আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বরুণ রায় একজন অতন্দ্র প্রহরীর মহাপ্রয়াণ



হিমাদ্রি শেখর ভদ্র জমিদার তবু জমিদার নন: বরুণ রায়ের শরীরের শিরা উপশিরায় জমিদারী রক্ত প্রবাহিত হলেও তিনি জমিদারী প্রথা অবসানের পে শোষণ বঞ্চনাবিহীন একটি সাম্যবাদী ধারার সমাজ ব্যবস্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। জমিদারদের হাতে নির্যাতিত নিপীড়িত প্রজাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ মানুষ। জমিদার পরিবারের সন্তান বরুণ রায় রায়ত, প্রজা, নানকারদের অধিকার আদায়ের জন্য আজীবন লড়াই সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত রেখে ছিলেন। তিনি ছিলেন সমাজতন্ত্রের পূজারী নির্ভীক সৈনিক। বৃটিশ শাসনামলে এদেশের জমিদার বাড়ির গুলো ছিল সরগরম।

সুবিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত জমিদার বাড়িতে জমিদারগণ মনোরঞ্জনের জন্য রংমহল, পুজোমন্ডপ, অন্দরমহল, খাসকামরা, কাচারীঘর সহ বিভিন্ন মহলের সাথে একটি কুখ্যাত কুঠোরী ছিলো যেখানে খাজনা আদায়ের জন্য প্রজাদের উপর নির্মম অত্যাচার করা হতো। জমিদার বাড়িতে যারা কায়িক শ্রম দিয়ে জীবন ধারন করতেন তাদের কে জমিদারীয় ভাষায় বলা হতো গোলাম। গোলাম শব্দটি এখনও লোক মুখে শুনা যায়। বরুণ রায় নিজে জমিদার পরিবারের একজন উত্তরাধিকারী হয়েও আজীবন জমিদারী প্রথার অবসানের জন্য লড়াই করে গেছেন। গণমানুষের প্রতি তাঁর যে গভীর মমত্ববোধ, চিন্তাচেতনা, মানবিক গুণাবলীর কারণেই তিনি জমিদারী মেজাজ বিরোধী কাজে লিপ্ত হন।

দেশের অন্যান্য জমিদারদের সাথে তাঁর জীবন দর্শনের কোন মিল নেই। কারণ জমিদার পরিবারের সন্তানেরা নিজেদের অভিজাত পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করে থাকেন। জমিদার পরিবারের সদস্যদের চালচলন আভিজাত্যবোধ কারণে আমজনতার কাতারে নিজেদের দাঁড় করাতে অনেকটাই নারাজ। এজন্য বৃহত্তর ভাটিবাংলার কোটি মানুষের মধ্যে একজনই বরুণ রায়। রংমহল নয় জলমহালে : তৎকালীন বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, অনুষ্ঠানে জমিদারদের রাজকীয় সাজসজ্জায় সুসজ্জিত রং মহলের ঝাড়বাতির নিচে দিল্লি, লাহোর, লখনো, কলকাতার বিখ্যাত বাঈজীরা এসে শারীরিক মানসিক মনোরঞ্জন করতেন।

তারা সেখানে আধোবসনে রাতের পর রাত কাহারবা,ঠুমরী,ধাধরা সহ বিভিন্ন তালে নৃত্যগীতি পরিবেশন করতেন। নুপুরের নিক্কন আওয়াজ আর রুমঝুম নৃত্বের সাথে সুরা, কোমল পানীয় পরিবেশন করে জমিদারদের আনন্দ দিতেন। সুরার নেশায়মত্ত জমিদার বাঈজীদের নৃত্য ও অন্যান্য কারণে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর মূল্যবান সামগ্রী ও কাঁচা সোনারমোহর উপহার দিতেন। জমিদার পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বিভিন্ন ভাবে আকৃষ্ট ছিলেন তাদের কারো কারো মধ্যে ঘরেতে বউ থাকার পর পরনারীর প্রতি আসক্তি ছিলো প্রবল। কিন্তু জমিদার পরিবারের সন্তান হওয়ার কারণে যেখানে সেখানে যেয়ে নিজদের জৈবিক চাহিদা পুরন করতে পারতেন না।

