আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন বছরের শিশুরও রেহাই নেই!

আমি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি মনুষত্বে

মেয়েটির বয়স ২ বছর ৯ মাস। ছেলে- মেয়ে না বলে তাকে শিশু বলাই ভালো। এখনও পুরোপুরি কথা শেখেনি। মুখের বুলি তাই আধো আধো।

সারাদিন ছোটাছুটি, খেলাধুলা করাই তার কাজ। এই বয়সে একটি শিশুর অবশ্য এসবই করার কথা। কিন্তু শিশুটি গত দুদিন ধরে এসবের কিছুই করতে পারছে না। কারণ সে এখন হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় ছটফট করছে। পাশে বসে অসহায় মা দেখছেন আর চোখের পানি ফেলছেন।

কী হতে পারে শিশুটির? স্বাভাবিকভাবে এই প্রশ্নের উত্তর হবে, খেলতে গিয়ে হয়তো গুরুতর আহত হয়েছে। তাই সে হাসপাতালে। এমন ভাবাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক ব্যাপারটিকেই অস্বাভাবিক করেছে ১৭ বছরের বখাটে ও সন্ত্রাসী নয়ন। যার পাশবিকতা ছাড়িয়ে গেছে সবকিছুকে।

২ বছর ৯ মাস বয়সী মেয়েটির ধর্ষক এই নয়ন। মানুষ কতটা নির্মম, বর্বর হলে এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে! ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণাকাতর শিশুটির পাশে উদ্বিগ্ন মা। কদিন আগে ঢাকার উত্তর খান এলাকায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে তার শিশুকন্যা। জানালেন, শিশুটি ভেবেছে একটি ভূত তাকে কামড়িয়েছে। কোনও একদিন ঘুম পাড়াতে গিয়ে মা তাকে ভূতের এমন গল্পই শুনিয়েছিলেন।

তাই এ ঘটনার পর থেকে ওর মনে হচ্ছে তাকে হয়তো গল্পের সেই ভূতেই কামড়িয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু বোঝার মতো বয়স বা মানসিকতা কোনটিই তার হয়নি। শারীরিকভাবে একসময় মেয়েটি হয়তো সেরে উঠবে। কিন্তু ওর মন? শিশুটির পেরেনিয়াম ফেটে গেছে। এ কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।

অস্ত্রোপচার করে সেটি ঠিক করা হয়েছে। তার সেরে উঠতে সপ্তাহ দুয়েক লাগবে। কিন্তু মানসিকভাবে মেয়েটি কবে সেরে উঠবে এর কোনও উত্তর নেই। এই ভয় কাটিয়ে উঠে আবার কি সে কার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে? সে এখনও শিশু তাই সে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখন সে আর অন্যের ওপর ভরসা রাখতে পারবে না।

তার আস্থার জায়গাটা কমে যাবে। পরবর্তীতে সে কারও ওপর আস্থা রাখতে পারবে না। আরেকটি ব্যাপার হতে পারে যে সে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে। আমাদের দেশে সাধারণত এ ধরনের ঘটনার শিকার মেয়েরা সমাজে সেভাবে মিশতে পারে না। নিজেকে আড়ালে রাখতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।

বিশেষ করে ছেলেদের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক গড়ে তুলতে তারা অনেকটা ভয় পায়। ফলে পরবর্তীতে বিবাহিত জীবনের স্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্কে তারা অভ্যস্ত হতে পারে না। সারাজীবন মনে মনে সে এই ভয়কে বহন করে যায়। শারীরিক আঘাতগুলো দেখা যায়, সে অনুযায়ী ওষুধ দিয়ে ঠিক করা যায়। কিন্তু মনের এই আঘাত কোনও ওষুধ দিয়ে দূর করা যায় না।

মেয়েটি যেহেতু অনেক ছোট, এখন ব্যাপারটি সে বুঝবে না। কিন্তু বড় হওয়ার পর যখন তার কোনও স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সময় আসবে তখন ছোটবেলার এই ভয় তার মনে ভর করবে। তখন আর তার পক্ষে স্বাভাবিক বিবাহিত জীবন চর্চা করা কঠিন হয়ে যাবে। এটা যে সচেতনভাবে হচ্ছে তা নয়। তার অবচেতন মনে ব্যাপারটি ঢুকে যাবে তার অজান্তেই।

তখন সে নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করবে। এমনিতেই আমাদের দেশে স্বাভাবিক শারীরিক ব্যাপারগুলো নিয়ে অনেক কড়া নিয়ম-কানুন থাকে। আর এ ধরনের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে চারপাশের পরিবেশ তাকে আরও দুর্বল করে দেয়। সেই মুহূর্তে সে নিজেকে দোষী ভাবে। ফলে দেখা যায় সে চুপচাপ হয়ে যায়, সহজে অন্যের সঙ্গে মেশার ক্ষমতা রাখতে পারে না।

এখন হয়তো মেয়েটি শিশু হওয়ার কারণে পরিবারের সাহায্য পাচ্ছে কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে এই সহযোগিতা হারিয়ে ফেলবে। আর আমাদের সমাজের মানুষের মানসিকতা তো জানাই আছে। এসবই আসলে এ ধরনের ঘটনায় আক্রান্ত মেয়েদের জীবনের স্বাভাবিকতাকে ধ্বংস করে দেয়। পূর্ণ সহযোগিতার বদলে সমাজের মানুষ তাদেরই দোষ দেয় যারা ঘটনার শিকার। ’ যন্ত্রণায় কাতর শিশুটিকে তার মা কী সান্ত্বনা দেবেন? শুধু তাকিয়ে থাকা ছাড়া কী করার আছে এই অসহায় মায়ের? তাই কাতর মনে এখন আদরের মেয়ের সুস্থতাই কামনা করছেন মা।

আসুন আমরা ধর্ষকদের সামাজিকভাবে সমাজের সকলক্ষেত্র থেকে বিতাড়িত করে সমাজকে ধর্ষক মুক্ত করি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।