আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই অস্ত্র এই চাপাতি এই লাঠির মালিকানা কার?

কতো কী করার আছে বাকি..................

পত্রিকায় আসছে ছাত্রলীগ নাকি বেসামাল। এইটা কেমন কথা হইলো। ছাত্রলীগ কি মাতাল নাকি। কি খায়া মাতাল। ছাত্রলীগ ছাত্রদল শিবির মারামারি করে এইটাই স্বাভাবিক।

এইটা তাদের বেসামাল অবস্থা না, স্বাভাবিক অবস্থা। এই সমস্ত সংগঠন কইরা কবিতা পাঠ অথবা ছাত্র অধিকারের বিষয়ে আন্দোলন করতে গেলে বিস্মিত হইতাম। ভাবতাম হয়তো তারা বেসামাল। মারামারি না কইরা, এরে তারে মারার প্ল্যান না কইরা, ফাও না খায়া এই সংগঠনগুলার কোন একটা দিন পার হইছে জানলে অবাক হইতাম। ফলে ছাত্রলীগ বেসামাল না।

কিন্তু একটা চিন্তার বিষয় ভাবাইতেছে। মারামারি এতো হিংস্র রুপ নিলো ক্যান। আমার দেখা গত পাঁচ বছরে ছাত্রদের মারামারি দিন দিন বিভৎস হইতেছে। হাতিয়ারেও আসছে পরিবর্তন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকে দেখতাম ছাত্রলীগের ভাইয়েরা অস্ত্র নিয়া ঘুরতেছে।

তাজা অস্ত্র। রাইত হলে শিবির আসবার ভয়ে হলের ছাদে ছাদে বস্তার্ভতী বোমা আর অস্ত্রের পাহারা চলত। কিন্তু এইগুলার ব্যবহার দেখি নাই। কখনো বড়সড় মারামারি হইলেও খুন করাবার উদ্দেশ্য ছাড়া গুলি বাইর হয় নাই। ভয় দেখানোর জন্য হয়তো দুই একটা ফাঁকা গুলি বাইর হইত।

এরপর ছাত্রদলের আমল আসল। শুরু থেকেই গ্রুপিং, মারামারি। এর বেশিরভাগই আছিল মারামারির ভান। হয়তো হাতাহাতি, দুই একটা বোমা গুলির ফাঁকা আওয়াজ। অর্থাৎ মারামারির চাইতে ভানটাই বেশি আছিল।

হল দখলের ক্ষেত্রেও দেখছি একগ্রুপ হলে আইসা ঢুকলে আরেক গ্রুপ পিছন দিয়া পালাইছে। দুই একটা ভাংচুর ছাড়া তেমন কিছু হইতো না। কিন্তু এরপরের মারামারিগুলা জঘন্যতারেও ছাড়ায়া গেছে। ছাত্রদল থিতু হয়া বসতে বসতেই মারামারিও হিংস্র হইতে থাকল। এই সকল মারামারির হাতিয়ার হিসাবে দেখলাম রামদা আসছে, চাপাতি আসছে, গজারির লাঠি আসছে।

অকেজো অথবা কেজো খাটের লোহার পায়া, জানলার রড, পানির পাইপ ইত্যাদি ইত্যাদি। একটা হল ছিল এর মধ্যে আলাদা। তারা একাই বাকি সব হলের প্রতিপক্ষ। নিজেদের হলে তারা ইট থাইকা শুরু কইরা লাঠি বোমা সব জোগাড় করত। ক্লাসে যাওয়ার ব্যাগে ভইরা নিয়া যাইতো মারামারি করার লাঠি।

দিন রাইত খাইটা তারা এই মাপের হাতিয়ার বানাইতো। সম্ভবত নব্বইয়ের পর থাইকাই আমারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলাতে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার রোধ করা হয়। ফলে মারামরির জন্য বিকল্প হাতিয়ার বানানোর কাজে এই সমস্ত সংগঠনগুলার ব্যাপক মেধা পরিলক্ষিত হয়। একবার ছাত্রদলের পোলারা ছাত্রফ্রন্টের কিছু পোলারে পিটাইলো লাকড়ি দিয়া, চুলার লাকড়ি। আরেকবার ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মারামারির সময় ব্যবহার করা হইলো ফুলের টব।

ফ্যাকাল্টির বারান্দায় যতো ফুলের টব আছিল সব ওই পোলার মাথায় ভাঙ্গা হইলো। অথচ হাতে অস্ত্রও আছিল। ক্রিকেট ব্যাট স্টাম্প এসব বাদ দিলাম। বাঁশের ব্যবহারও কম দেখছি। মারামারিতে সবসময়ই অকেজো অস্ত্রের ব্যবহার দেখছি।

একবার একজন প্রতিপক্ষরে অস্ত্র তাক কইরা ভয় দেখাইতে গিয়া গুলি বাইর কইরা ফালাইলো। এর আগে অনেক চেষ্টা কইরাও যে দোনলার গুলি বাইর হইলো না, হুট কইরা সেই অস্ত্রের গুলি বাইর হওয়াতে সবচেয়ে বেশি বিস্মিত হইলো সে নিজে। গুলি গিয়া লাগলো প্রতিপক্ষের একজানের পায়ে। অস্ত্রধারী নিজেই রক্ত দেইখা কান্নাকাটি। তবে মারামরির মধ্যে হিংস্রতা খুব বাড়ছে।

এই ছাত্রদল আসার আগে রক্ত দেখছি খুব কম। শিবিরের বিষয়টা আলাদা ওদের হিংস্রতা নিয়া আলোচনার মানসিক স্থৈর্য্য আমার এখন নাই। শিবিরই বরঞ্চ আমাদের শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসরে প্রতিষ্ঠিতি করছে। তাদের হিংস্রতার সংস্কৃতি বাকি সংগঠন দুইটারেও ভর করছে। ফলে গত বছর পাঁচ ছয় ধইরা দেখতেছি রক্ত না ঝরায়া, হাসপাতালে না পাঠায়া শান্তি হয়না গুন্ডাগুলার।

ঠান্ডা মেজাজে মাথায় আঘাত করা, হাত ভাঙ্গছে কিনা তা নিশ্চিত না হয়ে মাইর না থামানো, নির্বিচারে চাপাতি রামদার আঘাত। ওহ ক্ষুরের কথা বলতে ভুইলা গেছি। শিবিরের ক্ষুরও উইঠা আসলো এই সংগঠনগুলার হাতে। এমন দৃশ্য কয়েবারই দেখছি এবং শুনছি যে মাইরা শোয়ায়া ফালাইছে, হঠাৎ কে জানি কইলো ওই হালারতো পা ভাঙ্গি নাই। শুরু হইলো আবারো মাইর।

তবে সমস্ত মারামারির পেছনের লোক থাকে। কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের/প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কখনো প্রশাসন, স্থানীয় এমপি। কোন মারামারিই এই সমস্ত ক্ষমতাধরদের জানাশোনার বাইরে হইতো না। এমনকি এই শিক্ষক প্রশাসনই এমন অনেক মারামারির প্ল্যান পরিকল্পনা সাজাইতো। ফলে এইটা পরিষ্কার যে উদ্দেশ্য হাসিল ছাড়া কোন শিক্ষাঙ্গনেই মারামারি বাধে না।

এবং সকল মারামারির পিছনে রাজনীতি তথা স্বার্থ থাকে। সেই স্বার্থ খুব কমই ছাত্রদের, বেশিরভাগই অন্য কারো। অন্যদের হাতিয়ার ছাত্রদের হাতে ওঠে। এই সত্য অস্বিকারের উপায় নাই।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।