আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

***ইজমা (আলেমদের ঐক্যমত)***

"সকল বস্তু তার বিপরীত বস্তুর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠে"

আমরা অনেক সময় শুনে থাকি, “এই বিষয়টি আলেমদের সর্বসম্মত্তি ঐক্যমতের উপর প্রতিষ্ঠিত …….” বা “আলেমদের সর্বসম্মত্তি ঐক্যমত অনুযায়ী ……..”, ঐক্যমতের বিষয়টিকে ‘ইজমা’ বলা হয়। প্রত্যেক রাসূলগণ তাদের কমিউনিটিতে আল্লাহ প্রদত্ত বার্তা একদম পরিপূর্ণভাবে পৌছে দিতেন। আল্লাহর ইবাদত কিভাবে করতে হবে, তার কর্মপদ্ধতী কি প্রভৃতি বিষয়গুলো রাসূলগণ দেখিয়ে দিতেন। ইজমা- যাকে আমরা এক কথায় বলতে পারি উম্মার ঐক্যমত, সহীহ একটা পন্থায় উম্মার ঐক্যমত অবশ্যই কাম্য কিন্তু ভুল একটা মতবাদ বা পন্থায় উম্মার ঐক্যমত হওয়া কোনভাবেই উচিত নয়। ইজমা বা ঐক্যমত হওয়ার একটা প্রমাণ হচ্ছে এই আয়াতটি: “যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং বিশ্বাসীদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফিরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।

আর তা কত নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থান। ” (সূরা নিসা : ১১৫) এখন আমরা যদি কাউকে দোষারোপ করি তখন আমরা বলি সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধাচরণ করছে অথবা বিশ্বাসীদের ঐক্যমতে(ইজমা) প্রতিষ্টিত কর্মপদ্ধতীর বিরুদ্ধাচরণ করছে। হয় আমরা প্রথমটি বলে দোষারোপ করি না হয়তো দ্বিতীয়টি বলে দোষারোপ করি। কিন্তু আমরা যে কাজটি করি না তাহলো এই দুইটি বিষয়কে একত্রিত করে দোষারপ করি না! যদিও প্রথম বিষয়টি এবং দ্বিতীয় বিষয়টি একটি অপরটির সাথে একনিষ্ঠভাবে জড়িত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধচারণ কারী ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুণে পুড়তে হবে।

বিশ্বাসীদের ঐক্যমতে(ইজমা) প্রতিষ্ঠিত কর্মপদ্ধতীর বিরদ্ধাচরণকারীদেরকেও জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, বিশ্বাসীরা যে ঐক্যমত হবেন তা কিসের ভিত্তিতে হবেন? যদি এমন হয় যে, বিশ্বাসীরা এমন একটা বিষয়ে ঐক্যমত হলো যা রাসূলের কর্মপদ্ধতীতে নেই এখন কেউ যদি তারা বিরুদ্ধচারণ করে তাহলে তাকে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে না। কেননা তিনি এমন কোন বিষয়ে বিরুদ্ধাচরণ করছেন না যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কর্মপদ্ধতীর বিরুদ্ধাচরণ করা হয়। কাজেই বিশ্বাসীদের ঐক্যমত হওয়ার ভিত্তি হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথার উপর ভিত্তি করে। এখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহীহ সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে বিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বিষয়টি যেন এমন না হয়, যেখানে একদল বিশ্বাসী ঐক্যবদ্ধ তবে এমন কর্মপদ্ধতী অনুসরণ করছে যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহীহ সুন্নাহ বিরোধী। কাজেই আমাদের বিষয় দুটিকে এক করতে হবে অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহীহ সুন্নাহর বিরুদ্ধাচারণ করা যাবে না এবং সেই সহীহ সুন্নাহ’র পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর এরপর কেউ যদি সেই ঐক্যবদ্ধ উম্মাহ’র বিরুদ্ধাচরণ করে তাহলে সে নিঃসন্দেহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও অস্বীকার করবে। “যে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর এবং রাসূলগণের উপর ও কিয়ামতদিনের উপর বিশ্বাস করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে” (সূরা নিসা : ১৩৬) এখানে বিশ্বাস স্থাপন একটার সাথে আরেকটি সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ কেউ যদি আল্লাহকে অস্বীকার করে তাহলে সে বাকী সবগুলোকেই অস্বীকার করলো।

