আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধমর্নিরপেক্ষতার পথে উন্নয়ন

© এই ব্লগের সকল পোষ্ট,ছবি,থিম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কোথাও বিনা অনুমতিতে প্রকাশ করা নিষেধ ।

ধমর্নিরপেক্ষতার পথে উন্নয়নই লক্ষ্য বাংলাদেশের মৌলবাদী দাপটে ভিতরে ভিতরে ভেঙে টুকরো হেয় যাচ্ছে পাকিস্তান। আফগানিস্তান জ্বলছে তালিবানি আগুনে। আর ঠিক তখন সামন্ততান্ত্রিক পশ্চাদপরতাকে অতীতের আস্তাকুড়েঁ নিক্ষেপ করে উন্নয়নের পথে এগোতে চাইছে আর এক প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এক নির্দেশে দেশের সংবিধানকে আবার ধর্মনিরপেক্ষ করার নির্দেশ দিয়েছে।

স্বাধীনতা আন্দোলনের পর ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ রাষ্ট্রই গঠিত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫-এ মুজিবের হত্যার পর দেশের সামরিক শাসকরা সংবিধান বদলে বাংলাদেশকে ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত করে। দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার তারিক আহমেদ করিম এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ বাস্তবায়িত করবে বলে ঘোষণা করেছে শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু তাৎপর্যূপর্ণ ঘটনা হল, এর প্রতিবাদে ঢাকা শহরে তেমন কোনও জন আন্দোলন দেখা যায়নি। এ থেকেই প্রমাণ, বাংলাদেশের মানুষ সামনের দিকে এগোতে চাইছেন।

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবেই দেখতে চাইছেন। বাংলাদেশের সংবিধান বদল, ধর্মীয় চরিত্রে পরিবর্তনের মতো বিষয়ে প্রত্যক্ষ ভাবে নাক গলাতে চাইছে না ভারত সরকার। কিন্তু ভারতের কূটনীতিকরা বাংলাদেশের এই নিঃশব্দ সামাজিক পরিবর্তনেক দু’হাত তুলে সমর্থন জানাচ্ছেন। ভারত মনে করছে, এর ফলে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। ইতিহাসবিদ উইলিয়াম মিলামের মতো অনেকে মনে করেন, পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক ভাবে অগ্রগতির পথে অনেক বেশি ‘অতি সক্রিয়’।

আর তার পিছনে এই সামাজিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির প্রাধান্যকেই অনেকাংশে দায়ী করেছেন তিনি। হাই কমিশনার তারিক আহমেদ নিজেও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং ইতিহাসমনস্ক হিসাবে পরিচিত। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যে দেশ আমরা পেয়েছিলাম কার্যত তা ছিল এক পতিত জমি। টি এস এলিয়টের ‘ওয়েস্টল্যাণ্ড’-এর কথা মনে করিয়ে দেয়। এক কোটি উদ্বাস্তু তখন বাংলাদেশে।

স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে গিয়ে আমরা নিজেদের রাস্তা তখন নিজেরাই ধ্বংস করেছিলাম। হাতে টাকা পয়সা নেই। ঠাণ্ডা যুদ্ধের আন্তর্জাতিক পটভূমি। তার মধ্যেই প্রস্ফুটিত হল বাংলাদেশ। ” তারিক বলেন, সেই সময়ে শ’য়ে শ’য়ে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশের পুনর্গঠেনর কাজে নেমে পড়ে।

তৈরি হয় বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি বা ‘ব্র্যাক’। পরে ‘ব্র্যাক’-এর ধাচেঁ তৈরি হল আরও সংগঠন। সে দিনও কিন্তু নতুন জাতি হিসাবে বাংলাদেশিরা স্থির করেছিলেন, ধর্মনিরপেক্ষতাই তাদের লক্ষ্য হবে। ” বাংলাদেশের হাই কমিশনার বলেন, “ভারত-পাকিস্তান বিভাজন যেমন জিন্নার দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হয়, আমি বলি বাংলাদেশ গঠনের ক্ষেত্রেও এই দ্বিজাতি তত্ত্ব ছিল। পশ্চিম পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্তান দীর্ঘদিন এক সঙ্গে থাকলেও কখনই এক জাতি হিসাবে বিকশিত হয়নি।

ইতিহাস বলে পাকিস্তানি আর বাংলাদেশিদের এই অসবর্ণ বিবাহ আদৌ সফল হয়নি। পাট উৎপাদন হত বাংলাদেশে। সেখানেই ছিল পাটকলগুলি। পাকিস্তানের শাসকেরা ৪৭ সালের পর সাতটি পাটকল তুলে নিয়ে চলে গেল পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাট নিয়ে গিয়ে পাক শাসকেরা ইসলামাবাদে চট ও পাটজাত সামগ্রী তৈরি করতে শুরু করল।

