আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইলা মিত্রের পৈত্রিক ভিটা বেদখল। গড়ে উঠেছে মাদ্রাসা, চলছে তামাকের চাষ!



ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলায় কুমার নদের পাশে ছোট্ট একটি গ্রাম, নাম বাগুটিয়া। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জানে না তাদেরই গ্রামের একটি পরিবারে জন্মগ্রহন করেছিলেন এমন একজন বিপ্লবী যাকে নিয়ে গর্ব করে সমগ্র ভারত উপমহাদেশ। যিনি অধিকার বঞ্চিত গনমানুষের বিপ্লব ও সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস। যার পর্বপুরুষের বসত ভিটে এখনো রয়েছে এই গ্রামে। এমনকি অধিকাংশ মানুষ জানে না, কখনো শুনেনি ‘ইলা মিত্রের’ নাম! এই বাড়িতেই শৈশব কাটিয়েছেন ইলা মিত্র।

গ্রামটির একটি প্রান্তে মাঠের মধ্যে ঘন জঙ্গলের ভেতর রয়েছে পাশাপাশি দুটো পুরনো বাড়ি। এলাকায় বাড়ি দুটোর একটি হাজী কিয়ামউদ্দীনের বাড়ি এবং অন্যটি হাফেজ সাহেবের বাড়ি নামে পরিচিত। হাজী এবং হাফেজ উভয়েই প্রয়াত, ফলে বাড়ি দুটোতে এখন বাস করে তাদের উত্তরাধিকারীরা। তারাই এই বাড়ি এবং সংলগ্ন কয়েকশত বিঘা সম্পত্তির মালিক। হাজী কিয়ামউদ্দীনের এই বাড়িটিতেই একদা বাস করতেন নগেন্দ্রনাথ সেন ( এলাকার প্রবীনদের কাছে নগেন সেন নামে পরিচিত ) ও মনোরমা সেন দম্পতি।

নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন বাংলার একাউন্ট্যান্ট জেনারেল। সরকারী চাকুরীর কারণে নগেন্দ্রনাথ সেনকে চলে যেতে হয় কোলকাতায়। সেখানেই ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর জন্ম নেন ইলা। জন্মের পর যার নাম রাখা হয় ইলা সেন। আর এই শিশুটিই পরে হয়ে উঠেন বিপ্লবের সূতিকাগার, নাচোলের গণমানুষের 'রানী মা'।

নগেন্দ্রনাথ সেন যত দিন বেঁচে ছিলেন, মাঝে মাঝে আসতেন নিজ বাড়িতে। শৈশবে বাবার সাথে এসেছেন ইলা মিত্রও, থেকেছেন বেশ কিছু কাল এই প্রত্যন্ত পল্লীতে। ফলে বাড়িটি এই মহিয়সীর স্মৃতিবিজড়িত। নগেন্দ্রনাথ সেনের ছিল বিস্তর ভূ-সম্পত্তি। এই বাড়ির আশপাশের সব জায়গাই ছিল তার মালিকানাধীন।

ভারত বিভক্তির পর তার গোমস্তা কালীপদ চক্রবর্তী বেশ কিছু সম্পত্তি নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। ওই সময়ে সুযোগ সন্ধানী কতিপয় মানুষ কালীপদ চক্রবর্তীর সহায়তায় হাতিয়ে নেয় বিপুল সম্পত্তি। কিছু জমি বিক্রি করেন নগেন্দ্রনাথ সেনের শাশুড়ি সরোদিনী সেন যদিও সরোদিনী সেন ওই জমির মালিক ছিলেন না। বাদশা মিয়ার দীঘি পাকিস্থান আমলে বাদশাহ মিয়া নামে পুলিশের এক কর্মকর্তা হাতিয়ে নেয় বেশ কিছু জমি। সেখানে এখন মাছ চাষের জন্যে খনন করা হয়েছে দীঘি ও পুকুর।

বাড়ির প্রাঙ্গনে গড়ে উঠেছে একটি মাদ্রাসা! জনশ্রুতি আছে এই এলাকায় একসময় বাঘ ও টিয়া বসত করতো; তাই গ্রামের নাম হয়েছে বাগুটিয়া! তবে নগেন্দ্রনাথের এই বাড়িটি জনবসতি থেকে কিছুটা দুরে। সম্ভবত তারা বিলুপ্ত বিলের ভেতর দিয়ে নৌপথে যাতায়াত করতেন বলেই জনবসতি থেকে দুরে বিলের কাছে বাড়ি করেছিলেন। এলাকার প্রবীনদের সাথে কথা বলে জানা যায় নগেন্দ্রনাথ সেন একসময় নিজেদের নিরাপত্তার জন্যে পার্শ্ববর্তী হাট ফাজিলপুর গ্রাম থেকে কিছু মানুষকে এনে নিজের বাড়ির পাশে বাড়ি তৈরি করে থাকতে দিয়েছিলেন। এখনও সেখানে একটি হিন্দু পরিবার রয়ে গেছে। বাড়ির আশপাশের বাকী জমিতে চাষ হচ্ছে তামাক।

তামাক চাষ যে মানুষটি জীবনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সংগ্রাম করে গেছেন বাঙ্গলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে, তারই পূর্ব পুরুষের ভিটা আজ বেদখল! এই বাড়িটি ও নগেন্দ্রনাথ সেনের সম্পত্তি উদ্ধার করে সেখানে ইলা মিত্রের স্মরণে একটি কমপ্লেক্স নির্মান হতে পারে মহিয়সী এই বিপ্লবীর প্রতি স্বাধীন বাঙ্গালি জাতির ন্যূনতম শ্রদ্ধা প্রদর্শন।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।