আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতারণা সিরিজ-৩ উভ্র খন্দকার- এর ব্ল্যাকমেইলিং এর কাহিনী



নতুনদেশ ডটকম ধনাঢ্য, ডিভোর্সি সুপ্রিয়া টরন্টোতে নিজের কেনা বড় ত্রিতল বাড়িতে একাই থাকে। ফেসবুক তার নি:সঙ্গ জীবনের অপরিহার্য বন্ধু। ফেসবুক হয়েই ‘উভ্র খন্দকার’ ঢুকে পড়ে তার জীবনে। উভ্রও কবিতা লেখেন। সেগুলো আবার ঘটা করে ফেসবুকে পোস্ট করেন।

রোকন সাকুরের মাধ্যমেই উভ্রের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে উঠে টরন্টোর চাকরিজীবী ‘সুপ্রিয়া’র। তারা কিছুদিন বন্ধুবেশে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে টের পেয়ে যান এই নারীর কাছে টাকা-পয়সা বিস্তর আছে। ব্যাস, লেগে যান কাজে। দু’বন্ধুই পালাক্রমে নারীটিকে ঘিরে যে নাটক সাজায় তাতে দেখা যায়, এক পর্যায়ে এই কেস ‘ডিল’ করার দায়িত্ব পায় বরিশালের ছেলে উভ্র খন্দকার । বন্ধু রোকন কিছুটা আড়াল নেয়।

উভ্র সুপ্রিয়াকে এমন ধারণা দিতে থাকে যে, তাদের এই গভীর সম্পর্ক তার বন্ধু রোকনের সম্পূর্ণ অজানা। উভ্রের রোমাণ্টিক সব কবিতা, বিজ্ঞ বিজ্ঞ প্রেমপত্র উৎসর্গীত হতে থাকে সুপ্রিয়ার তরে। ২০০৯ সালের ঘটনা এটি। বেকার, ভবঘুরে উভ্র নাটক/শর্টফিল্ম বানাতে আগ্রহী। সে সুপ্রিয়াকে জানায়, সে দারুণভাবে মাদকাসক্ত।

একদিন মাদক না গ্রহণ করলে সে স্থির থাকতে পারে না। তবে সে ‘ভালো’ হয়ে যেতে চায়। বন্ধু রোকনও উভ্রের মতে মত দেয় সুপ্রিয়াকে। সুপ্রিয়া তাকে একটু যত্ন করে গাইড করলেই সে সব ছেড়ে দেবে। ‘ভালো’ হতে হলে টাকা দরকার।

সুপ্রিয়া টাকা পাঠায়। অবিবাহিত ‘প্রেমিক’ উভ্র জানায়, প্রয়োজনবোধে সুপ্রিয়াকে এখনই বিয়ে করতে প্রস্তুত এবং সুপ্রিয়া ঢাকায় এলেই সে তার পরিবার-পরিজনের সাথে সুপ্রিয়াকে পরিচয় করিয়ে দেবে বলে প্রতিজ্ঞা করে। এরই মাঝে বাংলাদেশে গেলে সুপ্রিয়াকে ঢাকায় বিমানবন্দরে গ্রহণ করতে যায় উভ্র। উভ্রকে দেখে প্রথমেই চমকে যায় সুপ্রিয়া। ফেসবুকে দেখা ছবি আর তার সামনে দাঁড়ানো মানুষ উভ্র যেন দুই ভিন্ন মানুষ! এর মাথা প্রায় টাক, উস্কোখুস্কো চেহারা, মলিন-ময়লা প্যান্ট, পুরোদস্তুর ভবঘুরে।

এর সঙ্গে ফেসবুকে চৌকস কথাবার্তা-বলা, কবি নামধারী উভ্রকে মেলাতে পারে না সে। সুপ্রিয়াকে তার মায়ের বাসায় পৌঁছে দেবার পথে কারো ফোন আসে উভ্রের মোবাইলে। কৌতুক করে উভ্র ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে বলে, ‘আর চিন্তা নাই দোস্ত। আমার এটিএম কার্ড আইসা পরছে। ’ ঢাকায় উভ্র দিনরাত সুপ্রিয়ার পিছু লেগে থাকে।

কিন্তু সুপ্রিয়ার মন বেঁকে বসেছে ততক্ষণে। একদিন বিকেলে দোদুল্যমান সুপ্রিয়াকে উভ্র নিজের বাসায় নিয়ে যায় মা ও বোনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। ওখানে মাথা-ব্যাথায় আক্রান্ত হলে উভ্র তাকে মাথাব্যথার ওষুধ দেয়। সেটি খেয়ে সুপ্রিয়া গভীর ঘুমে তলিয়ে পরে। সে প্রায় অচেতন হয়ে থাকে কিছুক্ষণের জন্য।

