আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘একটাই সুর, একটাই তাল; বাংলা হবে ডিজিটাল- মোজাফফর হোসেন



‘একটাই সুর, একটাই তাল; বাংলা হবে ডিজিটাল’ মোজাফফর হোসেন ১ 29-শে ডিসেম্বর ২০০৮ এর নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দুটো শ্লোগানের মাধ্যমে পুরো জাতিকে তাদের দলে টেনে নিল- এক : যুদ্ধপরাধীদের বিচার, দুই : ডিজিটাল বাংলাদেশ। যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবীটা এদেশের জনমানুষের কাছ থেকেই আসা। কিন্তু ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কনসেপ্টটার জনক লীগ সরকার নিজেই, সাধারণের সাথে এর কোন যোগসূত্রতা নেয়। লীগ নেতা কর্মীরা তাদের নির্বাচন প্রচারণায় ফলাও করে প্রচার করে বেড়াল আসন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা। তবে কেউই পরিস্কার করে বলতে পারেনি ডিজিটাল বাংলাদেশ আসলে কি! সরকারের অর্থমন্ত্রী এবং ভিশন ২০২১-এর প্রণেতাদের একজন, আবুল মাল আবদুল মুহিত, এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে হচ্ছে এমন এক ব্যবস্থা যেখানে সুশাসন থাকবে, সরকারের কার্যক্রমে দায়বদ্ধতা-স্বচ্ছতা থাকবে, দুর্নীতি কমে যাবে।

বিবিসি বাংলার একটি জরিপে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের এ সম্পর্কে কোন স্বচ্ছ ধারণা নেয়। ২ শহরের শিক্ষিত বাঙ্গালীরা কোনকিছু না ভেবেই হিসেব কষতে শুরু করলো আসন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশে কি কি সুবিধা তারা পাবে। যারা বিষয়টি বোঝে না তারা জনে জনে জিঙ্গাষা করে বেড়াল। জীবনের প্রথম ভোটার হল যারা তারা কম দামে পিসি, মুবাইল আর ফ্রি ইন্টারনেটের কথা ভেবে লাফাতে শুরু করলো। আর গ্রামের মানুষেরা? যারা ডিজিটাল শব্দের অর্থ জানে না, যাদের বেশিরভাগেরই দিন কেটে যায় মাঠে এবং রাত কেটে যায় গভীর ঘুমে, যারা কেবলই স্বপ্ন দেখে টিকে থাকার! তারা ধরে নিল, ডিজিটাল বাংলাদেশে মেশিন দিয়ে রেডিমেট ভাত তৈরী হবে।

খাবার নিয়ে আর ভাবতে হবে না তাদের। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই যেখানে ডিজিটাল শব্দের অর্থ জানে না সেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি কেন? সরকার যে যে বিষয়ে আরো সিরিয়াস হতে পারতো, তা হল : ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ, যৌতুক-ধর্ষন-এসিড মুক্ত বাংলাদেশ, বেকারমুক্ত বাংলাদেশ, আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার বাংলাদেশ, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ আরো কত কি…! ৩ বেশ কয়েকটি কারণে লীগ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশর প্রতিশ্রুতি। জনগনের এ সম্পর্কে অজ্ঞতাই এর অন্যতম প্রধান কারণ। বেশির ভাগ জনগন যেহেতু বিষয়টি ভালো মত বোঝে না, এতে করে নির্বাচনের পর সাধারণ জনগন এই বিষয় নিয়ে আন্দোলন করতে পারবে না । করলেও বুঝিয়ে দেয়া হবে এইভাবে: • এই সরকারের আমলে এনালগ রেডিও ও বাইসাইকেল বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

• ডিজিটাল টেলিভিসন ও মোটর সাইকেলের বিক্রি বিগত সরকারের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। • মানুষ এখন ঘড়ির পরিবর্তে মোবাইলে টাইম দেখে। • বেটারী চালিত এক ধরনের রিকশায় ভরে গেছে দেশ। • এখন ২৫০০ টাকার ফোনে ছবি তোলা, গান শোনা সহ সব ডিজিটাল কারবার করা যায়, যা বিগত সরকারের আমলে কল্পনাও করেনি কেউ। ইত্যাদি এবং অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, সরকার বেশ ভালো করেই জানে, শিক্ষিত শহুরে বাবুরা যে দিকে ধায় সমগ্র বাংলাদেশ সে দিকে যায়, তাই এই শিক্ষিত বাবুদের ব্রেন ঠিক মত ওয়াশ করলেই কেল্লা ফতে! যথারিতী আওয়ামী লীগের এই চালাকিটা কাজেও লেগে গেল।

আমরা শিক্ষিত-মূর্খ সব দলে দলে নৌকা মার্কায় সিল মারলাম। লীগ বসে গেল ক্ষমতার গদিতে। শুরু হল নতুন এক অধ্যায় ঃ দেশের বিভিন্ন স্থানে খন্ড খন্ড ভাবে ছাত্র লীগের ও যুব লীগের আতস বাজি-আনন্দ মিছিল ফলে কারো কারো ঘর গেল পুড়ে, কেউ কেউ আহত হল। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছাত্রলীগের উৎসৃঙ্খলতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, বিজয়ের আবেগে ওরা এমনটি করছে। দেশবাসীকে তিনি ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানালেন! যথারিতী দেশ ধৈর্য্য ধারণ করলো।