তাই বাঈজী, সুন্দরী দাসীবাদীদের দৈহিক সাহচর্য লাভে ওঠে পড়ে লাগতেন। এজন্য তাদেরকে নানান লোভ লালসা দেখিয়ে ভোগ করতেন। একারণে জমিদার বাড়িতে সুন্দর সুন্দর দাসীবাদী রাখা হতো। যাতে করে তাকে দিয়ে পারিবারিক কাজ থেকে শুরু করে দৈহিক কামনা বাসনা মেটানো যায়। বিনিময়ে ব্যবহৃত দাসীবাদী তার দেহদানের জন্য মোটা অংকের এনাম অথবা উল্লেখ্যযোগ পরিমাণ ভূ-সম্পত্তির মালিক হতেন।

জমিদার কন্যাদের বিয়ের সময় তাদের সেবা শুশ্রƒষা শশুর বাড়িতে আরাম আয়েশে স্বামীর মনোরঞ্জনের জন্য বাদী দেওয়ার প্রচলন ছিলো বরুণ রায় মন থেকে এসব দাসপ্রথার প্রচন্ড বিরোধী ছিলেন। তাই তো তিনি রং মহলের রঙ্গীন জীবন ছেড়ে সাধারন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর কাছে রং মহল থেকে জলমহাল উত্তম ছিলো। তিনি ভাসান পানিতে প্রকৃত জেলেদের মাছ ধরার অধিকার আদায়ের ল্েয ভাসান পানি আন্দোলন শুরু করেন। একসময় আন্দোলটি তুঙ্গে ওঠে।

ভাটিবাংলার নির্যাতীত নিপীড়িত জেলেরা এ আন্দোলনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে পড়েন। সুনামগঞ্জ সহ ভাটিবাংলার প্রতিটি গ্রামে জেলেরা ভাসানপানিতে মাছ ধরার দাবীতে রাজপথে মিছিল মিটিং সভা সমাবেশ করেন। এতে জলমহাল ব্যবসায়ী একটি ধনীক শ্রেণী সহ সরকার তাদের বিরুদ্ধাচরন করেন। কিন্তু বরুণ রায়ের অদম্য উৎসাহ সংগ্রামী মনোভাবের কারণে জেলেরা সামান্যতম হলেও উপকৃত হন। অত্যন্ত তারা মাছ ধরতে যাওয়ার সময় যে দৈহিক লাঞ্চনা নিপীড়নের শিকার হতেন তা বন্ধ করে ইজারাধার গোষ্ঠী।

তিনিই ছিলেন ভাটিবাংলার ভাসান পানি আন্দোলনের অন্যতম একজন প্রবক্তা। রাজপ্রসাদে নয় জনারণ্যে বৃটিশ শাসনামলে জমিদারগণ তাদের আয় উপার্জনের একটা মোটা অংশ খরচ করতেন প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরীর কাজে। যে বাড়িতে একজন মানুষের যতটুকু সুবিধা সমন্বিত পরিবেশের উপরেও অতিরিক্ত অনেক কিছু থাকতো। যেমন জলবারান্দা, আরাম কেদারা, ছাদের উপর থেকে জমিদার পতœী সহ অন্যান্যদের অন্দর মহলের লোকজনের সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার জন্য বিশেষ স্থান। ধনসম্পদ সংরনের জন্য বিশেষ ভাবে সুরতি কুঠুরী নানান বিলাসবহুল ব্যবস্থা।

