আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃম্ময়ীরা ভাল নেই

নীল সরি,আপনি বোধয় ঘুম চোখেই উঠে এসেছেন। আসলে বাচ্চাটার যন্ত্রনায় আর পারছিলাম না। ইটস ওকে। বলুন। কষ্ট করে একটু চোখ মেলবেন।

ওহহো,সরি সরি। আপনি! প্লিজ আসুন। থ্যাংকস,অভি আসো-একদম দুষ্টমি করবেনা কিন্তু। আসলে ঘুমিয়ে থাকলে মাঝে মাঝেই এমন হয়। কেউ দরজা নক করলে ঘুম নিয়ে এসে দরজা খুলে আবার বিছানায়।

বেডরুম আর ফ্লাটডোর এর প্রতিদিনের পথ ঘুমের মধ্যেও ভুল হয় না। বাহহবা আপনিতো দেখি ঘুম দেবতা,তো ভূল কেউ ঢুকে পড়লেতো বিপদ। কতরকম মানুষ আছে এই শহরে। এখনও কেউ ভুল করেনি। তবে ভুল করলে ভূলই হবে,কিছু নেই আমার।

আমি ছাড়া! বসুন প্লিজ,জাস্ট ফ্রেশ হয়ে আসছি। দেখুনতো দুপুর হয়ে আসছে আর আমার হল মরনিং। অভি,ডিয়ার ফ্রেন্ড,হাউ আর ইউ? আই অ্যাম নট ফাইন,ডিয়ার। মাই ক্যাট ইন ইউর বেড রুম। একি বলে বাচ্চাটি? ওর বিড়াল আমার বেডরুমে আসবে কি করে? কৌতুহলে ভ্রু গুছিয়ে আমি আভি’র মায়ের দিকে তাকাই।

হাসির রাশ টেনে ধরেও ভদ্রমহিলা চোখেমুখে হেসে উঠেন। সিগ্ধতার সৌরভ ছড়ানো সে হাসি। যাদের ঠোটের সাথে চোখও হাসে তারা খুব উপভোগ্য মনের মানুষ হন। আমি মনে মনে বলি,নট অনলি মরনিং,গুড মরনিং। ভদ্রমহিলার চোখের হাসির রেশ তখনও রযে গেছে।

হঠাৎ মুখাবয়বে কিছুটা লজ্জার জড়তা নিয়ে বলেন,কাল রাতে দু ফ্লাটের দরজা খোলা থাকার কোন এক সময় বেড়ালটা আপনার ফ্লাটে ঢুকে পড়েছে। হুমম। তাহলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বেড়ালই পালাল। হা হা আহ হা অহ। ডিয়ার অভি,ডোর ইজ ওপেন।

গো টু মাই বেডরুম,ফাইন্ড এন্ড কিস ইউর ক্যাটস। অভি দৌড়ে আমার বেডরুমের দিকে চলে যায়। ভদ্রমহিলা তার ছেলের পথে তাকিয়ে থাকেন। এত চঞ্চল হয়েছে ছেলেটি। অভি,কোথাও হাত দেবে না কিন্তু।

দুষ্টু করলে আমিও বকব তোমার ফ্রেন্ডও বকবে। ওকে মাম,ডোন্ট ওরি। আই জাস্ট ফাইন্ড মাই ক্যাট। ভদ্রমহিলা এবার আমার দিকে চোখ ফেরান। কাল রাতের ঘটনার জন্য আমি লজ্জিত আর আপনাকে ধন্যবাদও দেয়ার আছে।

কাল কোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারত,এতটা কখনও হয়নি। আপনি না আসলে হয়ত... আমি একটু বিব্রত হই। কাউকে সত্যিকার অর্থেই লজ্জায় জড়সড় হতে দেখলে আমি ঠিক কি করব বুঝতে পারিনা। তবে ইনি আমার চেয়ে বয়সে ছোট হলে আর বন্ধুত্ব থাকলে এই মূহুর্তে আমি তার গাল টিপে দিতাম। বলতাম,আর লজ্জাবতী হতে হবে না,গালতো লাল হয়ে গেলোরে।

ভদ্রমহিলা সত্যিই লজ্জিত। তিনি কোন ফরম্যালিটি করছেন না। তার গাল গোলাপী বর্ণ ধারণ করেছে। চোখের পাপড়ি কাঁপছে। অমি শুধু বললাম,ধন্যবাদ কেন? এটা যেকেউ করত।