ছাত্রলীগের বিজয় উৎল্লাশের ফলে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দফায় দফায় বন্ধ হতে শুরু করলো, মরেও গেল কেউ কেউ। নতুন পাখা গজানো পিপীলিকার যে দশা হয় আর কি! এম.পি মন্ত্রিরা ভল পাল্টালো, পাল্টালো সুর। মোবাইল, পিসির দাম বেড়ে গেল, ইন্টারনেট আগের মতই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে গেল। কিছুদিন পরে, সব কিছুর দাম কিছুটা কমলো ঠিকই কিন্তু বিদ্যুৎ চলে গেল ধরা ছোয়ার বাইরে। এখন সরকার ফলাও করে বলে বেড়ায়, এখন মোবাইল পিসির ব্যবহারকারীর সংখ্যা্ দ্বিগুন হয়ে গেছে।

সরকার হয়ত জানে না, এটা সময়ের দাবী। ক্ষমতায় যেই থাকুক কিম্বা কে্উ না থাকলেও এটা ঘটবে। কিংবা সরকার জেনে শুনেই গর্ধব বাঙ্গালীদের একটু বাজিয়ে নেয়! বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি মোস্তফা জব্বারের মতে, গত এক বছরে দেশে ডিজিটাল খাতে যা যা উন্নতি হয়েছে বা দেশ এই ক্ষেত্রে যতদূর এগিয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রম হাতে না নিলেও তা এমনিতেই হতো। তিনি বলেন, ‘এই এক বছরে সরকারের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজকর্মে কাজ করার পুরনো পদ্ধতি পরিবর্তন করার কোনো পরিকল্পনা আছে বলে আমি শুনিনি। জাতীয় সংসদের কোনো কার্যক্রম ডিজিটাল করার কথা শুনিনি।

এমনকি এই এক বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া নিয়ে টাস্কফোর্সের কোনো বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়নি। ’ ৪ `ভিশন ২০২১‘ কেন ?একটু পিছন ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাবো, বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দলই একটানা একাধিক বার ক্ষমতায় আসে নি। লীগ সরকারের পরিণতি কি হবে সেটা সময় বলে দেবে। তবে লীগ সরকার `ভিশন ২০২১‘ বলার মাধ্যমে তাদেরে এই শ্লোগানকে পরবর্তী ইলেকশন পর্যন্ত জিইয়ে রাখলো। ক্ষমতার প্রথম পাঁচ বছরে তাদেরকে ব্যর্থ বলা যাবে না।

বললে শুনতে হবে, ঐ যে ২০২১!!যদি দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার মাঝে বিএনপি আরো একবার ক্ষমতায় আসে তবে আওয়ামী লীগ তখন এসে আবার ‘ভিসন ২০৩১’ এর মত কিছু একটা দাঁড় করাবে। দলের নেতা কর্মীরা বলে বেড়াবে, বিএনপি এসে এদেশকে আরো দশ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে উন্নয়নের যে ফল্গুধারা প্রবাহিত হয়ে ছিল তা এই সরকার (বিএনপি) বিপরীত দিকে প্রবাহিত করেছে। কে বলে রাজনীতিবিদরা গর্ধব!? ৫ ইতোমধ্যে ঘটে গেল বিডিআর বিদ্রোহ, ঢাকা যখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বাস অযোগ্য শহর ঘোসীত হল, ডিজিটাল সরকার তখন মেতে উঠল নাম পরিবর্তনের খেলায়। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম পরিবর্তন করে হযরত শাহজালাল রহমতুল্লাহ রেখে আওয়ামী লীগ প্রমান করলো শহীদ জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিদ্বন্দি হয়ে উঠেছেন এবং লীগ সরকার ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বললেও তারাও ধর্মকে ব্যবহার করতে পারে।

বাস অযোগ্য ঢাকা, সমগ্র্র বাংলাদেশে পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানী সমস্যা। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে ক্ষমতা ভাগের খেলায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ মেতে উঠল দেশ জুড়ে। ঘটনাটা অধিক সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট হওয়ার মত! রাজশাহী আর চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় না হয় ঘাতক শিবির দায়ী কিন্তু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ ও ঢাকা কলেজ সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দফায় দফায় বন্ধ ও রক্তপাতের জন্য কারা দায়ী!? লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিবিরের হাতে ছাত্র লীগরে যে কয়জন মারা গেছে তার থেকে কয়েকগুন বেশি মারা গেছে নিজেদের দলীয় কোন্দলে। সারা দেশব্যাপী শিবির ধরপাকড় অভিযানের মত করে এসব খুনিদের ধরার কোন প্রচেষ্টা হয়নি। যেন, আমি আমার ভাইকে মেরেছি (খুন) তাতে তোর কি-রে! একটা তো মরলই, আরেকটাকে জেলে ঢুকিয়ে লাভ কি! শূন্য গোয়ালের থেকে যে দুষ্টু গরু অনেক ভালো! দৈনিকগুলো পড়লে মনে হয়, এ দেশ এখন ছাত্রলীগ ও যুব লীগের দেশ।

আমরা আম জনতা ইমিগ্রেন্টের জন্য আবেদন প্রার্থী। নিজ দেশে আজ পরবাসী সাধারণ বাঙ্গালী! আমি কি নিয়ে যেন আলোচনা শুরু করেছিলাম! ও ভুলে গেলাম…! হ্যাঁ, এমনি করেই আম জনতা কোন না ঘটনার ফলে ভুলে যায়, তারা কি পেয়েছে আর তাদের কি পাবার কথা ছিল। তবুও আমরা বাঙ্গালী জাতি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, আমরা স্বপ্নে পবিত্র হই, স্বপ্নে প্রতিবাদ করি, স্বপ্ন দেখে সুখ পাই! আসুন আমরা এখন থেকে, স্বপ্নেই আমাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম সম্পাদন করি। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.