আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাপগল্প: অতল দৃশ্যে নির্বাসন

প্রকৃতিকে করো তব দাস-চে দ্য আইডল (ব্লগার নং - ৩১৩৩৯)

আমি হিমেল। এই মুহুর্তে ভাবনায় আছি। আমার তিনটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক. ঘুম আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে। মাত্র দু'ঘন্টা ঘুম।

রাত তিনটে হতে ভোর পাঁচটা। এরপর কম্বলে নাক ডুবিয়ে শুয়ে থাকি। বাইরে প্রচন্ড কুয়াশা থাকে। একটা সময় ছিলো,এরকম শাদা কুয়াশায় পাতলা টি-শার্ট পরে ঘুরতাম। এখন আর পারি না।

নাক দিয়ে ফ্লুইড মেকানিক্সের বিদ্যা ঝরতে থাকে। ইচ্ছে টাও যেন ধুম করে ন্যাফথলিন হয়ে গেছে। ঘুম কম হচ্ছে,এটা আমার জন্য অস্বাভাবিক ঘটনা। প্রচুর ঘুমানোর কুখ্যাতি আছে আমার। সকাল নয়টায় ক্লাস।

আমার ঘুম ভাঙতো সকাল সাড়ে আটটায়। মোবাইলের রিংটোনে। ঘুমঘুম গলায় বলতাম,হ্যালো। কে!!!!! ওপাশ থেকে রিনিকঝিনিক করে উঠতো,তোমার দাদী। এখনো উঠো নাই ক্যান?ক্লাস কয়টায় মনে আছে?পাঁচমিনিট পর আবার ফোন দিচ্ছি।

যেন শুনি,তোমার মুখ ধোঁয়া শেষ। খটাস করে লাইন কেটে যেতো। কিছুই হয়নি এমন ভাব ধরে মাথা গুঁজে দিতাম বালিশে। ঠিক পাঁচমিনিট পর আবার ফোন। কি ব্যপার উঠো নাই?এইটারে নিয়া যে আমি কি করবো!!গড হেল!!!!উঠো উঠো !!! মুখ কুঁচকে জবাব দিতাম,আর একটু ঘুমাই প্লীজ।

জ্বালাইও না। জেদ ধরতো ওপাশে। না,এখন উঠবা। উফ !! বিরক্তিকর!!তোমারে না বলছি,সকাল বেলা ফোন দিবা না!! রিনিকঝিনিক এবার গমগম করে। ধমক দিবি না।

তোরে আমি ভয় পাই না। উঠ। নইলে থাবড়া দিয়া দাঁত ফালায় দিব। এরপর আর শুয়ে থাকতাম না ভয়ে। এখন না উঠলে এই ফাজিল টা বাসা থেকে ক্যাম্পাসে এসে আমাকে খুঁজে বের করে থাবড়াতে ও পারে।

এর দ্বারা সবই সম্ভব। সেই আমার ইদানিং ঘুম হচ্ছে মাত্র দু'ঘন্টা!!কয়েকমাস ধরে কেউ সকালবেলা রিনিকঝিনিক কিংবা গমগম করে না বলেই কি!!!! দুই. ভয় পাওয়া রোগ হচ্ছে। দুঃস্বপ্ন দেখছি,হঠাৎ হঠাৎ চমকে উঠছি। কয়েকদিন আগে রাত দুটোর দিকে তন্দ্রামত হলো। হঠাৎ মনে হলো পায়ের কাছে কে যেন বসে আছে।

কে যেন না আসলে,আমার চেনা। সেই চুল। নরম নরম। নাক। চোখ।

মুখ। ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম,কেমন আছো? জবাব নেই। ঘরে ঢুকলে কেমন করে?দেশে কবে ফিরলে? জবাব নেই। আমার উপর খুব রাগ করে আছো,তাই না? জবাব নেই। তুমি শুধু শুধু রাগ করে আছো।

