আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘প্রতিবন্ধিতা ও অটিজমের পাশে আমরা সবাই’

আমার মাঝে একজন কবিকে আমি লালন করি

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীদের অধিকার সম্বন্ধে আজ আমরা সোচ্চার। একসময় দৃষ্টি তথা অন্ধদের শুধু প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে মানুষ জানতো। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে মানুষ নতুন করে ভাবতে শিখেছে। তাই চিন্তা ভাবনা করে মানুষের সমস্যাগুলো চিহিৃত করছে। ফলে নতুন নতুন প্রতিবন্ধিতা চিহ্নিত হচ্ছে।

অটিজম তার মধ্যে অন্যতম। অটিজম বিষয়ে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের ধারণা নেই বললেই চলে। তাই অটিজম বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতনতার জন্য ২০০৮ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ‘ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। ২০১০ সালে এ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রতিবন্ধিতা ও অটিজমের পাশে আমরা সবাই। ’ চিকিৎসা শাস্ত্র মতে, এটি একটি বিকাশগত রোগ।

তবে কোন মানসিক রোগ নয়। আর যেসব শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হয় তাদের বলা হয় অটিস্টিক। শিশু অবস্থায় এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। সাধারণতঃ তিন বছর হওয়ার আগেই শিশুর অটিজমের লক্ষণ দেখা যায়। এদের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বাংলাদেশেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অটিস্টিক শিশু ও কিশোরদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার ভয়াবহ।

জানা যায়, প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে একজন শিশু অটিস্টিক হয়ে জন্ম গ্রহণ করে । ছেলেরা এই রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। অটিজমে আক্রান্ত ছেলে মেয়ের আনুপাতিক হার ৪:১। আবার প্রতি ১০ জন অটিস্টিক শিশুর মধ্যে ২ জনের মধ্যে অত্যন্ত দক্ষতা দেখা যায় ছবি আঁকা, গান, নৃত্য অথবা কম্পিউটার বা গণিতসহ নানা ক্ষেত্রে। অটিস্টিক শিশু কিশোররা দেখতে অন্য সব স্বাভাবিক শিশু কিশোরদের মতই।

কারণ তাদেও শারীরিক গঠনে কোন সমস্যা থাকে না। বাস্তব তথা তাদের কার্যক্রম ও আচরণ দেখে উপলব্ধি করতে পারা যায়। এদের প্রধান সমস্যা হলো যোগাযোগ ও গঠনমূলক খেলাধূলা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের ভাইরাস জ্বর, জন্মের সময় শিশুর অক্সিজেনের অভাব, পরিবেশ দূষণ, অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়েটিক গ্রহণ এবং বংশগত কারণ হচ্ছে এর মূল কারণ। বিশ্বের উন্নতশীল দেশ সমূহে অটিজমের চিকিৎসা বের হলেও আমাদের দেশে এদের নিয়ে সরকারি বা বে-সরকারীভাবে তেমন চিন্তাভাবনা করা হয়নি বললেই চলে।

অটিস্টিক শিশুর সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হচ্ছে, বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতি। এসব শিশুরা আলাদা পরিবেশে দ্রুত খাপ খাওয়াতে পারে না। এরা স্বাভাবিক শিশুর মত মানসিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে না। মাঝে মধ্যে খুব চিৎকার করে, লাফালাফি করে, রাগান্বিত হয়। অনেক সময় নিজেকে আঘাত করে।

বাংলাদেশে ২০০০ সালে অটিস্টিক শিশুদের উন্নয়নের জন্য ঢাকায় প্রথম কাজ শুরু করে ‘সোসাইটি ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অব অটিস্টিক চিলড্রেন (সোয়াক)। এছাড়াও বে-সরকারি পর্যায়ে রাজধানী ঢাকা শহরে তিনটি স্কুল রয়েছে । তবে এসব প্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা সীমিত। তাই এদের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারী সংস্থা, নীতি নির্ধারকসহ সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এদের দিকে নজর দিলে এরাও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা হচ্ছে। এই অটিস্টিক শিশুদের বাদ দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া অসম্ভব। সে জন্য ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে প্রতিবন্ধিতা ও অটিজমের পাশে নিজ উদ্যোগে দাঁড়াতে হবে। সেটা তাদের করুণা করে নয়, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।