নাহ,এই শহরে কেউ কারো প্রতিবেশী হয় না। করত না। আর করলেও পারত না। এর আগে একবার সামনের ফ্লাটের ভাবী এসছিলেন। উনি অপমানিত হয়েছিলেন।

আমার হ্যাজব্যান্ড ওনাকে বলেছিলেন,ইটস আওয়ার পারসোনাল ম্যাটার। হু দ্যা হেল আর ইউ। ওই ভাবী সোসাইটিতে কমপ্লেইন করতে চেয়েছিলেন। আমি পরে ভীষন সরি বলেছিলাম। বাচ্চাটি ফিরেছে।

কোলে সাদাকালো তুলতুলে একটি বেড়ালছানা। মাম,আই ওয়ান্ট টু গো মাই রুম। পিউ নিডস ফুড। ওকে,টেক কেয়ার ইউরসেলফ। থ্যাক ইউ ফ্রেন্ড।

সি ওয়াজ প্লে উইথ ইওর পিলো। আমি ওযেলকাম বলি। কিন্তু এই বেড়ালের বাচ্চাটি সারারাত ছিল কই। কোন সাড়াশব্দ ছাড়া আমার বেডরুমে। তাও আবার আমার বালিশ নিয়ে খেলা করছিল।

খেলা মানে নখের আচড়ে নিশ্চয়ই আমার বালিশ ফুটিয়ে তুলো তুলো করে ছেড়েছে। আমার গালে হাত চলে আসে। ভয় নেই। বেড়ালটি অনেক শান্ত। আপনাকে আচড় দেবে না।

ভয় পেয়েছিল,তাই উদ্ধারকর্তার পাশেই রাতটা কাটিয়ে দিয়েছে। এইবার আমি হেসে উঠি। তবে তা দুষ্টমির হাসি। মনে মনে বলি,ভাগ্যিস শুধু বেড়ালই এসেছিল। ভদ্রমহিলা অনেক শার্প।

তিনি আমার হাসি পড়ে ফেলেছেন। আমি কিছু বলার আগেই তিনি বলে উঠলেন,বেড়াল শান্ত ছিল। অন্যকেউ এত শান্ত নাও হতে পারত। তবে একটা অপশন ছিল,আচড় চিহ্ন বেড়ালের বলে দিব্যি চালিয়ে দিতে পারতেন। কি বলেন? এই বলে তিনি ঠোটে চোখে শরীরে এক নৃত্যময় হাসিতে মেতে উঠলেন।

আমি বুঝতে পারছিলাম,এ হাসি স্বচ্ছ জলের মতোই বইছে। যার কোন গন্ত্যব্য ঠিক করা নেই। ভদ্রমহিলা শুধু সুন্দরীই নন,সভ্রান্ত। পরিমিতি বোধের মধ্যেই সবটুকু উপভোগ্যতা দিতে জানেন তিনি। আমি প্রসঙ্গ এড়াই।

আপনার কপালে বেশ খানিকটাই কেটে গেছে। তিনি তখনও হেসেই চলেছেন। শুধু কপালেই দেখলেন,ঠোটের কোনে ফেটেছে খানিকটা,গ্রীবায়ও ফুলে আছে। এরমধ্যেই হঠাৎ করে হাসি মিলিয়ে যায় তার। তীক্ষè চোখ,ফ্যাকাশে মুখে ঘৃণার অবয়ব।

এই অমানুষটার হিংস্রতা আমার পুরো শরীর জুড়েই। এগার বছর,শরীরও সয়ে গেছে এখন। আই অ্যাম সরি। না না সরি’র কিছু নেই। মাঝে মাঝে আমি নিজেকে সামলাতে পারিনা।

ছি ছি কিসব বলে ফেললাম অপানাকে। চা খাবেন। খুবই ধন্যবাদ। আমি চা খাই না। এর থেকে ভাল হয় আমি আমার কিচেন থেকে কফি তৈরি করে আনি,আপনার কফিতে আপত্তি নেইতো।

ওহেেহা আপনিতো ব্রেকফাস্টও করেননি। টোস্ট চলবে নিয়শ্চই সাথে ভেজিটেবল কারি,সাউথ ইন্ডিয়ার রেসিপিতে করা। এই সকালে করেছি,শুধু ওভেনে গরম করে আনব। গিভ মি টেন মিনিটস প্লিজ। ভদ্রমহিলার এই আহবান কেমন যেন।