বরুণ রায়ের এমনতর কোন প্রসাদের মতো ঘরবাড়ি নেই। তিনি জন কল্যাণের পথে নিবেদিত প্রাণ একজন অতিসাধারণ লোক ছিলেন আর তাই জেল জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে “যেখানে রাত সেখানেই কাত” এ নীতিতে বিশ্বাসী বরুণ কুড়েঘর থেকে শুরু করে আরও নিম্ন শ্রেণীর পরিবেশে দিন যাপন করতেন। সেসময় খাবার দাবার থেকে শুরু করে কোন কিছুরই কোন শৃঙ্খলা ছিলনা। একারণে তিনি জীবনের প্রায় মধ্যভাগে এসে সংসার জীবন শুরু করেন। উপাধি নয় অধিকার আদায়ে: সে সময় ইংরেজরা অর্থ ও আনুগত্যের ভিত্তিতে জমিদার কে বিভিন্ন উপাধি দিয়ে ভূষিত করতেন।

এসব উপাধির মধ্যে রয়েছে, রায় সাহেব, রায় বাহাদূর সহ নানান শ্রেণী বিভাগ। কিন্তু বরুণ রায়ের পেছনে ইংরেজদের দেওয়া কোন উপাধি নেই আছে গণমানুষের ভালোবাসার কমরেড বরুণ রায় পদবী। এটি ইংরেজ প্রদত্ত কোন উপাধি নয়। সাম্যাবাদী রাজনীতি ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী গণমানুষের নায্য অধিকার আন্দোলন সংগ্রামে নিবেদিত প্রাণ সৈনিকের উপাধি। সর্বেেত্র একই একজন : পরণে সাদা টাইপের লুঙ্গি ও সাদা রঙ্গের ফুল শার্ট।

এক হাতে বাজারের ব্যাগ অন্য হাতে ছাতা। যখন চলাফেরা করতে পারতেন তখন হাছন নগরস্থ বাসা থেকে ধীরলয়ে হেঁটে বক পয়েন্ট থেকে উকিলপাড়া পয়েন্ট তার পর জেলরোডের রাস্তা ধরে প্রায়শ বাজারে যেতেন। একই পথ ধরে বাজার থেকে বাসায় ফিরে আসতেন। রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে যারা তাকে চিনতেন তারা তাকে সালাম, আদাব, নমস্কার দিতেন ও শারীরীক অবস্থার খোঁজ খবর নিতেন। সুস্থ থাকা অবস্থায় তিনি বেশীর ভাগ সময়ই পাঁয়ে হেঁটে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হতেন।

বাজার করা থেকে শুরু করে ভাটিবাংলার প্রতিটি ধুলিকণায় একই বেশভুষায় অবাধ বিচরণ ছিলো তাঁর। তবে কোন সভা সেমিনারের মতো অনুষ্ঠানে তিনি পাঞ্জাবী আর ঢোলা পায়জামা পড়ে অংশ গ্রহণ করতেন। ভাষণের শুরুতে কাব্যময় শব্দাবলীর ব্যবহার করে মঞ্চে উপবিষ্টদের থেকে শুরু করে আগত অতিথি ও জনসাধারনের উদ্দেশ্যে তিনি যে প্রাণবন্ত বক্তব্য রাখতেন তাকে আজও বিস্ময়কর। তাঁর প্রতিটি কথায় ছিলো অসা¤প্রদায়ীকতা, সাম্রাজ্যবাদীদের প্রতি বিষোদগার আর মেহনতী মানুষের সুখ দুঃখের কথা। বক্তব্যের বিভিন্ন অংশ জুড়ে থাকতো মানুষের অধিকার আদায়ের বিভিন্ন কবিতার অংশ বিশেষ।

অত্যন্ত সাবলীল ভাবে একজন সফল আবৃত্তিকারের মতো তিনি অনর্গল কবিতার অংশবিশেষ ব্যবহার করতেন। রবীন্দ্র নাথ, নজরুলের গণমানুষের চেতনা ও জীবনঘনিষ্ট কবিতাই তিনি এসময় আবৃত্তি করতেন। অনন্যদেশ প্রেমের জ্বলন্ত প্রতিমুর্তি ছিলেন বরুণ রায়। ‘নমো নমো বাংলাদেশ মম’ লাইন টুকু তিনি হৃদয়ে ধারন করেই আবৃত্তি করতেন। কোন সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে রাজনীতির মঞ্চে তিনি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে সবার কথা শুনতেন।

