আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণিত বিষয়ক ফিকশান: পিঁপশঙ্কের রাজ্যাভিযান (পর্ব ১)

শ্রদ্ধা আর মমতাই তোমাকে জয়ী করতে পারে; তুমি তোমার জ্ঞান প্রয়োগ কর।
[১] শুনশান নীরব দুপুর, ১৫ ই জানুয়ারি ২০১০ মেঘনা-তিতাসের বাঁক, কাশবনের ধার, গ্রামের জংলা ঝোঁপ প্রিইইই... তীক্ষ্ণ চিৎকারে হঠাৎ ভেঙে পড়ে নীরবতা। ক্ষীণতর হয়ে গেল নদীর কুলকুল ধ্বনি, ঝরা পাতার মচমচ শব্দ, কাশবনের সরসর দোল। চমকে উঠে ফারিন, দ্রুত চোখ বোলায় চারপাশে। কিন্তু না, চোখে পড়ছে না কিছুই! প্রিইইই..., এবার আরো জোরালো হলো শব্দ, আরো কাছ থেকে আসছে মনে হলো।

"এগুবে না, এগুবে না আর! দেখতে পাওনা, একেবারে গায়ের উপর এসে পড়লে যে!" পায়ের দিকে এবার তাকায় ফারিন। দৃশ্য দেখে হাসি চেপে রাখতে পারে না কোনো মতেই: শুঁড় আর সামনের দু'টি পা উঁচু করে যুদ্ধংদেহী ভঙ্গিতে মুষ্ঠিযোদ্ধার মতো দাঁড়িয়ে একটি পিঁপড়া। "ভয় পেয়ো না, আমি তোমাকে মারব না। সত্যি বলতে কী, পিঁপড়াদের খুবই ভালোবাসি আমি। " আশ্বাস দেয় ফারিন।

"আমার নাম পিঁপশঙ্ক—পিঁপ অশঙ্ক, মানে অদম্য সেই পিঁপড়া শঙ্কা জানে না যে। ভয় আমি পাইনি মোটেও, কিন্তু তোমরা যদি কাউকে ভালোই বাস, তাহলে তার সাথে কীভাবে উদ্ধত অবজ্ঞার আচরণ করো?" "এর মানে কী, পিঁপশঙ্ক? অবাক হয় ফারিন। "এই যে বললে পিঁপড়াদের ভালোবাস তুমি। তাহলে জমিনের উপর দিয়ে এভাবে সংবেদনহীন, অসতর্কভাবে কীভাবে হেঁটে যেত পার? আমি তোমাকে না দেখলে এবং চিৎকার না করলে তো পিষেই ফেলছিলে!" ক্ষোভে-মেশানো কণ্ঠ পিঁপের। "আসলেই আমার ভুল হয়েছে, আর এরকম হবে না কখনো।

" অনুতপ্ত গলায় জবাব দেয় ফারিন। "আমার নাম ফারিন, আলোকিত ও অভিযানপ্রিয়। আমি তোমার বন্ধু, পিঁপ। " বলতে বলতে পিঁপশঙ্ককে হাতে তুলে নেয় সে। হাসি ফুটে উঠে পিঁপের ঠোঁটের কোণ, শুঁড় বাড়িয়ে স্পর্শ করে ফারিনের হাতের তালু।

"ধন্যবাদ তোমাকে। " "তুমি কী করছিলে?" ফারিনের প্রশ্ন। "আমি একজন অনুসন্ধানী পিঁপড়া, বেরিয়েছি আমার গোত্রের জন্য নতুন রাজ্য খুঁজতে। " "নতুন রাজ্য কেন? আগের রাজ্য কি ধ্বংস হয়ে গেছে?" "না, ধ্বংস হয়নি। ঐ যে, পাকুড় গাছটা দেখছ, তার পাশে আমাদের বর্তমান রাজ্য।

কিন্তু আমাদের জন্যসংখ্যা বেশ বেড়ে গেছে তো, শিশুদের ভালোভাবে বেড়ে উঠার জন্য নতুন, প্রশস্ত এলাকা দরকার। " "ওখানেই নতুন বাসা বানিয়ে নাও না কেন তোমরা?" "আমরা তোমাদের মতো অবিমৃষ্যকারী নই যে সবাই রাজধানীর দিকে ছুটব আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকব। " মানুষের বোকামির কথা ভেবে উষ্ণ হয় পিঁপের কণ্ঠ। "জনসংখ্যার সাথে আমাদের বাসস্থানের আকারের সুনির্দিষ্ট একটি আনুপাতিক সম্পর্ক রয়েছে। জীবনের সুষ্ঠু বিকাশে অনুপাতটি আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই কষ্ট হলেও প্রয়োজনে খোলামেলা রাজ্যের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ি আমরা।

আমার মতো আরো অনেক স্কাউট বেরিয়েছে চারদিকে, তবে আশা করছি সবার আগে আমিই ভালো একটা জায়গার সন্ধান পেয়ে যাব। " হাসিতে উদ্ভাসিত হয় পিঁপের মুখ। "কীভাবে রাজ্য খুঁজ তোমরা আমি দেখব। " অনুরোধ করে ফারিন। "আচ্ছা, হাত থেকে নামিয়ে দাও আমাকে।

