আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনের বাঘ যখন ঘরে- আমাদের "ভারতীয় কৃতজ্ঞতাবোধ সিন্ড্রম" ও চতুষ্পদীয় রচনাসমগ্র

ট্রুথ নট সেইড টুডে, কুড টার্ন টু আ লাই টুমোরো
ভারত- বাংলদেশ দ্বিপাক্ষীক বৈঠক, তার ফলাফল আর যৌধ বিবৃতির আলোচনায় সুসপষ্ট বিপরীত দুই পক্ষ দেখা গেল। পেপার-পত্রিকা, টক শো, ব্লগ সবখানে। সমস্যাটা হইল ভারত ইস্যুতে দুই পক্ষ আগেই হয়া ছিল। একদল কোন ভাবেই ভারতের সাথে কোন কিসিমের চুক্তি করতে রাজি না। বরং দেশ উলু ধ্বনিতে ভইরা যাবে,বিক্রি হইয়া যাবে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বরবাদ হইয়া যাবে, এইরকম একটা ধারনা প্রচারে সচেষ্ট।

আরে মিয়া, তোমার তিন দিকে ভারত। দরজা বন্ধ কইরা কয় দিন থাকবা? ম্যাপটা দেখো। ডানে বামে ব্যবসা বাণিজ্যের বাজারটা দেখ। আর হিন্দু ধর্মপ্রচারে ভারত সরকারের কোন আগ্রহ নাই। যার সাথে দেন দরবারে বসতেছেন...তার আগ্রহ কোথায় সেইটা জানা জরুরী।

উনাদের আগ্রহ বিদ্যুত, পেট্রোলিয়াম(মানে তেল-গ্যাস), ট্রানজিট, ব্যবসায়িক প্রভাব বিস্তার, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পারমানেন্ট মেম্বারশিপ পাওয়া...এইসবে। আরেক দল আছে,৭১ এর কৃতজ্ঞতাবোধ সিন্ড্রমে আক্রান্ত। ৭১ এর কৃতজ্ঞতা আইজো তাদের ভাষণের আগা পিছায় ঝইড়া পড়ে। তাই ভারতীয় কূটনীতিকরা আমাদের দালাল, চোর, জঙ্গি যা খুশি তাই বলার এখতিয়ার রাখেন। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রি চুপ থাকেন।

৭১ এর কৃতজ্ঞতা দেখানি ভদ্রতা অনেক হইছে। আমেরিকা যেমন সোভিয়েত মারতে আফগানদের বিলিয়ন ডলারের যুদ্ধাস্ত্র দিছে, সেরম সোভিয়েতরাও ভিয়েতনামিজদের সাহায্য দিয়া আমেরিকাকে শায়েস্তা করছে। কৈ...আফগানিস্তান বা ভিয়েতনামকে এত কৃতজ্ঞতায় গদগদ করতে দেখি না। বাস্তবতা বুঝেন। ভারত কোন দিনই আমাদের সাহায্য করতো না, যদি আমাদের "কমন" শত্রু পাকিস্তান না হইত।

সহজ স্ট্যাটেজিক্যাল হিসাব। ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে এইসব টাইনা ভারতরে আপার হ্যান্ড দেয়ার কোন মানে নাই। যাহোক ভারত- বাংলদেশ দ্বিপাক্ষীক যৌধ বিবৃতির আলোচনায় ১০ এর একটা স্কেলের উপরে মার্কিং করতেছি সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। যাতে ভারত- বাংলদেশ কার স্বার্থ কিরম রক্ষিত হইল তা পরিস্কার বুঝা যায়। আজকাল হুমায়ূন আহমেদ থিকা শুরু কইরা প্রথম আলোর মতিউর রহমান সবাই চতুষ্পদীয় রচনা লিখতেছেন এইবিষয়ে...তাই আমি একটু অংকের সাহায্য নিলাম।

১। ট্রানজিটঃ অনুচ্ছেদ ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ৩৩, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯। ট্রানজিট জিনিসটা বুঝার আগে ম্যাপটা দেখেন। বাংলাদেশের একদিকে ভারতের সাতটা স্টেট আছে, যাদের বলে Seven Sister States। মূল ভারতের সাথে এদের যোগাযোগ শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে।

এই চিকন শিলিগুড়ি করিডোর নেপাল আর বাংলাদেশের ফাকে। তাই এই ভৌগলিক সুবিধাকে কাজে লাগায়ে আমরা ভারতের কাছে স্থল ও জলবন্দর ব্যবহার করতে দিয়ে ভাল মুনাফা নিতে পারি। বিনিময়ে নেপাল, ভূটানে আমাদের পণ্য পরিবহনে সুবিধা চাইতে পারি। আবার ন্যায্য পানির হিস্যাও, শূন্য শুল্ক-সুবিধাও আদায় করা যেতে পারত। কিন্তু কি পাইলাম? নেপাল ভূটানে পণ্য নেয়ার সুসপষ্ট কোন পয়েন্ট দেখলাম না।

