আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৫০টাকার নাহিয়ান, একজন ডঃ মুনির এবং শাহনেওয়াজের ইজ্জত…

Never reject a day in your life. Because: Good Day gives you happiness and Bad Day gives you experience.

এটা খুব-ই অর্থহীন একটা লেখা হবার সম্ভাবনা-ই বেশী। এখানে কোনো পদোন্নতি জড়িত না, কোনো বেতন স্কেলের কথা নেই এখানে, দু’তিন দান মাসোহারা-র সম্ভবনা জাগাবে না এই লেখা, কোনো পশ্চাদ্দেশ রক্ষাকারী পদক্ষেপ নিয়েও এখানে বলা হবে না। সর্বোপরি এটা কোনো প্রেস কনফারেন্সেও পঠিত হবে না মূল বক্তব্য বা প্রতিবাদ লিপি আকারে… কখনোই! তাই অর্থের সঙ্কুলান করা গেলো না কোনো মতেই। এজন্য এটা একটা অর্থহীন লেখা… এখানে রূপকথার মতো করে কিছু গল্প বলা হবে… একদল দুষ্টু ছেলের আর দু’চার জন অতিমানবের। তাই এটা একটা ছেলে ভুলানো লেখা হবার সম্ভাবনাই বেশী।

আগেই যদিও বলে নিলাম- এ’লেখা অর্থহীন; কিন্তু এটার শুরুটাই বেহায়ার মতো ৫০ টাকা-র একটা গল্প দিয়ে শুরু করছি। গত ২৫ শে মার্চের ঘটনা এটা- ২০১০! মোহাম্মদ নাহিয়ান(২৪) নামের এক দুষ্ট ছেলে ৫০ টাকার ফ্লেক্সি লোড করতে দেয় জনৈক শাহ নেওয়াজ-এর দোকানে। স্থান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অব্যবহিত বহির্সীমানা। নাহিয়ান এক অতি দুষ্ট ছেলে- সে খুবি’র স্থাপত্য’০৫ এর ছাত্র… এবং এখনো পর্যন্ত ভবিষ্যত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে তার নাম বেশ জোরেসোরে শোনা যাচ্ছে! সুতরাং, কোনো সন্দেহই নেই ছেলে হিসেবে সে খুব-ই দুষ্ট… তাই পরদিন ২৬শে মার্চ যখন সে আবার ঐ দোকানে গিয়ে কৈফিয়ত তলব করে এই বলে যে, ক্যানো এখনো তার ফোনে টাকা যায় নি- তখন সে নির্ঘাৎ দুষ্টুমি-ই করেছিলো। তার মোটেই উচিত হয়নি একজন স্থানীয় আওয়ামী হোমরা-চোমরা-র দোকানে গিয়ে মাত্র ৫০ টাকার কৈফিয়ত চাওয়া! শাহনেওয়াজ সাহেব(!) নিশ্চই কোনো পথের ভিখিরী নন; যে তার ৫০ টাকা-র পরোয়া তিনি করেন! তিনি রীতিমতো একজন সন্মানিত যুবলীগ নেতা, তিনি একজন মাননীয় ফটো-সাংবাদিক এবং তিনি “যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রথম-আলো”র একজন সৈনিক!! কোথাকার কোন নাহিয়ান কিনা, তাঁর কাছে চায় ৫০ টাকার হিসাব? রাতেই তাই নাহিয়ানের তলব হয় ভাই’এর দোকানে।

