আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন নামে শিবির সংঘঠিত

আমিতো মরে যাব চলে যাব রেখে যাব স্মৃতি....................

শুধু দেশ নয়, বিদেশেও সংগঠিত হচ্ছে ছাত্রশিবির। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারা সংগঠিত হচ্ছে নাম পাল্টিয়ে। বিভিন্ন দেশে শিবিরের নাম পাল্টানো এসব শাখার রয়েছে ভিন্ন কর্মপদ্ধতি ও কার্যক্রম। তবে দেশের মতো বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রেও শিবিরের নাম পাল্টানো এসব সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করছে জামায়াত। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি তাদের এক প্রতিবেদনে ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন উল্লেখ করায় বাইরের এসব সংগঠন নিয়েও এখন বিপাকে পড়ছে ছাত্রশিবির।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন নামে সংগঠন থাকার কথাটি স্বীকার করেছেন শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা। তবে শিবিরের এসব সংগঠন কোনো দেশেই সহিংস কোনো কার্যক্রমে লিপ্ত নয় বলে দাবি করেন সংগঠনের নেতারা। তারা জানান, পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়েই বাইরের দেশগুলোয় তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। বিশ্বের মোট ৪৩টি দেশে শিবিরের কার্যক্রম ও সংগঠন আছে বলে জানা গেছে। কোন দেশে কী নাম : বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নাম পরিবর্তন করে ভারতে হয়েছে 'স্টুডেন্ট ইসলামিক অরগানাইজেশন অব ইন্ডিয়া'।

একইভাবে এ সংগঠন 'শ্রীলংকা ইসলামিক মুভমেন্ট' নামে শ্রীলংকায়, পাকিস্তানে 'ইসলামী জামায়াতই তালাবা', সিঙ্গাপুরে 'দ্য মুসলিম কনভার্টস অ্যাসোসিয়েশন', মিয়ানমারে 'ইত্তিহাদ আল-তুল্লাব আল মুসলিমিন', ইন্দোনেশিয়ায় 'এল-ইসলামী লিল-তুল্লাব', তাইওয়ানে 'ইসলামিক কালচার ইনস্টিটিউট', মালয়েশিয়ায় 'মুসলিম ইউথ মুভমেন্ট অব মালয়েশিয়া', ফিজিতে 'ফিজি মুসলিম ইউথ মুভমেন্ট', নেপালে 'ইসলামী ইউয়া সান', কোরিয়ায় 'কোরিয়া মুসলিম ফেডারেশন', জাপানে 'মুসাতো সি', থাইল্যান্ডে 'দ্যা মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন', কাজাখস্তানে 'ডিরেক্টর অব ইফসো ইন সেন্ট্রাল এশিয়া', ঘানায় 'ইত্তিহাদ ইল-তালিবি ইল-মুসলিমিন', আলজেরিয়ায় 'ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন', জর্দানে 'জর্দানিয়ান স্টুডেন্ট ইউনিয়ন', তুনুসে 'ই-ইত্তিহাদ ই এম লিল-তালিবি', সুদানে 'ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর মুসলিম ওমেন' ও 'ইল-ইত্তিহাদ লিল তুল্লাব', মৌরিতানিয়ায় 'ক্লাব ফর ইয়থ মৌরিতানিয়া', আইভরি কোস্টে 'অ্যাসোসিয়েশন দেস ইলেভেস', মরিশাসে 'মুসলিম স্টুডেন্ট মুভমেন্ট', কেনিয়ায় 'ইয়ং মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন', দক্ষিণ আফ্রিকায় 'মুসলিম ইয়থ মুভমেন্ট' ও 'ইসলামিক দাওয়াহ মুভমেন্ট', তাঞ্জানিয়ায় 'মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন', নাইজেরিয়ায় 'এমএসএস ইসলামিক সেন্টার', উগান্ডায় 'মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন', বেলজিয়ামে 'ইউনিয়ন ইসলামিক', ফ্রান্সে 'অ্যাসোসিয়েশন দ্য মুসলমাঁ', জার্মানিতে 'মুসলিম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন', ইউরোপে 'ইয়থ মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন', ইতালিতে 'হোল্লাদ সেনত্রো ইসলামিকো দ্য মিলানো', স্পেনে 'অ্যাসোসিয়েশন ইসলামিকা আল-আন্দালুস', সুইজারল্যান্ডে 'অ্যাসোসিয়েশঁ কালচারেলোই ডেস', সাইপ্রাসে 'ইয়থ ফাউন্ডেশন', আলবেনিয়ায় 'ইত্তিহাদ ইল-তালিবি দ্য মুসলিমিন', পোল্যান্ডে 'মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন', হাঙ্গেরিতে 'মুসলিম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন', সুইডেনে 'ফেডারেশন অব ইসলামিক স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন', যুক্তরাষ্ট্রে 'ফেডারেশন অব অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যান্ড ইয়থ', ইংল্যান্ডে 'এফওএসআইএস' এবং ইউক্রেনে 'স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার'। কেন ভিন্ন নাম দেশের বাইরে কেন ভিন্ন নামে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে_ এমন প্রশ্নের জবাবে শিবিরের চবি শাখার সাবেক এক নেতা বলেন, 'সাধারণত সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা ও জাতীয়তাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে। যাতে সে দেশের নাগরিকদের মধ্যে একে বিদেশি সংগঠন বলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় না। ' চবির এক শিক্ষকও দিয়েছেন এমন তথ্য। তিনি বলেছেন, 'সংগঠনে যোগ দিতে বাইরের দেশের মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম যেন বাধা হয়ে না ওঠে সে জন্যই নাম পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে।

