আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরীক্ষাভীতিই ব্যর্থতার মুল কারণ

আগের পর্বগুলোতে (পর্ব ১ , পর্ব ২ ) আমি দেখানোর চেস্টা করেছি কিভাবে প্রত্যাশার চাপ একসময় পরিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষাভীতির দিকে ধাবিত করে। এই পরীক্ষাভীতিই যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের ব্যর্থতার মুল কারণ তা আমি এই লেখায় ব্যাখ্যা করার চেস্টা করব। ভর্তি পরীক্ষাগুলো সাধারণত এইচ.এস.সি পরীক্ষার ৩-৪ মাস পর শুরু হয়। সবার প্রথমে হয় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা আর তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা শুরু হয়। এভাবে এইচ.এস.সি পরীক্ষার প্রায় ৬ মাস পর যেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়।

তারমানে দেখা যাচ্ছে কেউ যদি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য আদাজল খেয়ে নামে এবং তারপর কোন কারণে ব্যর্থ হয় তবে সে নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে মাত্র ১-২ মাস সময় পায়। আবার কখনও সে এর চাইতে অনেক কম সময়ও পায় কারণ আজকাল সেশনজট দুর করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ভর্তি কার্যক্রম বেশ এগিয়ে নিএয় এসেছে। জাহাঙ্গীরনগর আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক মাসের মাঝেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে দেয়। এমনকি আজকাল কখনও কখনও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা একই দিনে অনুষ্ঠিত হতেও দেখা যায়। পরিক্ষার্থীদের এই দুটির মাঝে যেকোন একটি বেছে নিতে হয় !! বুঝাই যাচ্ছে যে মেডিকেলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সে তার গণিতের দুর্বলতা কাটানোর জন্য যথেষ্ট সময় পাচ্ছে না !! এমন না যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় গণিত না পারলে ভর্তি পরীক্ষায় টিকা একেবারেই সম্ভব না, কিন্তু গণিতে ভালো নম্বর না তুলতে পারলে দেখা যায় যে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দের বিষয়টিতে ভর্তি হতে পারছে না !! আর ভর্তি পরীক্ষার অংকগুলো এইচ.এস.সি পরীক্ষার অংকগুলোর মত একইরকম হলেও প্রায়োগিক দিক দিয়ে এই দুই ধরনের অংকের মাঝে অনেক পার্থক্য থাকে।

বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নগুলো হয় অনেকটা রচনামুলক ধরনের, মানে সেখানে পরীক্ষার্থীকে একটা গাণিতিক সমস্যার সমাধান বিশদভাবে করতে হয়। সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত সময়ও থাকে। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার অংকগুলোর উত্তর দিতে হয় OMR শীটে সঠিক উত্তর চিহ্নিত করে। এখানে অংক করার জন্য আলাদা কোন কাগজ দেওয়া হয় না। সময় থাকে গড়ে বড়জোর ৩০ সেকেন্ড করে।

তাই বলা যায় ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর উপস্থিত বুদ্ধি এবং গাণিতিক জ্ঞানের বুদ্ধিদীপ্ত প্রয়োগের পরীক্ষা হয়। এখন আগে থেকে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ অংক অনুশীলন করা না থাকে তবে কারও পক্ষে কি পরীক্ষার হলে সর্বোচ্চ দক্ষতা দেখানো সম্ভব ? মোটেই না। তারউপর আবার নির্ধারিত সময়ের মাঝে একই সাথে অন্যান্য বিষয়ের প্রশ্নগুলোর উত্তরও দিতে হয়। আগে থেকে অনুশীলন করা না থাকলে কোন পরিক্ষার্থীর পক্ষেই পরীক্ষার হলে চিন্তা করে করে অংক করে ভালো করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া পরিক্ষার্থীরা এইক্ষেত্রে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া পরীক্ষার্থীদের থেকে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকে।

যেমন তাদের দুর্বলতা থাকে শুধুমাত্র জীববিজ্ঞানে। এবং জীববিজ্ঞানে দখল আনার জন্য গণিতের মত এত অনুশীলনের দরকার হয় না। পরীক্ষার হলেও উত্তর জানা থাকলে জীববিজ্ঞানের এক একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে সর্বোচ্চ ১৫ সেকেন্ড সময় লাগে। তারমানে ভালো প্রস্তুতি থাকলে খুব দ্রুত এবং সহজে জীববিজ্ঞানের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে অন্য বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া যায়। বুঝাই যাচ্ছে যে, জীববিজ্ঞানের মাঝে গণিতের মত এত প্যাঁচ নেই।

কিন্তু সমস্যা যেটা হয় সেটা হচ্ছে জীববিজ্ঞানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া বেশ সময়সাপেক্ষ এবং ধৈর্যের ব্যাপার। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিলে বলা যায়- এক একটি প্রাণী কিংবা উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম মুখস্থ করা বা মনে রাখা চাট্টিখানি কথা নয়। সময় ব্যয় না করলে, বার বার রিভিশন না দিলে কখনই এসব মনে রাখা সম্ভব না। এখন এই যে সময় সেটা কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া পরিক্ষার্থীরা একদমই পায় না। কারণ আগেই বলা হয়েছে যে মাঝে মাঝে পাবলিক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা একই দিনে পরে যায় !! আর একই দিনে না পরলেও দেখা যায় আজকে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা কালকে বা পরশু আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে!! এসব কারণে পরীক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরনের পরীক্ষাভীতি কাজ করে এবং যেটা তাদের জন্য কখনই ভালো ফল বয়ে আনে না।

চলবে………… ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.