আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিরো শুধু হিরোইনের

রাজপথে রাজা, আর ফুটপাথে আমি; যাব ঠিক একই খানে, জানি আমি জানি।

হিরো শুধু হিরোইনের মাজেদুল মূর্শেদ হিরো নাম নিয়েও জীবনে কখনও নায়কের মতন সাহসের কাজ করতে পারেনি, এই হাহাকার আর থাকবে না হিরোর। আজ হিরো হিরোর মতন একটা কাজ করবেই করবে। এর আগেও জীবনে আরো কয়েকবার হিরোর মতন কাজ করতে গিয়ে ফলাফল জিরো হলেও আজ যে হিরোকে সফল হতেই হবে। কেননা, আজকের কাজটাতো তার সত্যিকারের হিরোইনের জন্য।

রাত বারটা বেজে বিশ মিনিট, হিরো আরো একবার পর্যবেক্ষন করে নেয় তার একমাত্র প্রেমিকা হীরাদের বাড়ীটা। এই বাড়িতে যে ভাবেই হোক আজ হিরোকে যেতেই হবে। হীরাকে হিরো ভালবাসে ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে। ছোট বেলা থেকেই কোন দিনই পড়াশোনায় মন বসে না হিরোর। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাইভেট আর তারপর নাস্তা করে স্কুল, এরপর সারা বিকাল ঘুরে সন্ধায় একটু টেবিলে বসলেও বইয়ে আর মন বসে না তার।

একদিন না পড়লে কি এমন ক্ষতি হয় ? এই ভেবেই হইত মায়ের সকল হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে টিভির সামনে বসত হিরো। এরপর রিমোর্ট চেপে চেপে দেশি বিদেশী নানান রকম জ্ঞান আহরন করত সে। তা বটে বাংলা সিনেমা দেখার মতন রুচি কোন দিনই ছিল না হিরোর। তার জ্ঞান আহরনের প্রধান মাধ্যম ছিল হিন্দি সিনেমা বা গিগা সিরিয়াল অথবা বাংলা নাটক। যাদের অধিকাংশ গুলোতেই প্রেমের জয়জয়কার গাওয়া হয়েছে।

এগুলো থেকেই হইত হিরোর মনে আস্তে আস্তে ভালবাসার ভাবের উদয় হয়। কিন্তু কাকে ভালবাসবে সে, তা বুঝতে পারে না। বিয়ের বয়স পার হতে বসা ছেলেরা যে ভাবে হন্যে হয়ে মেয়ে খোজে হিরোও সে ভাবেই মেয়ে খুজতে শুরু করে। কিন্তু,বিয়ে করার সময় মেয়ে খোঁজার জন্য ঘটকের সাহায্য নেওয়া যায়। কিন্তু, তার বয়সে ভালবাসার জন্য মেয়ে খুজতেত আর ঘটক নিয়োগ করা যায় না।

বা, বন্ধুদেরও বলা যায় না- “দোস্ত তোমার পছন্দমত একটা মেয়ে খুজে দেওত, ভালোবাসার জন্য। ” কাজেই হিরো নিজেই আদাজল খেয়ে মেয়ে নির্বাচনের কাজে লেগে পরে। কিন্তু কাকে সে নির্বাচন করবে- কারো মুখ, কারো চোখ, আবার কারো নাক ভালো লেগে যায় হিরোর। আসলেত “সংকীর্ণ মনের মানুষ যারা, তারাইত ভালবাসে একবার, যার মন বড় যত দেখে ভালো অবিরত তারাইত ভালোবাসে বারবার। ” আর হিরো যেহেতু অতটা সংকীর্ণ মনের না, কাজেই একক কাওকেই সে নির্বাচন করতে পারে না।

একদিন হিরোর এক বন্ধু এসে বলে, দোস্ত তোদের বাড়ির পাশেই ঐ দোতলাই একটা মেয়ে থাকে না, যে রোজ সকাল বেলা কোথায় যেন প্রাইভেট পড়তে যায়। আমি তিনদিন ওর পিছন পিছন এসে দেখেছি, ঐ বাড়িটাতেই ঢোকে। দোস্ত ওর নামটা কি বলনা ? হিরো বলে- ও হীরার কথা বলছিস! ওত আমাদের ক্লাসেই অন্য স্কুলে পড়ে। হিরোর বন্ধু বলে, মেয়েটা কিন্তু হেভি তাই না ? হিরো ভাবে, হীরা কি এমন সুন্দর ? এটুকু ভাবতেই হিরোর জীবনে রবীন্দনাথের সেই বিখ্যাত কবিতা “দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা.......... ” এর সত্যতা আরো একবার প্রমানিত হয়। আরে তাইতো বাড়ীর পাশে হীরাকে রেখে এতকাল হীরাকেই খুজে মরেছে।

