আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহানগরের শিকারী এবং সংগ্রাহক

যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।
মহাজ্ঞানী উইকির মতে, “একটি শিকারী-সংগ্রাহক সমাজ হল সেটাই, যেখানে খাবারের আংশিক কিংবা পুরোটাই সংগৃহীত হয় বনজ উদ্ভিদ এবং প্রাণী থেকে। এই ব্যাবস্থা কৃষি ভিত্তিক সমাজের পুরো উল্টো, যেটা নির্ভর করে গৃহপালিত প্রাণীর উপর। শিকারী-সংগ্রাহকরা এক ধরণের যাযাবর।

“ একবিংশ শতকের বাংলাদেশ এক জটিল সমাজ নিঃসন্দেহে। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির ঐতিহ্য বহন করলেও গার্মেন্টস রপ্তানী, রাষ্ট্রের আয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের তালিকাতেও নামডাক আছে বেশ, মাঝে মাঝেই আমরা ইউএন এর কি যেন সূচক অর্জন করি, বানকি মুন হাসিমুখ পোজ দেন। বিদেশে থাকা বাংলাদেশী মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়, ফলে সকল বাংলাদেশী বাংলাদেশেই থাকেন বিষয়টা এমন নয়। তাদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার গুরুত্বও অনেক।

আর যারা থাকেন দেশে, দেশকে গভীরভাবে ভালোবেসেই কিংবা হয়ত নিরুপায় হয়েই, অথবা লোভে, তাদের নিয়েই এই ফটো রচনা। আশুলিয়া, জনক্লান্ত এই মহানগরের নিঃশ্বাসের জায়গা সেটা আমাদের পনের বছরের পাবলিক স্মৃতিতে গেঁথে আছে ভালোভাবেই। ছুটির দিনগুলোতে বেড়াতে যাই সবাই। চোখের সামনে উপভোগ করি পুরো আশুলিয়ার দুপাশ বদলে যাওয়া। নগর বাড়ছে খুব, বৃহত্তর ঢাকা, ঢেকে ফেলছে চারদিক।

আর মারা যাচ্ছে নদী। খবরের কাগজের পুরোনো খবর হলেও আবার যদি একটু চোখ বুলিয়ে নেই কয়েক লাইন তাহলে দেখবো, “আশুলিয়ায় তুরাগ নদ ভরাটের মহোৎসব, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা ও চলমান আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে তুরাগ নদের উত্তর তীর ভরাট করা হচ্ছে। “...যুগান্তর রিপোর্ট। এবং আবারো, “রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথ বিলীন হয়ে যাচ্ছে, রাজধানীর চারপাশের বৃত্তাকার নৌপথের একদিকে চলছে খননকাজ, অন্যদিকে হাউজিং কোম্পানিগুলো মাটি ফেলে নদীতীর ভরাট করে প্লটের রমরমা ব্যবসা করছে। বর্তমানে টঙ্গী এলাকায় খননকাজ চলছে।

গত বছর অক্টোবরে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আশুলিয়া ও মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকার খননকাজ শেষ হয়। অথচ চার মাসের মাথায় হাউজিং কোম্পানিগুলো সেই নৌপথটি মাটি ফেলে ভরাট করে প্লট ও ফ্ল্যাট আকারে বিক্রি করছে। সরেজমিন বোটানিক্যাল গার্ডেনের পশ্চিম পাশ থেকে আশুলিয়া বেড়িবাঁধ পর্যন্ত দেখা গেছে, ৭০ থেকে ৮০টি হাউজিং কোম্পানি রাত-দিন মাটি ফেলে নদীতীর ভরাট করছে। এসব হাউজিং কোম্পানি শত শত সাইনবোর্ড আর আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রি করছে। হাউজিং কোম্পানি ছাড়াও ইটভাটা, ইট ও বালির অবৈধ গদি এবং বিনোদন পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে।

“ ...সমকাল। এবং আবারো, “রাজধানীর মিরপুর - আশুলিয়া সংলগ্ন নদী ও জলাশয় গ্রাস : চলছে দখলের মহোৎসব-...পরিবেশের এই বিপর্যয়ে ঊদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বিভিন্ন পরিবেশ গবেষনা সংস্থা। বাপার মহাসচিব ড.এম এ মতিন জানিয়েছেন শুধু তুরাগ নয় সারাদেশের নদীগুলোর একই চিত্র। আর এই সমস্যা সমাধানে বর্তমান সরকার আন্তরিক নয় বলেও মনে করেন তিনি। এই পরিবেশবিদের মতে সরকারের পক্ষ থেকে যা বলা হয় তা কিছুই বাস্তবায়ন করা হয় না।

“... নিউজবিডি৭১ডটকম। ভরাট হয়ে যাচ্ছে আশুলিয়া বেড়িবাঁধের দুপাশ। শুরু হয়েছে উত্তরা ৩য় পর্যায়ের প্রকল্প। অন্যদিকে চাষের জমিগুলোকে দখল করে রাখা ইটের ভাটাগুলোর ব্যাবসা এখন তেমন একটা জমজমাট না হলেও বড় বড় চোঙ্গাগুলোর সংখ্যা কখনো কমতে দেখিনি। আর তখনি দেখা মিলল এ কালের নতুন সংগ্রাহকদের।

ড্রেজিং করে নদী ভরাট করার সাথে সাথে উঠে আসছে ইট ভাঁটায় ব্যবহৃত হওয়া, কয়লা আর কাঠের অবশেষ। আর সেগুলোই সংগ্রহ করতে ব্যস্ত দরিদ্র মানুষ। এভাবে কাঁদার ভেতর থেকে, নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে সংগৃহীত হচ্ছে... ইঁট ভাটায় ব্যবহৃত কাঠ আর কয়লা... নদীর কবরের ভেতর থেকে উঠে আসছে, সভ্যতার আবর্জনা। নদীকে শুষে নেয়া ড্রেজিং, ক্রমশ ভরাট করে চলেছে...মানুষের লোভের যেমন সীমা নেই, তেমনি...বিশ্রাম নেই ড্রেজিং যন্ত্রের.. দিনরাত অবিরাম কাজ করে চলেছে। এই মানুষটার দিকে তাকিয়ে তাই মনে প্রশ্ন জাগে।

কোন সমাজে আছি আমরা? কে এখানে শিকারী কেউ বা সংগ্রাহক? নগরায়ণ প্রকৃতিকে শিকার করছে। মানুষের লোভ, জনস্বার্থকে শিকার পরিবেশকে করছে। বড়লোকের বসবাসের জায়গার জন্য গরীব মানুষগুলো বাস্তুহারা হচ্ছে। এই জটিল, ভীষণ অসাম্যের বাংলাদেশে আমরা কি আদৌ সংগ্রাহক নাকি অধিকাংশই শিকারমাত্র?
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।