ওরা ধরেছিলো বলেই একদিনই হুইস্কি খেয়েছিলাম। ব্রোথেলে যাবার কথা টা সত্যি না। একটা উপন্যাসে ওরকম পড়েছি তাই বললাম। তুমি বিশ্বাস করে ফেললে!!! এবার জবাবের সাথে সাথে ছায়া টাও আর নেই। এতক্ষন ভয় হচ্ছিলো না।

এখন ভয়ে কুঁকড়ে গেলাম। কম্বলে নাক মুখ ঢেকে শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙলো দুঃস্বপ্ন দেখে। সেই নরম চুলের ছায়া টা স্বপ্নে মানবী সেজেছে। কাঁদছে।

চিৎকার করেই কাঁদছে। তার মাথায় লাঠি দিয়ে বাড়ি মারা হচ্ছে। কালো কালো রক্ত ছিটকে বেরিয়ে আসছে। যে মারছে,তাকে আমি চিনি। মানবী আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি তাকে বাঁচাতে চেষ্টা করছি। কিন্তু পা নাড়াতে পারছি না। অসহায় আক্রোশে কাঁদতে শুরু করলাম। চোখ খুললাম রুমমেট দের ধাক্কায়। ওরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

ঘুমের মধ্যে এত চিৎকার করে কাঁদতে পারে কেউ,এটা ওদের জানা ছিলো না। আমি জানি,এ স্বপ্নের কোন মানে নেই। ওরা কখনো মারামারি করবে না। ওদের এখন গভীর প্রেম। ওরা অনেক আবেগ নিয়ে চকাস করে চুমু খায়।

সে শব্দ আমি মুঠোফোনের দুরত্বে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট শুনেছি। মানবীর কাতর আহবান,সবই শুনেছি। আর মুগ্ধ হয়েছি। আমি মুগ্ধ হলাম কেন,বুঝতে পারছি না। আমার কষ্ট পাওয়ার কথা।

রাগে ফেটে পড়ার কথা। অথচ আমার রাগ হচ্ছে না। বরং ওদের কে দেখতে ইচ্ছে করছে। ওদের ভালোবাসার গল্প শুনতে ইচ্ছে করছে। আমি ইদানিং সাগ্রহে অপেক্ষা করছি।

ওদের যে বেবি হবে,তার নাম কি রাখা হয় তা জানার জন্যে। আমার ভয় পাওয়ার টাও বুঝতে পারছি না। আমি মোটেই ভীতু না। রাত তিনটায় কবরস্থানে শুয়ে থাকার রেকর্ড আছে আমার। ছাদের যেকোণায় ভূত আছে বলে শোনা যায়,সেখানে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করেছি অনেক রাত।

শেষ দিকে তার বিশাল পরিবর্তন হয়ে উঠেছিলো। যা মুখে আসতো তাই বলে অপমান করতো। এখনো আমার কানে বাজে.....তোমার এই..তোমার এই.. হার্স ভয়েজ যেন আমাকে আর কখনো শুনতে না হয়...........। এটা মনে হয় বাকি জীবনটা ধরেই কানে বাজবে। মন্দ না ।

বাজনাভিত্তিক জীবন। যেখানেই যাই,যা ই করি,কানের ভেতর সবসময় এক গান........তোমার এই..তোমার এই......... তিন. মাথায় কথা ঢুকে ঘুরপাক খাওয়া। এই মুহুর্তে মাথায় ঘুরছে,আমার তিনটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমার তিনটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমার তিনটি সমস্যা ...... এটা চলতে থাকবে।

একসময় কথা হয়ে মুখ দিয়ে বের হতে থাকবে। আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করবে,কেমন আছো? আমি বলবো,আমার তিনটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক. ঘুম আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে। মাত্র দু'ঘন্টা ........ ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে উল্টোদিকে হাঁটা ধরবেন। আমি বলতেই থাকবো.....কুয়াশায় পাতলা টি-শার্ট পরে ঘুরতাম।

এখন আর পারি না..... আমি হঠাৎ চমকে উঠলাম। আমার সমস্যাবিষয়ক ভাবনার জগত টা ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। [চলবে]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।