আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবুনগরী জানান, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত মতিঝিলে অবস্থান নিতে হেফাজতের নেতাদের একটি অংশের পরিকল্পনা ছিল। ১৮ দলীয় জোটভুক্ত চারটি দল হেফাজতের সঙ্গে থাকবে বলে জানানো হয়েছিল।

একজন জামাতের দালাল আমাকে খুর ক্রোধ ও কষ্টের সাথে বলল,ভাই এই জালিম সরকার নাস্তিক সরকার হেফাজতের অনেক কর্মীকে হত্যা করেছে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে দোষ স্বীকার করে বলেছেন, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত মতিঝিলে অবস্থান নিতে হেফাজতের নেতাদের একটি অংশের পরিকল্পনা ছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কয়েক নেতার পরামর্শে এমন পরিকল্পনা করেছিলেন। হেফাজতের শীর্ষ নেতারা মতিঝিলে টানা হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচীতে সব ধরনের আর্থিক সুবিধা দিয়েছে ১৮ দলীয় জোট। ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। মতিঝিল এলাকায় এসআই শাহজাহান হত্যা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন তিনি।

জুনায়েদ বাবুনগরীকে দুই দফায় ১৩ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে নেয়ার পর তাঁকে স্বেচ্ছায় জবানবন্দী দেয়ার জন্য ৩ ঘণ্টা সময় দেয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর হাকিম হারুন অর রশিদের খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় গতকাল বিকেলে বাবুনগরীর জবানবন্দী রেকর্ড করেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাঁর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। জবানবন্দী গ্রহণ শেষে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। গত ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচীর তা-বের সঙ্গে কারা কারা জড়িত জবানবন্দীতে তাদের নাম বলেছেন বাবুনগরী।

হেফাজতের ওই দিনের সমাবেশে দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটায় বলে তিনি জানান। নাশকতার ছক কারা করেছিলেন এবং কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সে সব পরিকল্পনার বিষয়ে নানা ধরনের তথ্য দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক শেখ মফিজুর রহমান তাঁকে দুই দফায় ১৩ দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকার সিএমএম আদালতে এনে স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার আবেদন করেন। ঢাকা অবরোধের দিন সহিংসতার ঘটনায় করা হত্যা মামলায় জবানবন্দী দেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। মতিঝিল এলাকার আলিকো বিল্ডিংয়ের পাশের বহুতল কার পার্কিং ভবনের সামনে কর্তব্যরত পুলিশের এসআই শাহজাহানের মাথায় ইট, লোহার রড, চাপাতি দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে হত্যা করা হয়।

তবে কারা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে তাদের নাম জানাতে পারেননি তিনি। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার আগে বাবুনগরীকে চিন্তা ভাবনা করার জন্য তিন ঘণ্টা সময় দেয়া হয়। জবানবন্দীতে তিনি অবরোধের দিন সহিংস ঘটনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বিকেল পাঁচটায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয় জুনায়েদ বাবুনগরীকে। ১৩ দফা দাবি আদায়ের জন্য হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা গত ৫ মে অবরোধ শেষে মতিঝিলে অবস্থান নিতে থাকেন।

এ সময় তারা মতিঝিল ইত্তেফাক মোড় থেকে দৈনিক বাংলার মোড় ও ফকিরাপুল এলাকায় জঙ্গী কায়দায় বাঁশের লাঠি, কাঠের লাঠি, লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্রসহ ইট ও বোমা নিক্ষেপ করে যান চলাচলে বাধা ও বোমা ফাটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেন। বিভিন্ন ভবন ও গাড়ি ভাংচুর এবং ভবন, গাড়ি ও ফুটপাথের বিভিন্ন দোকানে অগ্নিসংযোগ করেন তাঁরা। এক পর্যায়ে তাঁরা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন। তারপর বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টি অফিসসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে। রাতে দশ সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের অবস্থানকারীদের বিতাড়িত করে।

