আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেয়েকে অপহরণ করতে এসে মা-বাবাকে খুন

জীবনে সফল হতে না পারি দুঃখ নেই... একজন ভাল মানুষ হিসেবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে চাই...
রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুরে বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রধারী দুই তরুণ এক দম্পতিকে গুলি করে হত্যা করেছে। গতকাল সকালে এ নৃশংস ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন নার্সারি ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান (৫৫) ও তাঁর স্ত্রী রোমানা নার্গিস (৪৫)। তাঁদের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জে। স্বজনেরা জানান, সাদেকুর রহমানের স্কুলপড়ুয়া ছোট মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এলাকার বখাটে তরুণ রুবেল।

মেয়ের মা-বাবা এতে রাজি হননি। গতকাল সকালে রুবেল আরেক তরুণকে নিয়ে সাদেকের বাসায় গিয়ে বিয়ের জন্য চাপ দেয় এবং একপর্যায়ে মেয়েটিকে অপহরণের হুমকি দেয়। এ কথা শুনে ছোট মেয়ে দৌড়ে গিয়ে তার কক্ষের বাথরুমে আশ্রয় নেয়। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সাদেকের সঙ্গে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে গুলি করে রুবেল। গুলিবিদ্ধ দম্পতিকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

এই দুই তরুণের বিরুদ্ধে এর আগে গুলশান থানায় সাদেক সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন, কিন্তু হুমকির মুখে পরে তা প্রত্যাহার করে নেন বলে তাঁর মেজো মেয়ে জানান। গতকালের ঘটনার পর রুবেলের সঙ্গী মিথুন চন্দ্র চন্দের মাকে আটক শেষে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। গতকালের ঘটনার বিবরণ দিয়ে মেজো বোন জানান, সকাল নয়টার দিকে রুবেল ও মিথুন তাঁদের বাসায় আসে। তাঁর বাবা দরজা খুলে দেন। তরুণেরা বাসায় ঢুকেই ছোট বোনের খোঁজ করে।

বাড়িতে আসার কারণ নিয়ে ওই তরুণেরা সাদেকের সঙ্গে উত্তপ্ত কথাবার্তা বলতে থাকে। তাঁদের মা সোফায় বসে ছিলেন। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে রুবেল প্রথমে তাঁর বাবা ও পরে মাকে গুলি করে। মেজো মেয়ে জানান, বাবা-মাকে গুলি করার দৃশ্য দেখে তিনি দৌড়ে দোতলা থেকে নিচে নেমে দারোয়ানকে গেট বন্ধ করে দিতে বলেন এবং চিত্কার শুরু করেন। ওই দুই তরুণও তাঁকে ধাওয়া করে নিচে নামছিল।

ইতিমধ্যে আশপাশের লোকজন জড়ো হতে শুরু করলে তরুণেরা অস্ত্র উঁচিয়ে পালিয়ে যায়। পাঁচতলা বাড়িটির নিচতলায় সপরিবারে থাকেন তত্ত্বাবধায়ক আবদুল কুদ্দুস। কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, তিনি রুবেল এবং আরেক তরুণকে দোতলায় সাদেকের ফ্ল্যাটে যেতে দেখেছেন। এর ১০ মিনিট পরই ওই বাড়ির মেজো মেয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে তাঁকে বলেন, ‘চাচা, বাবা-মাকে মারছে, আমাকেও মারবে। আপনি দরজা লাগান।

’ তিনি জানান, মেজো বোন নিচে নামার কিছুক্ষণ পরই দৌড়ে নামে তাঁর ছোট বোন। কুদ্দুস জানান, তিনি কলাপসিবল গেট টেনে দিয়ে তাঁর বড় মেয়েকে চাবি আনতে বলেন। কিন্তু চাবি আনতে না-আনতেই নেমে আসে ওই দুই যুবক। এদের মধ্যে রুবেলের হাতে অস্ত্র ছিল। রুবেল কলাপসিবল গেটের ফাঁক দিয়ে পিস্তলের নল বের করে বলে, ‘দুইডারে শ্যাষ করছি, তোরেও গুলি করুম।

দরজা ছাইড়া দে। এরপর আমি দৌড়াইয়া নিজের ঘরে ঢুইকা পড়ছি। ’ কুদ্দুস ও বাড়ির অন্য ভাড়াটেরা জানান, তাঁরা কেউই গুলির শব্দ পাননি। পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও গুলির শব্দ না শোনার কথা বলেন। তবে কান্নার শব্দ শুনে বাইরে আসেন।

