আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাবি ছাত্র আবু বকর হত্যা তদন্ত রিপোর্ট-শেষ : ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানো হয় লঘুদণ্ডে পুরস্কৃত দায়ী ছাত্রলীগ কর্মীরা



আবু বকর হত্যার দায় ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর মতো হয়েছে। রিপোর্টের আদ্যোপান্ত পাঠে পাঠকমাত্রই বুঝবেন যে, ব্যক্তি ফারুক এবং হল প্রশাসন বিশেষ করে বিএনপিপন্থী প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরদের ফাঁসানোর প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার ছাপ রয়েছে এর পাতায় পাতায়। অন্যদিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে রক্ষার সবধরনের যুক্তি-কৌশলের ঢালাও উপস্থিতি বিরাজমান। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা হিসেবে প্রথমেই ছাত্রলীগের এফ রহমান হল শাখার ‘সভাপতি ফারুক’কে ‘ব্যক্তি ফারুক’ বা ‘ভিন্নমতাবলম্বী ফারুক’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তার মাদ্রাসা থেকে ‘আলিম-উত্তীর্ণ’ হওয়াকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

অথচ ছাত্রলীগের বিগত ৯ বছরের পরীক্ষিত ও বিরোধী দল করা নেতা সাইদুজ্জামান ফারুক। দলের প্রতি আনুগত্য বিশেষ করে কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনের আস্থাভাজন হওয়ার কারণে তাকে এফ রহমান হলের সভাপতির পদ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে ছাত্রলীগ সভাপতিও কি বিরোধী কোনো ছাত্র সংগঠনের এজেন্ট? আর তাহলে গোপন ও সরাসরি ভোটে রিপন কীভাবে সভাপতি নির্বাচিত হলেন? তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ১৩-১৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘হলে মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী সিট বণ্টনের ন্যূনতম ব্যবস্থা অনুপস্থিত। যে ২৫ জনের সাক্ষাত্কার গ্রহণ করা হয়েছে, তাদের মধ্যেও মাত্র দু’একজন বাদে কারও আবাসিক কিংবা দ্বৈতাবাসিক হিসেবে কোনো বৈধ বরাদ্দ নাই। যে দু’একজনের রয়েছে, তারাও নিজ কক্ষে অবস্থান করে না।

এমনকি নিহত আবু বকরসহ তার সাতজন রুমমেট কেউই ওই কক্ষে বৈধ আবাসিক বা দ্বৈতাবাসিক ছাত্র নয়। অনেকে গত চার বছর ধরে অনাবাসিক কার্ড নিয়ে আবাসিক রুমে থেকে আসছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতারাই পূর্বাপর কোন কক্ষে কোন ছাত্র থাকবে বা উঠবে সে সিদ্ধান্ত দিয়ে আসছে। এটি হলের প্রচলিত রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ’ এখন প্রশ্ন হলো—এই ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন কারা? রিপোর্টে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বলতে ছাত্রলীগকে বোঝানো হয়েছে।

ওই দিনের ঘটনা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। ঘটনার সময় ছাত্রলীগ ঢাবি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন এবং কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথাও বলেছেন। প্রকাশিত খবরে এমন বিবরণ রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে—কেন তদন্ত কমিটি আবু বকরের খুন ও সংঘর্ষের জন্য ছাত্রলীগ শীর্ষ নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও সাক্ষ্য দিতে ডাকলো না? দায়ভার এককভাবে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের ওপর চাপালো না? দায়বদ্ধতা থেকে ছাত্রলীকে বাঁচাতেই কি তদন্ত কমিটি ও প্রশাসনের নিরন্তর এই প্রচেষ্টা? সংশ্লিষ্টরা জানান, এটাই হচ্ছে আওয়ামী তথা ছাত্রলীগের ‘গোয়েবলসীয় স্টাইল’, যারা একটি মিথ্যাকে দশবার সত্য বলে তা সত্যে পরিণত করার অপূর্ব ক্ষমতা রাখে! প্রসঙ্গত, রিপোর্টে ফারুককে দায়ী করে রিপোর্টের ১৭তম পৃষ্ঠায় যা বলা হয়েছে তাহলো, ‘তবে, আবু বকর সিদ্দিকের মৃত্যুসহ হলের ঐ দিনের ঘটনার জন্য মূল ব্যক্তি হিসেবে মোঃ সাইদুজ্জামান ফারুক যেমন দায়ী, তেমনি হল প্রশাসনও এর দায়ভার কিছুতেই এড়াতে পারে না’। রিপোর্টে একইভাবে ছত্রে ছত্রে পুলিশকে রক্ষার অপচেষ্টা দেখা যায়।

