আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকাইয়া লিভ টুগেদার : রক্ষিতা ও পরকীয়ার জগাখিচুড়ি

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

গতকাল মানবজমিন পত্রিকায় ঢাকায় লিভ টুগেদার সম্পর্কে একটা সাড়া জাগানো রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকায় লিভ টুগেদার, কোথাও ফ্যাশন, কোথাও নীল দংশন কিন্তু ওই রিপোর্টে লিভ টুগেদার বলে যেই বিষয়টা প্রকাশ করা হয়েছে, সেটা কি আসলেই লিভ টুগেদার ? আসুন, একটু ব্যাবচ্ছেদ করি। লিভ টুগেদার কী ? আমার এক পরিচিত সংস্কৃতিকর্মী লিড টুগেদারের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে, এক জোড়া নারী ও পুরুষ পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে বিবাহ বহির্ভূত বসবাসকে বলে লিভ টুগেদার। লিভ টুগেদারের কয়েকটি শর্ত থাকে। যেমন : তারা উভয়ে একত্রে বসবাসের খরচ সমানভাবে বহন করবে।

তারা পরস্পর ছাড়া অন্য কারো সাথে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হবে না। তারা পরস্পরকে আর পছন্দ না করলে সমঝোতার ভিত্তিতে আলাদা হয়ে যাবে। তারা কোন সন্তান গ্রহণ করবে না, তবে অসাবধানতাবশত কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করে ফেললে তার ভরণপোষণের ব্যয় উভয়ে সমানভাবে বহন করবে। ভবিষ্যতে তারা বিয়ের সিদ্ধান্তও নিতে পারে। আরেক ধরনের লিভ টুগেদার আছে।

দুজন নারী বা দুজন পুরুষ যখন একত্রে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেয় সেটাও এক প্রকার লিভ টুগেদার। অবশ্য দুজন নারী যখন পরস্পর বসবাস করে তাদের বলে লেসবিয়ান এবং দুজন পুরুষ যখন পরস্পর বসবাস করে তাদের বলে গে। এই লেসবিয়ান বা গে দের একত্রে বসবাসকেও লিভ টুগেদার বলে। লিভ টুগেদারের উৎপত্তি : আবারও সেই সংস্কৃতিকর্মীর কাছে ধর্ণা দেই। তিনি বলেন, নারী অধিকারের সঙ্গে লিভ টুগেদারের সম্পর্ক রয়েছে।

বিয়ে নামক সম্পর্কে নারীকে পুরুষের অধীনস্ত করে ফেলে। সারা পৃথিবীতে বিয়ে সংক্রান্ত ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় আইনগুলো পুরুষের পক্ষে যায়। তাই এই সব আইন ভাংতে হলে বিয়ে প্রথাটাকে অস্বীকার করতে হবে। মূলত অবাধ যৌন স্বাধীনতার ও বিয়ে নামক আইনী সম্পর্কে জড়ানোর ভয়ে লিভ টুগেদারের উৎপত্তি। দায়িত্ব না নিয়ে জীবন উপভোগ করার একটা পন্থা এটা।

পশ্চিমা বিশ্বে অবাধ যৌনসম্পর্ক বা সমকামীদেরকে সামাজিকীকরণের একটা সাধারণ প্রথা হল লিভ টুগেদার। ঢাকাইয়া লিভ টুগেদার : রক্ষিতা ও পরকীয়ার জগাখিচুড়ি মানবজমিন পত্রিকা বলছে, বিবাহিত লোকেরাও লিভ টুগেদার করছে। কিভাবে ? তারা তাদের স্ত্রী বা স্বামীর বাইরেও অন্য সঙ্গী রাখছে। কিন্তু যাদের স্ত্রী বা স্বামী রয়েছে তারা তারা যখন অন্য কোন সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখছেন সেটাকে কেন লিভ টুগেদার বলা হচ্ছে বুঝলাম না। ওটা তো পরকীয়া সম্পর্ক।

রক্ষিতা ও পরকীয়া সম্পর্ক কোন আধুনিক জিনিস না। এটা একটা সুপ্রাচীন অপকর্ম। সাধারণত যে পুরুষের যত বেশি অর্থ থাকে, তার তত বেশি সংখ্যক রক্ষিতা রাখার প্রবণতা দেখা দেয়। রাজা ও জমিদাররা এককালে প্রকাশ্যেই রক্ষিতা রাখতেন। ক্ষমতাবানরা কখনও জোর করেও কাউকে কাউকে রক্ষিতা হিসেবে রাখতেন।

বাঈজি বা পতিতা ইত্যাদির মধ্যে থেকেও রক্ষিতা বেছে নিতেন কেউ কেউ। রংমহল বা হেরেম শরীফ নাম দিয়ে সেই সব ভবনে রাখা হত বাঈজি বা পতিতা বা রক্ষিতাদের। আরব দেশে এখনও শেখদের মধ্যে হেরেম শরীফে অনেক অনেক রক্ষিতা রাখার রেওয়াজ আছে। রাজা বা জমিদারদের যুগ গেছে। কিন্তু রক্ষিতা রাখার পুরোনো সেই প্রবণতা আজও রয়ে গেছে।

কোটিপতি ব্যবসায়ী বা ধনী মানুষ বা ক্ষমতাবানদের মধ্যে অনেকেই রক্ষিতা রাখেন। তাদের ঘরে স্ত্রী সন্তান থাকা সত্ত্বেও কেবল ভিন্নজাতের একটা মজা লোটার জন্য তারা রক্ষিতা রেখে যান। রক্ষিতাদের কোন আইনী অধিকার থাকে না বলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এরা কোন হুমকি সৃষ্টি করতে পারে না। মানবজমিনের রিপোর্টে এই ধরনের সম্পর্ককেও লিভ টুগেদার বলেছে। এটা কি লিভ টুগেদার ? অন্য দিকে বিবাহিত কোন নারী বা পুরুষ যখন অন্য কোন বিবাহিত বা অবিবাহিত নারী বা পুরুষের সঙ্গে প্রেম বা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছেন সেটাকে আমরা বলি পরকীয়া প্রেম বা পরকীয়া সম্পর্ক।

