আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যন্ত্রণা-১১



তমার এত দুর্বল লাগতে থাকে, ও আবার ঘুমিয়ে পড়ে। দুপুরের দিকে আম্মা এসে জোর করে তোলে। মাথা ধুইয়ে দেয়। গরম ভাত নিয়ে আসে খাওয়ার জন্য। তমা খেতে চায় না।

কিন্তু ওষুধ খাওয়া লাগবে বলে জোর করে খাওয়ায়। খেয়ে-দেয়ে তমা বসে থাকে বিছানায়। আম্মা এসে বসে সামনে। জিজ্ঞেস করে, ‘'তমা কি হইছে তোর?’' অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় তমা, '‘কিছু হয় নাই আম্মা। ’' '‘মিথ্যা কথা বলিস না তমা।

তোর চেহারা দেইখাই আমি কালকে বুঝতে পারছি কিছু একটা হইছে। লুকাইস না আমার কাছে। ’' ‘'বুঝতে পারছো যখন জিজ্ঞেস করতেছো কেন আমাকে? কি বলবো তোমারে? কি হবে বইলা?'’ '‘কি হইছে তমা? মারুফ.....’' নামটা বলতে গিয়েও ভয়ে ভয়ে আম্মা থেমে যায়। তমা চিৎকার করে ওঠে, '‘হ্যাঁ মারুফ। কি করছে মারুফ জানতে চাও? সহ্য করতে পারবা বললে? ধরে নেয়ে গেছিল আমাকে কালকে, বাসার সামনে থেকে।

সারাদিন আটকায়ে রাখছিল আর......’' তমার গলা বুজে আসে। বলতে পারে না কথা, কাঁদতে থাকে। ভয়ে, আতঙ্কে আম্মা অস্থির হয়ে যায়, '‘কি হইছে তমা? কি করছে মারুফ?’' ‘'কি করছে বুঝ না? সবকিছু খুইলা বলতে হবে তোমারে?'’ কান্নার দমকে ছিটকে বেরোয় কথাগুলো তমার মুখ থেকে। ‘'এতকিছু ঘটছে তুই আমারে কিছু বলিস নাই। তুই নিজের মধ্যে সব হজম করতেছিস? আল্লাহ না করুক, এখন যদি কিছু হয়! তুই আমারে বলবি না আগে?’' ‘'এখন যদি কিছু হয় মানে কি আম্মা? কিছু হওয়ার কি বাকি আছে নাকি!’' ‘'কতবড় হাড়ে হারামজাদ, ওইদিন জুতার বাড়ি খাইয়াও শিক্ষা হয় নাই! ও তমা, কি হইলরে মা?’' আম্মা অধীর হয়ে কাঁদতে থাকে।

তারপর হঠাৎ মনে পড়ে, '‘তোর আব্বারে তো জানানোই যাবে না। সাথে সাথে হার্ট এ্যাটাক করবে তাইলে। কি করবো আমি একা একা?’' ‘'আম্মা তোমার কিচ্ছু করা লাগবে না। তুমি যাওতো আমার রুম থেকে। যন্ত্রণা করবা না।

’' তমার এত বিরক্ত লাগতে থাকে। আম্মা আবার অস্থির হয়ে ওঠে, ‘'যদি কিছু হয়? যদি কিছু হয়ে যায়! মারে, তুই একটু শুয়্যা থাক। আমি আসতেছি। ’' আম্মা তাড়াহুড়ো করে উঠে যায়, শাড়িটা কোনরকমে বদলেই বের হয়ে যায় বাসা থেকে। তমা শুধু দেখে, এখন আর অবাকও লাগে না।

একদিনের মধ্যে এতকিছু ঘটে গেছে জীবনে যে বোধগুলো সব ভোঁতা হয়ে গেছে। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত তমা শুয়ে থাকে বিছানায়। আধাঘন্টার মধ্যে ফিরে আসে আম্মা। একটা পিল নিয়ে এসে তমাকে দেয়, ‘'নে, এইটা খেয়ে নে। আল্লাহ মান-ইজ্জত বাঁচানোর মালিক।

’' মান-ইজ্জত! রাগে মাথার ভেতর আগুন ধরে যায় তমার। কিন্তু কিছু বলে না। চুপচাপ পিলটা খেয়ে নেয়। আবর শুয়ে পড়ে। “"যদি কিছু হয়"” বলতে আম্মা কি বুঝাতে চেয়েছিল বুঝতে পারে।

হ্যাঁ, তমা চায় না কোন অনাকাঙ্খিত বোঝা বয়ে বেড়াতে। আম্মাকেও আর কিছু বলে না। জানে, বলে লাভ নেই। জানে, আব্বাকে কিছুতেই জানানো যাবে না। লাভ হবে না, বরং উল্টো ক্ষতিই হবে।

আব্বা অসুস্থ হয়ে পড়বে। তমার চোখে আর পানি আসে না। শুধু ধক ধক করে জ্বলতে থাকে। অক্ষম রাগে, কষ্টে, দু:খে। রাতে প্রিয়ন্তী ফোন করে।

ওর দাদী অসুস্থ, ভোরেই রওনা হয়ে দেশের বাড়ি চলে যাচ্ছে ওরা। তমা অসহায়ভাবে বলে, ‘'তুই কেন যাচ্ছিস? আমি একা একা কিভাবে থাকবো!’' ‘'মন খারাপ করিস না তমা। আমরা দুই দিনের মধ্যে চলে আসবো। একটু শান্ত হ। এই দুইদিন কলেজে যাস না।

আমি আসলে আমার সাথে যাবি। ’' ‘'প্রিয়ন্তী, প্রিয়ন্তী.......তুই ছাড়া এখন কেউ বুঝবে না আমাকে। তোকে আমার খুব দরকার পাশে। তুই যাস না, প্লীজ যাস না। ’' ‘'তমা, লক্ষ্মীসোনা......অস্থির হোস না।

আমি তোর সাথেই আছি। সবসময়। তুই কিচ্ছু ভাবিস না। আমি ফিরে আসি। সব ঠিক হয়ে যাবে।

’' তমা কিছু বলে না। শুধু কাঁদতে থাকে চুপচাপ। প্রিয়ন্তীও নিরবে ফোন ধরে রাখে। ফোনের দুইপাশে দুই বান্ধবীর নি:শ্বাসের শব্দ শোনা যায় শুধু। চলবে.........


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।