কিন্তু ভারত ঠিকি মংলা, চট্রগ্রাম বন্দর, to and from India through road and rail পণ্য পরিবহনে ইজাজত লেখায়ে পড়ায়ে নিল। ২৩ নং পয়েন্টটা পড়লে ভারতের আনকম্প্রমাজিং মনোভাব সুস্পষ্ট হয়। "23. It was agreed that Bangladesh will allow use of Mongla and Chittagong sea ports for movement of goods to and from India through road and rail. Bangladesh also conveyed their intention to give Nepal and Bhutan access to Mongla and Chittagong ports." প্রথম লাইনে "was agreed" বলে মংলা ও চট্রগ্রাম বন্দর ব্যবহারে বাংলাদেশের সম্মতি নেয়া হল। দ্বিতীয় লাইনে নেপাল ভূটানের বেলায় শুধু জানানো হইল "intention to give". নেপাল ভূটানে বিষয়ে একি কিসিমের ধোয়াশা রাখা হইছে ২৬ ও ৩৮ নং এ। আমরা এখনো দুইপাতা ইংরাজী পইড়া স্বাক্ষর দিবার মত লায়েক হইয়া উঠতে পারি নাই।

স্বীকার করেন? তাছাড়া একি সাথে জল ও স্থল ট্রানজিট দেবার মতো মেচিউরিটি কি এই প্রতিনিধি দলের ছিল? কোন এসেসমেন্ট করা হয়েছে কি? আমাদের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কিরম পড়বে? আমাদের ইনফারস্ট্রাকচার (রাস্তা, কাষ্টমস, নৌবন্দর) কতটা ক্যাপাবল এই বিশাল ট্রাফিক সামলাইতে? কিছুই করা হয় নাই! বাংলাদেশ- ২, ভারত- ৮ ২। ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণঃ যদিও এইটাকে প্রধানমন্ত্রী "সবচেয়ে বড় সাফল্য" হিসাবে প্রচার করতেছেন, তারপরেও আমি এইখানে বাংলাদেশ- ০, ভারত- ১০ পয়েন্ট দিব। আমরা কোন ঋণ সুবিধা নেয়ার জন্য আমরা ভারতে যাই নাই। বরং ভারত এইটা আমাদের গিলায়ে দিছে। কারন এইটার সুদের হার ১.৭%।

অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এই ঋণ দিলে সার্ভিস চার্জ দিতে হইত ০.৭৫%। তার উপরে এইটা ক্রেডিটরস লোন। মানে বাংলাদেশ রেলের ইঞ্জিন-বগি, সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপের উন্নয়ন, বাস ক্রয় এবং ড্রেজিং প্রকল্পের জন্যই শুধু এই ঋণের টাকা ব্যবহার করা যাবে। হয়ত শুধু ভারতীয় বাস, বগি, মেশিনারীই কেনার শর্ত দেয়া হবে। আগ বাড়ায়ে এরম একটা ফান্দে পা দেয়ার কোন মানে খুইজা পাচ্ছি না।

বাংলাদেশ-০, ভারত- ১০ ৩। তেল গ্যাস সমুদ্র সীমানাঃ সীমানা নির্ধারন নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয় নাই। জাতিসংঘে এইটার মীমাংসা হবে। এইটা ভাল হইছে। বাংলাদেশ- ৫, ভারত- ৫ ৪।

টিপাইমুখ বাঁধ ও নিষ্ফলা পানি চুক্তি সমূহঃ টিপাইমুখ বাধ বন্ধের কোন দাবিই জানায় নাই আমাদের প্রধানমন্ত্রী। টিপাইমুখ বাধের পক্ষে সাফাই গাইতে গাইতে তিনি দেশে আসছেন...আর আগের করা তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টনের সমস্যাগুলান নিয়া হাসিনা সরকারের কোন মাথাব্যথা নাই বইলা মনে হইল। বাংলাদেশ- ০, ভারত- ১০ ৫। আতংকবাদঃ সন্ত্রাসী ধরতে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু ভারতীয় সরকার ও মিডিয়া যে কথায় কথায় বাংলাদেশকে "আতংকবাদীদের আতুড়ঘর" প্রমাণে উইঠা পইড়া লাগছে...সেইখানে আমার আপত্তি।

আমরা আমাদের সবচেয়ে বড় জঙ্গিগুলানরে ধরছি, ফাসিও দিছি। ইন্ডিয়া কয়টা পারছে? বরং উনাদের জঙ্গিরাই আমাদের মাটিতে ঢুকছে... ধরাও পড়ছে। "আতংকবাদীদের আতুঁড়ঘর" দায়টা উনাদেরই দেশি, আমাদের না। বাংলাদেশ- ৫, ভারত- ৫ ৬। জাতিসংঘ ও অন্যান্যঃ সুকৌশলে জাতিসংঘে ভেটো পাওয়ার হবার জন্য ভারত আমাদের দলে টানছে ৪৮ নং অনুচ্ছেদে।

