আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্তমান যুগে মহিলাদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া ঠিক কিনা এবং শরীয়তের বরখেলাফ কাজ করে কতটুকু ছওয়াবের আশা করা যায় ?



এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, ইসলামের উষালগ্নে বিশেষ কিছু কারণ ভেদে মহিলাদের মসজিদে গমনের ব্যাপারে যদিও বাধা প্রদান করা হয়নি, কিন্তু বর্তমানে ফিৎনা, বিশৃংখলা ও অশান্তির যুগে স্থান, কাল ও পরিস্থিতির পরিপ্রেেিত এবং অবস্থার প্রোপটে সর্বসম্মতিক্রমে তা অবৈধ ও শরীয়তের পরিপন্থী কাজ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। কাজেই সে যুগের উপর তুলনা করে বর্তমানে কোন নারীকে মসজিদে গমনের অনুমতি দেয়া মোটেও সমীচিন হবে না। কেননা (১) হযরত নবীজী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ ছিল ফিৎনামুক্ত, পবিত্র, শান্তিময়। মানবতার মুক্তিদূত স্বয়ং হযরত নবীজী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন জীবিত। (২) নবীজী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে নামাজ পড়ার সৌভাগ্য অর্জন করাও ছিল উদ্দেশ্য।

(৩) দৈনন্দিন জীবনের নিত্য নতুন শরীয়তের বিভিন্ন হুকুম, আহকাম অবতীর্ণ হত, সে সকল বিষয় জানার জন্যও মহিলাদের মসজিদের জামাতে আসার প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া মহিলাদের অনেক জটিল জটিল মাসআলা জানার প্রয়োজন হত, যা স্বয়ং রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই কেবল সেটার সমাধান দিতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে কিতাবাদী, আলেমদের ওয়াজ, নসীহত ও আরো বিভিন্ন পদ্ধতিতে শরীয়তের প্রচার, প্রসার ঘটেছে, কাজেই মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবের নিকট থেকে শিা গ্রহণের কোন প্রয়োজন নেই। আর সে যুগেও উল্লেখিত কারণ ও প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনই নারীদের মসজিদে গমনে উৎসাহিত করেননি, বরং সর্বদা ঘরের অভ্যন্তরে নামায পড়তে অনুপ্রাণিত করেছেন। যা বিভিন্ন হাদীসের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়।

(১) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, মহিলাদের বারান্দায় নামাজ পড়ার তুলনায় ঘরের ভিতরে নামাজ পড়া উত্তম, আর ঘরের কোণে নামাজ পড়া ঘরে নামাজ পড়া অপো উত্তম”। Ñআবু দাউদ শরীফ ঃ ১ম খন্ড, ৮৪ পৃষ্ঠা। (২) হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমায়েছেন, ‘‘মহিলাদের উত্তম মসজিদ হলো তাদের ঘরের অভ্যন্তর”। Ñআবু দাউদ/২, মসনদে আহমাদ/২। (৩) হাদীস শরীফে আরো আছে ঃ মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়া অপো ঘরে নামাজ পড়ায় পঁচিশ গুণ ছওয়াব বেশী হয়।

Ñমসনদে ফেরদাউস লিদ্দায়লামী উপরন্তু পবিত্র কুরআনে হাকীমে আল্লাহ তা‘আলা নারী জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেনÑ“তোমরা ঘরের অভ্যন্তরে অবস্থান কর। মূর্খ যুগের ন্যায় বাইরে নিজেদের প্রদর্শন করো না”। Ñসূরা আহযাব ঃ ৩৩ নং আয়াত। উক্ত আয়াত শরীফে সাধারণভাবেই নারীদেরকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। কাজেই মসজিদে গমনও এ নিষেধের আওতাভূক্ত।

সুতরাং পূর্ববর্তীকালে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে কারীমা ও বহু সহীহ হাদীসের আলোকে এবং কুলুষযুক্ত পরিস্থিতির প্রেেিত হযরত ওমর (রাঃ), হযরত আয়েশা (রাঃ) ও আরো বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম এ ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। তখন সকল সাহাবায়ে কেরাম তাদের সাথে ঐক্যমত পোষন করেন। অতঃপর তাদের সাথে কুরআন ও হাদীসের আনুগত্যে পরবর্তী কোন ফকীহ দ্বিমত করেননি। এমনকি বর্ণিত আছে ঃ খলীফা হযরত উমর ফারুক (রাঃ)-এর যুগে হযরত ইবনে উমর (রাঃ) ছোট ছোট পাথর মেরে মহিলাদের মসজিদে গমনে বাধা দিতেন। Ñউমদাতুল ক্বারী, ২য় খন্ড, ১৫৬ পৃষ্ঠা।

অতএব, কুরআন ও হাদীসের আলোকে এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, নারীদের মসজিদে গিয়ে পুরুষদের সাথে নামাজ পড়া সম্পূর্ণ শরীয়ত বহির্ভূত। হযরত নবীজী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ না করলেও, গমন করার প্রতি নিরুৎসাহ প্রদানই একথা প্রমাণ করে যে, তার (সাঃ) আন্তরিক ইচ্ছা ছিল যে, নারীরা যেন ঘর থেকে বের না হয়। তবে বিশেষ কিছু ফায়েদা ও প্রয়োজনে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেন নি। কিন্তু পরবর্তিতে সাহাবায়ে কেরামের যুগে যখন সে ফায়েদা ও প্রয়োজনের অবকাশ রইল না, তখন সাহাবায়ে কেরাম চিরকালের জন্য রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে আন্তরিক ইচ্ছার বাস্তবায়ন করেছেন। হযরত উমর (রাঃ)-এর যুগে এটার উপর সাহাবায়ে কেরামের ইজমা হয়েছে।