বিয়ে বহির্ভুত পরকীয়া সম্পর্ক ব্যাপারটিও আধুনিক নয়। সবকালে সব সমাজেই এই ব্যাপারটি ছিল। যারা এই ধরনের সম্পর্কে লিপ্ত হন, তারা জেনেশুনেই এই রকম সম্পর্কে লিপ্ত হন। এটাকে লিভ টুগেদার বলে না। অথচ পত্রিকাটি ঢালাওভাবে এই ধরনের সম্পর্ককেও লিভ টুগেদার বলছে।

মানুষ যতই সভ্য হোক, শেষ পর্যন্ত সে একটা প্রাণী মাত্র। প্রাণিজগতের একটা প্রবণতা হল বংশবৃদ্ধি করা। আর এই বংশবৃদ্ধি বা প্রজাতি রক্ষাকে নিশ্চিত করার জন্য সকল প্রাণীই বহুগামী। এই বহুগামিতা আরও নিশ্চিত করে প্রাণীর পুরুষ ও নারীর মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ। প্রাণীদের নারী পুরুষরা পরস্পরকে আকর্ষিত করার জন্য নানা রকম মজার মজার কাজ করে যায়।

মানুষও প্রাণিজগতের এই নিয়মের বাইরে নয়। অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে বহুগামিতা কোন সমস্যা নয়। কারণ তাদের কোন সমাজ নাই। নাই ব্যক্তিগত সম্পদ। মানুষের মধ্যে এক সময় ব্যক্তিগত সম্পদ ছিল না।

ছিল না বিয়ে প্রথা। কে কার ঔরশে জন্ম নিচ্ছে সেটা নিয়ে কেউ ভাবত না। পিতা নিয়ে কেউ ভাবতই না। তার পরিচয় হত মায়ের পরিচয়ে। মাতৃতান্ত্রিক সেই সমাজে নারীরাই হত সন্তানের পরিচয়।

কে কার পিতা সেটা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা ছিল না। মানুষের মধ্যে বিশেষত পুরুষদের মধ্যে যেদিন থেকে ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জনের ধারণা তৈরি হল সেইদিন থেকেই বহুগামিতা নিয়ে মানুষ সমস্যায় পড়ল। সমস্যাটি হল, তার ব্যক্তিগত সম্পদের উত্তরাধিকার নির্ণয় সংক্রান্ত। তার মৃত্যুর পর কে হবে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির উত্তরাধিকার ? তখনই দরকার হল কে কার সন্তান সেটা নির্ণয় করা। বহুগামিতার ফলে কে কার সন্তান সেটা নির্ণয় করা অসম্ভব ছিল।

এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই বিয়ে প্রথার উদ্ভব হল। নিয়ম করা হল, মানুষ বহুগামী হতে পারবে না। বিশেষত নারীর ক্ষেত্রে এই বহুগামিতা রোধ করে সন্তানের পিতা যে তার স্বামীই এটা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হল। সামাজিক এই বিয়ে প্রথাই পরে ধর্মীয় প্রথা এবং সবশেষে রাষ্ট্রীয় প্রথায় পরিণত হল। কিন্তু মানুষের রক্তের মধ্যে এখনও রয়ে গেছে প্রাণিজগতের সেই বহুগামী হবার প্রবণতা।

এর ফলে মানুষ যতই শিক্ষিত বা সভ্য হোক, সে মাঝে মাঝে এই সব নিয়ম কানুনের বেড়াজাল ভেঙ্গে বেরিয়ে যায়। তখনই তৈরি হয় পরকীয়া প্রেম, রক্ষিতা ও পতিতাবৃত্তি। কিন্তু আধুনিক লিভ টুগেদার আরও এগিয়ে গিয়ে একটা সম্পর্ক তৈরি করে। এটা বিয়ে প্রথাটাকেই অস্বীকার করে। পশ্চিমে সামাজিকভাবে লিভ টুগেদার এখন গ্রহণযোগ্য।

তবে বিয়ে মিলিয়ে যায় নি। লিভ টুগেদার করতে করতে এক সময় অনেকেই বিয়ে করে ফেলছেন। যারা বিয়েকে অস্বীকার করে লিভ টুগেদার করছিলেন, তারা কেন আবার বিয়ের মতো আইনী ও ধর্মীয় কালচারে ফেরত যান, সেটা বোধগম্য নয়। আমাদের দেশে সামাজিক, ধর্মীয় ও আইনী কোন দিক থেকেই লিভ টুগেদার গ্রহণযোগ্য নয়। বরং আমাদের দেশে লিভ টুগেদারের নাম দিয়ে পরকীয়া প্রেম বা রক্ষিতা রাখার প্রবণতা একটা প্রতারণার সামিল।

বিয়ে ও লিভ টুগেদার পাশাপাশি চলতে পারে না। এর মাধ্যমে বিবাহিত দম্পতির একজন প্রতারিত হচ্ছেন। অন্য দিকে যার সাথে লিভ টুগেদার করা হচ্ছে সেও নিজেকে বঞ্চিত ভাবতে পারে। ফলে আত্মহত্যা, খুন, মারামারি ও কলহ ইত্যাদি এই সব লিভ টুগেদারকে কলুষিত করছে। * একই রিপোর্টটি ব্লগার রুবেল হাসানও তার ব্লগে প্রকাশ করেছেন।

Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.