আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কল্পনা চাকমা ও রাজার সেপাই-১

ফ্রম দ্যা হার্ট অফ ডার্কনেস

....................................................................................................... ফেলে যাওয়া বাড়ি আর জোতগুলো দখল হয়ে যায়। দলে দলে আসে নতুন মানুষ। নতুন ধরনের মানুষ। ওরা একেবারে অন্যরকম। পাহাড়-জংগলের দেশে এসেছে কিন্তু পাহাড়-জংগলকে ভালোবাসে না।

বন কেটে উজাড় করে ফেলে, জুমের ক্ষেতগুলো পুড়িয়ে ফেলে, উপত্যকা বিষিয়ে তোলে হানাহানির বিষবাষ্পে। পাহাড়িদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি দখল তো করেই, তার ওপর মাঝে মাঝেই হামলা করে চাকমা বসতিতে, মারমাদের ক্ষেতে। কেটে নিয়ে যায় ক্ষেতের ফসল, কেড়ে নিয়ে যায় ঘরের জিনিসপত্র। তাদের সাহায্য করে জলপাই পোষাকের রাজার সেপাই। কিছু বলতে গেলেই হাতিয়ার তুলে তেড়ে আসে।

বিচার চাইতে গেলে জোটে আরো নির্যাতন। সন্ধ্যার পর প্রায়ই দেখা যায়, পূবে-পশ্চিমে-দক্ষিণে-উত্তরে আকাশে সর্বনাশের লালচে রং। আগুনে পুড়ছে বন-টিলার ওপাশের কোন বস্তি। কল্পনার মা বাঁধুনি চাকমা, দুই ভাই কালিন্দীকুমার চাকমা আর ক্ষুদিরাম চাকমা শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আগুনের সর্বনাশা আভার দিকে- ভগবান, কতদিন যে আমরা টিকতে পারব! বোধহয় চলেই যেতে হবে। কল্পনা সক্রোধে চেঁচিয়ে উঠে- কক্ষণো না।

এই মাটি আমাদের। এই মাটি ছেড়ে আমি একধাপও নড়ব না। জীবন থাকতে নড়ব না। কিন্তু দিনের পর দিন শুধু অত্যাচার সহ্য করা! পড়ে পড়ে মার খাওয়া! ....................................................................................................... ১৯৯২ সালে ১৩ই অক্টোবর ৭০ বছরের বৃদ্ধা ভরদাসমনি, ৯৩ সালের মার্চে সাহসী তরুন নীতিশ চাকমা, ৩১শে অক্টোবর ১২ বছরে কিশোরী মিস স্বপ্না চাকমা, ৯৯ সালের ১৭ই অক্টোবর জ্ঞান আলো চাকমা, ২৬শে অক্টোবর লাল রিজফ বমসহ লংগদু, মাল্যা, লোগাং, ননিয়াচরের গণ হত্যায় হাজার হাজার নিরীহ জুম্ম নর-নারীর নামের তালিকায় ভরে ওঠে তার ডায়েরি। কল্পনা জানতে পারে কাপ্তাই বাধের কারণে পাহাড়ীরা হারিয়েছে চুয়ান্ন হাজার একর চাষের জমি, উদ্বাস্তু হয়েছে চল্লিশ হাজার পরিবার।

জানতে পারে, ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইউব খান সরকারি সফরে চীন গেলে অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দ্বায়িত্ব পান স্পীকার ফজলুল কাদের চৌধুরী। তিনি আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রামের 'বহির্ভূত এলাকা'-র মর্যাদা তুলে দেন। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য প্রতিবেশি জেলাগুলি থেকে সরকারের সবুজ সংকেত পেয়ে কয়েকহাজার অনুপজাতি পরিবার পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে লুটপাট করে উপজাতিদের জমি দখল নিয়ে উপজাতিদেরই ঘর ছাড়া করে। কল্পমা জানতে পারে, ১৯৭২ সালে পাহাড়ী জনগনের নেতৃবৃন্দের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সাথে দেখা করেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ত্বে ছিলেন জাতীয় সংসদের চাকমা সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা।

তাদের হাতে স্মারকলিপি। বংগবন্ধু জানতে চাইলেন ওতে কি লেখা আছে। স্মারকলিপিতে দাবী করা হয়েছিল নিজস্ব আইন পরিষদ সম্বলিত পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্বশাসন, ১৯০০ সালের বিধিসমূহের সংরক্ষণ এবং অপাহাড়িদের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করা। বংগবন্ধু সরাসরি দাবীগুলি প্রত্যাখান করে বলেছিলেন তাদের সবাইকে বাংগালী হয়ে যেতে। এই মিটিং স্থায়ী হয়েছিল তিন মিনিট।

প্রতিনিধিদলকে বসতে বলা হয়নি। বংগবন্ধু স্মারকলিপি গ্রহন করেননি। তিনি সেটি ছুঁড়ে মেরেছিলেন মানবেন্দ্র লারমার মুখে। ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একটি গোপন বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। যে বৈঠকে হাজার হাজার গরীব বাংগালীকে ব্যাপক হারে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনের জন্য পাঠানোর পরিকল্পনা গৃহীত হয়।

১৯৭৯ এবং ১৯৮০ সালে একলক্ষ, ১৯৮১ সালে একলক্ষ এবং পরবর্তী বছরে আরো দুই লক্ষ বাংগালীর অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়। ..................................................................................................... অনেক ব্যাপারেই আমার যুক্তিবোধ তেমন কাজ করেনা, থাকে শুধুই বোকা আবেগ। আবার আবেগকে প্রকাশ করার উপায়ও জানা নেই(ভীষন মুশকিল!)। তাই সহজ উপায় অনুলিপিকরন। প্রিয় গল্পকার জাকির তালুকদারের গল্প কল্পনা চাকমা ও রাজার সেপাই থেকে কিছু অংশ তুলে দিলাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।