আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের বাঁশজাত কুটির শিল্পের ভবিষ্যৎ....



বাঁশজাত কুটির শিল্পের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায়। এ শিল্প বাঙালীর হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করছে। ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটি বিলুপ্তির পথে চলতে চলতে ইংরেজ শাসিত বাংলায় এসে মন্থর হয়ে যায়। কিন্তু ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে এর হাত গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফলে তারা আবার পুরো উদ্যোগে বাঁশজাত পণ্য তৈরি শুরু করে।

সে থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাঁশজাত কুটির শিল্প অগ্রসর হয়েছে এবং অন্যান্য কুটির শিল্পের সাথে পাল্লা দিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের একটি অন্যতম ক্ষুদ্র কুটির শিল্প হচ্ছে বাঁশ ও বেত শিল্প। এ শিল্পের উৎপাদন পদ্ধতি খুবই সহজ-সরল। আমরা মূলত যেসব হস্তজাত ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী ব্যবহার করি তা মূলত বাঁশ ও বেত শিল্প থেকে আসে। বাঁশজাত কুটির শিল্প হল এমন একটি শিল্প যেখানে মেশিনের কোন ব্যবহার নেই।

অতীকাল হতে বর্তমানেও হাত ও হাতযন্ত্রের মাধ্যমে বাঁশ হতে নানা ধরণের পণ্য তৈরি করা হয়। বাঁশজাত কুটির শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের মধ্যে রয়েছে, বাঁশ, রং, বেত, চিকন তার, সূতা, কাঠ, পাটের আশ প্রভৃতি। বাঁশজাত কুটির শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে, দা, ছুরি, করাত, বাটালী, কুঠার প্রভৃতি। উৎপাদন পদ্ধতি: বাঁশজাত কুটির শিল্পে উৎপাদনের জন্য প্রথম পর্যায়ে বাঁশ সংগ্রহ করা হয়। অতঃপর বিভিন্ন পণ্যের আকার আকৃতি অনুযায়ী বাঁশ কেটে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়।

আবার প্রয়োজন অনুযায়ী বাঁশ চিকন করে কেটে চিকন পাত তৈরি করা হয় অথবা গোল গোল লাঠি তৈরি করা হয়। উৎপাদিত পণ্য: বাঁশ হতে কুটির শিল্প শ্রমিকরা নিত্য ব্যবহার্য্য থেকে শুরু করে নানা ধরণের খেলনা তৈরি করে। যেমন: চালন, কুলা, ডালি, বাঁশি, ফুলদানী, ফলদানী, পুতুল, শিশুদের খেলনা, দেয়ালে ঝুলানোর জন্য বিভিন্ন নকশ্া, ঘর সাজানোর বিভিন্ন পণ্য, সিগারেটের এ্যাস্ট্রে এবং বিভিন্ন ধরণের খাচা। গবেষণায দেখা গেছে যে বাঁশজাত কুটির শিল্পের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পুরুষরা এবং মহিলাররা প্রায় পাশাপাশি এবং সমানভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। এছাড়া তাদের পাশাপাশি শিশুরাও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।

তারা সাধারণ দৈনিক প্রায় ১০-১২ ঘন্টা কাজ করে থাকে। সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫/৬ টা পর্য়ন্ত তারা প্রায় একটানা কাজ করে থাকে। তবে মহিলারা মাঝে মধ্যে গৃহস্থলীর অন্যান্য কাজে একটু সময় দেয়। বাঁশজাত কুটির শিল্প শ্রমিকদের ধরণ: বাঁশজাত কুটির শিল্প একটি সহজলভ্য শিল্প। এতে অনেক কম পুঁজি বিনিয়োগ করে উৎপাদন করা সম্ভব।

৩ ধরণের শ্রমিক বশেি দেখা যায়। স্বয়ংসম্পূর্ণ শ্রমিক: এরা স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে ব্যবসা করে। তাদের স্থায়ী ও চলতি মূলধনআছে। তবে এধরণের শ্রমিকের সংখ্যা কম। এদেরকে মূলধনের জন্য ব্যাংক, বীমা বা মহাজনদের কাছে যেতে হয় না।

মাঝারী শ্রমিক: এদের স্থায়ী মূলধন আছে কিন্তু চলতি মূলধনের অভাবে ঋণের জন্য তাদের অনেক সময় বা ক্ষেত্র বিশেষে নানা রকম কৌশল অবলম্বন করতে হয়। গরীব শ্রমিক: এদের মূলত নিজস্ব কোন মূলধন নেই। এরা মূলত পূঁজির জন্য ব্যাংক, বীমা, গ্রাম্য মহাজন, মাতব্বর, সুদখোরের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করে থাকে। এদের অবস্থা খুবই নাজুক। বাঁশজাত কুটির শিল্পের ভবিষ্যৎ: বাঁশজাত কুটির শিল্পের সাথে জড়িত কারিগর, শ্রমিক, শিক্ষানবিস ও মহাজনদের সাথে কথা বলে জানা যায় বড় ধরণের কোন বিপর্যয় না হলে তারা এ শিল্প সম্পর্কে আশাবাদী।

তাদের মতে এ শিল্পে বিপর্যয় নেমে এসেছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারলে, সরকারী/বেসরকারী সাহায্য ও সহযোগিতা ছাড়া এ শিল্পকে সচল রাখতে পারবে বলে ধারণা। কারণ, ইতিমধ্যে দেশ ও বিদেশে এ শিল্প একটি বাজার সৃষ্টি করে ফেলেছে এবং চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আশাংকার কথা হচ্ছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ ধরণের শিল্পের কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই। সরকার এ ক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করছে।

বাঁশজাত কুটির শিল্পকে বাঁচাতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কুটির শিল্প শ্রমিকের অর্থনৈতিক ভিতটা মজবুত নয়। তাই পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংক নামক এনজিও তাদের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কুটির শিল্প শ্রমিকদের সহায়তা করছে। আমি মনে করি, এ ধরণের পদক্ষেপ বাঁশজাত কুটির শিল্পকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাবে।

অভি। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.