আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিপাইমুখ বাঁধ । একুশ শতকের কারবালা

একটি অরাজনৈতিক ব্লগ...........

টিপাইমুখ বাঁধ । একুশ শতকের কারবালা প্রায় ..তিন দশক ধরে বাংলাদেশের প্রবল বিরোধীতা স্বত্বেও টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ভারত। ইতিমধ্যে ‘নিপকো’ নামক ভারতীয় একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে এ কাজের দায়িত্ব। যার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল ১৯৯৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর। তবে ভারত মুলতঃ এ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে ১৯৫৫ সাল থেকেই।

টিপাই হচ্ছে বরাক নদীর ১ কিঃ মিঃ ভাটিতে একটি গিরিখাদ এলাকার নাম। বরাক হচ্ছে বাংলাদেশের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উৎসমুখ। যার অবস্থান সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আলমসীদ সীমান্তের ১০০ কিঃ মিঃ উজানে ভারতের মনিপুর রাজ্যের চুরাচাঁদপুর জেলায়। ১৯৭৯ সালে হালদা নদী বাঁচাতে টিপাইমুখ বাঁধসহ কিছু জলধারা নির্মাণের প্রস্তাব করেছিল ভারত। যে প্রস্তাব ১৯৮৩ সালে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে নাকচ করে দেয় বাংলাদেশ।

এরপরও ভারতের তৎপরতা অব্যাহত থাকলে ১৯৯২ সালের ১৬ ও ১৮ মে পৃথক দুটি ‘নোট বারভালের’ মাধ্যমে এবং ২০০৩ সালের ১১ আগস্ট আপত্তি জানিয়ে একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশ। ফলে ৩৫ ও ৩৬ তম যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার আশ্বাস দেয় ভারত। কিন্তু রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ চার বছর পার হওয়ার পরও যৌথ নদী কমিশনের আর কোন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। ভারতের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যমতে ‘টিপাই ড্যাম’ উচ্চতায় হবে ১৬৩ মিটার আর দৈর্ঘ্যে ৩৯০ মিটার। যার পানি ধারণ মতা ১৬ বিলিয়ন কিউসেফ মিটার।

এর প্রকৃত উদ্দেশ্য ১ হাজার ৫০০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং আসাম ও মনিপুর রাজ্যের প্রায় সাড়ে ৩ ল হেক্টর জমিতে ইরিগেশন করা। কিন্তু আন্তর্জাতিক নদী আইনে প্রতিবেশী ভাটি দেশের অনুমতি ছাড়া এ ধরনের বিশাল ড্যাম নির্মাণের অধিকার কোন রাষ্ট্রের নেই। তাছাড়া এই ড্যাম নির্মাণ ১৯৯৬ সালে সম্পাদিত পানি চুক্তির ৯ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অথচ আমাদের প্রতিবেশী ভারত যা করছে সবই গায়ের জোরে, একতরফা। তারা অবর্তীণ হয়েছে নব্যএজিদ ও জল্লাদের ভূমিকায়।

ভারত চায় একুশ শতকের নতুন এক কারবালা। বাংলাদেশকে পরিণত করতে চায় পানি প্রতিবন্ধী রাষ্ট্রে। অবশ্য এর তিকর প্রতিক্রিয়া খোদ ভারতের আসাম, মিজুরাম ও মনিপুর রাজ্যেও পড়বে। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মিত হচ্ছে ফারাক্কার অনুকরণে। তবে এর য়তি ফারাক্কাকেও ছাড়িয়ে যাবে।

বাংলাদেশ পরিণত হবে মরুভূমিতে। যার ভয়াবহতা পারমানবিক বোমার চেয়েও বেশি। ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পদ্মা, গজলডুবা বাঁধ দিয়ে যমুনা আর এবার টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে মেঘনার পানি থেকেও বাংলাদেশকে বঞ্চিত করতে চায় ভারত। এছাড়াও ভারত বৃহত্তর সিলেটের মনু, খোয়াই, সুতাংসহ দেশের প্রায় ছোট বড় ১৫টি নদীর উৎস মুখে বাঁধ দিয়েছে। যে কারণে আজ সারাদেশের অভিন্ন ৫৪টি নদীর মধ্যে ৪০টি নদী শুকনো মৌসুমে পানি শুন্য হয়ে পড়ছে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের ধারণা টিপাইমুখ বাঁধ নির্মিত হলে দেশের ৩/৫ কোটি মানুষ ভিটে-বাড়ি ছাড়া হয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হবে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে। এ অঞ্চলের কৃষিখাতে ঘটবে মহা বিপর্যয়। ফলে দেশের সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তা পড়বে হুমকির মুখে। ভৌগলিকভাবে টিপাইমুখ বাঁধের অবস্থান ভূমিকম্প প্রবন এলাকা ‘টেট্রনিক প্লেটে’।