আবার কেউ যদি রাসূলকে অস্বীকার করে তখন সে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তাকেও অস্বীকার করলো। তেমনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহীহ সুন্নাহর উপর ঐক্যবদ্ধ উম্মার বিরুদ্ধাচরণ করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই অস্বীকার করার শামীল। কেউ যদি যঈফ ও মওজু হাদীসের উপর ভিত্তি করে একটা পন্থা উদ্ভাবন করে, কিংবা গবেষণা করে ইবাদতের এমন কোন নতুন পন্থা(বিদআত) আবিস্কার করে যা রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহীহ সুন্নাহতে নেই বা এমন লজিকের উপর ভিত্তি করে ঐক্যবদ্ধ হয় যার অস্তিত্ব সহীহ সুন্নাহতে নেই তাহলে সেই ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় কোন উপকার নেই বরং তা মানুষকে পথভ্রষ্ট করে দিবে। আর পথভ্রষ্ট মানুষের গন্তব্যস্থল জাহান্নাম। কিন্তু বর্তমানে একটা বিষয় লক্ষনীয় যে, ইজমা তথা আলেমদের ঐক্যবদ্ধ মতের গুরত্ব দিয়ে অনেক পন্থা উদ্ভাবন করা হয়।

এখন আলেমদের এই ইজমা যদি রাসূলের কোন কথার উপর ভিত্তি করে না হয় বরং তা হয় কোন যুক্তির উপর ভিত্তি করে, কোন গবেষণার উপর ভিত্তি করে, কোন মিথ্যা হাদীসের উপর ভিত্তি করে বা শুধু সংখ্যায় বেশী তার উপর ভিত্তি করে তাহলে তা মোটেই ঠিক হবে না। “যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং বিশ্বাসীদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফিরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা কত নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থান। ” (সূরা নিসা : ১১৫) অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা অনুযায়ী। একটা বিষয় পরিস্কার থাকা সবারই দরকার যে, ইসলাম পরিপূর্ণ একটি জীবন বিধান।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায়ই তা পরিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। “আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম” (সূরা মায়িদা : ৩)। তাই ইজমা বা ঐক্যবদ্ধ হতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথার উপর ভিত্তি করে। মহাগ্রন্থ কুরআন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর নাযিল হয়েছিল এবং সুন্নাহ (কর্মপদ্ধতী) আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট থেকে পেয়েছি। দুইটিই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর মুখ নিঃসৃত।

“সে কখনও নিজের থেকে কোন কথা বলে না, বরং তা হচ্ছে ‘ওহী’, যা (তার কাছে) পাঠানো হয়, তাকে এটা শিখিয়ে দিয়েছে এমন একজন (ফেরেশতা), যে প্রবল শক্তিশালীর অধিকারী” (সূরা নাজম : ৩-৫) ইসলাম সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু বলেছেন তা তিনি নিজের থেকে কিছু বলেন নি। তাই উম্মাহ’র ঐক্যবদ্ধ হওয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা উপর ভিত্তি করে হতে হবে। মহাগ্রন্থ কুরআনে যেমন সাংঘর্ষিক কোন আয়াত নেই ঠিক তেমনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ তথা কর্মপদ্ধতীতেও সাংঘর্ষিক কোন বিষয় নেই। কাজেই মুসলমানদের সকল কিছু বিবেচনা করতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিখানো পন্থায়, তিনিই হচ্ছেন উত্তম আদর্শ অনুসরণ করার। ইবাদতের নতুন কোন পন্থা বা এমন পদ্ধতীতে ইবাদত করা যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ বহির্ভূত সে বিষয়ে যেই ঐক্যবদ্ধ হোক না কেন তা গ্রহণযোগ্য নয়।

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের শয়তান ও শয়তানের অনুসারীদের, শিরকপূর্ণ কথা, কাজ ও চিন্তা এবং বিদআত থেকে হিফাজত করুন এবং সহীহ জ্ঞান আমাদের সামনে স্পষ্ট হওয়ার পর যেন আমরা বিভ্রান্ত না হই তা থেকেও হিফাজত করুন, আমীন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।