আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পোষ্ট ভিউ: বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ওয়ানডে এবং দু'টো টি-টুয়েন্টি।

সামু বন্ধ থাকার কারণে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের দু'টো ওয়ানডে আর দু'টো টি-টুয়েন্টির পোষ্ট ভিউ লেখার পরেও পোষ্ট করা হয়নি। সেগুলো ফেসবুক ওয়ালে জমে ছিলো। ব্লগে রেখে গেলাম একসাথে। পোস্ট ভিউ: বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডে (০৫-০৫-২০১৩)। ১) টানা দ্বিতীয়বার টস হেরে বুলাওয়ের ফ্ল্যাট উইকেটে দু'বারই ব্যাটিং পেয়ে সকালে মুশফিক নিজেকে খানিকটা সৌভাগ্যবান দাবী করতেই পারতেন।

কিন্তু সবদিন সমান যায় না। ২৫২ রানের মডারেট স্কোর করার পরেও আজ জেতা গেলো না আসলে জিম্বাবুয়ের ক্লিনিকাল ব্যাটিং আর শেন উইলিয়ামসের অসাধারণ ইনিংসটার কাছে হেরে গিয়ে। এশিয়া কাপ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ এবং শ্রীলংকা সফরে বাংলাদেশের যে উত্থান হয়েছিলো তা একটা ধাক্কা খেয়েছিলো সফরের প্রথম টেস্টটা হেরে। আজ মোটামুটি পতনটা বোঝা গেলো। ব্যাপার না, দিস ইজ নট দ্যা এন্ড অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড।

২) ম্যাচের মাত্র তৃতীয় ওভারের সময় 'ক্রিকেটখোর' নামের একটা গ্রুপে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম এটা লিখে যে, ৩০-৩৫ ওভারের আগে বাংলাদেশের ৫ উইকেট পড়ে যাবে। বাংলাদেশ আজ 'ওভার কনফিডেন্স সিনড্রোম' এ ভুগতেছে। ঠিক ৩০.৩ ওভারেই দেখি ৫ উইকেট নেই। এতে সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হয়েছে, অ্যাজ ইউজ্যুয়াল ব্যাটিং পাওয়ার প্লেটা আজও কাজে লাগাতে পারিনি। ফলাফল কিছুটা হলেও পড়েছে স্কোরে।

৩) তামিম ফুট মুভ না করে বলের লাইনে না গিয়ে একটা চাইল্ডিশ আউট হয়েছে শুরুতেই। একটু পরে দেখাচ্ছিলো তামিমের 'বয়স তো মাত্র ২৩, এখন না পটালে পটাবো কখন' অ্যাডটা। মনে হলো, তামিম কি বোলার চাতারা আর উইকেটকিপার টেইলরকে পটিয়ে সাজঘরে ফিরলেন? ৪) আশরাফুল যদি আবার বাদ যায় তার মূল কারণ হবে একই ভুল একাধিকবার করার পরেও নিজেকে শোধরাতে না পারা। রবি শাস্ত্রির একটা সাক্ষাতকারে শুনেছিলাম বিরাট কোহলি পর পর দুই ম্যাচে অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে কট বিহাইন্ড হওয়ায় পরের ম্যাচের আগে টানা তিনদিন বোলিং ম্যাশিন নিয়ে ওই একটা বলেই ব্যাটিং অনুশীলন করেছিলো ঘন্টার পর ঘন্টা। সহ খেলোয়াড়রা নেট থেকে চলে আসার পরেও একা একাই।

প্রতি ১০০ বলে ১০০ টা ঠিকমত কানেক্ট করার পরেও থামেনি। ফাইন লেগে একবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া আশরাফুল আজ কট বিহাইন্ড। এটা বড় ব্যাপার না। বড় ব্যাপারটা হলো থার্ডম্যানে পুশ করে সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টায় আগেও বেশ কয়েকটা মিস টাইমিং করার পরেও ও ক্ষ্যান্ত দেয়নি। স্টিভ ওয়াহ'র খুব সম্ভবত পুল-হুকে সমস্যা ছিলো।

