আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাড়াহুড়ার কুফল!!

www.alkawsar.com

প্রাচীন কালের কথা। জাপানে ছিলেন শগন নামের এক রাজা। রাজ্যের ধন-সম্পদ, অর্থকড়ি দেখভালের জন্য একজন যোগ্য কর্মচারীর দরকার হল তার। রাজ্যের ধন-সম্পদ আর টাকাকড়ি ছিল প্রচুর। সেগুলোর হিসাব নিকাশ রাখাও ছিল কঠিন কাজ।

এ কঠিন কাজ করার মতো যোগ্য লোক কিভাবে বাছাই করা হবে-এ সমস্যায় রাজা হিমশিম খেতে লাগলেন। ঘোষণা শুনে বহু লোক রাজদরবারে এল আর গেল। তাদের মধ্য থেকে তিনজনকে প্রথমে বাছাই করা হল। এরপর এদের মধ্য থেকে যোগ্যতম লোকটিকে বেছে নেওয়ার জন্য রাজা সে দেশের একজন বৃদ্ধ বিচারক ওকাকে দায়িত্ব দিলেন। বিচারক ওকার বিচারবুদ্ধির কথা চারদিকে সবাই জানত।

ওকাকে ডেকে রাজা শগন বললেন, ‘এই তিনজনের প্রত্যেকের পরীক্ষা নিবে গোপনে। পর্দার আড়াল থেকে আমি সেটা শুনব। ’ বুদ্ধিমান ওকা বললেন, যোগ্যতম লোক বাছাইয়ের ব্যাপারে আমি পূর্ণ বিশ্বস্ততা বজায় রাখব। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আপনার কথামতোই সব হবে।

চাকুরিপ্রার্থী লোক তিনজনই সামনের ঘরে বসে অপেক্ষা করছিল। ওকা তাদের তিনজনকে এক সঙ্গে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, ‘রাজা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমি যেন তোমাদের পরীক্ষা নেই। ’ তারপর প্রথম চাকুরিপ্রার্থীকে ওকা প্রশ্ন করলেন, আটকে তিন দিয়ে পূরণ করলে ফল কী হবে?’ চাকুরিপ্রার্থীটি মনে করেছিল কোনো দীর্ঘ ও জটিল প্রশ্ন করা হবে। অথচ এটা কোনো প্রশ্ন হল? এর উত্তর তো ছয় বছরের শিশুও দিতে পারে। অপ্রত্যাশিত এই সহজ প্রশ্ন শুনে সে চট করেই বলে দিল-চব্বিশ।

ওকা এরপর দ্বিতীয় চাকুরিপ্রার্থীকে প্রশ্ন করলেন, উনপঞ্চাশকে সাত দিয়ে ভাগ করলে কী ফল হবে?’ প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই চাকুরিপ্রার্থী উত্তর দিল-সাত। ’ এরপর এল তৃতীয় চাকুরিপ্রার্থীর পালা। ওকা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, দু’শকে দুই দিয়ে ভাগ করলে ফল কী হবে?’ তৃতীয় চাকুরিপ্রার্থী প্রথমে প্রশ্নটা মনোযোগ দিয়ে শুনল। তারপর নিজের ঝোলা থেকে প্রাচীন যুগের গণনার যন্ত্র বের করল। সংখ্যা গণনার জন্য কাঠের একটি ফ্রেমের মধ্যে বিভিন্ন তার লাগিয়ে সে তারগুলোতে মোতির দানা বসিয়ে প্রাচীন কালে যন্ত্রটা বানানো হত।

সে যন্ত্রের মোতির দানা গুনে গুনে প্রশ্নের সমাধান বের করতে লাগল। এদিকে দ্বিতীয় চাকুরিপ্রার্থী তার দিকে অবাক হওয়া চোখে তাকিয়ে রইল আর ভাবল, হয়ত ভয়ে আর উদ্বেগে বেচারা সব হিসাব ভুলে বসে আছে। কত বড় আহম্মক! অন্যদিকে বেশ কিছুক্ষণ পর হিসাব-নিকাশ শেষ করে মাথা উঠিয়ে তৃতীয় চাকুরপ্রার্থী বলল, একশ। ’ বিচারক ওকা তখন স্মিত হেসে বললেন, আমি এটাই দেখতে চেয়েছিলাম। ’ এ কথা বলে তিনি তিন চাকুরিপ্রার্থীকে বাইরে যেতে বললেন।

পর্দার আড়াল থেকে তখন রাজা বের হয়ে এসে বললেন, ওকা! তুমি কাকে নির্বাচন করলে?’ ওকা বললেন, তৃতীয়জনই সবচেয়ে উত্তম। প্রথম ও দ্বিতীয়জন তাড়াহুড়া করে তাদের অভ্যাস প্রকাশ করে দিয়েছে। তারা চিন্তা করে দেখতে চায়নি, প্রশ্নের পেছনে আসল কৌশলটা কী থাকতে পারে। যখন তৃতীয় চাকুরিপ্রার্থী বুঝে গেল যে, আমি তাদের অভ্যাস পরীক্ষা করছি তখনই সে ধীরে সুস্থে চিন্তা-ভাবনা করে উত্তর দিয়েছে। এ ধরনের সতর্ক ও বুদ্ধিমানরাই রাজ্যের অর্থভাণ্ডারের যথার্থ রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে।

ওকা যা বলেছিলেন পরে তাই বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছিল। তৃতীয় চাকুরিপ্রার্থীই রাজ্যের ধনভাণ্ডার ভেবে চিন্তে কাজে লাগিয়েছে। ঠিকঠাক মতো দায়িত্ব পালন করেছে। সুত্রঃ জাপানী লোককাহিনী গল্প (অনুবাদ)।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।