তিনি এেেত্র একজন ভালো শ্রোতাও ছিলেন। গণসংগীতের প্রবাদ পুরুষ হেমাঙ্গ বিশ্বাস, গোবিন্দ লাল হালদার সহ এপার ওপার বাংলার জনপ্রিয় গণসংগীত শিল্পীদের সাথে তিনি কোরাস ও একক গান তিনি সুন্দরভাবে পরিবেশন করতেন। রাজনীতিতে প্রবেশ: কৈশোরে তিনি ও তার সহপাঠীরা বড়দের দেখাদেখি কমিউনিস্ট পার্টির লাল রংয়ের ঝান্ডা হাতে নিয়ে এদিক ওদিক দৌঁড়াদৌঁড়ি করতেন। সে সময় জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী গ্রাম ছিল বাম রাজনীতির উর্বর ত্রে। বেহেলী গ্রাম দেশের প্রান্তসীমায় অবস্থিত হওয়ার কারণে বাম রাজনীতিবিদরা আত্মগোপনের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিতেন।

তখন বৃটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে লালপাগড়ী ধারী বৃটিশ পুলিশের তাড়া খেয়ে বেহেলী গ্রামে তাদের বাড়িতে অনেক বাঘা বাঘা বাম রাজনৈতিক নেতা আত্মগোপন করে থাকতেন। বাবা করুণা সিন্ধু রায় ছিলেন একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ এ কারণে তাদের বাড়িতে প্রায়স চেনাঅচেনা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের আনাগোনা ছিল। ১৯৩২ সালের ভারত উপমহাদেশের অসহযোগ আন্দোলনের ঢেউ বেহেলী গ্রামেও লাগে। গ্রামগঞ্জের অগণিত খেটে খাওয়া মানুষ সক্রিয়ভাবে অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৩২ সালে অসহযোগ আন্দোলনে অত্র অঞ্চলের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তাঁর পিতা করুণা সিন্ধু রায় কে পুলিশ গ্রেফতার করে।

একারণে তাঁর কয়েক বছর জেলের ঘানি টানতে হয়। রাতে তাদের বাড়িতে বসে ঘরানার সভা করে পার্টির পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হতো। এসব তিনি ছোটবেলা থেকে দেখে দেখে অভ্যস্ত ছিলেন। তাই বাবা করুণা সিন্ধু রায়ের অনুপস্থিতিতে সংগঠন চালানোর ভার স্বাভাবিকবাবেই তাঁর উপর এসে পড়ে। ১৯৩২-৩৩ সালের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে চরকায় সুতা কাটার কাজ শুরু হয়েছে।

তখনকার সময়ে অনেকের বাড়িতেই সুতাকাটার চরকা ছিল। নিতান্ত অজপাড়া গ্রামের মানুষও ছিল রাজনীতি সচেতন। তারা তাদের ন্যায্য দাবী আদায়ের সংগ্রামে কখনো পিছপাঁ হতো না। প্রতিদিনই গ্রামে গ্রামে বৃটিশ বিরোধী স্লোগান দিয়ে মিছিল সহকারে গ্রামের মেঠোপথ প্রদণি করতো বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা কর্মীরা। বরুন রায় কৃষক, শ্রমিক, মজুর, জেলে সহ নির্যতিত গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের বহুকাল সরকারের হুলিয়া মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে কাটিয়েছেন।

