আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জহরলাল স্যারের ক্লাসে ধরা (ndc experience)

আমার ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ: http://bit.ly/gaWV2X

হঠাৎ মাথায় কি ভুত চাপলো জহরলাল স্যারের নাম লিখে সার্চ দিয়ে পোস্টগুলো পড়ছিলাম। পড়তে পড়তেই মনে হল স্যারের ক্লাসে ধরা খেতে খেতে বেঁচে যাওয়ার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করার কথা। জহরলাল স্যার নটর ডেম লাইফে আমার সবচেয়ে প্রিয় স্যার। স্যারের ক্লাস আমি বরাবরই মনোযোগ দিয়ে করি। যদিও প্রথম দিকে ব্যাপারটা এমন ছিল না।

প্রথম দিককার ক্লাসগুলোতে স্যারের ভারী ভারী জ্ঞানের কথাগুলোর ফলাফল ক্লাস শেষে কোমর ব্যাথা ছাড়া আর কিছু হয় নি। কিন্তু এক সময় বুঝতে পারলাম এমন ভাল স্যার জীবনে একবার বইকি দুইবার পাওয়া যাবে না। স্যার যখন বলবিদ্যা করানো শুরু করলেন, ঠিক তাঁর আগের অংক কুইজেই ০ পেয়েছি। এমনিতেই বলবিদ্যা ভাল লাগে না, তারপরে এমন নাম্বারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সিদ্ধান্ত নিলাম বলবিদ্যা ক্লাসে অন্য কোন বই পড়ব। জহরলাল স্যারের ক্লাসে আক্ষরিক অর্থেই পিন ড্রপ সাইলেন্স থাকে, যারা করেছেন তাঁরা বলতে পারবেন।

সুতরাং এমন একটা ক্লাসে লেকচার ফলো না করে অন্য কোন বই পড়ার সিদ্ধান্ত কতটুকু আত্মঘাতী হতে পারে তা বলা বাহুল্য। তবে আশার কথা ছিল সে সপ্তাহে আমার সিট পেছনের দিকে ছিল। যাই হোক আসল ঘটনায় আসি। স্যার ক্লাসে এসে রোলকল করে যথারীতি চিত্র আঁকা শুরু করলেন। আমি চিত্রটা এঁকে মনোযোগের সাথে আনা বইটা পড়া শুরু করে দিলাম।

আমি তখন বইয়ের ক্লাইম্যাক্সে হারিয়ে গেছি। হঠাৎ শুনি স্যার বলছেন, এই ছেলে তুমি কি করতেছ? তো আমি সামনে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি স্যার সরাসরি আমার দিকে তাঁকিয়ে! তাঁর সাথে পুরো গ্রুপের লোকজন। স্যার কিভাবে আমাকে খেয়াল করেছিলেন সম্ভবত আমি বোর্ডের দিকে তাকচ্ছিলাম না বলে। আমার গলা রীতিমতো শুকিয়ে কাঠ।

আমি স্যারকে খুবই পছন্দ করি, আমি চাচ্ছিলাম না স্যারের হাতে বমাল ধরা খেতে। আমার একেবারে সামনে বসে থাকা রায়হানকে আস্তে করে বললাম তুই একদম নড়বি না। কারণ রায়হান নড়লেই স্যার বইটা দেখে ফেলবেন। আমি তখন আমার বামদিকে বসে থাকা গাধাটাকেবারবার বলছি বইটা সরাতে। সে উদাস নয়নে আমার দিকে এমন ভাব নিয়ে তাকিয়ে রইল ভাবটা এমন যে আমার কথা তার কান পর্যন্ত যাচ্ছেই না!!! সিট যেহেতু পেছনে ছিল স্যারের পক্ষে এসে চেক করা সম্ভব ছিল না।

তো স্যার আমার ডান দিকে বসে থাকা একান্ত ভালো চেহারার ছেলে নোমানকে বললেন দেখতো এর সামনে কি। আমি দাঁড়িয়ে আছি, আমার সামনে ডেস্কের উপর সেই কালপ্রিট বই। নোমান অত্যন্ত আগ্রহের সাথে ডেস্কের নিচে আশেপাশে খুব ভাল করে খুঁজে স্যারকে জানাল, স্যার কিছু নেই। নোমানের মত গোবেচারা টাইপ ছেলের উপস্থিত বুদ্ধি দেখে আমি সাথে সাথে খুশি হয়ে গেলাম। তো স্যার আমাকে বললেন, এই তুমি খাতা নিয়া আস।

আমি নিয়ে গেলাম। খাতায় চিত্র ছাড়া কিছুই নাই। অথচ স্যারের সেই অংক করা শেষ। স্যার আমাকে বললেন, চিত্র ছাড়া কিছু নাই কেন? আমি মিনমিনে গলায় বললাম, স্যার চিত্রটা বুঝি নাই তো, তাই বুঝার চেষ্টা করছিলাম। ।

স্যার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, হুম্‌ম্‌ম্‌, বুঝি স্যার, বুঝি। যান। স্যারের সেই দৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে মিথ্যা কথা বলা কতটুকু কঠিন সেটা সেদিন বুঝেছিলাম। সিটে ফিরে এসে দেখি বইটা নেই, কোন এক ফাঁকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ক্লাসের পরে গাধাটাকে জিজ্ঞেস করলাম বইটা তখন সরালি না কেন? তার বক্তব্য ছিল, বইটা তখন সরালে স্যার দেখে ফেলতেন।

এরপরে আর কখনো স্যারের ক্লাসে অন্য কিছু করার সাহস পাই নি। এখনো সেদিনকার সাহস চিন্তা করে বেশ অবাক লাগে। পরিশিষ্টঃ ১. বলা বাহুল্য, বলবিদ্যা কুইজেও আমি ০ পেয়েছিলাম। ২. বইটা কিন্তু একেবারেই নিরীহ একটা বই, মাসুদ রানার। কেউ অন্য কিছু ধরে নিলে আমি দায়ী না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।