আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৭৪-৭৫' এ বিদেশী প্রত্রিকায় বাংলাদেশ

<<মধ্যরাতের হাইওয়ে>>

১. আওয়ামিলীগের উপর তালায় যারা আছেন, তারা আরো জঘন্য। জনসাধারণের মেরুদন্ড ভেঙ্গে তারা আজ ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। (জনাথন ডিম্বলবি, নিউ স্টেটসম্যান, লন্ডন, ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪) ২. প্রতিবছর দশ-বিশ লাখ টন চাল ভারতে পাচার হয়। এর সবটুকু হাতে এলে সরকারের বন্টন ব্যবস্থার ঘাটতি পূরণের জন্য যথেষ্ট হবে। খাদ্য উৎপাদন ও আমদানি বাবদ প্রাপ্ত খাদ্যশস্যের শুধু উদ্বৃত্ত অংশ প্রায় ৫০ লাখ টন খাদ্যশস্য পাচার করেছে।

(গার্ডিয়ান, লন্ডন, ৮ নভেম্বর , ১৯৭৪) ৩. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ৫০ লাখ মহিলা আজ নগ্ন দেহ। পরিধেয় বস্ত্র বিক্রি করে তারা চাল কিনে খেয়েছেন। ডা. আব্দুল ওয়াহিদ জানান, স্বাভাবিক সময়ে হয়তো আমরা কয়েক ডজন ভিখারীর মৃত দেহ কুড়িয়ে থাকি। কিন্তু এখন মাসে অন্তত ৬০০ লাশ কুড়াচ্ছি। সবাই অনাহারে মৃত।

যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু কঙ্কার আর কঙ্কাল। বোধ করি হাজার হাজার। প্রথমে লক্ষ করিনি। পরে বুঝতে পারলাম অধিকাংশ কঙ্কালই শিশুদের। (জন পিলজার, ডেইলি মেইল, লন্ডন, ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭৪) ৪. আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম ৭৪ সালের শেষার্ধে ২৯৩৪ টি লাশ পেয়েছিল, যার সবই বেওয়ারিশ।

এর মধ্যে দেড় হাজারেরও বেশি রাস্তা থেকে কুড়ানো। ডিসেম্বরে মৃতের সংখ্যা জুলাইয়ের সংখ্যার ৭ গুণ এবং অক্টোবরে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় কুড়ানো সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। গ্রাম বাংলার ছিন্নমূল হতাশ মানুষেরা আজ ঢাকার পেশাদার ভিখারীদের স্থান নিয়েছে। পিতা শিশুদের নিয়ে রাস্তার চত্বরে বসে আছে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। (পিটার গিল, ডেইলি টেলিগ্রাফ, লন্ডন, ৬ জানুয়ারি, ১৯৭৫) ৫. সুবিস্তৃত ইউএনএইড সেপারেশনের প্রতিষ্ঠাতা মি. টনি হেগেন হিসাব করে দেখেছেন যে, রিলিফ সামগ্রীর ৭ ভাগের ১ ভাগ মাত্র প্রকৃত দুঃস্থ লোকদের হাতে পৌঁছেছে।

(কেভিন বিফাটি, ফিনান্সিয়াল টাইম, লন্ডন, ৬ জানুয়ারি, ১৯৭৫) ৬. বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ তার দেশে পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের শেষ চিন্হটুকু লাথি মেরে ফেলে দিয়েছেন। বিরোধী দল দাবি করেছিল, এ ধরনের ব্যাপক শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের ব্যাপারে তিন দিন সময় দেয়া উচিত। জবাবে সরকার এক প্রস্তাব পাশ করলেন যে, এ ব্যাপারে কোন বিতর্ক চলবে না। (পিটার গিল, ডেইলি টেলিগ্রাফ, লন্ডন, ১৯৭৫) ৭. কিন্তু বাংলাদেশের শাসক ও নব্য শাসকরা অধিকতর অযোগ্য, দুর্নীতিপরায়ণ এবং লোভী। এরা রাতারাতি বড় হতে চায়।

ধুরন্ধর ব্যক্তিরা উচ্চাশার টোপ ফেলেছিল যে, স্বাধীন বাংলাদেশ অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে এবং সরল মানুষেরা তা বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু ভারতীয় হস্তক্ষেপের ফলে যারা বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসীন হল তাদের মত স্বার্থপর নেতৃত্ব কোন দেশে মুক্তি আন্দোলনের পর আর দেখা যায়নি। দেশটি অর্থনৈতিক ধ্বংসের দিকে যাবে তা অবশ্যম্ভাবী ছিল। (ফ্রন্টিয়ার, কলকাতা, ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫) ৮. জরুরি অবস্থা বলবত করতে গিয়ে শেখ সেই পুরনো জুজুর ভয়ই দেখিয়েছেন, বাংলাদেশে পাকিস্তান পন্থীরা এখনো সক্রিয়। কিন্তু অধিকাংশ পর্যবেক্ষক একমত যেহেতু আওয়ামী সরকার ৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জন্ম হতে শাসন করে আসছে এবং এতে ব্যর্থ হয়েছে, সেজন্যই জরুরি অবস্থা চালু করা হয়েছে।

সরকার যে ওয়াদা পালনে ব্যর্থ হয়েছে, তার জ্বলন্ত প্রমাণ দেখা যায় গ্রাম-বাংলায়। সেখানে দুর্ভিক্ষ এবং পুষ্টিহীনতায় হাজার হাজার লোক মৃত্যু বরণ করছে। আর যারা বেঁচে আছে, তারা সরকারের গুন্ডা বাহিনীর ভয়ে সর্বক্ষণ সন্ত্রস্ত। ডেভিড হার্ট, ফার ইস্টার্ণ ইকোনমিক রিভিউ, হংকং, ১০ জানুয়ারি, ১৯৭৫)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।