ও দশ হাজারের বেশি রান করেছে এই শটটাকে অ্যাভয়েড করেই। মমিনুল তিনটা লাইফ পেয়েছে। দু'টো অতি সহজ ক্যাচ পড়েছে ওর, টেইলর লেট রিফ্লেক্সের কারণে স্ট্যাম্পিং মিস করেছে। তারপরেও ধরতে গেলে কিছুই করতে পারেনি মমিনুল। বাংলাদেশ দলে মাঝে মাঝেই নিজেদের মধ্যেই একজন ভিলেনের উদ্ভব হয়।

একসময় ছিলো রকিবুল, তারপর রুবেল, বর্তমানে শাহাদাত। মমিনুলেরও সম্ভাবনা নাকচ করে দেওয়ার মত না। ৫) সাকিবকে ব্যাট-প্যাড হওয়ার পর এলবিডাব্লিউ দেওয়ায় সাকিব পিচের উপর ব্যাট দিয়ে বাড়ি মেরে রিয়াক্ট করেছে। আচরণটা অবশ্যই স্পোর্টসম্যানশিপকে সাপোর্ট করবে না, ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড অখেলোয়াড় সুলভ আচরণ করার পরেও ছেলে স্টুয়ার্ট ব্রডকে শুধু ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দিলেও ফাইন করতে পারে সাকিবকে। ব্যানও করতে পারে।

তারপরেও বলবো, সাকিবের কাজটা আমার খারাপ লাগেনি। বলছি না উচিত হয়েছে, কিন্তু আম্পায়ারের ভুলের একটা লিমিট তো আছে না-কি! মুশফিককে যে এলবিডাব্লিউটা দিয়েছে সেটায় বল লেগ স্ট্যাম্প মিস করতো। জিয়ার কট-বিহাইন্ডটাও আউট হয়েছে বলে মনে হয়নি। ওয়েন চিরম্বে আর জোহানেস ক্লইটে নামের দু'জন আম্পায়ার কোথা থেকে জোগাড় করেছে কে জানে! তবে একটার পর একটা ভুল ডিসিশন আমাদের বিপক্ষে যাওয়ায় মারিও বালোতেল্লির মত বলতে ইচ্ছে করছে, 'হোয়াই অলওয়েজ আস?' ৬) রাজ্জাক তার জীবনের সেরা ব্যাটিংটাই করেছে আজ। আমার ধারণা বিকেসপি বা বিমানে ওপেনিং করার সময়ও ও এমন দুর্দান্ত ইনিংস খেলেনি কোনোদিন।

২১ বলে ৫০ করে ভাগ বসিয়েসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবচেয়ে কম বলে ফিফটি করা আশরাফুলের রেকর্ডে। এটা সম্ভবত ৯ নাম্বারে নামা ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে কম বলে ফিফটির বিশ্বরেকর্ডও হতে পারে। জায়গায় দাঁড়িয়ে ৫ টা বিশাল ছক্কা মেরেছে। গেইল ভেবে বিভ্রান্ত হওয়ার মত সব ছক্কা। একটাতে তো মাঠের বাইরে নিয়ে ফেলেছে বল।

শেষবার কোনো বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের বল হারানোর ইতিহাস মনে করার চেষ্টা করলাম। সেটা সম্ভবত আকরাম খান হারিয়েছিলো আইসিসি ট্রফিতে। এরপর আর ছক্কা মেরে বল হারানো দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না। ৭) শফিউল বেশিরভাগ সময়ই শুরুতে উইকেট এনে দেয়। আজও দিয়েছে।

জিয়া শুরুতে খুব বাজে বল করেছে। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে একটার পর একটা ওভারপিচ আর শর্ট ডেলিভারি করে গেছে। শেষে এসে গুছিয়ে উঠেছে যদিও। সময়মত টেইলরের উইকেটটাও নিয়েছে। রবিউল ইজ নট অ্যা গুড ওনানডে বোলার ইয়েট।

সাকিব রিদম ফিরে পাচ্ছে। টেইলরের আউট পর্যন্ত মোটামুটি ম্যাচে ছিলো বাংলাদেশ। এরপর আসলে শেন উইলিয়ামস আর ম্যালকম ওয়ালারের পরিকল্পিত এবং দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের কাছে হেরে গেছে। তবে মুশফিক যখন দেখলো উইলিয়ামসকে আউট করা যাচ্ছে না তখন নাসির এবং আশরাফুলের অফ স্পিন ব্যবহার করে দেখতে পারতো। করেনি।