তা রফতানি করে বিপুল বিদেশি মুদ্রা এলেও পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়নে তার ছিটেফোঁটাও বরাদ্দ হত না। এর পর শুরু হল সাংস্কৃতিক অবদমন। পাকিস্তানে ‘ছায়ানট’ সাংস্কৃতিক সংগঠনটি নিষিদ্ধ হল। রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করা হল। পাকিস্তানে ভারতীয় হাই কমিশন ছাড়া কোথাও রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়াই যেত না।

” ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময়ে প্রায় ৫ কোটি মানুষ ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানে। এই ৫ কোটি বাঙালির যে নিজস্ব একটা সত্তা আছে, তা নিয়ে মাথা ঘামাননি সে দিনের পাকিস্তানি শাসকেরা। প্রথম অবশ্য সেটা অনুধাবন করেছিলেন জুলফিকার আলি ভুট্টো। তিনি আগাম বলেছিলেন, এই বাঙালি মুসলিমদের একটি পৃথক সত্তা আগামী দিনে বিকশিত হবে। পাকিস্তানে জিয়া উল হক ক্ষমতায় আসেন ৭৬ সালে।

৮০ সালে তিনি নিহত হন। পাকিস্তানের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে তৎকালীন ঢাকার শাসকেরা বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্রতন্ত্রের পথে নিয়ে যেতে তৎপর হন। সে দিন ঢাকার সংবিধানকে ইসলামি করে তুলতে প্রধান ভূমিকা নেন সেনাশাসক জেনারেল হুসেইন মহম্মদ এরশাদ। ইতিহাসের অদ্ভুত পরিহাস, আজ সেই এরশাদ শেখ হাসিনা সরকারের শরিক। হাই কমিশনার তারিক বলেন, এর আগের বার ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন, তখন তাঁর দল আওয়ামি লিগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল না।

হাসিনা তখন ছিলেন এক রামধনু জোটের নেত্রী। কিন্তু সে দিনই তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে আবার ধর্মনিরপেক্ষ পথে নিয়ে যেতে। কিন্তু এক দিকে ছিল জোট রক্ষার বাধ্যবাধকতা, অন্য দিকে বিরোধী রাজনীতির চাপ। কিন্তু সে দিন তিনি যে পথরেখা রচনা করেছিলেন, আজ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরে সেটি বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হচ্ছেন। তারিক জানালেন, নতুন পরিস্থিতিতে হাজার বাধার পাহাড় পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর ৩৫ বছর পর হাসিনা তাঁর আততায়ীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছেন।

একই ভাবে বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া এবং তাঁর সঙ্গী জামাতে ইসলামির যৌথ বিরোধিতাকে উপেক্ষা করে আদালত সংবিধানকে ধর্মনিরপেক্ষ করার নির্দেশ দিয়েছে। ৭১ সালে যুদ্ধের পর বাংলাদেশের নতুন সরকার চেয়েছিল, পাক মদতপুষ্ট মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী শক্তিকে তখনই কড়া শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু ভুট্টোর সঙ্গে তাড়াহুড়ো করে শিমলা চুক্তি করতে গিয়ে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী বাংলাদেশের সেই প্রয়াসকে আর যথেষ্ট সমর্থন জুগিয়ে উঠতে পারেননি। পরে অবশ্য শিমলা চুক্তিও ব্যর্থতায় পর্যবিসত হয়। ভারত পাকিস্তানের মধ্যে বার বার সংঘাত বাধে।

আজ এত বছর পর আবার ভারত পুরনো ভুলভ্রান্তি দূরে সরিয়ে রেখে আধুনিক বাংলাদেশ পুনর্গঠেন সব রকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। একটা সময় ছিল যখন ‘ভারতবন্ধু’ ইমেজের জন্য হাসিনাকে যথেষ্ট রাজনৈতিক খেসারত দিতে হয়েছে। তারিক বলেন, “সময় বদলাচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্বায়নের সব রকম সুযোগের সদ্ব্যবহার করাটাই আজ সব চেয়ে বড় জাতীয় স্বার্থ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ভারত সফর এই কারণেই এতটা ঐতিহাসিক।

” হাসিনার সফরের আগে কিছুতেই মুখ খুলতে রাজি হননি তারিক সাহেব। তিনি বলতেন, “এখন কথা বলার সময় নয়, হোম ওয়ার্ক করার সময়। ” আর এখন সফর শেষে তিনি পরম আত্মতৃপ্ত। দু’চোখে ভবিষ্যতের প্রত্যাশা। *********এইখানে যাই লিখছে মোটামুটি চলে।

তবে আমার কথা হল ভারত কি আমাদের ভালো চেয়েছে কখনো? সূত্র আনন্দবাজার পত্রিকা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.