আমরাও বেকুবের মত কোন শর্ত না দিয়া "জ্বী হুজুর, সঙ্গেই আছি" জানায়া দিলাম। পানিবন্টন, সমুদ্র সীমানা ছিটমহল, বর্ডারে শতশত খুন...এত ঝামেলা যার সাথে তারে বিশ্বমোড়ল বানাইতে হাসিনা সরকারের এত আগ্রহের হেতু বুঝলাম না। বাংলাদেশ- ০, ভারত- ১০ ৭। ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতঃ ভারত নিজেই চরম বিদ্যুত সংকটে আছে। ইন্টারন্যাশাল এনার্জি এজেন্সীর হিসাব মতে, ২০৩০ সালে বিশ্বের মোট এনার্জি ডিমান্ডের ৫০% এর বেশি অংশ ভারত ও চীনের থাকবে।

সুতরাং ২৫০মেগাওয়াট, যা কিনা আমাদের বিদ্যুত ঘাটতির খুবি ছোট্ট একটা অংশ, ভারত আদৌ কেনার মতো দামে ছাড়বে কিনা সন্দেহ আছে। মানে দাড়াইলো, পুরাটাই ব্লাফ। বাংলাদেশ- ০, ভারত- ০ ৮। শূন্য শুল্ক-সুবিধাঃ এইটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। অনেক দিন থিকাই এই মূলা আমাদের নাকের সামনে ঝুলতেছে, কিন্তু ক্যান জানি খাইতে পারতেছি না।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য বাজার খুলে দিতে হচ্ছে। গত নভেম্বরে জেনেভায় জানুয়ারি ২০১০ থেকে বাজার খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ব্রাজিল। ভারতকেও একই ধরনের ঘোষণা দিতে হবে। কিন্তু দিল কৈ? বাংলাদেশ- ০, ভারত- ১০ ৯। বৃত্তিঃ ভারত সরকার আমাদের সরকারী চাকুরেদের কিছু বৃত্তি দিতে চেয়েছেন।

নিঃসন্দেহে তা কিছুটা হইলেও বাংলাদেশের অর্জন। বাংলাদেশ- ১০, ভারত- ০ ১০। ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারঃ বাংলাদেশের পক্ষে টিপসই দেয়ার জন্য এটা মুটামুটই ভাল একটা পুরস্কার। কি বলেন? যৌধ ঘোষণায় এইটা থাকলে আরো মজাক পাইতাম। অনেকেই ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে যাবে, ট্রাকের ড্রাইভারদের জন্য রাস্তার দুপাশে আমরা চটপটি বিক্রি কইরা অনেক পাইসা কামাব...এইরম সুখচিন্তায় জনগণরে অস্থির কইরা ফেলাইতেছেন।

আবার মতিউর রহমান, হুমায়ূন আহমেদরা মনের বাঘ শিকার করতে কলম হাতে নামছেন। এদিকে "মনের বাঘ যে ঘরে" ঢুইকা গেছে সেদিকে খেয়াল নাই। বাংলাদেশের পক্ষে আলোচনায় অংশগ্রহনকারী দলটি দেশ ছাড়ার আগে কি কি ইস্যুতে বাংলাদেশ দেনদরবার করবে...তা কি প্রকাশ করেছিল?---না। ব্যবসায়ী, ডিফেন্স স্পেশালিস্ট, পাওয়ার সেক্টরের কনসাল্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার কি প্রধানমন্ত্রীকে বিফিং করেছিলেন-?-- না। সরকারের বিগত ১ বছরে ট্রানজিট বিষয়ে কোন মন্ত্রাণালয় কি কোন রকমের নিরিক্ষা চালিয়েছে?--- না।

এর মানে বাংলাদেশের স্বার্থ সম্পর্কে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ওয়াকিবহাল ছিলেন না। চুক্তির প্রতিটি লাইন ভারতের লিখা এবং পূর্ব নির্ধারিত। হয়তো ব্যাপারটা ইলেকশনের পূর্বেই মীমাংসা হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের প্রবল জনপ্রিয়তার পূর্ণ স্বদব্যবহার করল ভারতের কূটনিতীকরা। দূর্দান্ত মাস্টার প্লান।

মোট ফলাফলঃ বাংলাদেশ- ২২, ভারত - ৫৮ কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ The Daily Star: 2010-01-13. Full text of jt communiqué শওকত হোসেন মাসুমঃ ভারত থেকে ঋণ নয়, বাণিজ্য সুবিধা পাওয়া বেশি প্রয়োজন মতিউর রহমান | তারিখ: ২২-০১-২০১০। মনের বাঘ তাড়াতে হবে ব্লগারঃ একান্ত কথা। "কৃতজ্ঞতাবোধ সিনড্রম" ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ব্লগারঃ পি মুন্সি হাসিনার ভারত সফর: যৌথ ঘোষণার সুক্ষ কারচুপি
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.