আসলেই তো কুপির গোড়াতেই অন্ধকার থাকে, তাইতো সে দূরে দূরে খুজে বেড়িয়েছে যাকে, দিব্যি সে তার পাশের বাড়ীতেই শুয়ে আছে আরামে। হিরো পাকাপাকি ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, হীরাকেই ভালবাসবে সে। কিন্তু কিভাবে সে তার মনের কথা জানাবে হীরাকে। লজ্বা লাগার সত্বেও সে এই ব্যাপারে কোন সাহায্য পাবার আশায় তার বন্ধু বাহারের সাথে আলাপ করে হিরো। বাহারের বুদ্ধির বাহার দেখে হিরো বেশ অবাক হয়।

বাহার বলে, মেয়েরা পছন্দ করে হ্যান্ডসাম ছেলেদের। কাজেই তোকে হতে হবে আরো স্মার্ট আরো সাহসী। এই ভাবে দুরু দুরু বুকে কাপতে থাকলে হবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। এক কথায় বাহার যা বলল তা হল, হিরোকে হতে হবে শাহ্রুখ খানের মতন অভিনেতা, ইমরান হাসেমির মতন সাহসী। হঠাৎ করেই হিরোর মাঝে একটা বড় বড় ভাব চলে এল।

ভাবটা আরো বড় মানুষের মত আনার জন্য হিরো সিগারেট খাবার সিদ্ধান্ত নিলো। এর আগেও যে হিরো সিগারেট খাইনি তা নয়। কিন্তু এখন থেকে সে প্রায় নিয়মিত সিগারেট খাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। তার বয়সি ছেলেরা র্গালস স্কুল ছুটির সময় স্কুলের সামনে কেন যে এতিমের মতন দ্বাড়িয়ে থাকে, হিরো তা কিছুতেই ভেবে পেত না। কিন্তু, হিরো এখন নিজেই স্কুল ছুটির সময় সিগারেট হাতে স্কুলের সামনে দ্বাড়িয়ে থাকে।

হিরোদের বয়েজ আর হীরাদের র্গালস স্কুল একই সাথে ছুটি হয় বলে হিরো টিফিনেই স্কুল থেকে পালিয়ে ঘুরে ফিরে ফরিদের দোকান থেকে একটা ব্যান্ডসন সিগারেট কিনে নিয়ে গিয়ে দাড়ায় হীরাদের স্কুলের সামনে। স্কুল ছুটি হবার এক দুই মিনিট আগে সে তার সিগারেটটা ধরিয়ে ছোট ছোট টান দেয়, যেন হীরা আসা পর্যন্ত সিগারেটটা শেষ হয়ে না যায়। হীরাদের ছুটির ঘন্টা শুনতে পাওয়া না গেলেও হিরো দেখে পিপিলিকার মতন দলবেধে মেয়েরা স্কুল থেকে বের হচ্ছে। ঐ ভিরের মধ্যেও হীরাকে খুজে পাবার জন্য হিরোকে তেমন কোন কষ্টই করতে হয় না। যথা সময়ে হীরা বেড়িয়ে এলেও প্রথম দুই দিনই হীরা হিরোকে খেয়ালই করেনি।

তাই বাহারের কথা মত সাহস করে হিরো একদিন হীরাদের বাড়ির গলিটার মাথায় দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল। কেননা, হিরোরও বিশ্বাস, সিগারেট হাতে হিরোকে হীরা একবার দেখলেই হোল, ব্যস! কেল্লা ফতে। কেননা, হিন্দি সিনেমায় হিরো দেখেছে ডেটিং-এ যাবার সময় নায়কের সিগারেট খাওয়াটা খুবই শুভ। আর মাঝে মাঝে নায়িকা তা এত পছন্দ করে যে অনেক সময়ই গান শুরু করে দেয়। আবার বাংলা সিনেমায় কোন কোন নায়িকা নায়কের সিগারেট খাওয়া দেখে আসন্ন বিপদের কথা চিন্তা করে মাথার দিব্বি দিয়ে নায়ককে সিগারেট খেতে বারণ করে।