পরদিন ৬ মে রাত ৮টার দিকে লালবাগ এলাকা থেকে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ গ্রেফতার করে। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ‘হুজুরকে (আল্লামা আহমাদ শফী) ভুল বুঝিয়ে এই সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আরেক পক্ষ। মতিঝিলের সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ এক সময় আর হেফাজতের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। পরিণামে যা ঘটার তাই ঘটেছে। সমাবেশে যা ঘটেছে তার সবকিছু আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়নি।

বাবুনগরী তাদের বলেছেন, ১৮ দলীয় জোটের এক নেতা যিনি হেফাজতে ইসলামেরও নেতা। অপর গ্রুপের এক নেতাকে দায়ী করে তিনি বলেছেন, হুজুরকে (শফী) ভুল বুঝিয়েছেন। ওই নেতাকে অভিযুক্ত করে বাবুনগরী দাবি করেছেন, তাঁর কারণেই সব পরিস্থিতি এলোমেলো হয়ে যায়। রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বসে পড়েন হেফাজত নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

সমাবেশের দিন হেফাজত নেতারা কোন কোন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, মোবাইল ফোনে কথা বলেছে সে তথ্য ও প্রমাণ গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে। মাওলানা বাবুনগরীর দেয়া তথ্য ও গোয়েন্দাদের কাছে থাকা তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। বাবুনগরীর সমাবেশে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বলেছেন, আমির আল্লামা শাহ আহমাদ শফী বড় হুজুর চোখে ভাল দেখতে পান না। এজন্য তিনি পত্রিকা পড়েন না এবং টেলিভিশনও দেখেন না। হেফাজতের একটি অংশ ভুল বুঝিয়েছে বড় হুজুরকে (আল্লামা শফী)।

এজন্য তিনি ইচ্ছে থাকার পরও সমাবেশে যেতে পারেননি। ক্ষমতায় গিয়ে মন্ত্রী হওয়ার জন্য ক্ষমতার লোভে তাঁরা এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। অবরোধ কর্মসূচীর ঘটনায় তাঁর কিছুই করার ছিল না বলে জানান। তিনি রাজনীতিবিদ অভিহিত কয়েক হেফাজত নেতার তৈরি করা ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন। হেফাজতের নামে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, ধ্বংসযজ্ঞ ও সহিংস ঘটনার কর্মকা- করেছে জামায়াত-শিবির।

বাবুনগরী জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানিয়েছেন, মতিঝিলে তাদের (হেফাজতের) অবস্থানের কোন কর্মসূচী ছিল না। তবে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কিছু করতে পারেননি তাঁরা। বাবুনগরী জানান, পল্টন ও বায়তুল মোকাররমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হেফাজতকর্মীরা ছিল না বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, এই কাজ করেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। হেফাজতে ইসলামের মূল পরিকল্পনা, অর্থ যোগানদাতা, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের উৎস এবং সরকার উৎখাতে কি পরিকল্পনা হয়েছিল সেই ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন জুনায়েদ বাবুনগরী।

বাবুনগরী জানান, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত মতিঝিলে অবস্থান নিতে হেফাজতের নেতাদের একটি অংশের পরিকল্পনা ছিল। ১৮ দলীয় জোটভুক্ত চারটি দল হেফাজতের সঙ্গে থাকবে বলে জানানো হয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কয়েক নেতার পরামর্শে এমন পরিকল্পনা করেছিলেন। হেফাজতের শীর্ষ নেতারা মতিঝিলে টানা অবস্থানে রাজি না হওয়ায় সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রী বানানোরও প্রস্তাব দেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মাওলানা বাবুনগরী জানান, বিএনপি ও জামায়াতের কয়েক নেতার পরামর্শে এমন সিদ্ধান্ত নেন তারা।

পুরো সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ১৮ দলীয় জোটভুক্ত ওই অংশটি। এরপরই ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়। এজন্য ১৮ দলীয় জোটে থাকা হেফাজতের নেতাদের কয়েকজন সব সময় বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগও রেখেছিলেন। বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষে শাপলা চত্বরে তাদের দীর্ঘ অবস্থানের জন্য সব ধরনের সহায়তাও দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। ক্ষমতায় গেলে তাকেসহ হেফাজত নেতাদের মন্ত্রী বানানো হবে বলেও প্রস্তাব আসে বলেও জানান মাওলানা বাবু নগরী।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.