৮) দর্শককে বলা হয় হোম দলের টুয়েলভথ্ִ ম্যান। জিম্বাবুয়ের ধরতে গেলে তাও নেই। হাতে গোনা কতিপয় দর্শক মাঠে আসে। এজন্যই আম্পায়ারকে টুয়েলভথ্ִ ম্যান বানিয়েছে জিম্বাবুয়ে। ক্যামেরার মান খুব খারাপ।

কট বিহাইন্ড গুলো অনেক ক্ষেত্রেই বোঝা যায় না। এমন কী স্পিডোমিটারও নেই যে বোলারের বোলিং ভ্যারিয়েশন বোঝা যাবে। ডিসগাস্টিং ট্যুর। ৯) খেলা শেষে লিখতে বসলে কী দেখলাম তা রিক্যল করতে হয়। বাংলাদেশ হারলে সেটা করতেই ইচ্ছে হয়না।

লিখতেও ইচ্ছে হয় না। এই লেখাটা একটা 'অনিচ্ছাকৃত লেখা'। পোস্ট ভিউ: বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে তৃতীয় ওয়ানডে (০৮-০৫-২০১৩)। ১) এশিয়া কাপ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং শ্রীলংকা সিরিজের পর বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে রেপুটেশন তৈরি হয়েছিলো ক্রিকেট বিশ্বে, তার এপিটাফ লেখা হয়ে গেলো আজ। এই কথা বলাটা মানে জিম্বাবুয়ের জয়কে খাঁটো করা না।

আম্পায়ারের দাক্ষিণ্য ছিলো, কিন্তু স্বীকার করতে দ্বিধা নেই গত দুই ম্যাচে তারা বাংলাদেশকে সব ডিপার্টমেন্টেই হারিয়েছে। ক্লিনিক্যাল দু'টো জয় তুলে নিয়েছে। ২) এখন কাঁটাছেড়া শুরু হবে। সিরিজের আগে কেন প্রস্তুতি ম্যাচ রাখা হয়নি, কেন দেশে পেস বান্ধব উইকেট করা হয়না, কেন এতদিনেও একজন কোয়ালিটি কোচের নিয়োগ দেয়নি বিসিবি, কেন স্পেশালিস্ট ব্যাটিং কোচ নেই, বিপিএল আসলেই কোনো ইফেক্ট ফেলেছে কি-না, ব্লা ব্লা ব্লা। তবে কিছু প্রশ্নের সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা যেতে পারে।

৩) উইকেটের সামনে বল রিসিভ করে শুধু দিকটা পরিবর্তন করে উইকেটে লাগানো; এটা বেশিরভাগ খেত্রে ধোনিকেই করতে দেখি। মুশফিক ইদানিং এই স্কিলটা ডেভেলপ করেছে। সাথে সাথে ধোনির টস ভাগ্যটাও পেয়ে গেছে। একদিন কাকে যেন বলতে শুনেছিলাম, ধোনি তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের তিন ভাগের এক ভাগ টসও জেতেনি। টানা ৫ টস জিতে ক্যাপ্টেনসি শুরু করা মুশফিক গুরুত্বপূর্ণ তিনটা টসই হারলো।

তিনদিনই সকালের ময়েশ্চার ব্যবহার করে সুইং প্রদর্শন করে গেলো জিম্বাবুয়ে। তাতে নাকাল হলো বাংলাদেশের টপ অর্ডার। দুই পাশ থেকে দুই নতুন বল ব্যবহারে প্রায় ২৫-৩০ ওভার পর্যন্ত বল নতুন আর শক্ত থাকে। তিন ম্যাচেই ৩০ ওভারের আগে টপ অর্ডারের ৫/৬ টা করে ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরে গেল তাতেই। না পারলাম ব্যাটিং পাওয়ার-প্লে কাজে লাগাতে, না পারলাম স্লগ ওভারগুলো ব্যবহার করতে।