আর হীরা যদি হিরোকে সিগারেট খেতে মানাও করে, তবুও কোন সমস্যা নেই। কেননা, হিরো সিগারেট খেলেও সিগারেট যে কখনই হিরোকে খেতে পারবে না, এ বিশ্বাস হিরোর আছে। কাজেই সিগারেট ছেড়ে দেওয়া হিরোর কাছে ব্যাপারই না। হীরাদের স্কুল ছুটি হয় বিকাল পৌনে পাঁচটায়। তাই সারে চারটার দিকেই হিরো একটা সিগারেট হাতে দাড়িয়ে পরে হীরাদের বাড়ির গলিটার সামনে।

৪টা ৪০ মিনিটের দিকে সে সিগারেটটা ধরিয়ে আস্তে আস্তে দুইটি কি তিনটি টান দিয়েছে, অঘটনটা ঘটল ঠিক তখনই। হিরো দেখল গলির সামনে দিয়ে তার বিখ্যাত মোখলেস আঙ্গেল ঢুকছেন। এই মোখলেস আঙ্কেলই হীরার একমাত্র বাবা, আর পাড়ার উঠতি বয়সি ছেলেদের ভাল/মন্দের সার্টিফিকেট দেওয়ায় তার অন্যতম প্রধান কাজ। সিগারেট হাতে নায়িকার সামনে যাওয়া শুভ, কিন্তু সিগারেট হাতে নায়িকার বাবার সামনে পরা মোটেও শুভ লক্ষন নয়, তা হিরো খুব ভাল ভাবেই জানে। তো, সিগারেট ফেলে দে দৌড়।

সন্ধায় শান্ত ছেলের মতন বাড়ি ফিরে এলো হিরো। কিন্তু হীরার বাবার মতন সচেতন সামাজিক জীব জগতে খুব কমই আছে। তিনি একটুও ভুল করেননি হিরোর বাবাকে বিকেলের ঘটনাটা জানাতে। তো, যা হবার তাই হলো, সে রাতে হিরোর ভাগ্যে কোন খাবার জুটেছিল কি না জানি না, কিন্তু রান্না করার চলা খড়ির কয়েক ডজন বারি যে জুটেছিল, তা সহজেই বলা যায়। হিরো না হয় সামান্য একটু সিগারেট খেয়েছিল তাই বলে এত মারতে হবে, হিরো তা কখনই মেনে নিতে পারে না।

ধোলাই খেয়ে হিরোর জ্বর এসে গেল। সারারাত জ্বর থাকল। পরদিন ছিল ১৩ই ফেব্রুয়ারী। সকালে স্কুলেও যেতে পারল না হিরো। বিকালেও বাইরে বেরুতে ইচ্ছা করল না তার।

সন্ধার দিকে আর বাড়ীতে বসে থাকতেও ইচ্ছা করল না। তাই বাড়ীর বাইরে ঘুরতে বেরুল সে। কিন্তু সন্ধায় তেমন একটা বাইরে বেরুত না হিরো। কাজেই কোথায় যাবে ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। তাই এদিক সেদিক হাটতে হাটতে চলে গেল তার চিরচেনা খেলার মাঠে।

তার খেলার সাথীদের অধিকাংশই এখন মাঠে নেই। কেবল তার কিছু চেনা বন্ধু ও কিছু আধা চেনা সমবয়সী আবার বড় ছেলেরা ভালবাসা দিবসের পিকনিকের আলাপ নিয়ে ব্যাস্ত। হিরো তাদের সাথে পিকনিকের আলাপে অংশ নিলো। সর্বসম্মত ভাবে পিকনিকের চাঁদার পরিমান ৩০০ টাকা নির্ধারন করা হল। পরদিন হিরো পিকনিকে আসলো।