তারপর আমার পেছন পেছন আস। " হাতের তালু থেকে পিঁপশঙ্ককে নামিয়ে দিল ফারিন। এগিয়ে যেতে থাকে অদম্য সেই পিঁপড়া শঙ্কা জানে না যে। বেশ অনেক ক্ষণ হাঁটার পর বিশাল এক অশ্বত্থ গাছের পাশে শক্ত লালমাটির একটি ঢিবি দেখতে পায় পিঁপ। তার ধার বেয়ে তরতর করে উপরে উঠে সে, তারপর হঠাৎই দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়।

"পিঁপ, পিঁপ, পিঁপশঙ্ক! কোথায় গেলে তুমি?" চিৎকার করে ডাকে ফারিন। প্রায় দু'মিনিট পর পিঁপের শুড় দেখা যায়, দুর্বাঘাসের আড়ালে একটি গর্তের মুখে। "সম্ভাব্য রাজ্য দেখে এলাম একটা, ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা করলাম তার চারপাশটা। " হাসে পিঁপ। "তুমি তো দেখলাম গর্তের ভেতর ঢুকলে।

অন্ধকারে আবার কী পরীক্ষা করলে, কীভাবেই বা করলে!" বেশ অবাক হয় ফারিন। "হ্যাঁ, ভেতরটা একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার, আলকাতরার মতো কালো। তবে আমরা তো আর চোখে দেখে কোনো জায়গার আয়তন হিসেব করি না, স্পর্শ করে করে আয়তন বের করি। " রহস্যময় ভঙ্গিতে শব্দ করে হাসে পিঁপ, চোয়াল প্রশস্ত হয় তার। ফারিনের কাছে আসে পিঁপশঙ্ক।

তারপর ঘুরে আবার রওয়ানা দেয় গর্তের দিকে। "আরে, আরে, কোথায় যাচ্ছ আবার?" অবাক হয়ে প্রশ্ন করে ফারিন। "আমার কাজ শেষ হয়নি তো এখনও, গর্তে ঢুকতে হবে আরেকবার। তারপরই আয়তনের হিসেব শেষ হবে। " "ঘাসের ভেতর তো অনেক গর্ত, আগের গর্ত চিনতে পারবে?" "গর্তের দেয়াল ঘেঁষে আমার শরীর থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থের একটা পথ বানিয়ে এসেছি, যাকে বলে ফেরোমোন ট্রেইল।

আমাদের প্রত্যেক স্কাউটেরই রয়েছে যার যার নিজস্ব ফেরোমোন ট্রেইল বানানোর ক্ষমতা, একটির সাথে অন্যটির ঝামেলা হয় না কখনো। গন্ধ শুঁকে আমার সঠিক গর্তটি ঠিকই বের করে ফেলব। " পিঁপের কণ্ঠে দৃঢ় প্রত্যয়। ঘাসের ভেতর হারিয়ে যায় পিঁপ। এবার বেশ অনেকটা সময় পর বেরিয়ে আসলো সে, মুখের হাসিটি আরো বিস্তৃত হয়েছে তার।

"পছন্দ হয়েছে জায়গাটা, হিসেব করলাম আয়তন। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, আর চারপাশের বিন্যাস সব মিলিয়েও চমৎকার। যাই, সবাইকে নতুন রাজ্যের খবর দিয়ে আসি। " "কিন্তু তোমার মতো আরো অনেকেই হয়তো এরকম নতুন রাজ্যের সন্ধান নিয়ে যাবে, তাই না? কারটা চূড়ান্ত হবে?" "হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ, ফারিন। আর আমরা পিঁপড়ারা গণতান্ত্রিকও বটে।

আমি এখন বেশ কয়েকজনকে রিক্রুট করব জায়গাটা দেখার জন্য, তারাও সেটি পরীক্ষা করে দেখবে। যার রাজ্য সবচেয়ে বেশি পিঁপড়ার পছন্দ হবে, সেটিই নির্বাচিত হবে নতুন নিবাস হিসেবে। " "কিন্তু ঠিকমতো বাসায় পৌঁছতে পারবে তো তুমি?" ফারিন প্রশ্ন। "হ্যাঁ," মাথা ঝাঁকায় পিঁপ, "বাসা থেকে এ পর্যন্ত আমি ৩৩,০০০ কদম এসেছি। গুণে গুণে ঠিকই বাড়ি ফিরে যেতে পারব।

" তারপর একটু বিষণ্ণ যেন হয় পিঁপের স্বর। "আচ্ছা, যাই তাহলে, পরে কথা হবে। খুব ভালো লাগল তোমাকে দেখে। ও হ্যাঁ, বাড়ি যাবার সময় একটু সাবধানে, নিচের দিকে তাকিয়ে যাবে কিন্তু। " অনুরোধ করে সে।

মৃদু হাসল ফারিন, "হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু নতুন রাজ্যের আয়তনটা কীভাবে বের করলে, বলো না?" "এটি তোমার জন্য একটি ধাঁধা," দুষ্টু হাসি হাসে পিঁপ, "পরের বার যখন দেখা হবে, উত্তরটা জানাবে আমাকে। " "ওহ," একটু মনমরা হয় যেন ফারিন, কিন্তু পিঁপের মায়াকাড়া দুষ্টু চেহারা দেখে হেসে ফেলে, "আচ্ছা। " ক্রমশ
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.