আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যালিফোরনিয়ার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের নিকট পত্র ঃ কেন আমরা প্রতিবাদ করছি?



[আজ ৪ মার্চ ২০১০। আর কিছু সময় পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোরনিয়ার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সরকারের শিক্ষা সংকোচন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ছাত্র ধর্মঘট সহ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার অজুহাতে ক্যালিফোরনিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোতে সরকারী বরাদ্দ যেমন সংকুচিত করা হয়েছে, অপর দিকে শিক্ষার্থীদের কাঁধে টিউশন ফি বৃদ্ধির মাধ্যমে বিপুল ব্যয়ের বোঝা চাপানো হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০০৯ সালের সেপ্টম্বর-অক্টোবর ব্যাপী ক্যালিফোরনিয়ার প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদ মূখর হয়ে উঠে। ছাত্রদের এই আন্দোলনের সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ও সমাজকর্মীরা শামিল হন ২৪ অক্টোবর ২০০৯ ক্যালিফোরনিয়ার ১০০ টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮ শতাধিক প্রতিনিধিদের অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠিত সম্মেলণের মধ্য দিয়ে রাজ্যবাপী ছাত্র আন্দোলন সংহতরূপ লাভ করে ।

ঐ সম্মেলনে থেকে ঐক্যবদ্ধ দীর্ঘ ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় । তারই অংশ হিসাবে ৪ মার্চ ২০১০ কে National Day of Action to Defend Education কে ঘোষণা করে সারা রাজ্যে ছাত্র ধর্মঘট সহ ব্যাপক প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়। আন্দোলনের সংগঠকদের পক্ষ থেকে অভিবাবকদের ব্যাপক অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে 'Why We're Protesting~ A Letter to Parents' শীরনামে চিঠি প্রেরণ করা হয়। ক্যালিফোরনিয়ার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং ৪ মার্চ ২০১০ এর কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করে ব্লগে উক্ত চিঠির অনুবাদ প্রকাশ করা হল। ] আমরা কেন প্রতিবাদ করছি~ অভিভাবকদের নিকট একটি পত্র আপনারা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন যে, আজ রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী এবং সমাজকর্মীরা প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছে।

এর কারণ ব্যাখা করার জন্য আমরা এই চিঠি লিখছি। শিক্ষা খাতে সরকারে ব্যয় বরাদ্দ বিপুল পরিমাণে হ্রাসকরণ এবং শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ' বিপুল বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের প্রতিবাদী কন্ঠ জাগ্রত হয়েছে। রাজনীতিবিদরা দাবি করছেন যে, গত বৎসরের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তাঁরা এটা করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু, তাঁদের বক্তব্য সত্য নয়। বৎসরের পর বৎসর সরকার শিক্ষাখাত থেকে অর্থ কারগার খাতে স্থানান্তরিত করছে।

গর্ভনর শোয়াজনিগার নিজেই জানিয়েছেন যে,'' ৩০বৎসর আগে সাধারণ বাজেটের ১০% ব্যয়িত হত উচ্চ শিক্ষা খাতে এবং ৩% কারাগার খাতে। আজ, কারাগার খাতে ব্যয় বরাদ্দ বেড়ে দাড়িয়েছে বাজেট প্রায় ১১% আর উচ্চ শিক্ষা খাতে মাত্র ৭.৫০%। ১৯৬০ সালে Sacramento (ক্যারিফোরনিয়ার রাজধানী) তে রাজনীতিবিদরা ক্যালিফোরনিয়া বাসীর কাছে একটি অঙ্গিকার করেছিলেন। যার নাম Master Plan for Education এবং তাঁরা এর আইনগত স্বীকৃতি প্রদান করেছিলেন। তাতে, বলা হয়েছিল যে, সকল যোগ্য শিক্ষার্থী পাবলিক কলেজ বিনা বেতন অধ্যায়নের সুযোগ পাবে ।

কিছু বৎসর সেই অঙ্গিকার রক্ষা কর হযেছিল। কিন্তু, তারপর শিক্ষা বর্হিভূত খাতের এই অজু হাতে নানা 'ফি' আদায়ের মধ্য দিয়ে সেই আইন কে পাশ কাটানোর প্রয়াস চালানো হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা শুরু পূর্বেই ২০০০ সাল হতে ২০০৮ সাল সময় কালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (The University of California) এবং The California State University তে বেতন-ফি দ্বিগুনের বেশি হয়েছে। ১৯৬০ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (The University California) এবং The California State University তে ছাত্র বেতন-ফি গড়ে প্রায় ১৫০ মার্কিন ডলার ছিল । চলমান বৎসরে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তা দাড়িয়েছে ১১ হাজার মার্কিন ডলার (৭০০০%বৃদ্ধি) এবং The California State University তে ৪,৯০০ মার্কিন ডলার ( ৩২০০% বৃদ্ধি)।

আজ অনেক শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের (বিশেষ করে যারা লেঅফ ও আকস্মাৎ চাকুরী চুত্যির স্বীকার) জন্য একটি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন অলীক পর্যবসিত হয়েছে। । এবং অশ্বেতাঙ্গ, স্পেনীয় এবং অন্যান্য যারা ঐতিহাসিক ভাবে নানা বঞ্চণার স্বীকার , তাদের জন্য উচ্চ শিক্ষার প্রত্যাশার প্রতি অর্থনৈতিক বাধা ক্যালিফোরনিয়ার সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণ প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্র হিসাবে যুক্তি হয়েছে। কিন্তু , এই সংকটের মূল শিক্ষা ব্যয়ের বিষয়ের চেয়ে অনেক গভীরে প্রত্থিত। The California State University তে আসন্ন বসন্ত কালিন সেমিস্টারে বিপুল সংখ্যক নতুন ছাত্র ভর্তি হতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষকে চাকুরি হারাতে হবে।