তাই সাধারণ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই টিপাইমুখ বাঁধ ধ্বসে যেতে পারে। ফলে এ থেকে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার কারণে বৃহত্তর সিলেটের অধিকাংশ এলাকাই ২০/২৫ ফুট পানির নিচে ডুবে যেতে পারে। এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া পানি নিয়ন্ত্রণের একচেটিয়া মতা ভারতের হাতে থাকলে সিলেট, সুনামঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, বি-বাড়িয়া, কুমিল্লা, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহসহ দেশের প্রায় ১৪টি জেলা পরিণত হবে বিরান ভূমিতে। নেমে যাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর।

যে কারণে দেখা দেবে বিশুদ্ধ খাবার পানির চরম সংকট। বছরে সার্বিক য়তির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় দেড় থেকে দুই বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এ বিষয়ে বিগত সরকারের মত বর্তমান সরকারও রয়েছে নিরব। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, স¤প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পানি সম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন জনগণকে ভয় দেখানোর সুরে বলেছেন- ‘ভারত বড় দেশ, ভারতকে িেপয়ে আমরা সুবিধা করতে পারব না’। এমন আত্মঘাতী বক্তব্য কোন স্বাধীন দেশের মন্ত্রী দিতে পারেন না।

এ বক্তব্যের মাধ্যমে মন্ত্রী পরোভাবে ভারতকে ‘নো-অবজেকশন’ সার্টিফিকেটই দিয়ে দিলেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে মন্ত্রীর দেশপ্রেম নিয়ে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী কুটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে অবজ্ঞার সুরে বলেছেন, টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধীতাকারী বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা নাকি কিছুই বুঝেন না। অথচ অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় বাংলাদেশ সরকার আজও এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেননি যে পিনাকের মত আমলা কুটনৈতিককে এ ব্যাপারে হাতে কলমে শিখিয়ে-পড়িয়ে দেয়ার যোগ্যতা রাখেন বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা। তবে আশার কথা দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ ও রাজনীতিবিদরা কিন্তু ভারতের এই পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার।

প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া। বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশীরাও পালন করছেন অগ্রণী ভূমিকা। ইতিমধ্যে সিলেট ও হবিগঞ্জে গঠিত হয়েছে ‘টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধ আন্দোলন কমিটি’। স¤প্রতি সিলেটে অনুষ্ঠিত এক গণ-সেমিনার থেকে জানা গেছে ৩ কোটি মানুষের এক বিশাল লং মার্চের প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর কথা।

যিনি ফারাক্কা বিষয়ে প্রথমে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে লিখেছিলেন খোলা চিঠি। দিনটি ছিল ১৯৭৬ সালের ২৯ ফেব্র“য়ারি। কিন্তু একই সালের ৪মে ইন্দিরাগান্ধী উত্তর দিয়ে যে চিঠি মাওলানাকে লেখেন, তাতে সন্তোষজনক কোন ভাষাতো ছিলই না বরং ছিল প্রচ্ছন্ন হুমকি। তাই ভাসানী ১৬ মে’র মিছিল কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভুতপূর্ব সাড়া পরে।

তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়া মিছিলের এই প্রভাবকে সদ্ব্যবহার করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। ফলে ১৯৭৭ সালের ৫ নভেম্বর স্বারিত হয়েছিল ঐতিহাসিক ফারাক্কা চুক্তি। চুক্তিতে ‘গ্যারান্টি কজ’ থাকার কারণে গঙ্গার পানিতে প্রথম বারের মত বাংলাদেশের পরিপূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বর্তমানে টিপাইমুখ বাঁধ বিষয়েও বাংলাদেশকে যেতে হবে জাতিসংঘে। প্রয়োজনে মামলা করতে হবে আন্তর্জাতিক আদালতে।

কারণ আন্তর্জাতিক নদী আইনের দিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। অতীতে স্পেন, ফ্রান্স, হাঙ্গেরী ও স্লোভাকিয়াসহ অনেক দেশই আর্ন্তজাতিক আদালতের মাধ্যমে পানি সমস্যার সমাধান পেয়েছে। স¤প্রতি পাকিস্তান চেনাবনদীর ন্যায্য হিস্যার তিপূরণ আদায় করেছে ভারতের নিকট থেকে। সুতরাং দেশ ও মানুষ বাঁচাতে ভারতের এই পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরকারকে নিতে হবে বলিষ্ঠ অবস্থান। পাশাপাশি আমাদের বড় বেশি প্রয়োজন একজন মাওলানা ভাসানীর।

যার গণমিছিলের মাধ্যমে জাগ্রত হবে দেশের মানুষ,.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.