এবারের পিকনিকের মেন্যুতে নতুন এবং বিশেষ আয়োজন হিসেবে দামি বিয়ারের প্রবেশ ঘটবে। তাদের বাবু নামের এক বন্ধু আছে, জগৎ এ এমন খুব কম নেশাই আছে, যা সে করে নাই। বিয়ার আনার দায়িত্বটা সেই বাবুরই। রাত ৯ টা বাজে, তাই একজন হিরোকে তার বাড়ীর কথা মনে করিয়ে দিল। হিরোও ভাবল বাড়ীতে একটু বলে আসা দরকার, তাই সে আবার বাড়ীতে দেখা করতে গেল।

৯ টার দিকে হিরো বাড়িতে এল, তার ফিরতে দেরি হবে একথা জানাবার জন্য। হিরোর বাবা এতক্ষনে বাড়ী ফিরে এসেছেন, মাত্র একদিন আগের অকামের পরে ছেলের আজকের এই আবদারটাকে তিনি মোটেও সহজ ভাবে নিতে পারলেন না। তিনি হিরোকে জোর করে বাড়ীতে আটকে রাখলেন। মাস খানেক পরের ঘটনা, হিরো সাহস করে হীরাকে একটি প্রেম পত্র লিখে ফেলল। যেহেতু, হিরো এর আগে কোন প্রেমপত্র পড়ে নাই বা এতকাল লেখাপড়া শেখা সত্বেও তার কোন ব্যকরণ বইয়েই, “প্রেমিকার নিকট ভালবাসা চাহিয়া একখানা পত্র রচনা কর”, জাতীয় অতি দরকারি কোন পত্র না থাকায় তার প্রেম পত্রটি হল একেবারেই মৌলিক।

আবার, পত্রটিতে ভালবাসার পরিচিত ছলা-কলার কথা- যেমন “হে প্রিয়তমা! তোমার বাঁশির মতন এইটা, পটলের মতন ওইটা, কদুর মতন সেইটা দেখিয়া আমি পাগল হইয়াছি। কাজেই আমাকে (বর্তমানে পাগল) তোমার ভালবাসিতেই হইবে। ” এ জাতীয় কথাও স্থান পেল না। হিরোর প্রেম পত্রটি হল একেবারেই সাদামাটা। djuice এর প্রথম বিজ্ঞাপনগুলো যেমন পত্রিকার পুরো একটি পাতার মাঝে লাল রংয়ের একটা djuice লেখা ছিল, তেমনি ভাবে হিরোর প্রথম প্রেমপত্রটি একটি A5 সাইজের স্কয়ারের সাদা প্যাডের উপর সোনলী রংয়ের স্যালো জেল কমল দিয়ে লেখা- প্রিয়তমা হীরা, আমি তোমাকে আমার প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসি।

রোমিও কখনও জুলিয়েটকে এতটা ভালবাসতে পেরেছিল বলে আমার মনে হয় না। তোমাকে না পেলে আমি মরেই যাবো। ইতি তোমার ভালবাসার অপেক্ষায় হিরো। হিরো চিঠিটা একটা নীল রংয়ের খামে ভরে, কিন্তু কিভাবে সে চিঠিটা হীরাকে দেবে ? সুযোগ বুঝে একদিন খুব ভোরে ফাঁকা রাস্তায় একাকী হীরাকে পেয়ে যায় হীরো। এতদিন যে হীরা ও হীরো খুব স্বাভাবিক ভাবেই একে অপরের সাথে কথা বলত, মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানেই সেই হীরা হিরোকে দেখে কেমন যেন ভয়ার্ত চোখে তাকায়।

হিরো হীরাকে চিঠিটা দিয়ে জোড়ে সাইকেল চালিয়ে চলে যায়। যেতে যেতে একবার পিছনে তাকিকে দেখে হীরা খামসহ চিঠিটা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলছে। হিরোর অন্তরটাও যেন টুকরো টুকরো হয়ে যায়। কিন্তু সেদিন সে হীরাকে কিছুই বলে না। পরদিন আবার একই সময়, একই ভাবে, একই কথা লিখে হিরো হীরাকে আরেকটি চিঠি দেয়।

