্যানো বি তৈরি করা হয়েছে। মিলিটিন নামের সংশেস্নষিত ওষুধ এ ন্যানো বির সাহায্যে প্রতিটি ক্যান্সার কোষে পাঠিয়ে দিয়ে তা সমূলে নির্মূল করা সম্ভব হবে। এ ধরনের ওষুধ গতানুগতিকভাবে প্রয়োগের ড়্গেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ স্বাভাবিকভাবে শিরাপথে এ ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করলে সেটি লোহিত রক্ত কণিকা এবং স্বাভাবিক কোষ-কলা ধ্বংস করে। অন্যদিকে ন্যানো কণিকার সাহায্যে নির্দিষ্ট কোষে এ ধরনের ওষুধ প্রয়োগ সম্পূর্ণ নিরাপদ।

ওষুধ প্রয়োগের এমন জটিলতার কথা চিনত্মা করে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে ন্যানো প্রযুক্তির সাহায্যে রোগ চিকিৎসার পদ্ধতি বদলে দেয়ার কথা ভাবছেন, জানান ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্সার ন্যানো টেকনোলজি কেন্দ্রের পরিচালক ড. স্যামুয়েল উইকলাইন। ন্যানো প্রযুক্তির সাহায্যে গঠিত এ বস'গুলোর আকার একশ ন্যানো মিটারের মতো। খালি চোখে এগুলো দেখা সম্ভব নয়। এমনকি সাধারণ অনুবীড়্গণ যন্ত্রের সাহায্য নিয়েও দেখা যাবে না। তবে একক অণুর চেয়ে এদের আকৃতি খানিকটা বড়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় রক্তের লোহিত কণিকার চেয়ে একটি ন্যানো বির প্রস' দশগুণ কম। কোষের ভেতরে ঢুকে পড়ার জন্য এ আকৃতি যথেষ্ট না হলেও অনেকখানি ওষুধ এরা বয়ে বেড়াতে সড়্গম। ন্যানো প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এমআইটির অধ্যাপক রবার্ট ল্যাঙ্গার বলেন, ন্যানো প্রযুক্তিনির্ভর পণ্যের মাঝে ধীরে ধীরে আমরা একটি সেতু বন্ধন গড়ে তুলছি। ক্যান্সার চিকিৎসায় দুটি ন্যানো পার্টিক্যাল ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে। বর্তমানে এমন ওষুধ বাজারে পাওয়া যা"েছ।

এদের মধ্যে ডিম্বাণু ক্যান্সারে ডক্সিল ব্যবহারের অনুমোদন মেলে ১৯৯৫ সালে এবং ২০০৫ সালে সত্মন ক্যান্সারে অ্যাব্রাক্সেন ব্যবহারের অনুমোদন মেলে। এ দুটি ওষুধ ন্যানো পার্টিক্যালের সঙ্গে ব্যবহার করা হ"েছ। সাধারণ ওষুধের চেয়ে বেশি সময় ধরে এরা রক্তে অবস'ান করে। এবং টিউমারের দিকে জমা হয়। যথেষ্ট পরিড়্গা নিরীড়্গার পর এ ধরনের ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন মেলে।

অন্যদিকে ন্যানো বি এমন কৌশল অনুসরন করে তৈরি করা হয়েছে যে শরীরে প্রবেশের পর এগুলো অন্যকোনো কোষ-কলার কোনোরকম ড়্গতি না করে সোজা টিউমার কোষের দিকে অগ্রসর হয়। সুস' কোষ কলাকে এরা সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলে। টিউমারের চারদিকের রক্ত জালিকার বিশেষ গঠন ন্যানো বিকে আকৃষ্ট করে বলে এমন ঘটনা ঘটে। এ ধরনের রক্ত জালিকাতে রয়েছে বিশেষ ধরনের প্রোটিন। যার প্রতি ন্যানো বির রয়েছে রাসায়নিক আসক্তি।

কৌশলটি ব্যবহার করে দেহের ভেতরকার ড়্গতিকারক কোষগুলোকে ন্যানো বির লড়্গ্যবস'তে পরিণত করা হয়। পরিড়্গাগারের যাবতীয় পর্যবেড়্গণে ন্যানো বির আক্রমণে বর্ধিষ্ণু স্বাভাবিক কোষ-কলাকে সম্পূর্ণ অড়্গত অবস'ায় দেখতে পাওয়া গেছে। তার মানে হ"েছ পদ্ধতিটি ব্যবহার করে ব্যাপক ঘনমাত্রার ওষুধ কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ব্যবহার করা সম্ভব হবে। কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়া একবারে একশ ট্রিলিয়ন ন্যানো বিকে শরীরের ভেতর যাবতীয় টিউমারের বিরম্নদ্ধে যুদ্ধে নামিয়ে দেয়া যাবে। এখনো পর্যনত্ম কেবল ইঁদুরের শরীরে এ ধরনের ন্যানো বি নিয়ে পরিড়্গা-নিরীড়্গা চালানো হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, তাদের পর্যবেড়্গণে খুবই আশাবাদী ফলাফল পাওয়া গেছে। আর মাত্র পাঁচ বছরের মাঝে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করার জন্য এ ধরনের থেরাপি ব্যাপকভাবে সহজলভ্য হয়ে উঠবে। ডালাস টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ ইস্টার্ন মেডিকেল সেন্টারের ড. এলান ভিটেটা বলছেন অন্য কথা, তার মতে এ ধরনের কোনোকিছু বাজারে সহজলভ্য হয়ে উঠতে কম করে হলেও আরো অনত্মত ১০ বছর সময় লাগবে। তার কারণ ইঁদুরের শরীরে যা কাজে লাগে সব সময় তা আবার মানুষের শরীরে একইভাবে কাজ করে না। ক্যান্সার চিকিৎসার উপযোগী অ্যান্টিবডি নিয়ে কাজ করার সময় তিনি বিষয়টি লড়্গ্য করেছেন।

