আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৈদেশিক সাহায্য এবং দারিদ্র্য

ব্লগাই না, কমেন্টাই............। ।

বৈদেশিক সাহায্যের সাথে দারিদ্র্যের সম্পর্ক নিয়ে আজ উন্নয়নশীল দেশগুলো চিন্তিত। ১৯৭১ এর নয় মাস সংগ্রামের পর একটি ভঙ্গুর বাংলাদেশ যখন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, তখনও কিন্তু তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম চলছিল। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলদুই মিত্র ভারত ও রাশিয়া, কিন্তু ধ্বংসপ্রাপ্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংগ্রামে হাত বাড়াতে পারেনি এই দুই মিত্র।

কারণ ভারত তখনো দারিদ্র্যের সাথে লড়াইয়ে রত। রাশিয়া সমুদ্র বন্দরের মাইন অপসারণে সাহায্য করেছিল অবশ্য, এতে একজন রাশান মাইন বিশেষজ্ঞ প্রাণ দেন। রাশিয়ার তখন খাদ্য ঘাটতিতে ছিল, তাই খাদ্য ঘাটতির জন্য আমাদের হাত বাড়াতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। নবীন বাংলাদেশের তখন সম্মানহানিকর মার্কিন প্রস্তাব মেনে নিতে হয়েছিল দেশ কে বাঁচাতে। আমরা জানলাম আমাদের জন্য বৈদেশিক সাহায্য আসছে।

আমাদের সেসময় যেমন ছিল খাদ্য ঘাটতি আবার খাদ্য আমদানির জন্য দরকারী বৈদেশিক মূদ্রার ঘাটতিও ছিল। এজন্য আমাদের ভিক্ষের থালায় পয়সা ও চাল দুটোই দরকার। নান দেশ আর কন্সোর্টিয়ামের কাছে ধর্না দেয়ার প্রয়োজন দেখে দিল। আর এ “দুটো” কে একত্রে আমরা বলি বৈদেশিক সাহায্য। বৈদেশিক সাহায্য আদৌ কতটা “সাহায্য”? বিশ্ব ব্যাংকের রেসিদেন্ট চিফ Just Faaland বলেছেন, “The situation evolved economically, poitically, and socially in a way that few options were left open: it was better to depend on aid than to starve; it was better to have prospect of development at a rate sufficient to escape the poverty trap than to refuse to face up to the problem of establishing satisfactory relationships with donors” কাজেই নীতিনির্ধারকরা বৈদেশিক ঋণ সহয়তাকেই বেছে নেন, যদিও ভবিষ্যতে এর বোঝা আমদেরকেই বহন করতে হতো।

দূর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশকে কিউবাতে পাটের ব্যাগ রপ্তানি করার দায়ে খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করে ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের ফাঁদে ফেলা হয়। এতে কিছুটা বোধোদয় হয় আমাদের। John Parkinson এর ভাষায়ঃ In this case Cuban incident might have been no more than a pretext to take Bangladesh off the list of food aid recipients. It may be recalled that Egypt’s trade with cuba was said not to be in contention; cotton shipments from that country to cuba appeared to be excludable under the terms of the 1967 law although no such exclusion appered to be possible for gunny sacks made in Bangladesh.” খানিকটা বোধোদয় হওয়ার পর ড. নুরুল ইসলাম বলেছেন, “after all few deny that aid relationship is not an honorable equal relationship. It creates a dependency syndrome and discourages self-reliance……since the poor are not likely to suffer much, if at all, and in any case any serious impact on them can be offset, one tends to opt for the no-aid scenario for the next few years to push the policymakers and the political leadership out of the state of inertia and inaction.” অর্থাৎ প্রাথমিক ভাবে বৈদেশিক সাহায্য আমাদের আরো অনেক সমস্যায় জড়িয়ে ফেলছে। বৈদেশিক সাহায্য শুধু যে সাহায্য তাই নয়, ‘সাহায্য’ টাইটেলের নিচে কিন্তু রয়েছে চড়া সুদের ঋণ, সেই ঋণের ব্যবহারের পূর্ণ স্বাধীনতাও আবার আমাদের সরকারের নেই। ঋণের টাকায় আপনি ব্রিজ বানাবেন? তাহলে আপনি নিশ্চয়ই এমন কন্ট্রাক্টর খুঁজবেন যে কম পয়সায় অল্প সময়ে ব্রিজ বানিয়ে দিবে।

কিন্তু না, দাতারা বাধ সাধবেন। তারা বলবেন “অমুক কোম্পানির এক্সপার্ট, তমুক কোম্পানির লোহার বীম, সিমেন্ট কিনতে হবে তোমাকে”। তাতেও শেষ নয়, আপনি খরচ বাঁচিয়েও যতটা অর্থ বাঁচাবেন তা আবার দাতারা নিয়ে যাবেন। এভাবে বাজেটে ফরেন রিজার্ভ এর মাত্রা যা হবার কথা ছিল তা আর হবে না। এছাড়াও নানা দিক আছে প্রতিটি সমস্যার।

তবে সব কথার চেয়ে বড় কথা হলো যে, এই ঋণ আমাদের আদৌ ভালো করছে, নাকি খড়ের মত এক মূহুর্ত ভাসিয়ে রেখেই আবার পানিতে তলিয়ে যেতে দিচ্ছে। Robert Cassen বলেছেন, “The impact of aid on poverty has been disappointing, more effective monitoring of aid is necessary. The formulation of a more coherent strategy for tackling the problems of functional landlessness should be an important focus of attention for those donors who place high priority on meeting the needs of this group.” Robert Cassen উক্ত বাণীটা দিয়েছেন খাদ্য সাহায্য সম্পর্কে। তার ভাষ্যমতে খাদ্য সাহায্য ভূমিহীনদের “বাইপাস” করে চলে যাচ্ছে অন্য ‘গ্রুপ’ এর হাতে। সাহায্য কতটা আমাদের গরীবরা পায়, আর কতটা অন্যদের পেটে যায় তা কিন্তু দাতাদের অজানা নয়। তবে তারা কেন ঋণ দিয়ে যাচ্ছেন? উত্তরটা ‘অগ্রহণযোগ্যরকমের’ সরল।

সেটা হলো, ঋণ দেয়া বন্ধ হলে শুধু মিডল্ম্যানরাই শাস্তি পাবে না, শাস্তি পাবে দেশের গরীব লোকজনও। কিন্তু ঋণের বোঝাও তো ওই গরীবদেরই বইতে হয়। সেই কথাটা কে বলবে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।