আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবারো প্রশ্নবোধক চিহ্ন

I love nature. I love babies and flowers.

রাবি ছাত্র ফারুকের প্রকৃত হত্যাকারী নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন (সংকলিত) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে দুটি ছাত্র সংগঠন ও পুলিশের সংঘর্ষে শাহ মখদুম হলের আবাসিক ছাত্র ফারুক হোসেন নিহত হওয়া এবং লাশ সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার করাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলে কয়েকটি প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। নিহত ফারুক আদৌ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কিনা, ঘটনাস্থলে তিনটি হল মুখোমুখি হওয়া এবং ঘটনাস্থলে সার্বক্ষণিকভাবে প্রায় এক থেকে দেড় শতাধিক পুলিশ থাকার পরেও কীভাবে এস এম হল থেকে একটি লাশ নিয়ে সৈয়দ আমীর আলী হলের পেছনের সেপকিট ট্যাঙ্কে রাখা হলো এবং কারা এটি করতে পারে তা সচেতন মহল হিসাব কষে মিলাতে পারছে না। অনেকে ধারণা করছেন তৃতীয় কোনো পক্ষও এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত দায়িত্বরত দুটি হলের কর্মচারী, প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে, বেশকিছু গুরুত্বপুর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। শাহ মখদুম হলের দুজন কর্মচারী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, তারা ঘটনার দিন রাত ১০টার পর হলের নিরাত্তার দায়িত্বে ছিলেন।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. দুলাল চন্দ্র রায়, প্রক্টর এবং সহকারী প্রক্টর হল ছেড়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপকে হলের টিভি রুমে রেখে যায়। প্রভোস্ট এবং প্রক্টর পুলিশকে তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। পরে প্রভোস্ট, হাউস টিউটর এবং অন্যান্য কর্মকর্তা হল ত্যাগ করার সময় গেট বন্ধ করে দিতে বলেন। আদেশকারীরা হল ত্যাগ করার পর নিরাপত্তা কর্মীরা হলের গেট বন্ধ করতে গেলে একটি গ্রুপ হলের ভেতর থেকে এসে গেট বন্ধ করতে নিষেধ করে। এ সময় এক নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যার হুমকি দিয়ে গেটের বাইরে পাঠিয়ে দেয়।

তখন অন্যজনও ভয়ে গেটের বাইরে চলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী এ দুজন নিরাপত্তা কর্মী জানান, যে গ্রুপটি তাদের হলের গেট বন্ধে বাধা দিয়েছে তারা সম্পূর্ণ অচেনা ছিল। হলের সাধারণ ছাত্র থেকে শুরু করে যারা ছাত্রলীগ করে এবং শিবির করে তাদের সবারই চেহারা তারা মোটামুটি চেনে। কিন্তু এদের চেহারা তারা কোনোদিন দেখেনি। হলের গেট বন্ধে বাধা দেয়ার সময় তারা খুব হিংস্র ছিল।

অনেকের মাথায় মাফলার ছিল। অচেনা এ গ্রুপটি যখন হলের গেটের নিয়ন্ত্রণ নেয় তখন পুলিশ গেটের মধ্যে সম্পূর্ণ নীরবে বসে ছিল। তাদের কোনো বাধা দেয়নি বলে জানান তারা। অচেনা গ্রুপটি হলের গেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরপরই টিভি রুম থেকে চিত্কারের শব্দ ভেসে আসে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি হলের মধ্যেই বিভিন্ন দিক থেকে কয়েকটি গ্রুপকে টিভি রুমের দিকে দৌড়ে প্রবেশ করতে দেখেন।

অন্য আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী নিরাপত্তাকর্মী বলেছেন, কেউ দৌড়ে টিভি রুমের দিকে গেছে কিনা তা তিনি লক্ষ্য করেননি। তাছাড়া বাইরে তারা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখান থেকে টিভি রুমটি ভালো করে দেখা যায় না। তারা শুধু চিত্কার শুনতে পেয়েছেন। আর হলের গেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়া গ্রুপটি তখনও গেটেই ছিল। টিভি রুমে চিত্কার শোনার পরপরই হলের মধ্যে অবস্থান নেয়া পুলিশ দৌড়ে সেখানে যায়।

এর অল্প পরেই শাহ মখদুম হলের একদিক থেকে ‘জয় বাংলা’ এবং অপরদিক থেকে ‘নারায়ে তকবির’ ধ্বনিসহকারে হলের দিকে অগ্রসর হয় কয়েকটি গ্রুপ। এ সময় পুলিশ তাদের সামলাতে বাইরে আসে এবং ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। গোলাগুলি টিয়ার গ্যাসের আক্রমণ চলে। শাহ মখদুম, আমীর আলী এবং নবাব আবদুল লতিফ হলের সামনে অবস্থানরত পুলিশও তখন অ্যাকশনে যায়, থানা থেকে অতিরিক্ত ফোর্স পাঠানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শী হলের কর্মচারীরা জানান, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর তারা প্রভোস্টের বাসায় যান ঘটনা সম্পর্কে তাকে অবহিত করার জন্য।

