আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের বাঙ্গালীয়ানার ভীমরতি



আমাদের বাঙ্গালীয়ানার ভীমরতি আমার ধারণা ছিল মানুষের মনজগতের যে চিন্তা তা সম্ভবত স্বাধীন, বাহ্যিক দিক থেকে মানুষের অনেক কিছুই পরাধীন করা সম্ভব হলেও মনের ব্যপারটা একান্তই নিজের। কিন্তু এখন সে ধারনর উপর বিশ্বাস রাখতে কষ্ট হয়। বিদেশী কৃষ্টি-কালচার আমাদের বাঙ্গালী সংস্কৃতমনা হৃদয়কে নিদারুণভাবে ব্যহত করে দিচ্ছে। শুরুর দিক কার কথা, তখন আমি একেবারেই নতুন পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে সবে মাত্র যোগ দিয়েছি। পেশাগত কারণেই পত্রিকা অফিস গুলোতে যওয়া আসা হয়।

একদিন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল একটি জনপ্রিয় বাংলা জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক গোছের একজনের সাথে। প্রথমে ভদ্রলোককে বেশ খোলামেলা বলেই মনে হল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমার চেতনায় ভিন্ন একটি ব্যপার ধরা পড়ল। সেটি আর কিছু নয় ভদ্রলোকের বাচনভঙ্গি এবং শব্দ চয়ন। ভদ্রলোক যে ভাষায় কথা বলছিলেন সেটি বাংলা, আমার মাতৃভাষা হলেও বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল।

এটি কি আমার সেই মাতৃভাষা যাতে আমি এতগুলো বছর কথা বলে আসছি ? পত্রিকা এখনও অত ভাল বুঝিনা, কিন্তু অল্প দিনের অভিজ্ঞতায় অন্তত এ ধারনা হয়েছে যে পত্রিকা একটি জাতির ঐতিহ্য-সংস্কৃতির বিকাশে কিছুমাত্র কম ভূমিকা রাখেনা। আর দেশের প্রতিনিধিত্বকারী একাটি জনপ্রিয় বাংলা জাতীয় দৈনিকের পদস্থ কর্মকর্তার মুখের ভাষাই যখন এমন বিকৃত তখন অন্যদের কথা ত বলাই বাহুল্য। ডিজুস শব্দটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে একটা ব্যধির মত জড়িয়ে গেছে। যে ব্যধির কোন সঠিক দাওয়াই আছে বলে আমার জানা নেই। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মাঝে এর প্রভাব এতটাই বেশী যে এর সংজ্ঞা দাড়িয়ে গেছে যা কিছু বিকৃত তাই ডিজুস।

পোষাক-আশাক, খাদ্য-খাবারের ধরণ থেকে শুরু করে জীবণের প্রায় সব পর্যায়ে এই ডিজুস বা বিকৃত আচরণের প্রভাব আশংকাজনক। আজ হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি। চালু হয়েছে ডিজুস ল্যংগুয়েজ, যেখানে কিনা কে কতটা বিকৃত ভাষায় কথা বলতে পারে তারই প্রতিদ্বন্দিতা চলে। অস্বাভাবিক উচ্চারণের পাশাপাশি সেচ্ছায় সৃষ্ট নতুন নতুন কিছু বিকৃত শব্দকে ব্যবহার করে যে দুরগন্ধময় ভাষা খিচুরির সৃষ্টি হয় তাই ডিজুস ল্যংগুয়েজ। আমাদের বাঙ্গালী জাতি সত্বাকে টিকিয়ে রাখতে গেলে আগে আমাদের মনটাকে বাঙ্গালী করতে হবে।

ফেব্র“য়ারী মাস এলেই আমরা আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা জুরে দই। পত্র-পত্রিকা গুলোর বিশেষ ক্রোর পত্রের সাথে সাথে টিভি মাধ্যমগুলো প্রচার করে নানা অনুষ্ঠানসূচী। কিন্তু যেই না ফেব্র“য়ারী মাস কেটে যায় তখন আর কওকে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতেও শোনা যায় না। শুনেছি ভাষা নদীর মত তাই মনে হয় এই নদীতে অজ শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। এ শূণ্যতা পূরণের সময় এখনই।

যে শহীদদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হল তা কি শুধু একটি বিশেষ দিন বিশেষ সময়ের জন্য? যে চেতনার হাত ধরে আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রের জন্ম, আমরাকি এখনও স্বাধীন হতে পেরেছি?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।