মোট ভর্তি নুন্যতম ৪০ হাজার হ্রাস পাবে। সামাজিক কলেজ গুলো আড়াই লক্ষ (২,৫০,০০০) শিক্ষার্থী হারাবে। আর যারা কোন ক্রমে ভর্তি হতে সক্ষম হবে, তাদের অনেকে দেখতে পাবে ছাত্র অভাবে কাঙ্খিত কোর্স অফার করা হচ্ছে না আর এর জন্য তাকে এক দিকে শিক্ষা সমাপণে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হবে, অপর দিকে অতিরিক্ত সময়ের জন্য অতিরিক্ত ফি গুনতে হবে। একই সাথে ক্লাসে শিক্ষার্থী সংখ্যা দ্বিগুন করা হচ্ছে । যার অর্থ দাড়ায়, একজন শিক্ষার্থীর উপর শিক্ষকের মনোযোগের গড় সময় ও শিক্ষার্থী অজানা বিষয় শিক্ষকের নিকট হতে জানবার সুযোগ হ্রাস পাওয়া।

একটি মৌলিক বিষয় হচ্ছে যে, কিভাবে শিক্ষা বরাদ্দ ব্যয় হবে এবং শিক্ষা সংক্রান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে তার সাথে অর্থনৈতিক সংকটের আদৌ কোন সম্পর্ক নাই। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নীতি নির্ধারকরা যে সভায় ছাত্রদের টিউশন ফি বৃদ্ধি করেছে , সেই একই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক এবং পদস্থ আমলাদের বেতন লোভণনীয় ভাবে বৃদ্ধি করেছে। কর্মকর্তা- কর্মচারী খাতে বার্ষিক ৫ লক্ষ মার্কিন ডলারের বাজেট অপ্রতুল বিবেচিত হওয়ায় ছাত্রদের কেয়ারটেকারদের (Janitor) বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ও লাইব্রেরিয়ান কে ছাটাই করা হয়েছে ; যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পরিচালকদের কোন সমস্যা না হয়। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের ( পরিচালক /ব্যবস্থপক) সংখ্যা এত কেন? ১৫ বৎসর আগে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের সংখ্যা সিনিয়র ম্যানেজারদের আড়াই গুন ছিল ; কিন্তু আজ উচ্চ বেতন ভোগী এই সকল প্রশাসকের সংখ্যা বিশ্ববিদ্যঅলয়ের অধ্যাপকের চেয়ে বেশি। বতর্মান অর্থনৈতিক সংকট কোন প্রকৃত কারণ নয়।

প্রকৃত সত্য হচ্ছে , রাজধানী Sacramento এর রাজনীতিবিদরা 'সকলের জন্য উচ্চ শিক্ষা'য় সরকারী বরাদ্দ সংক্রান্ত বিধি-বিধান নিবরে পরিত্যাগ করতে চাইছেন। দীর্ঘ বৎসর ধরে তাঁরা নির্বিচ্ছিন্ন প্রয়াসে আমাদের পাবলিক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর 'সকলের জন্য শিক্ষা' দর্শণ কে ব্যয় বহুল 'বেসরকারী'শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আদলে রূপান্তরিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধাবিত করা হয়েছে। আর তার জন্য সহায়ক শক্তি হয়েছে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত ও উচ্চাভিলাষী প্রশাসন যন্ত্র। তাঁরা শিক্ষার 'বেসরকারীকরণ' এর শ্লোগান তুলেছেন। যে শব্দের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, পাবিলিক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে রূপান্তরিত করা।

এই শব্দটির অর্থ হচ্ছে উচ্চ শিক্ষা দুয়ার শুধু মাত্র সামর্থ্যবানদের জন্যই উন্মুক্ত। আমরা আপনাদের কাছে এই আহবান জানি এই চিঠি লিখছি যে,' আসুন আপনাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ প্রশ্ন বলিষ্ঠ ভাবে দাড়ান এবং এক-বিংশ শতাব্দীতে পাবলিক (রাষ্ট্র দায়িত্ব বহনকারী) শিক্ষা দর্শণের অস্তিত্ত্ব ও তাকে অব্যহত রাখার সংগ্রামে শামিল হন। অভিভাবক ও কর দাতাদের পক্ষ থেকে পাবলিক শিক্ষা ব্যবস্থার পুনঃজাগরণ ও তাকে সকলের জন্য অবাধ করার দাবী তুল উত্থাপনের এখনই সময়। এই আন্দোলনে অভিভাবকদের শাশিল হওয়া সময়ের দাবী। ***************************************************************** The University of California এর বেতন-ফি বৃদ্ধির চিত্র।

The California State University এর বেতন-ফি বৃদ্ধির চিত্র। সূত্রঃ ১) MARCH 4 Strike and Day of Action REGIONAL EVENTS Click This Link ২) National Call Click This Link ৩) The Structure of Inequality in Education http://www.defendeducation.org/?p=303 ৪) It’s OUR Future At Stake – Fight for Education Rights! http://www.defendeducation.org/?p=295 ৫)সিএনএন নিউজঃ Students, professors to protest education cutbacks Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।