আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার খেলা আর শখ আর আম্মুর জন্য যন্ত্রনা

ইতপউস .....
আমার খেলা আর শখ আর আম্মুর জন্য যন্ত্রনা আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে কোন খেলাটায় আমি সব থেকে মজা পেতাম বা আমার সব থেকে আনন্দের খেলা বা শখ টা কি ছিল তাহলে আমি বলব কাটাকুটি খেলা। আর আমার কাটাকুটি খেলা মানে হল কাগজ কাটা কুটি করা আমি যে কি মজা পেতাম কাগজ কেটে, বলে বুঝাতে পারব না! এমনি এমনি কাটা কুটি করা বা মজার সব কারুকাজ করা কত কি যে করতাম! কাটতে কাটতে কাঁচির ধার চলে যেত তারপর আম্মুর ঝাড়ি খেয়ে কিছু দিন কাটা কুটি বন্ধ রাখতে হত আবার কাঁচি ধার করা হলেই কাটাকুটি শুরু! আর মাঝে মাঝে আম্মু ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে কাঁচি লুকিয়ে রাখত এই কাটা কুটি নিয়ে কিছু অদ্ভুত কুসংস্কার ও ছিল। যেমন কাগজ কাটলে মৃত্যু এগিয়ে আসে! এমন। কিন্তু আমার আনন্দের কাছে এই ভয় কিছুই মনে হত না! লুকিয়ে লুকিয়ে আমার কাটাকুটি খেলা ঠিকই চলত! আমার এই কাটাকুটি খেলাটা শখ হয়ে উঠল অন্যভাবে। পিচ্চি থেকেই আমার আরেকটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল খুব ভোর বেলা ঘুম ভেঙ্গেই পত্রিকা পড়া! আর এমন হত যে বাসায় আমি সবার আগে পত্রিকা নিয়ে পড়তাম! আব্বুরও আগে! পত্রিকার মজার মজার সব খবর, আশ্চর্য জনক কোন খবর, বিচিত্র সব ছবি , গল্প, ইতিহাস, মজার সব কার্টুন, ধাঁধাঁ, কৌতুক, ছড়া, গল্প, নতুন কোন যন্ত্র তার বিবরণ ছবি সহ, অদ্ভুতুরে গল্প, এ সব পরতে ভীষন ভালো লাগত।

এক সময় এসব কেটে কেটে রেখে দিতে শুরু করলাম ফাইলে গুছিয়ে। মাঝে মাঝে বের করে পরতাম। সবাইকে পরতে দিতাম। আরও নিতাম সুন্দর কোন দৃশ্যের ছবি। কি যে আনন্দ পেতাম এসব জমাতে! কাগজ অনেক অনেক জমে গেল যখন, দাদা তার ট্রাংক আমাকে দিয়ে দিল।

তারপর ফাইল থেকে বের করে সব কাগজ সাজিয়ে রেখে দিলাম সেখানে। আমার কাগজ কাটার এই পাগলামি এতই বেড়ে গিয়েছিল যে আমার টেবিল, আমার বই খাতার নীচে, আমার টেবিলের ড্রয়ার, আলমারির উপর সব জায়গা ভর্তি হয়ে যেত। এমন অবস্থা যে পেপার কাটাই দেখা যেত সব জায়গায়! আমার এই শখ আম্মুর জন্য ছিল যন্ত্রণা! আম্মু দেখল এভাবে হলে আর বাসায় কাউকে থাকতে হবে না কিছুদিন পর শুধু পেপার কাটাই রাখতে হবে! তাই আম্মু আমাকে না জানিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ট্রাংক এর নিচের কাগজ একটু একটু করে নিয়ে ফেলে দিত। আর আমি নতুন কাগজ কেটে কেটে উপরে রাখতাম। নিচের কাগজ গুলোর খোঁজ নেয়া হত না সব সময় কাগজ জমানোর আনন্দে।

হঠাৎ হঠাৎ খেয়াল হত আর ভাবতাম এত কাগজ কাটি তাও ট্রাংক ভরে শেষ হয় না কেন! আবার মাঝে মাঝে কাগজের মাঝে প্রয়োজনিয় কোন একটা খুজতে বসে পেতাম না হয়ত। অবাক হয়ে যেতাম কিন্তু তাও বুঝতে পারতাম না কাগজ গুলো যে নাই বা গেল কোথায়! অনেক পরে আমি জানতে পেরেছিলাম যে আম্মু এই কাজ করত লুকিয়ে! আমার এই কাগজ কাটার মাঝে আরেকটা প্রিয় ছিল রান্নার রেসিপি নেয়া, বাসার ডেকোরেশন এর ছবি নেয়া। আমার এত কাটা কুটির জমানো কোন কিছুই নেই এখন আর। কিন্তু কিছু রেসিপি আর ইন্টোরিয়র ডিজাইনের অনেক ছবি আছে এখনও। রেখে দিয়েছি।

জানি না কত দিন রাখতে পারব! আমার কাগজ কাটা কুটির অভ্যাস টা এখন পরিবর্তন হয়ে হয়েছে কোন সাইটের স্ক্রিনসট নেয়া বা লেখা কপি করে রাখা! মজার সব গল্প, দরকারি টিপস, ছবি, ইতিহাস, কার্টুন, রেসিপি, তথ্য, টিউটোরিয়াল আরও যে কত কিছু রাখি! সব অবশ্য হযবরল ভাবে জমে গেছে! সব সাজাতে হবে! নাহলে নিজেই খুজতে বসে বিপদে পরব! আমার পিসিতে অনেক জায়গা আছে। আশা করি আমার এই পাগলামির যন্ত্রণায় সব জায়গা শেষ হয়ে যাবে না!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.