আর দ্বিতীয় ইনিংসে পিচ হয়ে যায় পুরো ফ্ল্যাট, সুইং থাকে না। পেসারদের দোষার তেমন কিছু নেই। না, ভাগ্যকে দোষ দিচ্ছি না, প্যাথিটিক সত্যটা লিখলাম। ৪) ব্রায়ান ভিটোরি ফিরেই তামিমের 'অর্ডিনারি' শব্দের জবাব দিয়ে দিয়েছে। ভাবেন তো, টেস্ট-ওয়ানডে পুরো সিরিজে ও ফিট থাকলে কতটা হ্যাপা পোহাতে হতো! তামিমের গায়েই তো বার দুয়েক হিট করেছে।

দুই পাশ থেকে জার্ভিস আর ভিটোরির মত দু'জন সুইং বোলার আসলেই বিশেষ কিছু। চিগাম্বুরা তো আছেই। এমপফু না থাকলেও চাতারা আর সিঙ্গি খারাপ না। সাথে উতসেয়া এবং ক্রিমারের মত দু'জন কোয়ালিটি স্পিনার থেকে একজনকে বেঁছে নেওয়ার সুযোগ। জিম্বাবুয়ের বোলিং অ্যাটাক বাংলাদেশ থেকে ঢের ভালো এসব কন্ডিশনে।

৫) জিম্বাবুয়ের উইক লিংক ফিল্ডিং। অনেক ক্যাচ ছেড়েছে ওরা। হ্যা বাংলাদেশও ছেড়েছে। আজকেই তিনটা ফেলেছে বাংলাদেশ কিন্তু জিম্বাবুয়ের তুলনায় সে ঢের কম। জার্ভিসের বলে শুরুতেই চিগাম্বুরা তামিমের সহজতম ক্যাচ ফেলেছে।

তারপরও একটা বড় ইনিংস গড়তে পারেনি তামিম। তিন ম্যাচে কোনো বাংলাদেশীর সেঞ্চুরী নেই। তিন ম্যাচেই টপ অর্ডারের প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানের একটা ফিফটিও নেই। এই পরিসংখ্যানটা অনেক কিছু বোঝাবে। ৬) আশরাফুল ভিটোরির এক্সট্রা লাফিয়ে ওঠা একটা বলে আউট হয়েছে।

জহুরুল প্রথম বলেই একটা দুর্দান্ত ইনসুইঙ্গারের শিকার। ধাক্কাটা রিকভারি করে যখন সঠিক পথে বাংলাদেশ তখনই তামিম-মুশফিক-সাকিবের ছক্কা হাঁকানোর উচ্চাভিলাশী তিনটা শট। আর তাতেই মূলত ভূপাতিত বাংলাদেশ। নাসিরের আরেকবার কন্সিসট্যান্ট শব্দটার গায়ে কোট পরানোর রুটিন এবং শেষমেষ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পূর্ণ ফর্মে ফেরা। আগের ইনিংস দু'টোতে ইঙ্গিত ছিলো, আজ ফিরলো পুরোপুরিই।

রিয়াদের বিশেষ একটা গুন আর অনেকের মত রাশ আউট করে না। ম্যাচ শেষ করে আসে। মাহমুদউল্লাহর সর্বোচ্চ ৫ ইনিংসেই ও অপরাজিত ছিলো। ৭) আশরাফুলের দুর্দিনে এনামুল হক বিজয়কে বেশ মিস করতেছি। শামসুরকে একটা সুযোগ দিতে পারতো।

আশাকরি টি-টুয়েন্টিতে পাবে। সাকিবের ব্যর্থতায় তার বউকে বা বিয়েটা টেনে আনা প্যাথিটিক লাগছে। ভুলে না যাই, সদ্যই ইনজুরি থেকে ফিরেছে ও। আর বহু ম্যাচে ও বাংলাদেশকে একাই টেনেছে কিছুদিন আগেও, এটা ভুলে যাবার না নিশ্চয়ই। ৮) বহুদিন পর একটা ব্যাটিং পাওয়ার প্লে উইকেট ছাড়া মোটামুটি ভালোই কাটালো।

