আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিস্ময়ের নাম রবিউল

একটা আক্ষেপ ছিল রবিউল ইসলামের। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট পাওয়ার পর সবাই যা করে, তিনিও তা-ই করেছিলেন। স্মারক হিসেবে নিয়ে নিয়েছিলেন ম্যাচের বলটা। মাঠ ছাড়ার সময় দূর থেকে সেটা দেখালেন ফটোসাংবাদিকদের। অথচ রবিউলের ছবিটা ছাপা হলো না প্রথম আলোয়! রাতে ওয়েবসাইটে ছবি খুঁজে না পেয়ে পরদিন সকালে অনুযোগ করে বসলেন, ‘ওই ছবিটা তো ছাপলেন না...।


অনুযোগ করলেও রবিউলও জানেন, ক্রিকেট শেষ পর্যন্ত দলীয় খেলাই। তাঁর কষ্টার্জিত উজ্জ্বল পারফরম্যান্স আসলে ঢেকে গেছে বাকিদের মালিন্যে। ৩৩৫ রানে হারা ম্যাচের শেষে ৬ উইকেট পাওয়া কোনো বোলারের বল উঁচিয়ে ধরার ছবি কেবল দীর্ঘশ্বাসই বাড়াত।
তবে রবিউল হতাশা চেপে রেখে আশার ছবি আঁকতে জানেন। পত্রিকার পাতায় ছবি ছাপা বাদ দিন, ৬ উইকেট নিয়েও লজ্জায় মাথা নুইয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে, এটাই তো ভেতরের আগুনটাকে জ্বালিয়ে দেয়।

হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে রবিউল জ্বলে উঠলেন আরেকবার, এবার ৫ উইকেট। পেস বোলিংয়ের জোয়াল বলতে গেলে একাই বয়ে একটার পর একটা ওভার করে গেলেন। কখনো বাঘের হুংকার ছেড়ে আপিল, কখনো স্টাম্প উপড়ে ফেলে ব্যাটসম্যানের উইকেট না ছাড়া পর্যন্ত বুনো দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা—সত্যিকারের এক পেসারের প্রতিমূর্তিই হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের রবিউল! চিগুম্বুরার আউট নিয়ে দিন শেষে বলেছেন, ‘চিগুম্বুরাকে ভাগ্য অনেক সাহায্য করেছে। বেশ কিছু বল পাশ দিয়ে গেছে, আউট হওয়ার অনেক সুযোগ ছিল। এ জন্যই পরে বোল্ড করতে পারায় বেশি ভালো লেগেছে।


কোচ শেন জার্গেনসেন যেন আগেই বুঝতে পেরেছিলেন, রবিউলের ভেতর বাঘ আছে। অন্যদের তুলনায় তাঁকে একটু আলাদা করেই দেখেন কোচ, ‘গত চার মাস অনেক কষ্ট করেছে সে। তাকে যে প্রোগ্রাম দেওয়া হয়েছিল, সেটা সে একা একাডেমিতে থেকে শেষ করেছে। তার সবচেয়ে বড় গুণ, মাঠের বাইরেও সে সব কাজ ঠিকঠাক করে। বাংলাদেশে এটা ব্যতিক্রম।

’ রবিউল ব্যতিক্রম আরেকটা জায়গাতেও। অন্য অনেকেই যে রকম বিপিএলের জন্য ফিট থাকতে শরীর বাঁচিয়ে খেলে পরে বিপিএলে গিয়েই চোটে পড়েছেন, সেখানে নিলামে বিক্রি না হওয়ায় রবিউল শেষ পর্যন্ত সর্বশেষ বিপিএলে খেলতেই পারেননি। তাতে শাপে বরই হয়েছে। বড় কিছুর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পেরেছেন ওই সময়টায়।
প্রথম টেস্টের পর বাংলাদেশ দলের পক্ষে কোনো পেসারের এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ওভার বোলিংয়ের রেকর্ডটাও এখন রবিউলের।

দুই ইনিংসে ৩৮ ও ১৯ ওভার করে মোট বোলিং করেছেন ৫৭ ওভার। ক্লান্তিহীন বোলিং করেছেন দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও। ১১ মেডেনসহ ৮৫ রানে ৫ উইকেট তুলেছেন ৩৩ ওভার বোলিংয়ে। জিম্বাবুয়ে ইনিংসের ৯৬ ওভারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বোলিংই রবিউলের। তিনি অবশ্য বলেছেন, ‘মাঠে নামার পর আমার একটাই চিন্তা থাকে, কী করে প্রতিপক্ষকে অলআউট করব।

যদি দলের জন্য ৫০ ওভারও বল করতে হয় করব। ’
পরপর দুই টেস্টে বিরামহীন বোলিং করেও রবিউলের এখনো ঠিকভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটাই বিস্ময়ের। বাংলাদেশের অন্য সব বোলারই যখন চোটাঘাতে জর্জরিত, তখন সব আশা তাঁকে ঘিরেই! প্রথম টেস্টের পর থেকে দলের সঙ্গে থাকলেও হারারেতে খেলছেন না শফিউল। দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচে বল করার মতো ফিট তিনি নন। রুবেল আক্রান্ত জলবসন্তে।

কাল চিকিৎসকেরা এটা নিশ্চিত করার পর জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকেই বোধ হয় তিনি ছিটকে গেলেন। একটু সুস্থ হলে ফিরে যেতে পারেন দেশে। বাকি দুই পেসারের মধ্যে জিয়ার এটা অভিষেক টেস্ট, সাজেদুল ফিরেছেন প্রায় পাঁচ বছর পর। দুজনের কেউই বিন্দুমাত্র দাঁত বসাতে পারেননি জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ে।
দেশে থাকা পেসারদের অবস্থাও হারারেতে বসেই অনুমান করা যায়।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলেও আসতে না-পারা মাশরাফি বিন মুর্তজা নাকি ব্যথা কমার আরেকটা ইনজেকশন নিয়েছেন। পরবর্তী অবস্থা বুঝতে নিশ্চয়ই তাঁকে মাঝেমধ্যেই যেতে হচ্ছে বিসিবির মেডিকেল রুমে। শাহাদাত হোসেন মাত্রই হাঁটুর ব্যথা নিয়ে ঢাকায় ফিরলেন। নাজমুলের তো অস্ত্রোপচারই লাগবে। আরেক পেসার আবুল হাসান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা দিয়েই যে রকম চোটের সঙ্গে সখ্য গড়েছেন, তাতে রবিউলের মতো শক্ত কাঁধ তাঁর কাছ থেকে আপাতত প্রত্যাশিত নয়।


রবিউলের কাছে প্রত্যাশাটা তবু সীমিত রাখা উচিত। শেষ পর্যন্ত তিনিও তো রক্ত-মাংসের মানুষ! হারারেতে টিম ম্যানেজমেন্ট আর কোচিং স্টাফরা হয়তো তাঁর একটু বাড়তি যত্ন নিচ্ছে। তার পরও কাল ৮ ওভারের শেষ স্পেলে রবিউলকে যে রকম ক্লান্ত লেগেছে, ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁসে’র গল্পটাই কিন্তু মনে পড়েছে বারবার। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।