আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাশ খুঁজছি লাশ

নীল

‘লাশ খুঁজছি লাশ’ হাতে লম্বা হাতলের টর্চ লাইট নিয়ে ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে কি যেন খুঁজে বেড়াচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা। পুলিশের কয়েকটি পিকআপ ভ্যান কখনও আবাসিক হলগুলোর সামনে, কখনও ক্যাম্পাসের রাস্তার মাঝে এই থামছে, এই ছুটছে। সেইসাথে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশের প্রধান ফটকসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে। রোববারের এ দৃশ্য রাতের নিঝুম ক্যাম্পাসকে আরও অদ্ভুতুরে করে তুলল যখন রাত নয়টায়ই ক্যাম্পাসের কোথাও চায়ের টং দোকানটি পর্যন্ত খোলা নেই। কাটাপাহাড়ের রাস্তায় ছাত্রদের চিরচেনা আড্ডা আর গানের শব্দও নেই।

আবাসিক হলগুলোর কমনরুম আর টিভিরুমের হইহুল্লোর পর্যন্ত বন্ধ। ক্যাম্পাসজুড়ে নিথর নিরবতার পাশাপাশি নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশের অবিরাম খোঁজাখুঁজি দেখে চবি রেলস্টেশনে এক নিরাপত্তাকর্মীকে ‘কি খুঁজছেন’ জানতে চাইলে তার সোজসাপ্টা জবাব, ‘লাশ খুঁজছি লাশ। ’ একই উত্তর রোববার গভীর রাত বারটায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের। বললেন, ‘আমরাও লাশ খুঁজছি। শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর খুন করে ফেলে রাখা হয়েছে।

’ এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ গুমের সংবাদ নিয়ে রোববার রাতভর পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় ছিল তোলপাড়। কে, কোন বিভাগের ছাত্রী, কিভাবে নিখোঁজ- পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর সঠিক কোন তথ্য না পেলেও রাতভর তল্লাশি থাকে অব্যাহত। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চবি রেল স্টেশন চত্বরে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী আসাদুজ্জামান খুন হওয়ার তিনদিন পরেই এই ছাত্রী ধর্ষণ ও খুনের উড়ো খবরে আবাসিক শিার্থীরাসহ ক্যাম্পাসবাসীরা আতংকিত হয়ে পড়েন পুরো মাত্রায়। অবাসিক হলগুলোতে শিার্থীরা এতটাই ভীত হয়ে পড়ে যে, রাত ২ টায় পুলিশের সাথে ছাত্রীদের আবাসিক হল প্রীতিলতা গিয়ে দেখা গেল শতাধিক ছাত্রী হলের প্রধান ফটকের ভেতরের মেঝেতে বসে আছে। তাদের সকলের চোখে মুখে ভয় আর অতংকের ছাপ।

পুলিশ আর সংবাদিকদের দেখে অনেকেই বলে উঠলেন, ‘আমরা আর এখানে থাকতে চাই না। আমরা কি নিরাপদে বাড়ি যেতে পারব ?’ অনেকে অভিযোগ জানালেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বললেন, একের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থী খুন হচ্ছে। অথচ প্রশাসন কিছুই করছে না। এমন একটা ঘটনা শোনার পর হল প্রভোস্ট বা প্রক্টর কেউ আমাদের সান্ত্বনা দিতেও হলে আসেন নি।

অন্যান্য আবাসিক হলগুলোতেও ছিল একই চিত্র। ছাত্র হলগুলোর প্রধান ফটকে বড় বড় তালা ঝুলছে। এ ঘটনার পরপর সোমবার সকাল না হতেই শিার্থীরা সদলবলে আবাসিক হল ছাড়তে শুরু করে। বৃহস্পতিবারে ছাত্র খুনের ঘটনার পর বিশ্ববিদ্য্লায় প্রশাসন শনি, রবি ও সোমবার সকলপ্রকার কাশ স্থগিত করে। এ প্রেেিত অনেক শিার্থী শুক্রবারই হল ত্যাগ করেছিল।

অথচ মঙ্গলবারে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগেই শিার্থীরা হল ত্যাগ করছে। ক্যাম্পাসের এমন পরিস্থিতিতে চবি উপাচার্য অধ্যাপক আবু ইউসুফ জানালেন, ‘ছাত্রী খুনের খবর শোনার পর পুলিশকে সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা প্রতিটি বিভাগ, হলসহ পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়েছে। তবে কোথাও কিছু পাওয়া যায় নি। ’ ক্যাম্পাসে আতংক ছড়াতেই একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ সংবাদ ছড়িয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। উপাচার্য জানান, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কখনও কিছু ঘটেনি।

ক্যাম্পাস সম্পূর্ন নিরাপদ এবং নিরাপদ থাকবে। শিাীর্থীরা একটু সচেতন হলেই ক্যাম্পাসের প্রাণবন্ত পরিবেশ বহাল থাকবে। উপাচার্য হিসেবে সবসময়ই আমি সাধারণ শিার্থীদের পাশে থাকব। যেকোন মূল্যেই ক্যাম্পাসে শিার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখব। সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার সোমবার সকালে জানান, ‘ যেহেতু আমরা কারও লাশ পায়নি, তাই এটি গুজব বলে ধরে নেয়া যায়।

’ সাংবাদিকদের অনুসন্ধানেও মনে হল এটা গুজব। দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিনিধি মাহবুব মিলন,সমকালের প্রতিনিধি মনিরুল সোহাগ,যুগান্তরের কামরুজ্জামান বাবলু আর দৈনিক কালের কন্ঠের শামীম হাসান লাশ খুঁজতে চষে বেড়ালেন ক্যাম্পাস। পুলিশের গাড়ীতে করে ছাত্রী হলগুলোতে খোঁজখবর,লাশ দেখা গেছে সম্ভাব্য এমন জায়গায় খোঁজাখুজি,মেডিকেল সেন্টারের রেজিস্টার যাচাইসহ কি না করেনি তারা রাতভর। অবশেষে তাই আমরা বলতে পারি এটা গুজবই। আল আমীন দেওয়ান


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।