তবে উইকেট যা যাবার তা তো আগেই গেছে। এই সিরিজ সেই পাইলোট যুগকে মনে করিয়ে দিলো। এককালে টপ অর্ডারের সব উইকেট পড়ে গেলে পাইলট-সুজন-রফিকরা মিলে সম্মানজনক ইনিংস দাঁড় করাতো। এবারও কাছাকাছি একটা রেপ্লিকা দেখলাম। ৯) বোলিং যথেষ্ট অর্ডিনারি হয়েছে।

স্পিনিং উইকেট না তাই সাকিব-রাজ্জাককে নাই টানি। জার্ভিস-সিঙ্গি-ভিটোরি-চাতারা-চিগাম্বুরার উত্তর হতে পারেনি রবিউল-শফিউল-জিয়া। পেসারদের দুর্দিনে মাশরাফিকে প্রচুর অনুভূত হয়েছে সত্যিই। ১০) অভিনন্দন জিম্বাবুয়ে। পোস্ট ভিউ: বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে প্রথম টি-টুয়েন্টি (১১-০৫-২০১৩)।

১) আজকেও টস হেরেছে মুশফিক। টানা ছয়টা টস হার। এরপর মুশফিক যদি দেশে ফিরে বলে, আমি আসলে একটার পর একটা টসে পরাজিত হয়ে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম; আমি মোটেও অবাক হবো না। ২) টেস্টে ভালো ফর্মে থাকার পরেও মমিনুলকে প্রথম ওয়ানডেতে বাদ দিয়ে যেমন বাজে উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়েছিলো, আগের টি-২০ তে সর্বোচ্চ স্কোরার আশরাফুলকে বাদ দিয়েও সম্ভবত: একটা বাজে উদাহরণ তৈরি করলো নির্বাচকেরা। যে সাজেদুলকে দিয়ে টেস্টেও মুশফিক এক ইনিংসে ৩ ওভার বল করায় না, সেখানে এই সফরে জিম্বাবুয়ে দলের মূর্তিমান আতংক রবিউলকে বাদ দিয়ে সাজেদুলের সিলেকশনও আরেকটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন যুক্ত করেছে।

এবং সবশেষ মাত্র ১ ওভার বল করে ১৫ রান দেওয়ার পর মুশফিক আর আনেইনি সাজেদুলকে। মাত্র দু'-তিন ওভারের জন্যই সাজেদুলকে দরকার হলে সেটা তো জিয়াকে দিয়েই করানো যেত। অথচ টি-টুয়েন্টি স্পেশালিস্ট জিয়া বোলিংই পেলেন না। জিম্বাবুয়ে দলে আরেক টি-টুয়েন্টি স্পেশালিস্ট এলটন চিগাম্বুরার না থাকাটাও অবাক করার মত। ৩) ব্যাটিং স্বর্গ পিচ এটা।

সম্ভবত: এই সফরের সবচেয়ে ভালো উইকেটও। জিম্বাবুয়ে ব্যাটিং করেছেও দারুণ। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে ব্যাপারটা ছিলো, ডীপে বল গেলেই ওরা ডাবল নিয়ে নিয়েছে ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে। উইক আর্মের থ্রো গুলো কীপার বা নন স্ট্রাইক এন্ডে পৌছাতে পৌছাতে একটার পর একটা ডাবল বানিয়ে ফেলেছে সিঙ্গেলগুলো। জিম্বাবুয়ের অসংখ্য সিঙ্গেলকে ডাবল করা আর চিরাচরিত দূর্বল রানিং বিটুইন দ্যা উইকেটের কারণে বাংলাদেশের ডাবল না করতে পারা একটা বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।

তারপরেও এই পিচে ১৬৮ রানের স্কোরটাকে পার-স্কোরই মনে হয়েছে সাকিব-শুভ উইকেটে থাকা পর্যন্ত। তারপরেও ম্যাচে ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু নাসির-রিয়াদের রান-আউট সব গুবলেট করে দিয়েছে। ৪) শফিউলের স্লগ ওভারের বোলিং ভালোই হয়েছে। সাকিবও ভালো বল করেছে।