যেন পনিরের মতো মমতা মাখানো। আমি ফাঁকফোকর খুজছিলাম,কিভাবে ধন্যবাদ বলে না করা যায়। কিন্তু পরে ইচ্ছে করল না। মমতার আহবান ফিরিয়ে দিতে নেই,ফিরিয়ে দেয়া যায় না। তাছাড়া আমি একটা স্বাভাবিক পরিস্থিতির উপলক্ষ্য খুজছিলাম।

আমি কৃতজ্ঞতার ছোট্ট একটি হাসিতে সম্মতি দিলাম। তিনি দ্রুতই উঠে গেলেন। আমি সোফার টেবিলে পা তুলে দিয়ে একটি কুশন কোলে নিয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবছিলাম। ব্যাচেলরদের এই স্বাধীনতাটায় আমার লোভ হয়। আযেশ ইচ্ছাগুলো অদ্ভুত।

জনাব,যদি কষ্ট করে ঐ চরনযুগল নামান তাহলে ট্রে টা টেবিলে রাখতে পারি। আমি চমকে উঠি। কুশনটা কোল থেকে ফ্লোরে পড়ে যায়। ভদ্রমহিলার চোখ থেকে চোখ সরাতে পারছি না। বোকার মত ভাবছি,কী করতে হবে আমায়? তিনি চোখের ইশারায় আমায় টেবিলের উপর নিয়ে গেলেন।

আমি যেন সম্বিতে আসলাম ,দ্রুতই পা নামিয়ে ফেলি। সরি বলতে বলতে দাড়িয়ে যাই। ভদ্রমহিলা টেবিলে ট্রে রাখতে রাখতে বললেন,এবার কি চোখ মেলেই ঘুমোচ্ছিলেন। আমি কোন উত্তর দেই না। ট্রে’র দিকে তাকিয়ে আছি।

দুধসেমাই,দুটি রুটি ভাজ করা,ডিম সেদ্ধ,ভেজিটেবল কারি, গ্রীণ সালাদ এবং ওরেঞ্জ জুস। টোস্ট নেই। আমি অদ্ভুত রকম অবাক হই। সবকটি খাবার আমার ভীষন পছন্দের। আমি টোস্ট পছন্দ করি না।

তিনিতো টোস্ট করবেন বলেছিলেন। আমি আমার অপছন্দের কথাও জানাইনি। নওমি মাঝে মাঝে বাসায় আসলে আমার ব্রেকফাস্টটি এমনই হয়। আর দশ মিনিটে কী করে হলো এত্তোসব। কী হলো বসুন।

শুরু করুন,মন্দ লাগবেনা আশাকরি। শুধু সকালের আবহটা পাবেন না। নিন নিন। আর কিছুক্ষণ হলে লাঞ্চ আওয়ারে ঢুকে পড়বেন। আমি বসি।

দুধসেমাই দিয়ে শুরু করলাম। অধিকার পেলে বলতাম,জুসটা দিয়ে শুরু করুন। ভাবছেন দশ মিনিটে এসব করলাম কী করে। আমার ধারণা আপনার সজাগ থেকেও ঘুমিয়ে নেয়ার ক্ষমতা আছে। এটা ঠিক চোখ মেলে ঘুম নয়,øায়ুকে শাসন করে বিশ্রামে পাঠিয়ে দেয়ার ক্ষমতা।

দশ মিনিট নয় প্রায় বিশ মিনিট সময় নিয়েছি আমি। আপনার øায়ু সময়ের উপলব্ধি নেয়নি। আপনার পড়াশুনা? আমার অপ্রাঙ্গিক এমন প্রশ্নে তিনি অবাক হবেন,আমি তার চোখের দিকে তাকালাম। না,তিনি স্বাভাবিক। যেন আমি এমন প্রশ্ন করব তিনি জানতেন।

অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সে মাস্টার্স। এইবার আমার ঠোটের কোনে হাসি খেলা করে য়ায়। কী নাম আপনার? মৃম্ময়ী চক্রবর্তী। (গল্পটি এখানে থেমে থাকবে কিছুদিন। পুরোগল্পটি খানিকটা দীর্ঘ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।