কিন্তু প্রভোস্ট তখন ভিসির সঙ্গে সাক্ষাত্ করছেন বলে তাকে জানানো হয়। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে যখন সব ক্যাম্পাস নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন তারাসহ অনেকে শাহ মখদুম হলে আসেন। হলের সামনে এসে গেটের বাইরে এবং ভেতরে রক্ত দেখতে পান। তখন তারা হত্যাকাণ্ড হয়েছে বুঝতে পেরে মখদুম হলের বিপরীত দিকে লতিফ হলের সামনে দাঁড়ানো পুলিশকে খরব দেন এবং তাদের কাছে আশ্রয় নেন। অভিযোগ করা হচ্ছে ঘটনার দিন রাতে পুলিশ কোনো দায়িত্ব পালন করেনি, তারা সেখানে উপস্থিতও ছিলেন না।

কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ৩টায় দিকেও তারা লতিফ হলের সামনে পুলিশ দেখতে পান। ঘটনা শুরুর সময় শাহ মখদুম হলের পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অ্যাকশনে গেছে। তবে সাড়ে ৩টার সময় মখদুম হল এবং লতিফ হলের সামনে পুলিশ অবস্থান করছিল। শাহ মখদুম হল থেকে একটি লাশ যদি কেউ টেনে নিয়ে যায় তা লতিফ হল এবং আমীর আলী হলের পুলিশের চোখ এড়ানো সম্ভব নয়। প্রশ্ন জাগে তাহলে কারা ওই নিহত ছাত্রের লাশ পুলিশের সামনে থেকে সরাল এবং তাকে হত্যাইবা করল কারা।

ঘটনার দিন রাতে বঙ্গবন্ধু হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন হলে শিবির এবং ছাত্রলীগ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এরপর পুলিশ বিভিন্ন হলে তল্লাশি চালায়। পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ অংশ নিয়ে শিবিরকর্মী সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। বিভিন্ন হল থেকে তাদের বের করে দেয়। শাহ মখমুদ হলেও সন্ধ্যার পর শিবির এবং ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

তবে এ হলে পুলিশ তল্লাশি চালায়নি, পরিস্থিতি এখানে ততটা খারাপ ছিল না। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এরকম একটি হলে কেন হত্যাকাণ্ড ঘটানো হবে, যেখানে হল দখল বা পাল্টা দখলের কোনো বিষয় ছিল না। হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিতভাবে ঠাণ্ডামাথায় কেউ ঘটিয়েছে নাকি তৃতীয় কোনো পক্ষ ঘটিয়েছে সে প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে। এছাড়া টিভি রুম রাত ১২টায় বন্ধ করে দেয়ার কথা। সেখানে কেন প্রভোস্ট ছাত্রলীগের একটি গ্রুপকে তাদের রুমে না পাঠিয়ে টিভি রুমে থাকতে দিলেন, এরও কোনো জবাব দিতে পারেননি প্রভোস্ট দুলাল চন্দ্র রায়।

তিনি বলেন, হামলার ভয়ে তারা রুমে থাকতে ভয় পাচ্ছিল। এজন্য একত্র হয়ে অনেকে এখানে থাকতে চেয়েছে। অচেনা যে গ্রুপটি হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল তারাইবা কারা এরও কোনো সঠিক জবাব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী অভিযোগ করেছেন, বাম কোনো ছাত্র সংগঠন যাদের একজন কর্মী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে নিহত হয়েছেন তার প্রতিশোধ হিসেবে এ পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে। ঘটনার দিন দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্তকৃত গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই মোহসিন আলী বলেন, ঘটনার দিন শুরু থেকেই শেষ পর্যন্ত পুলিশ ছিল।

তবে পরিস্থিতি এক পর্যায়ে এমন দাঁড়ায় যে, পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, আমি মুখোমুখি অবস্থিত তিনটি হলের দায়িত্বে ছিলাম। কোন সময় হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে তা বোঝা যায়নি। কারণ আমরা দৌড়াদৌড়ির মধ্যে ছিলাম। সৈয়দ আমীর আলী হলের পেছনে যে সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্যে ফারুক হোসেনের লাশটি রাখা ছিল সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, একটিমাত্র সেপটিক ট্যাঙ্কিরই ঢাকনা খোলা ছিল।

আগে থেকে ঠিক করা না থাকলে রাতের অন্ধকারে কীভাবে তারা জানল ওখানে একটি সেপটিক ট্যাঙ্কের ঢাকনা খোলা আছে সেটিও একটি প্রশ্ন। রাজশাহী পুলিশ কমিশনার মোঃ নওশের আলী বলেন, তদন্ত কাজ এখনও চলছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। শাহ মখদুম হলে ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে যেখানে একে অপরকে দায়ী করার ঘটনা চলছে তখন ওই হলের কোনো শিবির কর্মীর আহত না হওয়ার বিষয়টিও একটি বড় প্রশ্ন। তাছাড়া ছাত্রশিবির তাদের নেতা নোমানী হত্যার প্রতিশোধ যদি আরেকজনকে হত্যার মাধ্যমে নেবে তাহলে ফারুককে হত্যা করে কেন? ফারুক তো ছাত্রলীগের কোনো সামনের সারির নেতা নয়।

এখন সবার মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ফারুক আসলেই কি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নাকি তার হত্যা নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়েছে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।