আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৪ টি বসন্তের পর



২০০৯ এর মধ্যভাগে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ বাজারের একটি ফটোস্টুডিও তে বেশ কয়েকটি ছবি দেখে মেয়েটিকে ভালো লাগে। তারপর মেয়েটির নাম,পরিচয়, অবস্থান, মন-মানসিকতা জানার নিরন্তর প্রচেষ্টা। পরে জানা হয় তার সব কিছু। এক পর্যায়ে মেয়েটির সাথে যোগাযোগ স্থাপন। গত ঈদ উপল্েয হাছন নগরস্থ উপতক্যা এলাকাবাসীর উদ্যোগে স্থানীয় একটি শিল্পী গোষ্ঠীর আয়োজনে একটি ওপেন কনর্সাটে বক পয়েন্টে চ্যানেল আইয়ের সেরাকন্ঠ আশিকের গানের অনুষ্ঠানে ২২ সেপ্টেম্বর মেয়েটিকে প্রথম চাুস দেখা।

পরণে কালো রংয়ের জামা ও চুরিধার। একটু পরপর ঘর থেকে বের হয়ে এসে কিছুণ অনুষ্ঠানে অবস্থান করে। আবার ঘরের ঘরের ভেতরে চলে যায়। এভাবে কাটে প্রায় ২/৩ ঘন্টা সময়। এক পর্যায়ে মেয়ের বন্ধুর মাধ্যমে মোবাইল কনফারেন্সে মেয়েটির কথোপকথন শুনা।

এ রকম ঘটনা ৩/৪ দিন ঘটে। পরে বন্ধুটি সরাসরি কথাবলার জন্য স্বেচ্ছায় মোবাইল নাম্বার দেয়। ফোন করবো কি করবো না ভেবে ভেবে ৭ দিন কেটে যায়। সাহস করে আরিয়ান মিডিয়ার ছাঁদের এক কোনে দাঁড়িয়ে থেকে মেয়েটির সাথে ৪৫ মিনিট টানা কথা বলা। পরে আমার একজন সিনিয়র বন্ধু মেয়েটি কে সুনামগঞ্জ শহরের তৎকালীন নন্দন ফাস্টফুডে আসার জন্য আমন্ত্রন করেন।

বান্ধবী কে নিয়ে নন্দনে আসে। তখন সন্ধ্যা। নন্দনে মেয়েটি প্রায় ১ ঘন্টা অবস্থান করে। সে রাত পৌঁনে ৮ টার দিকে রিক্সা করে বাসায় চলে যায়। তারপর ২৫ হাজার মিনিট ননস্টপ কথা বলা।

মেয়েটি শুধু ছেলেটিকে মিসকল দিতো। ছেলেটি ফোন ঘুরিয়ে কথা বলতো। ৩/৪ রাত ১২ টার পর ভোর ৫ টা ৭ টা পর্যন্ত টানা কথাবলা পর্ব চলে। মেয়েটি কে বিশ্বাস করে ছেলেটি তার জীবনের সব কথা বলে। কিন্তু মেয়েটি চাপা স্বভাবের ছিলো।

মেয়েটি শুধু শুনে যেতো কথোপকথনের ফাঁকে ফাঁকে উঁ,হ্যাঁ,অয়,হে শব্দাবলীর ব্যবহার করতো। মেয়েটির সংগে ক্রমশ গভীর সখ্যতা গড়ে ওঠে ছেলেটির। তার সাথে দীর্ঘ সময় কথা বলার পর বুঝা যায়। বাবা মারা যাওয়ার পর সে টানা বিষন্নতার মধ্যে দিনযাপন করতে থাকে। বিগত ২/ ৩ বছর সে বিষন্নতায় আক্রান্ত ছিলো।

সারাণ মুখ ঘোমরা করে গালে হাত, কখনও মাথায় হাত দিয়ে বিরস বদনে বসে সময় পার করতো। স্থানীয় নিবন্ধন অফিসে পার টাইম কাজ করার সময় নিজের সব দুঃখ কষ্ট কে চাপা দিয়ে নীরবে ভলিউম বইয়ের পাতায় বুদ হয়ে সকাল থেকে শেষ বিকেল পর্যন্ত লিখে যেতো। সারা দিনমান কঠোর পরিশ্রম করে বাসায় যেয়ে আবার ঘর সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছেলেটির সাথে মোবাইলে কথা বলতো। কিন্তু ছোট ভাই ঘরে এলে লাইনটি কেটে দিতো। ঘরের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে বলতো “ভাই আইছে, অখন রাখি দেই, পরে কথা কথা কইমু নে”।

ভাই ঘর থেকে চলে গেলে আবার চলতো কথা বলা। কিন্তু মেয়েটি তার ছোট দুবোনের সামনে ছেলেটির সাথে অনায়াসে কথা বলতো। ধনাঢ্য পিতৃহীন পরিবারের ৪ ভাইবোনের মধ্যে মেয়েটি বড়, ভাইটি তৃতীয়। যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকার পরও পারিপার্শ্বিক কারণে মেয়েটির পরিবার কাকাদের উপর নির্ভরশীল। যারা সবসময় তাদের পিছনে লেগে থাকতো।

মেয়েটির বাবা মারা যাওয়ার শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আপন কাকা মেয়েটির বয়স এবং বিয়ের কথা নিয়ে নানান কূটুক্তি করে। কাকাদের এরকম আচরনের ফলে মা,মেয়ে মানসিক আঘাত পায়। সেই সাথে অনেকটা বিমর্ষ হয়ে পড়ে। এভাবে শাঁখের করাতের আঘাতে তবিত মা,মেয়ের মতামতের কোন দাম থাকেনি সংসারে। হঠাৎ একদিন মেয়েটি মোবাইলে মেসেজ দিয়ে ছেলেটিকে বলে “তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না আমি”।

কিন্তু কাকাদের প্রচন্ড চাপের মধ্যে পড়ে মা মেয়েটি কে বলে “তুই যদি আমাদের সবাই কে কষ্ট দিয়ে তোর পছন্দের ছেলের কাছে যেতে চাস, তবে যা আমরা তরে তার হাতে তুলে দেব” আর এ ঘটনার নেপথ্যের নায়ক থাকে মেয়েটির একজন সুদখোর কাকা, উচ্চাবিলাসী বোনসহ তাদের পরিবারের আরও অনেকেই। এ অবস্থায় মেয়েটি ছেলেটিকে এসএমএস করে “তুমি যদি আমাকে একটুও ভালোবাসো তবে আমাকে ভুলে যাও কারণ আমি অসহায়”। মেয়েটির পরামর্শে তার কাকাদের সামাজিক ভাবে রাজী করানোর জন্য শহরের গণ্যমান্য বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের দ্বারস্থ হয়। তারাও ব্যর্থ হন তাদের নানান টালবাহানার কাছে। এক পর্যায়ে ছেলেটি মেয়েটিকে বলে “তোমার জন্য জন্ম জন্মান্তরের অপোয় রইবো আমি”।

অবশেষে পরিবারিক অনুগত্য মেনে নিয়ে মেয়েটি সিলেটে চাকুরীরত জনৈক সরকারী চাকরের গলায় বরমাল্য দিতে যাচ্ছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।