এবার দেবার সময় হিরো বলে- হীরা যতবার হিরোর চিঠি ছিড়ে ফেলবে ততবারই হিরো আরেকটা চিঠি হীরাকে দেবে। শুধুমাত্র বিরোক্তি থেকে মুক্তি পাবার জন্যই সে চিঠিচা ছিড়লো না এমন ভাব দেখিয়ে চিঠিটা ব্যাগে রেখে দেয় হীরা। রাতে হীরা চিঠিটা পড়ে। পরদিন সকাল বেলা রাস্তায় আবার হীরার সাথে দেখা করে হিরো। সে হীরার কাছে চিঠির জবাব চাই হীরা কোন কথা না বলে চলে যেতে থাকে, কিন্তু হিরো নাছোরবান্দা, কাজেই হীরা আগামী কালের কথা বলে কোন মতে সেদিনের মতন রেহাই পাই।

বাড়ী গিয়ে হীরা সব কথায় তার বাবা-মাকে বলে। হীরার বাবা-মা কি ব্যবস্থা নেবে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। তারা একবার ভাবে, হিরোর বাবা মাকে সব কথা জানিয়ে আসবে । আরেকবার ভাবে, হিরোর কাছে গিয়েই হিরোকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কোন মতে ফোঁস-ফাঁস দিয়ে হিরোকে হীরার ভাই পাতিয়ে দিয়ে আসবে। কিন্তু, এই সংকটময় মূহুর্তে সামান্যতম পরিমানেও কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবেই না।

কাজেই মিষ্টার ও মিসেস মোখলেস সিদ্ধান্ত নিলেন আপাতত পরদিন থেকে তারা মেয়েকে নিরাপত্তা দানের ব্যবস্থা করবেন। এবং এই দায়িত্বটি এস পরলো মিসেস মোখলেসের উপর। মিসেস মোখলেসের মেয়ে যখন খুবই ছোট, মানে ওয়ান-টুতে পড়ে তখন যেই ভাবে তিনি মেয়েকে সাথে করে স্কুলে নিয়ে যেতেন এখনো তিনি সে ভাবেই মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসেন। আবার একই ভাবে প্রাইভেট পড়তে যাবার সময়ও মেয়ের সাথে যান। কাজেই হিরো বেশ মুশকিলে পরে গেল।

হীরার সাথে যোগাযোগ করার আর কোন পথ খুজে না পাওয়ায় সে হীরার সাথে একই স্যারের কাছে একই ব্যাচে প্রাইভেট পড়া শুরু করল। একদিন সুযোগ বুঝে আবারও সে হীরার কাছে তার চিঠির জবাব চাই। হীরা সেদিনও একদিনের সময় চেয়ে নেয়। পরদিন প্রাইভেট পড়া শেষে হিরা হিরোকে একটি চিঠি দেয়। কিন্তু আসল সমস্যাটা ঘটল এখানেই, হীরার মা আজ হীরার চিঠি দেওয়া দেখে ফেললেন।

তিনি রাগে গজগজ করতে করতে হীরাকে সাথে করে বাড়ী ফিরে হীরার বাবাকে সব কথা জানালেন, হীরার বাবা ভাবলেন মেয়ের মতিগতি খারাপ। তাই তিনি আপাতত মেয়ের বাইরে বেড়ানোর উপর নিষেধাক্কা আরোপ করলেন। হীরা শত চেষ্টা করেও তার বাবা মায়ের সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারল না। এদিকে হিরো হীরার চিঠিটা নিয়ে চলে গেল পার্কে। পার্কে গিয়ে সে চিঠিটা পড়তে শুরু করল।

হিরো, তুমি আমাকে ভালবাস জেনে খুশি হলাম। মানুষ মানুষকে ভালবাসবে না, এর চেয়ে অস্বাভাবিক মনে হয় আর কিছুই হতে পারে না। তাই, আমিও তোমাকে ভালবাসি, এবং এই ভালবাসা আমি আমার পরিচিত অনান্যদের যতটুকু ভালবাসি তার চেয়ে একটুও বেশি নয়। তুমি আমাকে তোমার প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাস তা কখনই সত্যি নয়। কেননা রোমিও জুলিয়েটের ভালবাসা শুধুমাত্র রূপকথার গল্পেই সম্ভব।

খোজ নিলে রোমিও জুলিয়েটের জনক শেক্সপিয়রের জীবনে কত যে এ্যানি হাভওয়েকে পাওয়া যারে তার কোন হিসাব নেই। বাস্তবে এজাতীয় ভালবাসা এরশাদ যেমন বিদিশাকে ভালবাসত তার চেয়ে খুব একটা বেশি কিছু বলে আমার মনে হয় না। তা বটে, আমি একথা বিশ্বাস করি- আমাকে না পেলে তুমি মরেই যাবে। আবার যেহেতু “প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে”, কাজেই এক্ষেত্রেও আমাকে পাওয়া আর না পাওয়ার ফলাফল একই। চিঠিটা পড়ে হিরোর অন্তরটা যেন খান খান হয়ে গেল।