সেই সাথে জেলে কাটিয়েছেন বছরের পর পর বছর। মানব সেবায় বরুন রায় এক অন্যন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেন হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ম্যালেরিয়া রোগের মহামারী দেখা দিলে তিনি আক্রান্তদের সেবা শুশ্রষা করতে সেখানে ছুটে যান। একপর্যায়ে নিজেও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। রাজনৈতিক পরিক্রমায়: ১৯৩৭ সালে বাংলার নির্যাতিত প্রজাদের জন্য জমিতে জোতস্বত্ব প্রতিষ্ঠা, নানকার প্রথা বিলোপ সাধন, ভাসান পানি আন্দোলন সহ সাধারণ মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ অনেক আন্দোলন সংগ্রাম বরুন রায় খুব কাছ থেকে প্রত্য করেছিলেন। অনেকটা এ কারণে তাকে সমাজের অবহেলিত বঞ্চিত সাধারণ মানুষের জীবনচিত্র দেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

অধিকার বঞ্চিত মানুষের দাবী আদায়ের সংগ্রামে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়তে কোন দ্বিধাবোধ করেননি। বরুন বায় ছাত্র ফেডারেশনের কর্মী হিসেবে কমিউনিষ্ট পার্টির সান্নিধ্যে আসেন এবং নিজের সাংগঠনিক দতা, যোগ্যতা মেধা মননের অধিকারী বরুণ রায় ১৯৪২ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে পার্টির পুর্নাঙ্গ সদস্যপদ লাভে সমর্থ হন। একই সালে স্বাধীনতা দিবস পালনের অপরাধে প্রথম জেলে যান। ১৯৪৮ সালে সিলেট গোবিন্দচরণ পার্কে বাংলা ভাষার স্বপে সভা করতে গিয়ে উর্দূওয়ালাদের দ্বারা প্রহৃত হন। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের পরপরই তিনি পাকিস্থান সরকারের নির্দেশে গ্রেফতার হন এবং টানা পাঁচ বছর কারাভোগ করেন।

১৯৫০ সালে কমিউনিষ্ট পার্টির জেলা প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পেয়ে নিজ গ্রাম বেহেলীতে অন্তরীন ছিলেন। সে সময় একটি পৃথক নির্বাচনী বিধিমালার আওতায় সুনামগঞ্জের একটি নির্বাচনী এলাকায় তাকে প্রার্থী করা হলেও মনোনয়ন প্রাপ্তির কয়েকদিন পর আবারও তাকে কারাবন্দী করা হয়। এসময় তিনি জেলে থাকা অবস্থায় বিপুল ভোটের ব্যাবধানে জয়লাভ করেন। এক পর্যায়ে এমএলএ হিসেবে জেল তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।

সারা দেশে ৯২ (ক) ধারা জারী করা হলে ১৯৫৪ সালে আবার তিনি কারাভোগ করেন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি টানা ৫ বছর কারাভোগ করেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় বরুন রায় ১৯৬৬ সালে কমিউনিষ্ট পার্টির সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে তিনি প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতা সীমিত করে আতœগোপনে থাকেন। একই সালের শেষ দিকে সিলেট জেলা কমিউনিষ্ট পার্টির গোপন সম্মেলনে তিন দিনব্যাপী রাজনৈতিক আলোচনায় তিনি ঘন্টা পর পর জাতীয় ও আন্তজার্তিক পরিস্থিতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে নেতাকর্মীদের করণীয় সর্ম্পকে উপদেশ দেন।

আত্মগোপন থাকাকালে ১৯৬৮ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে তিনি কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পান। ১৯৬৫ সালে আয়ূব খাঁন সরকার তার উপর হুলিয়া জারী করে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে দিরাই শাল্লা এলাকায় আতœগোপন থেকে সুরঞ্জিত সেনের পে কুঁড়েঘর মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলে তিনি ভারতে চলে যান ও মুক্তি যোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

একই সালের ১৭ ডিসেম্বর স্বদেশে ফিরে এসে দেশ গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীর মধ্যে তিনি দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচার এরশাদ এর শাসন আমলে তিনি সংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য তিনি কারাবরন করেন। জীবনভর বিপ্লবী এই এই মহপুুরুষকে হারিয়ে আমরা হারিয়েছি নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের এক অতন্দ্র প্রহরীকে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.