আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিত্ত যেথা ভয়ে পূর্ণ, নিম্ন হেথা শির



‘‘ইংরেজ সাহেবের কুকুরের এক ঠ্যাঙের ব্যয় আমার পরিবারের কতজন মানুষের ব্যয়ের সমান?’’-সৈয়দ মুজতবা আলী ‘পণ্ডিতমশাই’ গল্পটির শেষ অংশটিতে পণ্ডিতমশাই এমন একটি সহজ গাণিতিক প্রশ্ন করেছিলেন। রম্যরসে ভরা গল্পটির শেষ অংশের এই মর্মস্পর্শী, বেদনাময় প্রশ্নটির উত্তর পণ্ডিতমশাই সেদিন পান নি। ইংরেজ শাসন শেষ করে, পাকিস্তান আমল পেরিয়ে, স্বাধীনতার ৩৫ বছর পর স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশে পণ্ডিতমশাই আরেকটি গাণিতিক সমস্যা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারেন, উত্তর না মেলুক। অর্থনীতিবিদ ডঃ আবুল বারকাত দাবী করেছেন যে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ কালোটাকা সৃষ্টি হচ্ছে। গত বাজেটে ৭.৫% কর প্রদান করে, এই বছরের বাজেটে ১৫% কর দিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট,জমি কিনলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

আমরা দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজদের প্রতি বিনীত থাকতে অভ্যস্ত বিধায় তাদের য়তির সর্বোচ্চ পরিমাণকে হিসাবে এনে কালো টাকা সাদা করার একটি হিসাবে দাঁড় করাই। ধরে নিই, দেশের মুষ্টিমেয় দুর্নীতবাজ, ঘুষখোর, ঋণখেলাপির সহযোগী জনগোষ্ঠী এক বছরের ৭০ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই কালো টাকা সাদা করার জন্য ১৫% হারে কর প্রদান করে অ্যাপার্টমেন্ট,জমি কিনলেন। অর্থাৎ ৭০হাজার কোটি গুণন ০.১৫ বা প্রায় ১০হাজার কোটি টাকা কর প্রদান করে প্রায় ৬০ হাজার কোটি সাদা টাকার মালিক হয়ে গেলেন। (যদিও ১০ হাজার কোটি টাকা তাদের তি হচ্ছে না, এর বিনিময়ে অ্যাপার্টমেন্ট, জমির মালিক হচ্ছেন, তবুও বিনয়ে অবনত হয়ে কালো টাকা মালিক দেশের মতাধর ব্যক্তিদের জন্য এই টাকাকে লোকসান হিসেবে গণ্য করলাম)। পাশাপাশি, অন্য একটি তথ্যে আসি।

সরকারী তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালে বাংলাদেশে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৭৬৭১টি এবং ২০০৬ সালের মে পর্যন্ত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক সংখ্যা ১৭০০৯৭জন, আর ২০০৪ সালে বাংলাদেশে কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩২১৮ এবং Primary Education Statistics in Bangladesh 2001 এর পরিসংখ্যানে ২০০১ সালে কমিউনিটি প্রাথমিক শিককের সংখ্যা ছিল ৯১৬২। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিকরা ৩১০০বেসিক স্কেল পান, এর সাথে ৪৫% বাড়িভাড়া ও অন্যান্য ভাতা বাবদ ৫০০টাকা আরও যোগ করলে ৫০০০ টাকার কাছাকাছি দাঁড়ায়। আর কমিউনিটি শিকরা মাস শেষে বেতন পান ৭৫০ টাকা। যেহেতু প্রাথমিক শিকদের বেতনবৃদ্ধি, জাতীয়করণ ইত্যাদি নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আপত্তি নেই তা-ই আলাদিনের দৈত্যের মতো চাওয়া মাত্রই পাওয়ার কথা বলি। প্রথমে সকল কমিউনিটি শিকদের চাকুরি জাতীয়করণ করে দিলে মোট সরকারী প্রাথমিক শিকের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১ ল ৭২ হাজার।

আমরণ অনশনরত প্রাথমিক শিকদের দাবী প্রশিণ ছাড়া শিকদের জন্য ৪১০০ এবং প্রশিণ প্রাপ্ত শিকদের জন্য ৫১০০ বেসিক স্কেল বেতন প্রদানের। পূর্বেই বলেছি প্রতিশ্র“তি দিয়ে তা পালন করার কোনো বালাই নেই তা-ই প্রাথমিক শিকদের সংখ্যা বাড়িয়ে ১ ল ৮০ হাজার জন ধরি এবং আরেকটু আকাশ কুসুম হিসাবের জন্য সকলকেই সর্বোচ্চ ৫১০০ বেসিক স্কেল প্রদানের সিদ্ধান্ত নিই। ৫১০০ বেসিক স্কেল এর সাথে ৪৫% বাড়িভাড়া এবং আরও বাড়তি ৫০০ টাকা যোগ করলে একজন সরকারী প্রাথমিক শিকের বেতন হয় প্রায় ৮হাজার টাকার কাছাকাছি। তাহলে ১ ল ৮০ হাজার জন প্রাথমিক শিকের মোট বেতন বাবদ সর্বোচ্চ সর্বমোট মাসিক খরচ হয় ১৪৪০০০০০০০টাকা বা ১৪৪কোটি টাকা, আর বার্ষিক খরচ ১৭২৮০০০০০০০ বা ১হাজার ৭২৮কোটি টাকা। (শুধুমাত্র তুলনার জন্য বলছি, কালো টাকা সাদা করার সুযোগের জন্য কালোটাকার মালিকরা বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা সাদা করার সুযোগ পাচ্ছে যা সকল শিকদের সর্বোচ্চ বেতন প্রদান করলেও যে বার্ষিক ব্যয় হয় তার চেয়ে প্রায় ৩৫গুণ বড় অর্থাৎ এক বছর যে পরিমাণ কালো টাকা সাদা হবে তা দিয়ে সমস্ত শিকদের ৩৫ বছর বেতন দেয়া যাবে।

) আজ জানি না পণ্ডিতমশাই কোথায় আছেন? থাকলে হয়তো বলতেন, একজন ব্যক্তি ঘুষ, ভূমিদখল, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই,সন্ত্রাস, দালালি, ধাপ্পাবাজি, ঋণখেলাপে সহযোগিতা করার পর বিনীত রাষ্ট্রের আইনের সাহায্যে যে পরিমাণ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পায়, তা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, বৈদ্যুতিক আলো-বাতাস ছাড়া ঘরে এক দঙ্গল ছাত্র-ছাত্রীর সাথে সারাদিন গলা খুলে চেঁচানো আর তার সাথে ভোটার লিস্ট, টিকাদান, উপবৃত্তি ইত্যাদি কাজ করা কয়জন কাল্পনিক সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিকের সমান?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.