আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্য জাপানিজ ওয়াইফ



ভিএনএন বাংলা থেকে এপার ওপারের বাংলা ভাষায় নির্মিত সুস্থ ও আর্ট ফিল্মগুলোর সাথে আগ্রহী পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একটি টিম প্রতি মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলোর রিভিউ, পরিচালকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তা বাংলাভাষী পাঠকদের সাথে শেয়ার করবে। আপনারা যারা এই ধরণের সিনেমা দেখতে আগ্রহী তাদের জন্য এই পোস্ট। পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্দেশক অপর্না সেনের সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র "দ্য জাপানীজ ওয়াইফ"। সিনেমা মুক্তি উপলক্ষ্যে অপর্না সেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন দেবাশিষ রায়।

সাক্ষাৎটি ইংরেজিতে গ্রহণ করা হয়েছিল। পাঠকের জন্য বাংলা অনুবাদ নিবেদিত হলো। দেবাশিষ রায়ঃ আপনার পূর্ববর্তী চলচ্চিত্রগুলো থেকে সম্পূর্ন আলাদা দ্য জাপানিজ ওফাইফ। গল্পের মূল উপজীব্যকে ফুটিয়ে তোলার জন্য আপনাকে কী ধরণের সিনামাটিক পরিবর্তন করতে হয়েছে? অপর্না সেনঃ আসলে এই সিনেমায় মূল চ্যালেঞ্জ ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপানি সময়টাকে অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ভাবে ফুটিয়ে তোলা। সেটাই ভালোভাবে করার চেষ্টা করা হয়েছে।

দেবাশিষ রায়ঃ আপনার মূখ্য চরিত্র স্নেহময় হিসেবে অত্যন্ত চমৎকার অভিনয় করেছেন রাহুল বোস। তার চরিত্র ছিল পরবাস্তব, সাররিয়াল। গল্পকারের তৈরী এই সাররিয়েলচরিত্র সিনেমার পর্দায় ফুটিয়ে তোলার সফলতার ব্যপারে আপনি কতটুকু নিঃসংশয় ছিলেন? অপর্না সেনঃ [সিনেমার ক্ষেত্রে] কেউ প্রতিদিনের বাস্তবতাকে খোঁজে না। তাছাড়া শুধু একটিচরিত্রটি নিজে নয়, বরঞ্চ সম্পূর্ন গল্পটিই পরবাস্তব। স্নেহময় চরিত্রটি আমাদের প্রতিনিয়ত চোখের সামনে থাকা সাধারণ একটি পৌনপুনিক চরিত্র যার জীবনটা ঝামেলাহীন, একঘেয়ে।

তবে অন্যসবার থেকে সে আলাদা একটি কারণেই- সেএকজন জাপানী রমনীকে বিবাহ করেছে যার সাথে কোনোদিন সাক্ষাতের সুযোগ হয়নিতাঁর। গল্পটি আনন্দোচ্ছল আবার অযৌক্তিক, কিম্ভুতকিমাকার আর এই কারণেই আমিগল্পটিকে চলচ্চিত্রে রূপদান করতে আগ্রহী হয়েছিলাম। দেবাশিষ রায়ঃ উদ্ভট এক পরিস্থিতি, তাই না? অপর্না সেনঃ আসলে মধ্যবিত্তদের প্রতিদিনের জীবনকে চলচ্চিত্রে রূপ দিতে দিতে আমি মোটামুটি বিরক্ত- এবং ক্লান্ত। দেবাশিষ রায়ঃ অভিনেতা অভিনেত্রীদের প্রসংগে আসি। আমার মনে মৌসুমী চ্যাটার্জি দারুনভাবে ফিরে আসলেন এই সিনেমার মাধ্যমে।

উনি কী আপনার প্রথম পছন্দ ছিলেন? অপর্না সেনঃ সত্যি বলতে আমি অন্য কয়েকজনের সাথে কথা বলেছিলাম চরিত্রটিরব্যপারে। তবেমৌসুমী যখন আমার কাছে আসলো, আমি সবার কথা ভুলে গেলাম। খুব সম্ভব আমারসম্ন্বয়কারী সোহাগ সেন আমাকে বলেছিলেন, চরিত্রটিতে আমি মৌসুমীর কথা ভেবেছিকিনা। ওর নামটা শোনামাত্রই আমার মনে হলো, আমি যাকে খুঁজছিলাম তাঁকেপেয়েছি। এই চরিত্রের জন্য ওই সবচেয়ে উপযোগী।

দেবাশিষ রায়ঃ চিঙ্গুসা তাকাকুকে পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু বলুন। অপর্না সেনঃ আচ্ছা। প্রথমত সে ইংরেজিতে ভালো অনভিজ্ঞ। তাই তার সাথে আমার কথা বলতেহয়েছে দোভাষীর মাধ্যমে। তবে একটা জিনিস নিশ্চিত, অভিনেত্রী হিসেবে সে খুবই সেনসিটিভ।

আমার মনে পড়ে দোভাষীর মাধ্যমে আমি তাকে একটা পরিস্থিতিতে বলেছিলাম সম্পূর্ণ ব্যাপারটি অনুভব করতে। সে জাপানীতেই বললো, hi hi. যারঅর্থ হ্যাঁ হ্যাঁ। তারপর থেকেই তার ভাবভঙ্গি বদলে গেলো। সে আসলেই খুব সেনসেটিভ একজন অভিনেত্রী। দেবাশিষ রায়ঃ আপনার সিনেমাটি ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চারের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে।