শুরুতে ব্রেন্ডান টেইলরের একটার পর একটা সুইপ শটে খেলা ক্যামিও আর মাসাকাদজার ৪৮ বলে ৫৯ রানের ইনিংসটা দারুণই ছিলো। ভালো দু'টো ইনিংসের জবার ওরকমই দু'টো ইনিংস দিয়েই দিয়েছিলো বাংলাদেশ। অভিষেকে শুভ অসাধারণ একটা ইনিংস খেলেছে। সত্যিই একটা ম্যাচিউর ইনিংস। সাকিব ওর ক্লাসেরই একটা ইনিংস খেলে দিয়েছে।

কিন্তু শেষে এসে সব গোলমাল পাকিয়ে গেলো কিভাবে যেন। জিয়া বল নষ্ট করে গেলেন। তবু শেষ বল পর্যন্ত ম্যাচে ছিলো বাংলাদেশ। শেষ বলটাতেও রাজ্জাকের একটা ভালো টাইমিং হলে সুপার ওভারে গড়াতো ম্যাচ। হয়নি।

৫) পুরো সিরিজে এই প্রথম সম্ভবত: একটা ফিফটি-ফিফটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পক্ষে এলো। তাও ম্যাচ আম্পায়ারের কাছ থেকে না, থার্ড আম্পায়ারের কাছ থেকে। হ্যা, মুশফিকের রান আউটটা। ওটা পেয়ে ভেবেছিলাম, ভাগ্য আজ আমাদের পক্ষেই আছে। ছিলো না আসলে।

৬) দু'টো ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্টস। এক, তামিম তার 'অর্ডিনারি' বোলার ভিটোরির বলে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে একটা অর্ডিনারি বোল্ড হয়েছে। দুই, ২০তম ওভারে ম্যালকম ওয়ালার শফিউলকে বাউন্ডারি মারার পর কমেন্ট্রি শুনলাম, 'দিস গায় ইজ দ্যা সেম টাইপ ডি ভিলিয়ার্স ইজ'। ৭) আতিথ্য দিয়ে বিপিএলে ডেকে আনা মাসাকাদজা-টেইলরের ব্যাটেই কিন্তু হারলাম। খুব খেয়াল কৈরা।

আর দুই বছর ধরে নিয়মিত বিপিএল খেলে একটু প্রেশারেই এই টাইপের 'অ্যাডরেনালিন রাশ' কেন হবে, তার উত্তর পেলাম না। ৮) 'মহাসেন' ধেয়ে আসছে। ঝড়টার উৎপত্তি ভারত উপসাগর থেকে নাকি বুলাওয়ে থেকে, নিশ্চিত নই। পোস্ট ভিউ: বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় টি-টুয়েন্টি (১২-০৫-২০১৩)। ১) সফরে প্রথমবারের মত টস জেতার সাথে সাথে আজ ম্যাচটাও জিতে নিয়েছে মুশফিক।

টেস্ট সিরিজের পরে টি-টুয়েন্টি সিরিজও ড্র। শুধু একটা ওয়ানডে বেশি জিতলেই সিরিজটা আর ব্যর্থ বলা হতো না। আম্পায়ার নিরপেক্ষ থাকলে, কে জানে, সব ম্যাচগুলোই জেতা যেত কি-না। আশাকরি, এই সহজ ব্যাপারটা বুঝে মুশফিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে। ২) ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ এবং ম্যান অফ দ্যা সিরিজ দু'টোই সাকিব।

সাকিবের উপর প্রত্যাশা বেড়ে যাওয়াতে সমালোচনাও বেড়ে গেছে চক্রবৃদ্ধি হারে। র্যাংকিংয়ে ২ এ নেমে আসায় তা আরও বেড়েছে বৈকি। শচীন টেন্ডুলকারও সারাজীবন র্যাংকিংয়ের নাম্বার ওয়ান ব্যাটসম্যান ছিলো না। তামিম আজকে দারুণ ইনিংস খেলেছে। নাসির আবারও রান আউট না হলে ফিনিশিং দিয়েই ফিরতো হয়তো।

সাকিবের সাথে রাজ্জাক এবং শফিউলও দূর্দান্ত বোলিং করেছে। শফিউলই সম্ভবত: এই মুহূর্তে স্লগ ওভারে বাংলাদেশের সেরা বোলার। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট মনে হয়েছে উইলিয়ামসে রবিউলের দূর্দান্ত রান আউটটাই। ৩) আশরাফুল না হোক, জহুরুল তো ছিলো। বিপিএলের শেষ অর্ধেক দারুন খেলেছে জহুরুল।

