আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ঢল নেমেছে

রঙ্গিলা বন্ধুরে....... i_mahmud2008@yahoo.com

দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ঢল নেমেছে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার থেকে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে সৌন্দর্য্যময় প্রাকৃতিক বনভূমি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। অপরূপ সৌন্দর্যের টানে এ বনের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন হাজার হাজার পর্যটক নারী-পুরুষ। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ ফি চালু করার পর ২০০৯ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর এ দু’মাসে প্রবেশ ফি থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ী এলাকায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে প্রতিষ্টা করা হয় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। লাউয়াছড়া বনাঞ্চলকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষনা করার পর এ বনের নিবিড় বনরাজি ও নির্জনতা ধীরে ধীরে প্রকৃতির রুপকে অপরুপ সাজে সজ্জিত করতে থাকে।

দ্রুত বাড়তে থাকে পার্কের পরিচিতি ও প্রসার। সেই সাথে বাড়তে থাকে পর্যটকদের সংখ্যা। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সবচেয়ে বেশী আকৃষ্ট করে বিলুপ্ত বন্যপ্রাণী উল্লুকের ডাক। এ ছাড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, চশমাপরা হনুমান, মায়া হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতীর প্রাণী এ উদ্যানের গুরুত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছে। এর পাশাপাশি বিরল প্রজাতির বৃহৎ আকারের আফ্রিকান টিকওক, সারি সারি ডুমুর, লকটন, সেগুন, আমলকি, জলপাই সহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ দেখে আকৃষ্ট হন পর্যটকরা।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ‘আইপ্যাক’ প্রকল্পের কর্মকর্তা মিসেস শায়লা সুলতানা জানান, এ জাতীয় উদ্যানে পাহাড়ী ময়না, ধনেশ, মথুরা, বন মোরগ, সবুজ ঘুঘুসহ ২৪৭ প্রজাতির পাখী রয়েছে। আরো রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির পাহাড়ী পোকা-মাকড়। পাহাড়ের উঁচু নিচু টিলায় ২টি খাসিয়া আদিবাসী পল্ল¬ী উদ্যানের সৌন্দর্য অনেকাংশে বাড়িয়েছে। শীতের শুরুতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান’র এসব দৃশ্য দেখতে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত এখন গোটা উদ্যান এলাকা। তিনি জানান, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ১৫ হাজার পর্যটক লাউয়াছড়া ভ্রমন করেছেন।

এর মধ্যে বিদেশী পর্যটক ভ্রমন করেছেন ২’শ ৫০ জন। দেশী-বিদেশী পর্যটক, শুটিং ও পিকনিক দল থেকে প্রবেশ ফি বাবৎ এ পর্যন্ত রাজস্ব আদায় করা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। পর্যটকদের সুবিধে বাড়াতে লাউয়াছড়ার ভৌগলিক অবস্থান ও জীববৈচিত্র্যের উপর স্থানীয় বেকার যুবকদের নিয়ে আইপ্যাক পরিবেশ বান্ধব পর্যটন গাইড প্রশিক্ষন দিচ্ছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক দেশী-বিদেশী পর্যটক লাউয়াছড়া ভ্রমন করেছেন। ২০০৮ সালে ৬৩ হাজার এবং ২০০৭ সালে ৩০ হাজার দেশী বিদেশী পর্যটক এ উদ্যানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন।

ইউএসএইডের অর্থায়নে আইপ্যাক (সমন্বিত সংরক্ষিত এলাকা) বাংলাদেশের ৫টি অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যান সহায়তা প্রকল্পের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির পরিচালনায় রক্ষণাবেক্ষণ করছে। এগুলো হলো লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, চুনতি বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও টেকনাফ জাতীয় উদ্যান। ‘আইপ্যাক’-এর সাথে সংশ্লি¬ষ্ট একটি বিশ্বস্থ্য সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে টিকেট সিষ্টেম চালু করেছে আইপ্যাক। লাউয়াছড়ায় আগত দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছ থেকে টিকেট এর মাধ্যমে আদায়কৃত অর্থের ৫০ শতাংশ ‘আইপ্যাক’ এর সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি ও ৫০ শতাংশ সরকারি তহবিলে জমা হবে। ‘আইপ্যাক’ ২০০৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর এ এক বছরের জন্য প্রবেশ ফি বাবৎ ১২ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করলেও এর থেকে অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স¤প্রতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে সরজমিনে পরিদর্শণকালে যুক্তরাজ্য থেকে লাউয়াছড়ায় বেড়াতে আসা একদল পর্যটক এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে অভিমত বলেন, অপরূপ এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যময় উদ্যান দেখে তারা মুগ্ধ। গহীন অরণ্যে বেড়াতে তারা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্ধ্য বোধ করেছেন। স্বদেশে ফিরে তারা অপরূপ এ প্রাকৃতিক দৃশ্যের কথা সবাইকে জানাবেন। তবে তারা বনের ভেতরে বসার স্থান, টয়লেট, পর্যক্ষেন টাওয়ার, রেস্তেুারা সহ অন্যান্য সুবিধে বৃদ্ধি করলে পর্যটকের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুর রহমান দেশী-বিদেশী পর্যটকদের এ সব অসুবিধের কথা স্বীকার করে বলেন, লাউয়াছড়া সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির এতোদিন নিজস্ব কোন তহবিল ছিল না।

বিধায় এসব খাতে কোন অর্থও তারা ব্যয় করতে পারেননি। তবে প্রবেশ ফি থেকে আদায় করা অর্থ এখন স্থানীয়ভাবে ব্যয় করে পর্যটকদের নিরাপদ বসার স্থান, টয়লেট, রোস্তোরা ও পানির ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া প্রাণীকুলের খাবার আহরণের জন্য প্রচুর পরিমানে ফলের গাছ লাগানোর পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করাসহ পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারকল্পে পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী দু’এক বছরের মধ্যে দেশের পর্যটন শিল্পে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান প্রথম সারিতে অবস্থান করবে।

ইসমাইল মাহমুদ মৌলভীবাজার ০১৭১৫১৭১৯৫০ ০১১৯৬১২৮৫১৩ ২৭.০১.২০১০ইং

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।