যেখানে খুন হওয়া আবু বকরের ৭ রুমমেটের ৩ জন এবং পাশের রুমের একজন সাক্ষ্যদাতার প্রত্যেকেই ‘পুলিশের টিয়ারশেলে’ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, সেখানে উপসংহারে তদন্ত কমিটি বলেছে যে, ‘হাতুড়ি, ইট ও মোটা রডের অথবা শক্ত কোনো অবজেক্টের (বস্তু) দ্বারা আবু বকরের মৃত্যু ঘটেছে...। ’ একইসঙ্গে গুলি বা ধারালো কোনো অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যুর বিষয়য়টি নাকচ করা হয়। রিপোর্টে আবার স্ববিরোধিতাও দেখা যায়। একই পৃষ্ঠায় কমিটি ফের বলেছে, ‘কি দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত আবু বকরের মৃত্যু ঘটেছে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে হলে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সময় নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত আবশ্যক। ’ যদি তাই হয়, তাহলে পুলিশকে সরাসরি দায় না দিয়ে কিংবা ছাত্রলীগের গুলি বা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যু ঘটেনি, তা নিশ্চিত করে কেন বলা হলো? এর মানে কি এই নয় যে, পুলিশ ও ছাত্রলীগকে বাঁচানোরই অপচেষ্টা করা হয়েছে দারুণভাবে? আবার ফারুককে ঘটনার দায়যুক্ত করা হলে তার বিরুদ্ধে মামলা কিংবা পরবর্তী বৃহত্ কোনো ব্যবস্থা নিতে বলা হলো না কেন? হলে পুলিশ ঢুকে থাকে প্রক্টর-প্রভোস্টের নির্দেশে।

রিপোর্টে কোথাও প্রভোস্ট আবার কোথাও প্রভোস্ট-প্রক্টর উভয়ের নির্দেশে হলে পুলিশি অ্যাকশনের কথা বলা হছে। যদি তাই হয়, তাহলে শুধু প্রভোস্টকে অপসারণের কথা বলা হলো কেন? কেন প্রক্টর এই দায়যুক্ত হবেন না? রিপোর্টে একস্থানে বলা হয়েছে যে, আবু বকরের মৃত্যুর পর মেডিকেলে প্রভোস্ট হলে পুলিশ প্রবেশের দায় প্রক্টরের ওপর চাপিয়েছেন। বিপরীত দিকে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকেও প্রক্টরকে দায়ী করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। আন্দোলন হয়েছে ক্যাম্পাসে। পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে।

এ অবস্থায় যে ব্যক্তি আসামির কাঠগড়ায়, সেই ব্যক্তি কিভাবে বিচারক বা তদন্ত কমিটির সদস্য হলেন, আর যে বিচারক, সে কি সঠিক রায় দিয়েছে সপদে থেকে? গুরুদণ্ডে লঘু শাস্তিতে প্রকারান্তরে পুরস্কৃত ছাত্রলীগ =============================== রিপোর্টে খুন ও সংঘর্ষের ঘটনায় মূল ব্যক্তি হলো সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুকসহ তার সমর্থক আরও ৯ জনকে দায়ী করা হয়। সিন্ডিকেট ওই খুনের শাস্তি হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে সাময়িক বহিষ্কারের ব্যবস্থা নিয়েছে মাত্র। খুনের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ও গ্রেফতারের উদ্যোগ নেয়নি। প্রকারান্তরে তাদের পুরস্কৃতই করা হয়েছে। ২১ ফেবু্রয়ারি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা ছাত্রী উত্ত্যক্তের ঘটনায় ৫ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এরা ৫ জনই ছাত্রলীগ কর্মী। এছাড়া হলের বা ক্যাম্পাসের ছোটখাটো ঘটনায়ও সাময়িক বহিষ্কার করা হয়ে থাকে। তাহলে প্রশ্ন ওঠে—খুনের শাস্তিও কি শুধু সাময়িক বহিষ্কার? সিন্ডিকেটের আইওয়াশ এ সাময়িক বহিষ্কার কি ছাত্রলীগ অভিযুক্তদের কৌশলে পুরস্কৃত করা নয়?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.