তারপরেও মমিনুলের সিলেকশন ভালো লাগেনি মোটেই। তারপর যে পজিশনে মমিনুলকে খেলানো হয়েছে, সেখানে নেমে এই ফিগার নিয়ে স্লগ করে বল ৭০ মিটার উড়িয়ে পাঠাবে বা পাওয়ার দিয়ে ধামাধাম কয়েকটা বাউন্ডারি হাকিয়ে দেবে, এটা সহসা ঘটবে বলে মনে করি না। সিলেকশন প্রক্রিয়া মাঝে মাঝেই আমার মাথার উপর দিয়ে যায়। ৪) মুশফিক নিজের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করে পুনরায় অধিনায়কত্বের দায়িত্বে ফিরে না এলে সহজ যুক্তিতে বর্তমান সহ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উপরই অধিনায়কের গুরু দায়িত্বটা বর্তানোর কথা। সেখানে উইলিয়ামসের উস্কানিতে মাহমুদউল্লাহর সহজেই তেড়ে যাওয়া এবং মমিনুলের বল রিসিভ না করতে পারার পর রিয়াদের রাগ কন্ট্রোল না করতে পারাটা খারাপ উদাহরণই সৃষ্টি করলো বটে।

৫) আজকেও মুশফিককে ভুল এলবিডাব্লিউয়ের সিদ্ধান্তে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়েছে জিম্বাবুইয়ান আম্পায়ার জেরেমিয়াহ মাতিবিরি। আবার সোহাগ গাজীর বলে শেন উইলিয়ামসের নিশ্চিত এলবিডাব্লিউটা দিলো না ওয়েন চিরম্বে। ১৪ তম ওভারে ৫ বলেও একটা ওভার কল করেছে। টি-টুয়েন্টিতে একটা বলের যথেষ্ট মূল্য। আজকের খেলায় টিভি আম্পায়ার রাসেল টিফিনও জিম্বাবুইয়ান।

মুশফিকের জায়গায় আমি থাকলে এক কাজ করতাম। একটা এলবিডাব্লিউ এরও আপিল করতাম না, সেটা শতভাগ নিশ্চিত হলেও। এতে একটা নোটিফিকেশন পেতো জিম্বাবুয়ে। ৬) সারাজীবন সকালে-বিকালে যাদের রফিক-রাজ্জাক-সাকিব-এনামুল জুনিয়র-ইলিয়াস সানিদের টাইপের বাঁহাতি অর্থোডক্সদের খেলে বেড়ে ওঠা, নিয়মিত প্রাকটিস সেশন কাটানো, সেই ব্যাটসম্যানদের দেখলাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে পেরমলের বিপক্ষে স্ট্রাগল করতে। শ্রীলংকা সিরিজে দেখলাম রঙ্গনা হেরাথে হাবুডুবু খেতে।

বিষ্ময়ে খেয়াল করলাম জিম্বাবুয়ে সফরে পার্ট টাইমার শন উইলিয়ামসের বলেও খাবি খাচ্ছে বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনারদের উর্বর ভূমিতে জন্মানো ব্যাটসম্যানেরা। ক্যামনে কী? ৭) ব্রেন্ডান টেইলর সুইপ-রিভার্স সুইপক দারুণ রপ্ত করেছে। অনায়াসে খেলতে পারে। অনেকটা ইংল্যান্ডের ইয়োইন মর্গ্যানের মত। সাকিব আল হাসান উল্টো তার ফেভারিট স্লগ সুইপটাকে সুইসাইডাল পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।

হরহামেশাই দেখছি স্লগ সুইপে ক্যাচ দিতে। ৮) শুভ, রাসেল ভাইয়ের জামিনে মুক্তি, রাজাকার এ কে এম ইউসুফকে গ্রেফতারের সুখবরের পর বাংলাদেশের দাপুটে জয়। লিভারপুলও এই মুহূর্তে জয়ের পথে। আজকে দিনটাকে সুন্দর বলার জন্য আমার আর খুব বেশি কিছু চাওয়ার ছিলো না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.