আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে কোন সালাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করা অপরিহার্য কেন ?


যার মাধ্যমে কোন বিষয়ের সূচনা করা হয়, কোন বিষয় আরম্ভ করা হয়, কোন কাজের উদ্বোধন করা হয়, কোন গ্রন্থের সূচনা করা হয় আরবী ভাষায় তাকেই 'ফাতিহা' বলে। এই সুরার মাধ্যমেই কোরআন আরম্ভ হয়, এ জন্য এই সুরাকে ফাতেহাতুল কোরআন বলা হয়। কোরান পাঠকারী কোরআন উন্মোচন করে এই সুরাটিই দেখতে পায়। সুরা ফাতিহা হলো কোরআনের সারাংশ। সম্পূর্ণ কোরআনের মধ্যে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে, সে আলোচনার বিষয়বস্তু সুরা আল-ফাতিহার সাতটি আয়াতের মধ্যে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে।

গোটা কোরআনে যা পাওয়া যাবে , এই সুরা ফাতিহাকে বিশ্লেষণ করলে তাই পাওয়া যাবে। এই সুরার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছে সত্য ও সরল পথ কামনা করে। এই প্রার্থনার জবাবে আল্লাহতাআলা মানুষের সামনে গোটা কোরআন পরিবেশন করেছেন। সত্য পথ চাও! তাহলে এ কোরআনকে অনুসরণ কর। যাবতীয় সত্য এই কিতাবের মধ্যেই নিহিত রয়েছে।

এ সুরার অসীম গুরুত্বের কারণে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেকোন সালাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করাকে অপরিহার্য করেছেন। নামাযে কোরআন পাঠ করা ফরজ- এ সুরা পাঠ করলেই সে ফরজ আদায় হয়ে যায়। আল-ফাতিহা (বাংলা অনুবাদ) পরম করুণাময় ও অত্যন্ত দয়ালু আল্লাহর নামে ১। সকল প্রশংসা সৃষ্ট-জগতসমূহের পালনকর্তা আল্লাহর । ২।

যিনি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু । ৩। যিনি বিচারদিনের মালিক । ৪। আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি ।

৫। আমাদেরকে সরল পথ দেখাও । ৬। সেসমস্ত লোকের পথ যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ । ৭।

তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গযব নাজিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট । সংক্ষেপে সুরা ফাতিহার মৌলিক শিক্ষা # সর্বাবস্থায় মনে রাখতে হবে, সমস্ত প্রশংসা কেবলমাত্র আল্লাহর। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, যখন কোন ফাসিকের প্রশংসা করা হয়- যে ব্যক্তি নামায আদায় করে না, রোযা পালন করে না, আল্লাহর বিধানের কোন তোয়াক্কা করে না, এমন ধরনের কোন ব্যক্তির যদি প্রশংসা করা হয়, তখন আল্লাহতাআলার আরশ প্রচন্ড ক্রোধে কাঁপতে থাকে। সুতরাং প্রশংসাযোগ্য যেকোন বিষয়ে একমাত্র আল্লাহরই প্রশংসা করতে হবে, অন্য কারো প্রশংসা করা যাবে না। দ্বিতীয় যাঁর প্রশংসা করতে হবে তিনি হলেন বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের।

সরবে-নীরবে, প্রকাশ্য ও গোপনে, লোকালয়ে এবং নির্জনে যেকোন অবস্থায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রশংসা করতে হবে, এটা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। # শেষ বিচারের মালিক হলেন মহান আল্লাহ। সেদিনের একচ্ছত্র আধিপত্য হবে একমাত্র তাঁর। শেষ বিচারের দিন আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কেউ কথা বলতে পারবে না। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ-ই সুপারিশ করতে পারবে না।

তিনিই হবেন একমাত্র বিচারক, তাঁর বিচারে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, কেউ কারো মুক্তির মাধ্যম হতে পারবে না, যারা মুক্তি লাভ করবে, সমস্ত বিচারকের মহাবিচারক-মহান আল্লাহর আদেশেই মুক্তি লাভ করবে। # জীবনের সকল ক্ষেত্রে দাসত্ব, আনুগত্য, পূজা-উপাসনা তথা ইবাদত হতে হবে একমাত্র আল্লাহর। আল্লাহর আইন ব্যতীত অন্য কারো আইন অনুসরণ করা যাবে না। # সাহায্য কামনা করতে হবে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে। যেকোন প্রয়োজনে একমাত্র তাঁরই কাছে সাহায্য কামনা করতে হবে।

হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও তা আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে। কোন মাধ্যমে তিনি তার ব্যবস্থা করে দেবেন। # একমাত্র জীবনব্যবস্থা হিসেবে, আইন-কানুন ও হেদায়েতের বিধান হিসেবে গ্রহণ করতে হবে আল্লাহর কোরআনকে। কেননা কোরআন এমন পথ প্রদর্শন করে যা সর্বাধিক সরল। # অনুসরণ করতে হবে শুধুমাত্র নবী, সিদ্দীক, শুহাদা বা শহীদ ও সালেহ বা সেইসব লোকদেরকে, যারা অনুকূল বা প্রতিকূল পরিবেশে ইসলামী আদর্শ অনুসরণে অটল অবিচল থাকেন।

এই চার শ্রেণীর লোক ব্যতীত আর কারো অনুসরণ করা যাবে না। # জীবনের প্রতিটি বিভাগকে অবিশ্বাসীদের প্রভাব মুক্ত রাখতে হবে। অর্থাৎ যারা ইসলাম বিরোধী-মুরতাদ, নাস্তিক, মুশরিক, মুনাফিক, ফাসিক- এসব লোকদের অনুসরণ করা যাবে না। যারা ইসলামকে ব্যক্তিগত বিষয় মনে করে এবং ব্যক্তিগত সীমার মধ্যে আবদ্ধ করতে চায়, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামের আনুগত্য স্বীকার করতে চায় না, এদের অনুসরণ করা যাবে না। মনে রাখতে হবে ইসলাম কোন আদর্শের অধীনে থাকতে আসেনি, ইসলাম কারো অনুগ্রহ লাভ করতে আসেনি।

মসজিদ মাদ্রাসা আর খানকায় আবদ্ধ থাকতে আসেনি। ইসলাম এসেছে মানুষের ব্যক্তিগত,পারিবারিক,সামাজিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক,ধর্মীয় অর্থাৎ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আসীন হয়ে মানুষকে একমাত্র আল্লাহর দাসে পরিণত করার লক্ষ্যে। আর কেবলমাত্র আল্লাহর দেয়া দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করার মাধ্যমেই পৃথিবী এবং আখিরাত-উভয় জগতেই কল্যাণ অর্জন করা সম্ভব।
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।