কথাবার্তার এক পর্যায়ে নাহিয়ানের ওপর খুব-ই ‘ন্যায়সঙ্গতভাবে’ চড়-চাপড় চালানো হয়! কম্পিউটার প্রকৌশলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দুষ্ট ছাত্রের মতে, নাহিয়ান-কে “শায়েস্তা” করবার সময় স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মোটর বাইক নিয়ে। দুষ্ট ছেলে মোহাম্মদ নাহিয়ান তখন, ভদ্রলোকি দেখিয়ে কিম্বা তার শিক্ষক হবার সম্ভাবনার জলাঞ্জলি দিতে চায়নি বলেই সম্ভবত গাল-হাতড়ে ফেরৎ আসে খাজা হলে! কিন্তু, ঘটনা আর জানতে বাকি থাকার কথা নয় কারোর-ই। থাকেও না! ফলশ্রুতিতে, ছাত্রদের ভেতরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে- দুষ্ট ছেলের দল বলে কথা! তারা সব দল বেঁধে যায় তাদের মহান শিক্ষক, সাবেক উদীচী-খুলনা’র উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-বিষয় পরিচালক ডঃ মুনিরুল ইসলামের কাছে। এই ভদ্রলোক সম্পর্কে খুবি’র ইংরিজি ডিসিপ্লিনের একজন সাবেক ছাত্রের ভাষ্য অনেকটা এরকম- “উনি নিজেকে প্রগতিশীল প্রমাণের জন্য স্বয়ং প্রগতি’র হাতেই হারিকেন ধরিয়ে দিতে পারেন!” তো যা হোক, “স্যার”রা তাদেরকে বলেন- “আগে মাইর দিয়া আসো তারপর দেখা যাবে!” সেই প্রেক্ষিতে স্থানীয় থানায় “শাহনেওয়াজ সাহেব”এর নামে একটা জ়িডি-ও করা হয় এই মর্মে যে, সে একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে লাঞ্ছিত করেছে। কিন্তু, তাতে করে “জনাব শাহনেওয়াজ”এর একটি চুলেও পাক ধরেছে বলে জানা যায়নি… ঘটনা হয়তো এখানেই থামতে পারতো, কিন্তু গত ৫ এপ্রিল সোমবার “প্রথম-আলো বন্ধুসভা”র খুবি শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এইডস ও মাদকবিরোধী এক অনুষ্ঠানে সদর্পে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন প্রথম-আলো-র ফটো সাংবাদিক শাহনেওয়াজ।