বুশও মনে হয় কোনদিনই লাদেনের অন্তরে এতটা আঘাত দিয়ে চিঠি দিতে পারত না। কোন কিছুই ভাল লাগছিল না হিরোর। তাই সে পার্কেই বসে থাকল। এক গাদা আবোল তাবোল চিন্তা করতে করতে তার মাথাটা ক্লান্ত হয়ে পরেছিল, কোন ফাঁকে পার্কের বেঞ্চিটাতেই ঘুমিয়ে পড়ল সে। ঘুম ভাঙল সন্ধার দিকে, ঘুম থেকে উঠেও সে পার্কের বেঞ্চিটাতেই বসে বসে ঝিমাতে লাগল।

মাগরিবের আযান শেষ হল, তবুও সে একই ভাবে পার্কেই বসে থাকল। তার আধা পরিচিত সেই বন্ধুটা যার দায়িত্ব ছিল পিকনিকের বিয়ার আনার, কোন এক সময় সে এসে বসেছে হিরোর পাশে। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানেই বাবুকে বেশ খানিকটা কাবু কাবু মনে হল হিরোর কাছে। সামান্য কিছুক্ষন কথোপকথনের পরই হিরোর কাছ থেকে ৮০ টাকা ধার চাই বাবু। বাবুর উপর আগে থেকেই রাগ ছিল হিরোর।

কেননা, পিকনিকের ৩০০ টাকার মধ্যে যে ২০০ টাকা ছিল বিয়ার বাবদ, হিরো পিকনিকে থাকতে না পারলেও সেই ২০০ টাকাও ফেরত পাইনি। হিরো বাবুকে পিকনিকের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলল, সে বাবুকে একটা টাকাও দিতে পারবে না। কিন্তু বাবু নাছোর বান্দা, সে ৮০ টাকা নেবেই নেবে। অনেক কথার পর হিরো বাবুকে বলল, বাবু যদি হিরোকে বিয়ার এনে দিতে পারে তবেই কেবল হিরো বাবুকে ৮০ টাকা ধার হিসেবে দিতে পারবে। বাবু হিরোকে জানাল, তার কাছে আপাতত বিয়ার নেই।

আছে কেবল দুই পুড়িয়া গাজা। আর এই ৮০ টাকা দিয়ে সে রাতের জন্য ফেনসিডিল কিনবে। কাজেই হিরো যদি ইচ্ছা করে তবে এখন গাজা খেতে পারে বা টাকাটা দিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করে ফেনসিডিলও পেতে পারে। কিন্তু বাবু হিরোকে কথা দিল, আগামীকাল সে হিরোকে বিয়ার এনে দেবেই দেবে। হিরোর মন আগে থেকেই খারাপ ছিল, তাই সে আপাতত গাজাই চাইল।

বাবু পকেট থেকে একটা বিশেষ ধরনের ছুরি বের করে তা দিয়ে কেটে কেটে কোল্কের মধ্যে গাজা সাজালো। সবকিছু ঠিকঠাক করে সে প্রথমে নিজে কয়েকটান দিয়ে পরিক্ষা করে কোল্কেটা দিল হিরোর কাছে। প্রথম টান দেবার পরেই হিরোর মাথাটা কেমন যেন ঘুরে উঠে কাশি হতে শুরু করল। কিছুক্ষন পরে আবার সে গাজায় দম দিল, এভাবে কয়েকটান মারার পর বাবু প্রথমদিনই হিরোকে এতগুলো টান দিতে মানা করল। কিন্তু এত সহজে ছেড়ে দেবার পাত্র নয় হিরো।

