আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুজিবকন্যা চিরকালই ভারতপন্থী : কলকাতার দেশ পত্রিকার রিপোর্ট



‘মুজিবকন্যা চিরকালই ভারতপন্থী’। বাংলাদেশের মসনদে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার পুনরাগমন ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে। ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার বিভিন্ন কর্মসূচি ভারতের পক্ষেই লাভজনক হয়েছে। হাসিনার কাছে ভারত চিরকালই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। হাসিনার সঙ্গ ছাড়তে চায় না দিল্লি।

তাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে ভারতের কূটনৈতিক কার্যকলাপের সিংহভাগ। তার ভূমিকা নয়াদিল্লির অবস্থানকে মজবুত করবে। উলফা চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াকে ঢাকার কাছ থেকে ‘অপ্রত্যাশিত উপহার’ হিসেবেই পেয়ে গিয়েছে নয়াদিল্লি। —প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর শেষে কলকাতা থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক দেশ-এর এক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে। দেশ-এর ১৭ জানুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত এ রিপোর্টে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঐতিহাসিক ও সমঝোতার সফর বলে উল্লেখ করা হয়।

‘নতুন অধ্যায়ের সূচনা। হাসিনার ভারত সফর ঘিরে পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে দু’দেশের সম্পর্ক’ শিরোনামে পুষ্পল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই রিপোর্টে চীন এবং পাকিস্তানকে ‘সন্দেহজনক’ প্রতিবেশী হিসেবে অভিহিত করা হয়। বলা হয়, এই দুই প্রতিবেশী নিয়ে নয়াদিল্লির মাথাব্যথার অন্ত নেই। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী প্রক্রিয়াকে একটি উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের অন্যতম সঙ্কল্প। বিস্তারিত রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়, ঐতিহাসিক সফর এবং সমঝোতা, শেখ হাসিনার ভারত সফর, একাধারে দ্বৈত ভূমিকা পালন করছে।

নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মসনদে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার পুনরাগমন এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে। ‘মুজিবকন্যা চিরকালই ভারতপন্থী’। এই মর্মে তার দিকে বহু সমালোচনা ধেয়ে এসেছে। এমনকি শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সফরকে ‘ব্যর্থ’ হিসেবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল ‘বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি’। কিন্তু হাসিনা পিছু হটছেন না।

সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক বিষয় নিয়ে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। মণিপুরের টিপাইমুখে বরাক নদীর ওপর বাঁধ তৈরি নিয়ে আপত্তি ছিল বাংলাদেশের। সেই কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তিস্তা নদীর জলবণ্টনের বিষয়টির ওপরেও। তিস্তার প্রবাহ কমে যাওয়ায় নিদারুণ জলসঙ্কটের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

ভারতীয় কূটনৈতিক মহলের হাবভাবেই পরিষ্কার, সে দেশের সঙ্কটজনক পরিস্থিতির সমাধান করতে তারা আগ্রহী। এরই পাশাপাশি আছে বাংলাদেশের বিদ্যুত্ ঘাটতির সময়ে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি। ১০০ কোটি ডলার অর্থ সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে ভারত। দু’দেশের মানুষকে আরও কাছে আনতে ভারত-বাংলাদেশ ২০১১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী একসঙ্গে উদযাপন করবে। অর্থাত্ সমঝোতার রাস্তাটিকে সুগম করতে চেষ্টার কোনও কসুর করছেন না ভারতের কূটনৈতিক মহল।

অরবিন্দ রাজখোয়াকে নয়াদিল্লির হাতে তুলে দেয়ার ভূয়সী প্রশংসা করা হয় রিপোর্টে। এতে বলা হয়, উলফা চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াকে ঢাকার কাছ থেকে ‘অপ্রত্যাশিত উপহার’ হিসেবেই পেয়ে গিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বারবার ব্যবহৃত হয়েছে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, চোরাচালানের মতো গর্হিত কাজে। সুতরাং সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ যদি কড়া পদক্ষেপ নেয়, লাভ হবে নয়াদিল্লিরই। অন্তত একটি বিশেষ এলাকা বরাবর সন্ত্রাসবাদী গতিবিধি বন্ধ করতে সফল হবে ভারতের কূটনৈতিক মহল।

তাছাড়া অনেক অপরাধীকে প্রত্যর্পণ করার প্রতিশ্রুতিও বাংলাদেশের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার বিভিন্ন কর্মসূচি ভারতের পক্ষেই লাভজনক হয়েছে। যেমন—বাংলাদেশের মাটিতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর ঘাঁটিকে ভেঙে দেয়া। ভারতকে তাদের বিভিন্ন বন্দর ব্যবহার করার প্রতিশ্রুতি দিলেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কার্যকর ভূমিকাই ভারতের কাছে বেশি কাম্য। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে এই অনুপ্রবেশের বিষয়টিকে আমল দিলে ভালো করবে দু’পক্ষই।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর অনুপ্রবেশ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। নজরদারি এড়িয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে অনায়াসে এপার-ওপার করছে চোরাচালানকারী, সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা। সুতরাং এ বিষয়ে সুষ্ঠু নীতি থাকলে দু’দেশের সীমান্ত হবে শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ। বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়ে ভারতবিরোধী কাজকর্ম করতে দেবেন না তিনি, হাসিনার এ ঘোষণা নয়াদিল্লির কাছে স্বাগত। রিপোর্টে বলা হয়, শেখ হাসিনার সফর ঘিরে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনার জন্য কৃতিত্ব অনেকাংশেই মুজিবকন্যার।

বাংলাদেশের সমর্থনের অভাবে নয়াদিল্লির কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু সেই আশঙ্কা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। হাসিনার কাছে ভারত চিরকালই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল তার হাতে তুলে দিলেন শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ এবং উন্নয়নের জন্য ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার ২০০৯। ১৯৭৫ সালে একটি সামরিক অভুত্থানে পরিবারের বহু সদস্যকে হারানোর পর দেশের মাটিতে পা রাখতেও অপারগ ছিলেন হাসিনা।

সেই সময় তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেন ইন্দিরা গান্ধী। দিল্লিতে ছ’বছর কাটান তিনি। হাসিনা স্বীকার করেছেন, মার মতোই ভারতীয় ভূখণ্ড আশ্রয় দিয়েছিল তাদের। তার এই বক্তব্যেই ধরা পড়ে এদেশের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা, অনুরাগ। হয়তো রাজনীতিতে আবেগের স্থান নেই।

কিন্ত হাসিনার সঙ্গ ছাড়তে চায় না দিল্লি। তাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে ভারতের কূটনৈতিক কার্যকলাপের সিংহভাগ। ভবিষ্যতে উপমহাদেশের রাজনীতিতে নয়াদিল্লির অবস্থানকে যা মজবুত করবে। Click This Link


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।