সুতরাং এটা সর্বকালের সর্বসাধারণ সকলের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। Ñবাদাইউস সানাঈ ১ম খন্ড, ১৫৬ পৃষ্ঠা, আল্লামা কাছানী। অতএব, এই সর্বসম্মত হুকুম উপো করে বৈধতার ফতোয়া দেয়া ও তা বাস্তবায়ন করার অপচেষ্টা চালানো ঈমানদারীর কাজ নয়। কেননা হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনÑ হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি দেখতেন পরবর্তী নারীদের অবস্থা, তাহলে তিনি অবশ্যই (বিভিন্ন কারণ থাকা সত্ত্বেও) কঠোরভাবে নিষেধ করে যেতেন। (কাজেই এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো এখন কঠোর নিষেধের অন্তর্ভূক্ত হবে) Ñবুখারী শরীফ ঃ ১২০ পৃষ্ঠা।

এজন্যেই, সকল ফোকাহায়ে কেরাম, উলামায়ে দ্বীন, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মুফতীগণের নির্ভরযোগ্য অভিমত হলো ঃ বর্তমানে ফিৎনার যুগে বৃদ্ধা, যুবতী, কিশোরী, কোন মহিলারই মসজিদে গমন বৈধ হবে না। এতে দ্বিমত পোষণ করা বা অস্বীকার করার কোন উপায় বা দলীল নেই। এটাই হচ্ছে সহীহ ও গ্রহণযোগ্য মতামত। Ñআল্লামা বদরুদ্দীন আইনী, ২য় খন্ড, ৪২০ পৃষ্ঠা, উমদাতুলক্বারী। এছাড়াও লণীয় বিষয় এই যে, হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ ছিল সোনালী যুগ, সে যুগের মানুষদেরকে বলা হত স্বর্ণ মানব।

মুসলিম নারীরাও ছিলেন ঈমানী চেতনায় বলীয়ান, যাদের অন্তর ছিল পূত-পবিত্র, যাদের ব্যাপারে সামান্যতম কূধারণার কল্পনাও করা যায় না। তারা হলেন কেয়ামত অবধি সকল নারী জাতির জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, আদর্শ পরাকাষ্ঠা। যাদের অনুপম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং অতুলনীয় পর্দা থাকার কারণে ফিৎনার কোন আশংকাই ছিল না। তারা রাতের আধারে কেবলমাত্র ফজর ও ইশায় আপাদমস্তক ঢেকে অত্যন্ত আড়ম্বরহীনতার সহিত অতি সংগোপনে খুব হেফাজতে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইক্তেদার সৌভাগ্য অর্জনার্থে মসজিদে গমন করতেন। তথাপি শান্তির আধার, মানবতার মুক্তিদূত, সারওয়ারে কায়েনাত, দোজাহানের সর্দার, সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে মার্জিত ভাষায়, কোমলভাবে মসজিদে না আসার প্রতি অনুপ্রাণিত করেছেন।

তাদের ঘরের কোণকে তাদের জন্য উত্তম, উৎকৃষ্টতম মসজিদ, অধিক সওয়াবের মাধ্যম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যদ্দরুন অনেক সাহাবীয়া নারী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে নামাজ পড়ার প্রবল আকাঙ্খা থাকা সত্ত্বেও আজীবন ঘরের কোণকেই নামাজের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। এমনকি উম্মাহাতুল মুমিনীনের (রেজুঃ) ঘরের পাশেই ছিল মসজিদে নববী, যেখানের এক রাকাত নামায, পঞ্চাশ হাজার রাকাতের সমান মর্যাদা রাখে। তার পরেও তাঁরা নামাজের জন্য মসজিদে নববীতে গমন করতেন না। অতএব, মসজিদে গমন, জামাতে শরীক যদি উত্তমই হত, অধিক সওয়াবের কাজ হত, তাহলে এ েেত্র সর্বাগ্রে থাকতেন উম্মাহাতুল মু‘মিনীন (রেজুঃ)।

অথচ তাদের ভূমিকা এখানে নীরব। Ñমসনাদে আহমাদ/২, ৩৭১ পৃষ্ঠা। “অতএব নারী সমাজকে মসজিদে যেতে উৎসাহিত করা, তাদের জন্য মসজিদে ব্যবস্থা রাখা এবং এ ব্যাপারে বৈধতার ফতোয়া প্রদান করা আর এর স্বপে ভেজাল ও ভূয়া দলিল পেশ করা, নবী ও সাহাবী থেকে অধিক বুদ্ধিমান বলে দাবী করা ছাড়া আর কি হতে পারে ? তাই বলতে হয় যে, এতে কুরআন হাদীসের সুস্পষ্ট হুকুমের বিরোধী অবস্থানে গিয়ে মানব জাতিকে, নারী সমাজকে ধ্বংস ও অকল্যাণের পথেই ঠেলে দেয়া হচ্ছে, সওয়াবের কোন আশা নেই। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে সহীহ সমঝ দান করুন, হিদায়াত নসীব করুন। আমিন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.