আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পার্বত্যাঞ্চলের ম্রো আদিবাসী : সর্বক্ষেত্রে পশ্চাদপদ এক জনগোষ্ঠী

সৈয়দ মুতনু

পাহাড় কন্যা বান্দরবান। বাংলার দার্জিলিং খ্যাত পাহাড়কে ঘিরেই ম্রো জনগোষ্ঠীর বসবাস। পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে একমাত্র বান্দরবানে রয়েছে ১১টি জাতীগোষ্ঠীসহ ১৩টি সম্প্রদায়ের বসবাস। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে ম্রো সমপ্রদায়ের অবস্থান তৃতীয় হলেও ১১টি আদিবাসীর মধ্যে ম্রো জনগোষ্ঠীরা শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে সবচেয়ে বেশি। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পাহাড়ের চূড়ায় ছোট ছোট মাচাংঘর তৈরি করে বসবাস করে ম্রোরা।

তবে সাঁজ গোজ এবং রূপ চর্চায় কম যায়না ম্রো আদিবাসীরা। কানে, পায়ে এবং মাথায় ম্রো আদিবাসীরা অলংকার পড়ে। তবে কোন সোনার তৈরি অলংকার নয়। রূপা এবং পিতলের তৈরি স্বাভাবিক স্বর্ণালংকারের চেয়ে অনেক বড় অলংকার পড়ে ম্রোরা। এসব অলংকার শুধু মাত্র তাদের শরীরে মানায়।

প্রতিটি জনগোষ্ঠীর মত ম্রোদের রয়েছে আলাদা সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ভাষা। রয়েছে ম্রো বর্ণমালার বই। ম্রো জনগোষ্ঠীর জন্য জেলা সদরের মাঝের পাড়ায় সরকারী ভাবেই‌ গড়ে তোলা হয়েছে ম্রো আবাসিক বিদ্যালয়। জেলা জুড়ে ম্রোরা বসবাস করলেও wP¤ম্বুক পাহাড়কে ঘিরেই ম্রো জনগোষ্ঠীর মূল অবস্থান। পাহাড়ে চূড়ায় ছোট ছোট মাচাংঘর বানিয়ে শত শত বছর ধরে বসবাস করে চলেছে এরা।

কিছুদিন পর পর ম্রোরা স্থান পরিবর্তন করে নতুন নতুন পাহাড়ে মাচাংঘর বানায়। একই পাহাড়ে বা স্থানে ম্রো জনগোষ্ঠীরা বেশিদিন থাকে না বা বসবাস করে না। তাদের বিশ্বাস একই স্থানে অনেকদিন বসবাস করলে তাদের অমঙ্গল হয়। ম্রো জনগোষ্ঠীর বানানো মাচাংঘর গুলো দেখতে খুব সুন্দর। দূর থেকে দেখে মনে হয় পাহাড়ের কূলে গড়ে তোলা ছোট ছোট পর্যটন স্পট।

শিক্ষার মতই ম্রো জনগোষ্ঠীরা এখনো পিছিয়ে রয়েছে পোষাক পরিচছদের দিক থেকেও। ম্রো আদিবাসী নারী, পুরুষ এবং তরুন-তরুণীরা এখনো অর্ধউলঙ্গ কাপড় পড়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর মধ্যে একমাত্র ম্রোরা আজও জুম চাষের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। জুম চাষের মাধ্যমেই ম্রোরা সারাবছরের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে ম্রোরা জুমের জন্য পাহাড়ে আগুন দেয়।

মে-জুন মাসের দিকে ম্রো আদিবাসীরা আগুনে পোড়ানো পাহাড়ে জুম চাষ শুরু করে। ম্রোরা পাহাড়ের ধান, ভূট্টা, মরিচ, যবসরিষা, মিষ্টি কোমড়া, মারমা, টকপাতাসহ বিভিন্ন রকম সবজির চাষ করে। বান্দরবানে ম্রো ভাষা বর্ণমাল সংরক্ষণ কমিটি ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে। সোমবার ম্রো অধ্যূষিত ওয়াইজংশন এলাকায় পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য অংপ্রু ম্রো। সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেংরাং ম্রো এর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ক্যাসাপ্রু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

পরে ম্রো শিল্পীদের পরিবেশনা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।