আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাফল্য, এবং দর্শনের সান্ত্বনা

ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোটো সে তরী!

১ সম্প্রতি সচলায়তনে একটি লেখায় ('আপনার বেতন কত?') এক মন্তব্যকারীর এমবেড করা ইউটিউব ভিডিও দেখে ব্যাপক আগ্রহ জাগলো এ্যালেইন ডি বটন (বটন একটি স্প্যানিশ শহর; আমার জানামতে উচ্চারণ বতঁ হওয়ার কথা নয়)সম্পর্কে জানার। বটনের ওই ভিডিওটি ছিল 'সাফল্য' নিয়ে। আধুনিক সমাজে 'সাফল্য' খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সদা-উপস্থিত একটি চলক। কিন্তু সাফল্য প্রত্যেকের কাছেই ভিন্ন, এবং একই মানুষ জীবনের একেক পর্যায়ে হয়তো সাফল্যকে একেকভাবে ব্যাখ্যা করবে। দ্রুতগতির আধুনিক সমাজ সাফল্য অর্জনের জন্য আমাদের সবার উপরই চাপ সৃষ্টি করে।

যত উন্নত সে সমাজ, যত ব্যক্তিকেন্দ্রিক সে সমাজ, চাপ তত বেশি। বটন তাঁর আলোচনায় বলেছেন ব্যক্তিকেন্দ্রিক, জটিল (কমপ্লেক্স) পশ্চিমা সমাজগুলোতে এ চাপের কারণে সৃষ্ট নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা, যেমন আত্মহত্যার বর্ধিত হার, যা কিনা এসব সমাজগুলোতে তুলনামূলকভাবে অনুন্নত সমাজগুলো থেকে বেশি। ২ বটনের সাফল্যের সংজ্ঞাটা অনেকটা নিজকেন্দ্রিক, মনোবিজ্ঞানে যাকে বলে ইন্টারনাল লোকাস অফ কন্ট্রোল-ভিত্তিক। তিনি ব্যক্তির ফুলফিলমেন্টের মাধ্যমে সাফল্য অর্জনে বিশ্বাসী। নিজেকে এনরিচ করার উদ্দেশ্য নিয়ে বটন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন।

সম্প্রতি বটনের এরকম একটি বই পড়া শুরু করলাম। বইটির নাম 'দ্য কনসোলেশনস অফ ফিলোসফি', বা 'দর্শনের সান্ত্বনা'। এই বইটি লেখার তিন বছর আগে বটন আরেকটি বই লিখেছিলেন: "হোয়াট মারসেল প্রাউস্ট ক্যান টিচ ইউ এবাউট লাইফ' - 'মারসেল প্রাউস্ট জীবন নিয়ে আপনাকে কি শিক্ষা দিতে পারে'। বইটির সাফল্য বটনকে এই বইটি লিখতে আগ্রহ যোগায়। ব্যক্তিগতভাবে দর্শনের বিশাল ভক্ত আমি, কিন্তু দুনিয়ায় তো দার্শনিকের অভাব নাই।

তাছাড়া, দার্শনিকেরা সহজ ভাষায় কোন কিছু ব্যাখ্যা করার জন্য খুব একটা নামকরা নন। নীটশে পড়ে আনন্দ পেলেও, শোপেনহয়ার পড়ে আমার 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি' অবস্থা। ভিটগেনস্টাইন আর ফয়েরবাখ সম্পর্কে না হয় কিছু না-ই বললাম। যাই হোক, পড়ার ঝামেলার চেয়ে বড় কথা কত পড়বো? প্লেটো, সেনেকা, ডায়োজেনেস, হেগেল আমার কিছুই পড়া হয় নি, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও। আধুনিক পশ্চিমা দর্শন কিছুটা পড়া হলেও মোটামুটি এদিক সেদিক থেকে খাবলা দিয়েই; ডেকার্ত থেকে কিয়ের্কেগার্দের জিস্টটাই কেবল।

ক্যান্ট-Rand-দের সম্পর্কে তো খালি সেকেন্ডারি সোর্স থেকেই পড়া হল। তবে এখানে নরওয়ের হোস্টেইন গার্দারকে একটা ধন্যবাদ না দিয়ে পারছি না - তার 'সোফিস ওয়ার্ল্ড' বইটা বেশ উপকারী ছিল। পড়া হলে তবেই না শিক্ষা গ্রহন করার কথা। দর্শন থেকে কিছু শেখা, সেটা সবসময়ই ছিল একটা বিশাল উদ্দেশ্য; ধাঁধাঁয় পড়ে যাই এটা ভেবে যে দার্শনিকরা এই সহজ কাজটি কিভাবে এত কঠিন করে ফেললেন! আর শিক্ষা কেবল একাডেমিক শিক্ষা নয়, জীবনবোধমূলক হলে তো আরো ভাল। সে কাজটাই করে দিয়েছেন আমাদের এই বটন সাহেব।

