আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোজাগর (তৃতীয় পর্ব)



এতক্ষণে বোধহয় সম্ভিৎ ফিরলো ভদ্রলোকের। বইটি মুড়ে ব্যাগের ভেতর রাখলো। চশমা খুলে বুক পকেটে রাখা খাপটি খুলে তাতে গুটিয়ে রাখলো। ছোট টেবিলের উপর রাখা মিনারেল ওয়াটারের বোতল খুলে পানি খেল অতঃপর 'স্যুইচ আপনি অফ করবেন আশা করি' বলে হাঁচড় পাঁচড় করে উপরের বার্থে উঠে গেল। অয়ন অবাক হয়ে লক্ষ করল ভদ্রলোক একবারের জন্যও মেয়েটির দিকে তাকালনা।

অয়নের বুক ছলাৎ করে উঠল। এই ভদ্রলোক মেয়েটির কেউ নয়। তাহলে মেয়েটি একা! খুব অবাক হলো অয়ন। রাতের গাড়িতে স্লিপিং বার্থে এই দেশে এভাবে একা যেতে কোনো মেয়েকে সে দেখেনি। অন্তত তার অভিজ্ঞতার মধ্যে নেই।

তবে পাশ্ববর্তী দেশে সে এভাবে যেতে দেখেছে। তার নিজের অভিজ্ঞতার মধ্যেই আছে এরকম ঘটনা। 'দুন এক্সপ্রেসে' রাতের টু টায়ারে যাচ্ছিল দিল্লি থেকে হরিদ্বার। রাতে নিচের বার্থে সে যখন কম্বলের ভেতর জড়ানোর আয়োজন সম্পন্ন করেছে তখনই লক্ষ করল পাশের উপরের বার্থের যিনি যাত্রী তিনি একজন তরুণী। সুন্দরী ও আকর্ষণীয় ফিগারের এই মেয়েটি অনায়াসে অপরাপর পুরুষ যাত্রীদের দৃষ্টির ভেতর নিজেকে কম্বলের ভেতর প্রবিষ্ট করেছিল।

এ দেশেও তাহলে এর ঢেউ লাগছে। মেয়েটির সাহসকে সে মনে মনে ধন্যবাদ দিল। পরের ষ্টেশনে একটি ঝকঝকে ছেলে লাগেজ টানতে টানতে কামরায় উঠে এল। উঠেই সে ঝটপট নিজেকে প্রস্তুত করে উঠে গেল উপরের খালি বার্থটিতে। ছেলেটি একবারো তাকালনা মেয়েটির দিকে, না কি তাকিয়েছিল? সে ভাবতে পারে না এমন সুন্দরী মেয়ের সান্নিধ্য উপেক্ষা করে এত তাড়াতাড়ি উপরে উঠা যায়! হয়তো যায়, একটা চমৎকার রুচিবোধ ও পলিশ ব্যক্তিত্ব তৈরী হলেই তা সম্ভব হয়ে ওঠে।

পরক্ষনেই সে নিজেকে নিয়ে ভাবে, সে পারে না কেন, তার সমস্যাটি কোথায়? তার সমস্যাটি সে নিজেও অনেক সময় বুঝতে পারে না। মেয়েদের, বিশেষ করে সুন্দরী মেয়েদের প্রতি সে খুব সহজেই আকর্ষিত হয়। তবে তার দুর্বলতা অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের প্রতি। কখনো কখনো একেবারই টিন এজদের প্রতি। নীলা অনেক সময়ই এসব টের পেয়ে যায়।

অনেক বারই নানা হ্যাপা সামলাতে হয়েছে তাকে। একেকটি ঘটনা ঘটে যাবার পর সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে আর নয়, যথেষ্ট হয়েছে। কিন্তু তার প্রতিজ্ঞা প্রায় সময়ই ঠিক থাকে না, বেমালুম ভুলে যায় সে। যেমন এখন ভুলে বসে আছে। মেয়েটির স্নিগ্ধ সৌন্দর্য তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে।

সে লক্ষ করে মেয়েটির ঘুমন্ত মুখের আদলে একটি চাপা যৌনাবেদন লেপ্টে আছে। 'এ রকম একজন নারীর প্রতি আকর্ষণ জাগাইতো স্বাভাবিক, না জাগাই বরং অস্বাভাবিক' ভেবে সে নিজের স্বপক্ষে যুক্তি দাঁড় করায়। আর এরকম সুন্দরী, আকর্ষণীয় মেয়েরা আছে বলেইতো পৃথিবী এখনো মনোটনাস হয়ে যায়নি। সে নীলার কথা ভাবে। নীলা তার স্ত্রী, যাকে সে ভালোবাসে বলেই দাবী করে।

দাবী কেন আসলেও সে নীলাকে ভালোবাসে। তবে নীলার প্রতি বিশ্বস্ত কিনা একথা সে দাবী করে বলতে পারবে না। এ ব্যাপারে তার যুক্তি অন্যরকম। সুন্দরী, আকর্ষণীয় কোনো নারী যদি স্বেচ্ছায় আকর্ষিত হয়, তার সান্নিধ্যে দু'চার ঘন্টা কাটায় তাতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়? যেখানে নীলার প্রতি আচরণে কোনো নেতিবাচকতাই থাকে না। তা হলে? আবার কে যেন তার ভেতর থেকেই বলে,' এ তোমার নিজস্ব কুযুক্তি, বাহানা।

আসলে করাপটেডদের অজুহাতের কোনো অভাব হয় না। ' অথচ নীলা যখন এল তখন তার মনে হয়েছিল তার ঘর আলো করে বুঝি কোনো রূপসী রাজকন্যা এল। তার বিশ্বাস হতে চায় না, তবু সে দেখতে পায়, ঘরের দেয়াল পর্যন্ত আলোকিত হয়ে আছে। রাত যেন ঝলমলে হয়ে ওঠে। প্রথমে ধূসর, পরে সবুজাভ হয়ে উঠে ঘর।

একটা বস্তু থেকে আরেকটি বস্তু আলাদা হয়ে ওঠে। প্রত্যেকে নিজ নিজ আদল ফিরে পেতে থাকে। তার মধ্যে পরী হয়ে বসে থাকে বধু-নীলা। দেখে তার যেন আর আশা মেটে না। হায় সেই নীলাও এখন কেমন একঘেয়ে হয়ে উঠেছে।

সে চায় না,তবু হয়েছে। সে বাঁ হাত বাড়িয়ে লাইটের স্যুইচ উঠিয়ে দেয়। কামরাটি তবু পুরোপুরি অন্ধকারে ঢেকে যায় না। জ্যোস্না ছিটকে এসে নামে মেঝেয়। উপরে খাঁচার ভেতর কট কট শব্দে পাখা ঘোরে।

তার কাঁপুনিতে জ্যোস্না তরঙ্গের মতো মেয়েটির পা বেয়ে ঊরু পর্যন্ত কাঁপুনির ঢেউ তোলে। সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে সে দিকে। [চলবে]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।