' তবে এ প্রসঙ্গে রয়েছে ভিন্নমতও। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার চোখ এড়াতে এবং বিশ্বব্যাপী শিবিরের নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি লুকাতে একেক দেশে একেক নাম দেওয়া হয়েছে এ সংগঠনের। জানা গেছে, একই কারণে বিদেশে এসব সংগঠন কাগজে-কলমে পরিচালনা করে সে দেশের নাগরিকরাই। যেভাবে বিদেশে সংগঠিত হচ্ছে শিবির সাধারণত সংগঠনের উদ্যোগেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ পর্যায়ের নেতাদের স্টুডেন্ট বা অন্য কোনো ভিসায় এসব দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। মাঝে মাঝে বাংলাদেশ থেকে শিবির ও জামায়াতের কোনো কোনো নেতা গিয়ে বাইরের দেশের নেতাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে আসেন।

সেখানে বসবাস করা নেতারা সে দেশের নাগরিকদের সঙ্গে মিশে সাংগঠনিক এসব নির্দেশনা সুকৌশলে বাস্তবায়ন করেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক অনেক নেতাই সাংগঠনিক প্রয়োজনে এখন বিদেশে রয়েছেন। যেমন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক নেতাদের মধ্যে ২০০৩ সালের সভাপতি দিদারুল আলম মজুমদারসহ এ সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা এখন বিদেশে রয়েছেন। নিয়ন্ত্রণ করছে জামায়াত দেশের মতো শিবিরের বিদেশের এসব শাখাও নিয়ন্ত্রণ করছে জামায়াত। সংগঠনের কর্মপদ্ধতি ও পরিবেশ অনুযায়ী কখন কী ধরনের কার্যক্রম হাতে নিতে হবে সে বিষয়ে জামায়াতের পরামর্শে কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হয় বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবিরের উচ্চ পর্যায়ের সাবেক এক নেতা জানান, বিদেশ সম্পর্কে জামায়াতের অভিজ্ঞতা বেশি থাকায় সব সময়েই এ বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত দেন। জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীদের বিদেশি আস্তানা বিদেশের এসব সংগঠন জামায়াত-শিবিরের দেশের বাইরের নিরাপদ আস্তানা। দেশে বড় ধরনের অরাজকতা এবং হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে এসব সংগঠনের ছত্রছায়ায়ই বিদেশে আশ্রয় নেন তারা। বিগত সময়ে জাতীয় হত্যাকাণ্ডের জামায়াতি সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে ছিলেন বছরের পর বছর। এই সংগঠনগুলো সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় তাদের যাবতীয় নিরাপত্তা ও অন্য সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে বলে জানা গেছে।

এমনকি বছরের পর বছর এসব সংগঠনের ছত্রছায়ায় আত্মগোপনও করে থাকেন অনেকে। যেমন- ২০০৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ঈদুল ফিতরের দিন ব্রাশফায়ার করে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রামের উত্তর জেলার নেতা ফারুক সিদ্দিকী ও সোলায়মান খানের হত্যাকারী শিবির ক্যাডার এখন সুইজারল্যান্ডে রয়েছে। শিবিরের আন্তর্জাতিক শাখা বিদেশে শিবিরের এসব শাখা-সংগঠন ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নামে রয়েছে শিবিরের একটি আলাদা শাখা। এ শাখা শিবিরের বিদেশি সংগঠনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। বিদেশি সংগঠনকে পরিচালনার নির্দেশনাও দেয় এ সংগঠন।

অন্যদিকে দেশ থেকে কেউ বিদেশে গেলে কিংবা সংগঠন পরিচালনার জন্য কাউকে পাঠানো হলেও এ শাখা যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট দেশের সংগঠনের সঙ্গে। যেমন এ মুহূর্তে শিবিরের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক শাখার সম্পাদক শামসুল আরেফিন হাসিব রয়েছেন আমেরিকায়। শিবিরের বক্তব্য বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন সমকালকে বলেন, 'দেশ থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশে যাওয়া লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। অন্যদিকে কাউকে বিদেশের কোনো বিষয়ে তথ্য ও অন্য সুবিধা দিতে হলেও সে দায়িত্ব পালন করে এ শাখাটি। ' বিদেশে শিবিরের এসব সংগঠনের ভিন্ন নামে কার্যক্রম পরিচালনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'দেশের বাইরের এই শাখাগুলো শিবিরের নয়।

তবে শিবিরের অনেকেই পড়াশোনাসহ বিভিন্ন কারণে দেশের বাইরে থাকায় এসব ইসলামী সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। তবে শিবিরের চবি শাখার মূল কমিটির সাবেক এক নেতা দেশের বাইরে ভিন্ন নামে শিবিরের এসব সংগঠন পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মুল খবর সংগৃহিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.