আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লালমোহনে তাণ্ডব,আলম জখম, ৭ মহিলার বস্ত্র হরণ---দৈনিক মানবজমিন

জীবনের এত গভীরে প্রবেশ করে কি লাভ, জীবনটা হউক হুমায়ুন আহমেদের সাহিত্যের মত !

মনিরুল ইসলাম/নাঈমূল ইসলাম, লালমোহন থেকে: ভোলা-৩ আসনে নির্বাচনী গণসংযোগ চালানোর সময় বিএনপি’র নির্বাচনী সমন্বয়ক এবং ভোলা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলমকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেছে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। বিএনপি’র গাড়ি বহরে হামলা চালিয়ে ১২টি মাইক্রো ও প্রাইভেটকার ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় লালমোহন উপজেলার ফরাশগঞ্জ ইউনিয়নের সাতানী বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় আওয়ামী লীগ অস্ত্রধারীদের হামলায় বিএনপি’র শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। প্রত্যড়্গদর্শীরা জানান, অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ কর্মীদের মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

সকালে নাজিমউদ্দিন আলমসহ প্রায় শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মী নির্বাচনী গণসংযোগে নামলে আওয়ামী লীগ অস্ত্রধারীরা তাদের পিছু নেয়। তারা লালমোহনের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মারপিট করছে বলে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেছেন। গতকাল তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা এ পর্যনত্ম কমপক্ষে সহস্রাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করেছে। এদিকে গতকাল সকালে আহত নাজিমউদ্দিন আলমসহ অনত্মত ২০ জনকে লালমোহন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার পর অস্ত্রধারীরা বেলা সাড়ে ১২টার সময় লালমোহন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ সময় মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ হাসপাতালে নাজিমউদ্দিন আলমসহ আহত নেতা-কর্মীদের দেখতে গেলে তার ওপর তারা হামলা চালায়।

এ সময় সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা দৈনিক দিনকাল লালমোহন উপজেলা প্রতিনিধি মো. শহিদুল ইসলামকে পিটিয়ে জখম করে। সন্ত্রসীরা হাতুড়ি ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে তার হাত-পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। তার ক্যামেরা, মোবাইল ফোনসহ সকল সরঞ্জামাদি ছিনিয়ে নেয় তারা। ক্যাডারদের কাছে বহু আকুতি-মিনতির পর তাকে লালমোহন হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব হয়েছে বলে তার পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন। বেলা সোয়া ১টার সময় আহত অন্যদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করতে না পেরে মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বিএনপি’র ওই সব আহতদের নিয়ে ভোলা সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করান।

এছাড়া লালমোহন হাসপাতালে আহতাবস্থায় ভর্তি আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমীন বাবলু, মমিনুল হক মিন্টু, জামাল, সজীব, চিনু মিয়া, বিল্লাল, ইব্রাহীম ও ঝন্টুসহ ২০ নেতা-কর্মী। এর আগে বুধবার দিনগত গভীর রাত পৌনে ১টায় লালমোহনের লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড যুবদল সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের বাড়িতে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়। মিজানুর রহমান জানান, বুধবার বিকালে লর্ড হার্ডিঞ্জ বাজারে মেজর হাফিজের জনসভায় যাওয়ার অপরাধে ক্যাডারার তার উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। এ সময় ৭ মহিলাসহ ১০ জনকে পিটিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। আহতরা হলো- রাশেদা বেগম (২৫), জাকিয়া বেগম (২২), খাদিজা বেগম (৪০), পিয়ারা বেগম (২১), রিজিয়া বেগম (৫০), পারুল বেগম (২৫), মুক্তা (২০), কাইয়ূম (২৮), সবুজ (১৯) ও মিজানুর রহমান (৩০)।

আহতদের লর্ড হার্ডিঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। লালমোহন উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক এনায়েত কবির এ প্রতিনিধিকে জানান, সশস্ত্র আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা ‘জয় বাংলা’ সেস্নাগান দিয়ে যুবদল নেতা মিজানের বাড়িতে হামলা চালায়। ধারালো রামদা ও বটি দা দিয়ে তার বাড়িঘর কুপিয়ে তছনছ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সশস্ত্ররা রাতের আঁধারে বাড়ির মহিলাদের তুলে নিয়ে নৃশংস নির্যাতন করে। যুবতীদের বস্ত্র হরণ করে উল্লাস করতে থাকে।

এদিকে কালমা ইউপি ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার ও বিএনপি নেতা আবদুর রবকে তার বাড়ি থেকে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও এখন পর্যনত্ম তাকে কোথায়ও পাওয়া যায়নি। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার সকালে ক্ষতিগ্রসত্ম ওই বাড়ি পরিদর্শন করেন। তিনি আহত ও নির্যাতিত মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের মেজর হাফিজ বলেন, আওয়ামী লীগের এ নারকীয় তাণ্ডবলীলাই প্রমাণ করে আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না।

এদিকে লালমোহনে হামলার খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে ভোলা জেলা বিএনপি তাৎক্ষণিক বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ভোলায় আগত সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাজাহান ও ভোলা জেলা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ গোলাম নবী আলমগীরের নেতৃত্বে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল এবং নতুন বাজারের টাউন হল চত্বরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, জুলুমবাজ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ডাক লালমোহন থেকেই আসছে। তিনি বলেন, এ হামলার দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে। পুলিশ বাহিনী কোন ভূমিকাই নিচ্ছে না।

তারা ক্যাডারদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েই সন্ত্রাস চালাচ্ছে। জনতার হাতে আইন চলে গেলে এ প্রতিরোধ কেউই ঠেকাতে পারবে না। মোশারেফ হোসেন শাজাহান, আলহাজ গোলাম নবী আলমগীর প্রমুখ নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। ওদিকে এ হামলার ব্যাপারে ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মমিন টুলুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি তজুমদ্দিনে নির্বাচনী গণসংযোগে ব্যসত্ম, তাই লালামোহনের কোন খবর আমার কাছে নেই। লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ একে এম নজরুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জানান, আওয়ামী লীগের কোন লোকজনই বিএনপির’ কারও উপর হামলা চালায়নি।

তিনি বলেন, এটি বিএনপি’র অভ্যনত্মরীণ কোন্দলের জের। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গণসংযোগে ব্যসত্ম আছি, পরে কথা বলবো। বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি বিনয় কৃষ্ণ বালার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি গতকাল এ প্রতিনিধিকে জানান, আসন্ন নির্বাচনে লালমোহন-তজুমদ্দিনে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। ভোলার পুলিশ সুপার এস এম নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি ঘটনাস্থলে আছেন।

সার্বিক বিষয় মনিটরিং করছেন। লালমোহন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হোসেন জানান, পরিস্থিতি শানত্ম রাখার চেষ্টা চলছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে মামলা নেয়া হবে। এদিকে এ ঘটনার পর থেকেই লালমোহনে চরম উত্তেজনা চলছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।