কুদ্দুস আরও বলেন, ‘পোলা দুইডা চলে যাওয়ার পরই আমি দৌড়ে ওপরে উঠি। সাদেক সাহেব তহন ড্রইংরুমের ফ্লোরে পইড়া ছিল। তাঁর স্ত্রী সোফার ওপর কাত হইয়া পইড়া আছিল। আমি ও তিনতলার একজন ভাড়াইটা গিয়া দেখি, তখনো মহিলার শ্বাস চলতাছে। সাদেক সাবের কোনো সাড়া নাই।

তাই আমরা প্রথমে তাঁর স্ত্রীরেই ধইরা রিকশায় কইরা হাসপাতালে নিলাম। ’ পরে পুত্রবধূ স্কুল থেকে বাসায় এসে সাদেককে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক মহিলাকে সকালে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর মাথার মগজ বেরিয়ে গিয়েছিল। এর পাঁচ মিনিট পরই গুলিবিদ্ধ এক পুরুষকে নিয়ে আসা হয়।

দুজনই হাসপাতালে আসার আগেই মারা যান। ’ কালাচাঁদপুরের গোরস্থানের পাশের জিপি ক ৫৪/৪ নম্বর বাড়িটির সামনে ঘটনার পর থেকেই ছিল মানুষের ভিড়। বাসায় ঢুকে দেখা যায়, দোতলা থেকে নিচতলার ফটক পর্যন্ত ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। দোতলার সি-১ ফ্ল্যাটের তালাবদ্ধ দরজা আর হাতলেও ছিল রক্ত। সিঁড়িতে পড়ে ছিল রক্তে ভেজা রাবারের চটি।

আশপাশের বাসিন্দারা জানান, প্রায় পাঁচ বছর ধরে সাদেক ওই বাড়িতে থাকতেন। গুলশান ডিসিসি মার্কেটে তাঁর নার্সারির ব্যবসা রয়েছে। তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে সম্প্রতি মালয়েশিয়া গেছেন।

মেজো মেয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ে। ছোট মেয়ের এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও দেয়নি। কী নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সে সম্পর্কে প্রতিবেশী বা কেউ নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না। সাদেকুর রহমানের ভাগনে আলী ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই রুবেল বাড়ির ছোট মেয়েকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। সে প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ার কারণেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।

হত্যাকারী রুবেল সম্পর্কে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রথম আলোকে বলেন, রুবেল উঠতি সন্ত্রাসী। তার আগাম কোনো রেকর্ড পুলিশের কাছে নেই। রুবেলের বাবা আবুল কাশেমের পরিবহনব্যবসা রয়েছে। আবুল কাশেম ও তাঁর দুই ভাইয়ের প্রগতি সরণিসংলগ্ন নর্দা এলাকায় প্রায় এক বিঘা জমির ওপর বাড়ি ও দোকান আছে।

গতকাল দুপুরে রুবেলদের বাসায় গিয়ে তার বাবা-মা কাউকে পাওয়া যায়নি। দুই ভাইবোনের মধ্যে বোন বড়। তাঁর বিয়ে হয়ে গেছে। প্রতিবেশীরা জানান, সকালেও রুবেলের বাবা-মা ছিলেন। পর পর কয়েক দফা র‌্যাব-পুলিশের আসা-যাওয়ার পর তাঁরা বাসায় তালা মেরে বেরিয়ে যান।

রুবেলের ছোট চাচি সালেহা বেগম প্রথম আলোকে জানান, ২৪-২৫ বছর বয়সী রুবেল কোনো একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বলে তিনি শুনেছেন। গতকাল দুপুরের দিকে পুলিশ রুবেলের সঙ্গে থাকা মিথুনের বাড়িতে অভিযান চালায়। পুলিশ মিথুনের মা রিতা রানী চন্দকে আটক শেষে জিজ্ঞাসাবাদ করে। রিতা পুলিশকে জানিয়েছেন, মিথুন ইবাইস ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ পড়ার কথা বলে টাকা নেয়। মিথুনের বন্ধু রুবেল লেখাপড়া করে না বলেই তিনি জানান।

পুলিশ ইবাইস ইউনিভার্সিটিতে খোঁজ নিয়ে জেনেছে, দুই বছর ধরে মিথুন ক্লাসে যায় না। ব্যবসায়ী দম্পতির মৃতদেহ গতকাল দুপুরে ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর ময়নাতদন্ত করা হয়। এদিকে নার্সারি ব্যবসায়ী খুনের প্রতিবাদে নার্সারি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা গতকাল বিকেলে কালাচাঁদপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁরা দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। লক্ষ্মীপুর ও রায়পুর প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ নার্সারি সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান সাদেকুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী খুন হওয়ায় গতকাল তাঁদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের দারোগা বাড়িতে ছিল শোকের মাতম।

ভবানীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহ বাড়িতে থেকে গত বুধবারই সাদেক ঢাকায় ফেরেন। Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.