ধন্যবাদ না দিয়ে কই যাই? ৩ যথারীতি, আমি বই পড়া শেষ করার আগেই বই নিয়ে লিখতে বসে গেছি। সুতরাং এটাকে রিভিউ মনে না করাই ভাল। কেবল কিছু অনুভূতি, আর আপনাদের এই বইটির সাথে পরিচয় করানোর একটি চেষ্টা। আর কথা না বলে ড্রামাটিস পার্সোনায় চলে গেলেই মনে হয় ভাল। বইটিতে আপনাদের বিভিন্ন বিষয়ে সান্ত্বনা দেবেন নিম্নোক্ত দার্শনিকরা: ১।

অজনপ্রিয়তার সান্ত্বনা - সক্রেটিস ২। অর্থকষ্টের সান্ত্বনা - এপিকিউরাস ৩। ফ্রাস্ট্রেশনের সান্ত্বনা - সেনেকা ৪। হীনমন্যতাবোধের (Inadequacy)-র সান্ত্বনা - মন্টেইন ৫। ভগ্নহ্রদয়ের সান্ত্বনা - শোপেনহয়ার ৬।

জীবনের নানা ঝামেলার সান্ত্বনা - নীটশা খেয়াল করবেন, চার নম্বরের মিশেল ইক্যুয়েম ডি মন্টেইন কিন্তু দার্শনিক নন। সেভাবে দেখলে, প্রাউস্টও কেবলই একজন ঔপন্যাসিক। কিন্তু উপন্যাস কি দর্শন নয়? ভগ্নহ্রদয়ের সান্ত্বনায় শোপেনহয়ারকে দেখে প্রথমে হেসেই দিয়েছিলাম। পশ্চিমা সভ্যতার সবচেয়ে বড় হতাশাবাদী দার্শনিক কিনা ছ্যাকা খাওয়া প্রেমিকদের বুঝ দিবেন? অধ্যায়টি পড়ার জন্য মুখিয়ে আছি, দেখি কি করলেন বটন সাহেব। নীটশা আমার অন্যতম প্রিয় দার্শনিক।

'ম্যান এ্যান্ড সুপারম্যান' এবং 'বিয়ন্ড গুড এ্যান্ড ইভিল'-এর লেখক যে জীবন ট্যাকল করতে আমাদের কিছু পথদর্শন দিতে পারবেন, সন্দেহ করি না। সমস্যা একটাই, ফ্রাইডরিখবাবা নিজেই নার্ভাস ব্রেকডাউনে পড়ে গেছিলেন কিনা... তবে সেটাকে হ্যান্ডিক্যাপ ধরার কোন কারন নেই, কি বলেন আপনারা? সেনেকা এবং সক্রেটিসের লেখা আমার একেবারেই পড়া নেই, উৎসুক হয়ে আছি জানার জন্য। সক্রেটিসের অধ্যায়টা আসলে এখনই পড়ছিলাম, বটন একেবারে জলবৎ তরলং করে বলেছেন। সঙ্গে নিজের জীবন থেকে উদাহরণও দিয়েছেন। মায় সক্রেটিসের জীবনীও বেশ সুন্দর করে ধীরে ধীরে উন্মোচন করেছেন।

এমন হলে তো পোয়াবারো! টমাস কুহনের সাথে আমিও একমত, বৈজ্ঞানিক বা দার্শনিকদের তাদের জীবনের কনটেক্সট থেকে পৃথক করে দেখলে কতকিছুই যে 'অনুবাদে হারিয়ে যায়'! ৪ ইন্টারনেট থেকে যে কপিটি নামিয়েছি, সেটা বিশেষ সুবিধার না। ওয়ার্ড ২০০৭ এ ফরম্যাট করে পিডিএফ করে নিয়েছি, তবে একেবারে কাঁচা ওসিআর থেকে টানা টেক্সট ফাইল ছিল, ফলে কিছু উল্টাপাল্টা লাইন ব্রেক আছে। তবে আগ্রহ থাকায় সেটা আসলে তেমন অসুবিধার সৃষ্টি করছে না। আপনাদের আগ্রহ থাকলেও যোগাড় করে নিয়ে পড়তে অসুবিধা হবে না বলেই মনে হয়। আশা করি কিছুটা হলেও সে আগ্রহ জাগাতে পেরেছি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।