যদিও খুবি বন্ধুসভার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রদের ভাষ্যমতে, তাকে সে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ-ই করা হয়নি! ফলাফল কেমন হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন পাঠক? হ্যাঁ, ঠিক তেমনটাই ঘটে… খাজা হলের উত্তেজিত ছাত্ররা জমায়েত হতে থাকে ২ নং প্রশাসনিক বিল্ডিঙের সামনে। উদ্দেশ্য, শাহনেওয়াজ (সাহেব)-কে ক্ষমা চাইতে বলা! কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ করে বেরুনোর আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব-দরদী শিক্ষকেরা শাহনেওয়াজ-কে সরিয়ে নিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আপ্যায়িত করেন। তাঁদের অকাট্য যুক্তি- ছাত্ররা শাহনেওয়াজ-কে হাতে পেলে কে’জানে হয়তো জানে-ও মেরে ফেলতে পারে! ছাত্র’রা খুব-ই হিংস্র জন্তু কিনা!! অথচ, এই সন্মানিত শিক্ষকদের-ই ভাষ্য একসময় ছিলো- “আগে মাইর দিয়া আসো তারপর দেখা যাবে!” আমরা ধরে নেই সম্ভবত, ওটা বল্বার সময় জনাব শাহ্নেওয়াজের রাজনৈতিক পরিচয়-টা তাঁরা জানতেন না… কিম্বা, স্থাপত্য বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ’০৮-এর ছাত্রটির ভাষ্যমতে- “তখন-ও খুলনার মাননীয় মেয়র-এর ফোন পান নি স্টুডেন্ট এফেয়ার্সের পরিচালক ডঃ মুনিরুল ইসলাম!!” এই যখন অবস্থা, তখন কান্ডারি হিসেবে সেই এক-ই মুখ আবার ভেসে ওঠে ভিন্ন চেহারায়- ডঃ মুনিরুল ইসলাম! “ওনাকে স্পর্শ করতে হলে তোমাদের আমার লাশের ওপর দিয়ে যেতে হবে!”- বলে হুঙ্কার ছাড়েন তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে! ছাত্রদের তেমন কোনো ইচ্ছাই ছিলো না বোধ করি তাঁর লাশ ডিঙানোর; তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়- শানেওয়াজ ক্ষমা চেয়ে, নাকে খৎ দিলেই তারা চলে যাবে… শানেওয়াজকে ছুঁয়েও দেখবে না তারা… এক পর্যায়ে কোনো এক বিচিত্র কারণে স্বয়ং শাহ্নেওয়াজ-ই রাজি হন ক্ষমা চাইতে, প্রয়োজনে “কান ধরে উঠ বস” করতে…!! কিন্তু, মেয়রের ফোন যে ততক্ষণে চলে এসেছে- এহেন অপমান তো আর একজন যুবলীগ নেতাকে করা যায় না! সুতরাং, এবার বাঁধ সেধে বসেন শিক্ষকেরাই… “তিনি(শাহনেওয়াজ) ক্ষমা ঠিক-ই চাইবেন, কিন্তু এর বেশী কিছুই নাহ…!” কেননা, তাঁর একটা সামাজিক অবস্থান আছে; দু’দিন পরে যে ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হতে যাচ্ছে- তার কোনো সামাজিক অবস্থান থাকুক আর নাই থাকুক!!! এরপরের ঘটনা ইতিহাস- ডঃ মুনির নিজে ফোন করে পুলিশ আনান… পুলিশ আসার কিছুক্ষণ আগেই অধৈর্য ছাত্রদের একাংশ ভাংচুর চালায় বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে… পুলিশ এসে অন্ধ-লাঠিচার্জ করে। টিয়ার শেল নিক্ষিপ্ত হয়… ছোঁড়া হয় রাবার বুলেট… আহত হয় অন্তত ৫ জন শিক্ষার্থী। প্রায় ৫ হাজার ছাত্রের শিক্ষা জীবন-কে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় একজন শাহনেওয়াজের “ইজ্জত” রক্ষার্থে… গঠিত হয় তদন্ত কমিটি… যার সদস্য ৯ জন “নির্দলীয়” শিক্ষক!! ইংরিজি ডিসিপ্লিনের অন্য একজন ছাত্রের বর্ণনামতে খুবি’র “তদন্ত কমিটি” গুলোর গতানুগতিক তদন্ত পদ্ধতিটিও বড় চমকপ্রদ! অভিযুক্তদের তদন্ত কক্ষে ডাকা হবে- চমৎকার একটি হাসি দিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করা হবে- “বাবা, বল তো- গত খেলায় কলকাতা নাইট রাইডার্সের রান কত ছিলো?!” অভিযুক্ত ছাত্রটির উত্তর সঠিক কিম্বা ভুল যা-ই হোক না কেনো- পরদিন নোটিশবোর্ডে তার নামের পাশে “ছ’মাসের বহিষ্কারাদেশ” শোভা পাবেই!! এই হল আমার একেবারেই অর্থহীন লেখাটার সমাপ্তিরেখা; আমার এই লেখাটি প্রায় শেষের পথে! শুধু শেষ আকর্ষণ হিসেবে জানিয়ে রাখছি- শাহ নেওয়াজকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় খুলনা প্রেসক্লাব, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে পরদিন বেলা ১১টায় প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সভা হয়।

সভায় বক্তারা ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের এবং উশৃঙ্খল ছাত্রদের শাস্তির দাবি জানান। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়!! পুনশ্চঃ এই লেখাটা যখন লিখছি… তখন গল্লামারি ব্রীজ ধরে নিরালা আর পার্শ্ববর্তী এলাকায় যাকেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে সন্দেহ হচ্ছে- তাকেই “শায়েস্তা” করা হচ্ছে! এই মহান দ্বায়িত্ব হাতে নিয়েছে স্থানীয় ছাত্রলীগ নামধারীরা! অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলা-পাইন দের শক্ত মাইরের দরকার আছে… শিক্ষার্থীদের সূত্রে পাওয়া একটি ছবি ... রাবার বুলেটে রক্তাত্ত খান জাহান আলী হলের... [বিঃ দ্রঃ বৃহত্তর স্বার্থে যেকোনো মাধ্যমে বিনা অনুমতিতে এই লেখা ব্যাবহার করতে অনুমতি দেয়া গেলো...]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।