সে আরো কয়েকটান গাজা খেয়ে প্রথম দিনেই সিদ্ধি লাভের পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেল। গাজা খেয়ে হিরোর কাছে নিজেকে কেমন যেন সম্রাট সম্রাট মনে হতে লাগল। তার মনে হল, আজই সে হীরার বাড়ীতে গিয়ে হীরাকে তার মনের কথা বলে যে ভাবেই হোক হীরার ভালবাসা আদায় করেই ছাড়বে। কিছুক্ষন পর সে একটু স্বাভাবিক হলেই বাবু ৮০ টাকা নিয়ে চলে গেল ফেনসিডিল আনতে হিরোও আস্তে আস্তে হাটা শুরু করল বাড়ীর পথে। বাড়ী ফিরতে ফিরতে আবারও হীরাদের বাড়ীর দিকে তাকাল সে, তারপর আবার হাটা শুরু করল নিজের বাড়ীর দিকে।

বাড়ী ফেরার পর তার এত দেরির কারণ জিগ্যাসা করেও কোন উত্তর পেল না হিরোর মা। নাম মাত্র কিছু খেয়েই সে শুয়ে পরল তার বিছানায়। রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখল হিরো। পরদিন আবার সকাল হল, দুপুর গেল, এরপর আসল বিকেল। হিরো গেল প্রাইভেট পড়তে।

কিন্তু আজ তার হীরাকে দেখতে পেল না। কেমন কেমন যেন একটা কষ্ট নিয়ে সেদিনও পার্কে গেল হিরো। বাবু তার কথামত বিয়ার এনেছে। কিন্তু আজ বাবু হিরোর কাছে বিয়ার বাবদ ৫০০ টাকা দাবি করল। হিরো মানিব্যাগে ছিল স্যারের বেতনের ৯০০ টাকা, তার থেকে গতকাল বাবুকে ৮০ টাকা দেবার পরও ৮২০ টাকা আছে।

কাজেই সে বিনা বাক্য ব্যায়ে আজ বাবুকে ৫০০ টাকা দিয়ে দিল। হিরো আর বাবু ভাগ করে বিয়ার খেল। বাবু ভাবলম, এই আকালের যুগে হিরোর মতন মালদার মক্কেলকে হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। তাই সে হিরোকে আবারও পরদিন হিরোইন খাবার দাওয়াত দিলো। এতদিন হিরো শুধু মাত্র হিরোইনের নামই শুনে গেছে, তাই সেও বেশ আগ্রহী হয়ে উঠল।

তাই পরের দিনের জন্য বাবুকে আগাম ৫০ টাকা দিয়ে দিলো। আজও বাড়ি ফিরে ঘুমাতে গিয়ে স্বপ্ন দেখল হিরো- হীরাকে আটকে রেখেছে হীরার বাবা-মা আর হিরো সিনেমার হিরোর মতন হীরাকে বন্ধীদশা থেকে মুক্ত করে নিয়ে পালাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করেই মাঝরাতে প্রসাবের বেগ পাওয়াই স্বপ্নের বাকী অংশটুকু সে আর দেখতে পেল না। অতৃপ্ত মনে তার সারাটি রাত কেটে গেল। পরদিন আবারো একটি আলোকিত তেজি সূর্য উঠল পূর্ব আকাশে, সন্ধায় সূর্যের দাপট কমে গেলে হিরো আবারো গেল পার্কে, চাঁদের মায়াবী আলোয় তার হিরোইনের সাথে দেখা করতে।

গাজা নাকি কারো সাথে বেঈমানী করে না, কিন্তু হিরোইনও হিরোর সাথে বেঈমানী করলনা। তাই হিরোইন খেয়ে হিরো বেশ সুন্দর একটা অনুভূতি লাভ করল। তাই সে পরদিন সকালে আবারও বাবুর কাছে সন্ধার জন্য হিরোইনের অর্ডার দিয়ে এল। তার পরের দিনগুলো হিরোর কিভাবে কাটে জানি না। কিন্তু, সন্ধার পরে সে ডুব দেয় হিরোইনের সোনলী স্বপ্নের মাঝে।

স্বপ্নে সে দেখে শতবাধা পেরিয়ে সে পৌছে গেছে তার হীরার কাছে। কিন্তু স্বপ্ন ভাঙ্গার পর হীরাদের বাড়ীর সামনে দিয়ে যাবার সময় সে কেবল তাকায় সেদিকে, কিন্তু শত ইচ্ছা সত্বেও সাহস পায় না তার হীরার কাছে, হীরাদের বাড়ীতে যাওয়ার। তবুও সে ভেবে যাই একদিন না একদিন সে হীরাদের বাড়ীতে যাবেই তার ভালবাসার জন্য। কিন্তু, মাসের পর মাস চলে যায়, দিনটি আর আসে না। এদিকে প্রাইভেট স্যারের বেতনের টাকা শেষ হয়ে যায়, শেষ হয় বাবার পকেটের সংযোমী চুরির টাকা, তবুও শেষ হতে চায় না মাস।