এটাই সুপ্রিয়ার জন্য কাল হয়। সুপ্রিয়াকে বলা হতে থাকে, উভ্রের মোবাইলে সুপ্রিয়ার ‘প্রায় বিবস্ত্র ছবি’ তোলা হয়ে গেছে। উভ্র এইবার সুপ্রিয়ার কাছে সকাল-বিকাল টাকা চাইতে শুরু করে। ভয় পেয়ে সুপ্রিয়াও টাকা দিতে শুরু করে। শুধু টাকাই নয়, উভ্র একদিন জানায় তার মোবাইল চুরি হয়ে গেছে।

মোবাইল দরকার। প্রেমের মাশুল ভালোভাবেই দিতে শুরু করে সুপ্রিয়া। এই পর্যায়ে ‘ত্রাতা, উপদেষ্টা ও বন্ধু’ হিসেবে আবির্ভূত হয় গায়ক ও কবি নামধারী ‘চক্রে’র আরো দু’তিনজন- জয়সল রবি, বন গোমেল প্রমুখ। এরাও সুপ্রিয়ার ফেসবুক বন্ধু এবং এরাও কবিতা লিখে লিখে ফেসবুক মাতান। প্রতিমুহূর্তে এরা বুদ্ধি দিতে থাকে কিভাবে সুপ্রিয়া উভ্রের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারে! সুপ্রিয়ার সামাজিক ভয়কে পুঁজি করে এরা দেদারসে টাকা খসাতে থাকে সুপ্রিয়ার কাছ থেকে।

শুধু তাই নয়, সুপ্রিয়া তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশকালে দু’একজন আভাসে-ইঙ্গিতে সুপ্রিয়ার প্রতি তাদের নিজস্ব ‘ভালোলাগা’ও প্রকাশ করে। তাদের পরামর্শে সুপ্রিয়া পুরোপুরি উভ্রকে বর্জন করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে। সিদ্ধেশ্বরীতে সুপ্রিয়ার বাবা-মায়ের বাড়িতে এর গভীর রাতে চাকুসহ মাতাল অবস্থায় হানা দেয় উভ্র। শেষপর্যন্ত মগবাজার থানার পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে সুপ্রিয়া রোকনের কাছে উভ্র সম্পর্কে তথ্য গোপনের অভিযোগ আনলে রোকন জানায়, উভ্র তার বন্ধু কোনোকালেই ছিলো না।

উভ্র তার ‘এ্যসিসট্যান্ট’ মাত্র, পিছে পিছে ঘোরে। কিন্তু ফেসবুক কমেন্ট ফলো করে পরবর্তী সময়ে পরিষ্কার দেখা যায়, এই তরুণরা পরষ্পর বেশ ঘনিষ্ঠ বন্ধুই এবং তাদের ওঠ-বসের সম্পর্ক রয়েছে। ইতিমধ্যে জয়সল রবি তার অনলাইন ম্যাগাজিনের খরচের নামে নিয়মিত ‘মাসোহারা’ নিয়ে যাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের এক নারীর কাছ থেকে। সেই নারী জানিয়েছে ফেসবুকের মাধ্যমেই জয়সলের সঙ্গে তিনি পরিচিত হলেও, ‘ও আসলে অন্যদের মতো না। অনলাইন ম্যাগাজিন চালাতে প্রতি সপ্তাহেই কিস্তিতে টাকা খরচ করতে হচ্ছে ওর।

তাই পাঠাচ্ছি। ’ একটি রেস্টুরেণ্টে কর্মরত এই নারী ছাড়াও আরো দু’একজন প্রবাসী নারীর কাছেও একই কারণে পয়সা চেয়েছেন তিনি। তাদের কেউ কেউ টাকা পাঠিয়েছেনও। ‘চক্রে’র আরেক সহযোগী বেজা বটক একবছর আগে কানাডার স্কারবরোতে বসবাসকারী এনজিওতে কর্মরত একজন নারীর কাছে ‘প্রফেশনাল’ ক্যামেরা এবং বিশ হাজার টাকা চায়। ভালোবাসা প্রকাশের পাশাপাশি টাকা চাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সেই নারী তৎক্ষণাৎ বেজা বটককে ডিলিট করে দেয়।

জানা গেছে, ঢাকায় রোকন সাকুরসহ অন্যান্যদের এই জাতীয় নানা লেনদেন প্রায়ই এই বেজা বটকের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। (এ প্রতিবেদনের সকল নাম কাল্পনিক) Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।