আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যন্ত্রণা-১৫



তমা হাসপাতালে এসে পৌঁছাল বিকাল চারটায়। ভিতরে ভিতরে ও ভীষণ কৌতুহলী ব্যাপারটা সম্পর্কে জানার জন্য। ও এই ধরনের কথা কখনো শোনেনি যে কেউ নিজের অপরাধ স্বীকার করতে চায়। হাসপাতালে পৌঁছে প্রথমে কথা বলে নিল হাসপাতালের পরিচালক ডা. মাহতাবের সঙ্গে। ভদ্রলোক সরকারী চাকরি থেকে রিটায়ার করেছেন বছর পাঁচেক।

নিজের ইচ্ছায় এখানে কাজ করছেন। তমাকে স্নেহ করেন অনেক। যে ভদ্রলোক হাসপাতালে ডোনেসন দিতে চাইছেন তার সম্পর্কে জানালেন অনেক কিছুই। ভদ্রলোক বহুবছর দেশের বাইরে ছিলেন। ফিরেছেন কিছুদিন আগে।

বিত্তবান কিন্তু ভোগ করতে পারছেন না আর বেশিদিন। তিনি এইডসে আক্রান্ত। শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। দেশে ফিরে শুনেছেন এই সংস্থাটার কথা। জেনেছেন তাদের কার্যক্রমের কথা।

তিনি চান তার অর্থের বড় একটা অংশ দান করে যেতে অসহায় মেয়েদের সাহায্যে। কিন্তু তার আগে তার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু কথা জানাতে চান কর্তৃপক্ষকে, স্বীকারোক্তি দিতে চান নিজের কৃত অপরাধের। আর ভর্তিও হয়েছেন এই হাসপাতালে। ‘মা, ভদ্রলোক বিশেষভাবে বারবার আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলেন। ’ ‘আমার সাথে!’ অবাক হয় তমা, ‘উনি আমাকে কি করে চেনেন?’ ‘তাতো জানি না।

কিন্তু উনি বারবার আপনার কথা বলছিলেন। ’ হাসপাতালের এক প্রান্তের একটা কেবিনে আছেন ভদ্রলোক। তমা ভিতরে ঢুকে দেখল জানালার দিকে মুখ করে বসে আছেন ভদ্রলোক। বাইরের বাগান দেখছেন। ডাক্তারের ডাকে ধীরে ধীরে মুখ ফেরালেন।

তমা তাকিয়ে রইল। তাকিয়ে আছেন ভদ্রলোকও। আস্তে আস্তে মাথার ভেতরটা শূণ্য হয়ে যেতে শুরু করল তমার। কানের ভেতর ঝাঁ ঝাঁ। মুখের রঙ বদলে ধীরে ধীরে হয়ে গেল ফ্যাকাশে, সাদা।

টলে উঠল তমা, কোনরকমে হাত দিয়ে আকড়ে ধরল সামনের টেবিলের একটা দিক। ডা. মাহতাব কিছু বলছেন, কিন্তু তমার কানে যাচ্ছে না। তমা কিছুই দেখছে না, কিছুই শুনছে না। শুধু মনে পড়ছে ভয়ংকর কিছু মূহুর্ত, লজ্জার অপমানের পরাজয়ের........। নিজের করুণ আকুতির কথা, একটুখানি দয়া ভিক্ষার কথা।

মনে পড়ছে কত নির্দয়ভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল সে আকুতি। বিদীর্ণ হয়েছিল তমা, হয়েছিল নিঃস্ব, রিক্ত, বদলে গিয়েছিল ওর জীবনটা এক নিমিষেই। যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়েছে তারপর থেকে। একদিন এক মূহুর্তের জন্যও সে যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পায়নি। জ্বলে পুড়ে ছাই হয়েছে প্রতি মূহুর্তে।

তমা বহুদিন অপেক্ষা করেছে এই দিনটার জন্য। এই দিনটা শুধু ওর হবে এই প্রতীক্ষাতেই কাটিয়েছে বছরের পর বছর। কিন্তু আজ এই মূহুর্তটার সামনে দাঁড়িয়ে তমা নির্বাক হয়ে গেল। মনে হচ্ছে শরীরের সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে। ও আর ওর মাঝে নেই।

বহু দিনের প্রতীক্ষিত এই মূহুর্তটির জন্য ওর কোন প্রস্তুতিই ছিল না। ও একেবারেই তৈরি ছিল না এখন, এই মূহুর্তে এই সত্যটির মুখোমুখি হতে। ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মূর্তিমান সত্যটিকে তমার ভীষণ ইচ্ছে হল অস্বীকার করতে। কিন্তু তমা কিছুই করতে পারল না। পাথরের মত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মারুফের মুখোমুখি।

টেবিলের কোনা আঁকড়ে ধরা হাতের আঙুলগুলো বরফের মত সাদা, চেপে বসা দুঠোঁট, গাল ফ্যাকাশে কাগজের মতন, শুধু চোখ দুটো জ্বলজ্বল করতে লাগল। ঠিকরে বেরোতে লাগল ঘৃণা! এত বছর পরে দুইজন আবার মুখোমুখি। চলবে................

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।