কাজেই বাধ্য হয়ে হিরো বাবার পকেট থেকে বড় সাইজের নোট সরায়। টের পেয়ে যায় বাবা। আস্তে আস্তে ছেলের উপরের সন্দেহটা বেড়ে যায় হিরোর বাবার। কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেছে। ততদিনে মাঝে মাঝেই বাড়ির পুরাতন ভাংগা হাড়ি-পাতিল, বালতি-বদনা বিক্রি করে বাড়ি পরিস্কারের কাজটা প্রায় শেষ করে ফেলেছে হিরো।

আরো কয়েকটা দিন যেতে না যেতেই অবস্থা এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠল যে, রাগ করে একদিন হিরোকে বাড়ী থেকে বের করে দিল তাল বাবা। হীরাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে যেতে আবারও খুব দেখা করতে ইচ্ছা করল হিরোর, তবু এবারও সাহসে কুলাল না। কিন্তু হীরার কাছে যেতে না পারলেও যে ভাবেই হোক তাকেত তার হিরোইসের কাছে যেতেই হবে। আজ রাতে সাহসী হিরো ফাকা রাস্তায় একটা মেয়েকে একা পেয়ে তার গলার সোনালী চেন ধরে জোড়ে টান দেয়। এরপর দৌড়ে পালাতে গিয়ে ভাগ্য দোষে হোচট খায়।

সেই সাথে গণ ধোলাইয়ের পর থানায় দিয়ে আসা হয় হিরোকে। যে ছেলে সামান্য হিরোইনের টাকা জোগার করতে পারে না, তাকে খামোখা আটকে রেখে ভূরির যে কোনই পরিবর্তন হবে না, তা খুব ভালভাবেই বোঝে থানার লোক। কাজেই মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই, কিছুক্ষন আগে মুক্তি পাই হিরো। হিরোর মেধামী মাথার মনে পরে যায় পুরনো স্মৃতি। মনে পরে হীরাদের দোতলার ছাদের উপরের দরজা বিহীন ষ্টোর রুমটার কথা।

তাই হীরার জন্য না পারলেও তার হিরোইনের জন্য তাকে উঠতেই হবে হীরাদের ছাদে। ছাদের ষ্টোর রুমটিতে ভাল অথবা ভাংগা বালতি অথবা বদনা অথবা অন্যকিছু পাওয়া যাবেই যাবে। যে কোন মূহুর্তে পা ফসকে পরে যাবার ভয় আছে ঠিক, কিন্তু আজ কোন ভয়ই তাকে তার হিরোইসের কাজ থেকে দূরে সড়িয়ে রাখতে পারবে না। শ্বাসরুদ্ধকর কিছু মূহুর্ত, অবশেষে ছাদে উঠে পরলো হিরো। সাবাস হিরোইস সাবাস, যে ছেলেটা তার প্রেমিকার জন্য কোন দিন যেখানে যেতে পারেনি, অন্তত পক্ষে সেই একটি হিরোকেত হিরোইন তার নিজের জন্য সেখানে নিয়ে যেতে পেরেছে।

কিন্তু একি! হিরো দেখে, এত রাতে একাকী ছাদে বসে আছে হীরা। ( আচ্ছা, সেদিন রাতে কি হীরার আলোর মতন ঝলমলে কোন জীবনের পথ পেয়েছিল হিরো? নাকি সে অন্ধকারেই নেমে গিয়েছিল তার হিরোইনের সোনালী স্বপ্নের কাছে। না, আমি তা দেখিনি, আজো রাতে আমি শুধু দেখি শত শত সোনালী স্বপ্নের পরাজয়। আচ্ছা! সত্যিই কি সেদিন রাতে হিরো কোন কথা বলতে পেরেছিল হীরার সাথে ? না, আমি তা শুনিনি, আজো রাতে আমি শুধু শুনি কত কত মাতালের কথা ভোলা, তাল হারা মন মাতানো গান। )


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।