সামগ্রিকভাবে সম্পূর্ণ ব্যাপারটি বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য খুবই দারুন একটিব্যপার। এ নিয়ে আপনার ভাবনা কী আমাদের বলবেন? অপর্না সেনঃ হুম, বাংলা, ভাষাভাষির দিক থেকে পৃথিবীতে ষষ্ঠ। ভারত এবংবাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর আনাচে কানাচে বাঙালিরা ছড়িয়ে আছে। আর আপনার চিন্তাভাবনা তাদের সাথেশেয়ার করতে চাইলে আপনি সেটাকে সবার হাতের মুঠোয় পৌঁছাতে চাইবেনই। তাছাড়াআমার আরও ভালো লাগছে বাঙালিরা ছাড়াও এখন সিনেমাটি সারাদুনিয়ার অসংখ্যমানুষের কাছে পৌঁছাবে।

এই কথাভেবেই সিনেমাটিতে পুরো সময় জুড়ে সাবটাইটেল সংযুক্ত করা হয়েছে। দেবাশিষ রায়ঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার বসবাসকারী ভারতীয়তাঅতিশীঘ্রই "জাপানিজ ওয়াইফ" দেখতে পাবেন। এই যে সমগ্র বিশ্বজুড়ে দর্শক তৈরী হবার ব্যাপারটি, এটিকী আপনাকে আকর্ষণ করছে? আপনি কী উত্তেজিত? অপর্না সেনঃ অবশ্যই, আমি উত্তেজিত। আমি অধীর আগ্রহে তাদের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য অপেক্ষা করছি। আমি খুবই খুবই আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

দেবাশিষ রায়ঃ আমি নিশ্চিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আপনার ভক্তরা খুবই আনন্দিত হবে যেহেতু ভারতের একেবারে সাথে সাথেই সেখানে সিনেমাটী প্রদর্শিত হচ্ছে? তাই না? অপর্না সেনঃ হুম। ইতিমধ্যে মানুষজন আমারকাছে বিভিন্ন জিনিস জানতে চাইচ্ছে। শুধু ভারতেনা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও। মানুষের কৌতুহলী প্রশ্ন আমি পাচ্ছিফেসবুকেও। দেবাশিষ রায়ঃ আচ্ছা এবার বলুন, এই ধরণের আন্তর্জাতিক মানের গল্পকে সিনেমায় রূপ দিতে আপনাকে সবচেয়ে বড় কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে? অপর্না সেনঃ আমি যখন গল্পটা প্রথম শুনি আমার কাছে এটাকে মনে হয়েছিল, উদ্ভট এবং খানিকটা অযৌক্তিক।

তবে গল্পটা আমার মনে এক ধরণের ভালোলাগার সৃষ্টি করেছিল। কোনো সন্দেহ নেই, গল্পটা খুবই উচ্ছ্বল। আজকের এই দিনে যখন মানবিক সম্পর্ক বেশঠুনকো এবং ভঙ্গুর, আমার মাথায় আইডিয়া হলো এমন একটা গল্প সিনেমা তৈরীর জন্য খুবই উপযোগী। আর গল্পের আবহ মাথায় রেখেই আমি কোনো ধরণের অত্যাধুনিক যন্ত্রব্যবহার করেনি যা সিনেমাটিকে কৃত্রিম করে ফেলতে পারে। আমি একদম ক্ল্যাসিকাল ভাবে একটি চমৎকার গল্পকে সিনেমায় রূপ দিতে চেয়েছি।

দেবাশিষ রায়ঃ চলচ্চিত্রে প্রফেসর কুনাল বসুর জড়িত থাকা নিয়ে বলুন। তিনি তো পুরোটা জুড়ে দারুনভাবে লেগে ছিলেন। অপর্না সেনঃ সে সিনেমাটির সাথে প্রথম থেকেই যুক্ত ছিল। সে আমার আর আমার স্বামীরপরিচিত। আক্ষরিকভাবেই আমরা তিনজন টানা সিনেমা নিয়ে কাজ করেছিলাম।

কুনালেরস্ত্রী সুস্মিতাও আমাদের সাথে ছিল। যখন চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছিল তখনআমি কুনাল এবং আমার স্বামী কল্যানকে ইমেইল করে দিতাম। আমরা চারজনইচিত্রনাট্য লেখার সময় দারুন ভাবে একত্রিত ছিলাম, তবে কুনাল আর আমি ছিলামআরেকটু বেশি। ইমেইলের পাশাপাশি ওর সাথে আমার এস এম এস এ কথা হতো ফলেচিত্রনাট্য লেখার সময় আমি ওর অনেক ইনপুট পেয়েছি। দেবাশিষ রায়ঃ আমাদের পাঠকদের বলছি।

প্রফেসর কল্যান রায় নিউজার্সিতে থাকেন। আচ্ছা,অন্তহীন সিনেমাটিতে তো তিনি আপনার স্বামী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। নিজেরস্বামীর সাথে স্ত্রী হিসেবে অভিনয় করাটা নিশ্চয়ই দারুন উত্তেজনার ব্যপারছিল? অপর্না সেনঃ হুম। যদিও আমরা এখন আলাদা হয়ে গেছি তারপরও এখনও আমরা একে অন্যকে সময় দেই। সিনামাতেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।