সময় এবং দামের বিষয়টিও এ ধরনের প্রযুক্তির ড়্গেত্রে সবাইকে মেনে নিতে হবে। সেই সাথে এ ধরনের প্রযুক্তি প্রচলনের আগে ঠিক যা যা পরিড়্গা-নিরীড়্গা দরকার তাও করে নেয়া একানত্ম জরম্নরি। শেষমেশ কি ঘটতে যা"েছ তা সঠিকভাবে জানা না থাকার কারণে নতুন বিষয়ে সবাই কমবেশি রোমাঞ্চ অনুভব করে। আগামী বছর ন্যানো প্রযুক্তির এ ধরনের কৌশল ব্যবহার করে প্রোস্টেট ক্যান্সার নিয়ে পরিড়্গা-নিরীড়্গা করা হবে। এ সময় অন্য একটি ক্যান্সারের ওষুধ ডসিট্যাক্সেল ন্যানো পার্টিক্যালের সাহায্যে সরাসরি এ ধরনের টিউমারে প্রয়োগ করা হবে।

অপারেশনের সেলাইয়ের দাগ মিইয়ে দেয়ার জন্য এ ধরনের একই ধরনের ন্যানো পার্টিক্যালের ব্যবহার হ"েছ। এদের মাঝে রাসায়নিক আসক্তি আনার জন্য পলিথিলিন গস্নাইকলের প্রলেপ দেয়া হয়। এ কারণে ম্যাক্রোফেজ নামের শ্বেত কণিকাগুলো এদের গিলে ফেলে না। ল্যাঙ্গার এবং তার সহকর্মীরা ডিম্বাণু ক্যান্সার চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নতুন একটি পদ্ধতি নিয়েও কাজ করছেন। যা এরই মধ্যে মেডিকেল জার্নাল ক্যান্সার রিসার্চের একটি সংখ্যা প্রকাশ হয়েছে।

পদ্ধতিটিও ইঁদুরের শরিরে সফল হয়েছে। আগামী দুবছর ক্লিনিক্যাল পর্যবেড়্গণ চলবে। গবেষক দলটি এ বিষয়ে দুটি পদ্ধতি প্রকাশ করেছে। এতে বিশেষ কোনো অ্যান্টিবডি ব্যবহার না করে দেহগহ্বরে ভাসমান ক্যান্সার কোষকে লড়্গ্য করে ডিএনএ অথবা আরএনএ সমন্বিত ন্যানো পার্টিক্যাল প্রয়োগ করা হবে। অপর একটি গবেষক দল ব্যবহার উযোগী সম্ভাব্য কার্বন ন্যানো টিউব সন্ধানে রয়েছেন।

বেলন আকৃতির এসব কার্বন অণু বর্তমানে ইলেকট্রনিক্সসহ বিজ্ঞানের অন্যান্য ড়্গেত্রে ব্যবহার হ"েছ। ড.ভিটেটার নেতৃত্বে একদল গবেষক ন্যানো টিউবকে অবলোহিত আলোর সাহায্যে উত্তপ্ত করার একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। কাঙিড়্গত ক্যান্সার আক্রানত্ম লিমেফামা কোষে এদের জড়ো করে পদ্ধতিটি ব্যবহারে উত্তপ্ত করার মাধ্যমে ক্যান্সার বিলোপ করা সম্ভব হয়েছে। তবে সম্ভাব্য কয়েকটি ড়্গতিকারক বিষক্রিয়ার বিষয় সমাধা হওয়ার আগ পর্যনত্ম চিকিৎসা পদ্ধতিটি মানুষের শরীরে ব্যবহার করা যা"েছ না। এ ধরনের পদার্থ দিয়ে চিকিৎসকেরা মানুষের রোগ নির্ণয় পর্যনত্ম করতে পারবেন বলে জানান গবেষকেরা।

অন্য আরো এক গবেষণায় জানা গেছে স্বর্ণের ন্যানো কণিকা ডিএনএ’র উপসি'তি চিহ্নিত করতে সড়্গম। এ ধরনের ন্যানো কণিকাকে ডিএনএ সিকোয়েন্সে আবৃত করলে দ্রবণে বিপরীতধর্মী ডিএনএতে এরা রঙ বদলায়। এনথ্রাক্সের মতো আরো অনেক রোগ নির্ণয়ে এর প্রয়োগ করা যাবে বলে মনে করা হ"েছ। এ ধরনের ন্যানো আকৃতির পদার্থ নিয়ে ভূরি ভূরি গবেষণা চলছে। এর অনেক কিছুই আমাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন নয়।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের শরীরে প্রয়োগের আগে এদের নিয়ে যথেষ্ট পরিড়্গার প্রয়োজন রয়েছে। সন্দেহ নেই, বেশ কয়েক বছরের মাঝে হয়তো গোটা পঁচিশেক কোম্পানি ন্যানো বি উৎপাদনে নামবে। এ মুহূর্তে শুধু ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর জন্য অপেড়্গার পালা। তার আগে তারা জানতে চা"েছ গবেষণাগুলো থেকে বাসত্মব ব্যবহার উপযোগী আর কী বেরিয়ে আসছে।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।